খন্দকার রেজানুর হোসেন (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
শহীদ খন্দকার রেজানুর হোসেনের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের পাচুরিয়া গ্রামে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম খন্দকার হায়দার আলী এবং মায়ের নাম সৈয়দা রোকেয়া বেগম।
কর্মজীবন
খন্দকার রেজানুর হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাস। মার্চ মাসে রেজিমেন্টের হেডকোয়ার্টার কোম্পানি ছাড়া অন্যান্য কোম্পানিকে (এ, বি, সি, ডি) সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। তিনি ছিলেন হেডকোয়ার্টার কোম্পানির মেশিনগান প্লাটুনে। নবীন সৈনিক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সহযোদ্ধাদের সঙ্গে বিদ্রোহ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সিলেট জেলার অন্তর্গত গোয়াইনঘাট এলাকা সুরমা নদী উপজেলা সদরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। নদীর পূর্বপারে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরক্ষা ব্যূহ। তিন দিক ঘেরা সুরমা নদী পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরক্ষাকে যথেষ্ট সুবিধাজনক করেছে। ২৩ অক্টোবর মধ্যরাত রাতের অন্ধকারে মুক্তিযোদ্ধারা নিঃশব্দে এগিয়ে যেতে থাকলেন গোয়াইনঘাটের উদ্দেশে। তারা কয়েকটি দল। একটি দলে আছেন খন্দকার রেজানুর হোসেন। তিনি মেশিনগান প্লাটুনের সহ-মেশিনগান চালক। গোয়াইনঘাটে আছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বড় একটি ঘাঁটি। বেশ শক্তিশালী। প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত পাঞ্জাব রেজিমেন্ট, আজাদ কাশ্মীর ফোর্স, পাঞ্জাব রেঞ্জার ও টসি ব্যাটালিয়ন সমন্বয়ে গড়া মিশ্রবাহিনী। এদের সঙ্গে আছে বিপুলসংখ্যক এ দেশীয় রাজাকার। এ ছাড়া আছে ফিল্ড ও মিডিয়াম আর্টিলারি। মুক্তিযোদ্ধারা নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে সীমান্ত এলাকা থেকে গোয়াইনঘাটের কাছাকাছি পৌঁছলেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গেল। ভোরে পাকিস্তানি সেনারা তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর একযোগে আকস্মিক আক্রমণ চালাল। একটি দল গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়ক এলাকার দিক থেকে, অপর দল নদী পার হয়ে পশ্চিম দিক থেকে, আরেকটি লেংগুয়া গ্রাম বাইপাস করে এসে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পশ্চিম দিকের আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান নাজুক হয়ে পড়ল। এই অবস্থানেই মেশিনগান নিয়ে চালকের সঙ্গে ছিলেন খন্দকার রেজানুর হোসেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা বেশির ভাগ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেন। একপর্যায়ে দেখা গেল, মুক্তিযোদ্ধাদের ওই অবস্থানে শুধু খন্দকার রেজানুর হোসেন ও মেশিনগান চালকসহ কয়েকজন আছেন। পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মধ্যে মাথা তোলাও যাচ্ছে না। কিন্তু খন্দকার রেজানুর হোসেন ও মেশিনগান চালক এতে দমে গেলেন না। মেশিনগান দিয়ে গুলিবর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে থাকলেন। তাদের সাহসিকতায় সাময়িকভাবে থেমে গেল পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা। একসময় পাকিস্তানি সেনারা তাদের মেশিনগানের অবস্থান চিহ্নিত করে তাদের অবস্থানে দুই ইঞ্চি মর্টারের আক্রমণ চালায়। তাতেও তারা বিচলিত হননি। মেশিনগান দিয়ে গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখেন। কিন্তু বেশিক্ষণ পারেননি। পাকিস্তানি সেনারা দুই ইঞ্চি মর্টারের গোলা ছুঁড়ে খন্দকার রেজানুর হোসেনদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। সেই সুযোগে পাকিস্তানি সেনাদের আরেক দল অনবরত তাদের ওপর গুলি চালায়। তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে তারা দুজনই শহীদ হন। সেদিন খন্দকার রেজানুর হোসেন ও মেশিনগান চালকের দুঃসাহসিকতায় অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। [২]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
বহি:সংযোগ