ক্রেগ নীল ইভান্স (ইংরেজি: Craig Evans; জন্ম: ২৯ নভেম্বর, ১৯৬৯) হারারে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক জিম্বাবুয়ীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯২ থেকে ২০০২ সময়কালে জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ম্যাশোনাল্যান্ড ও মাতাবেলেল্যান্ড দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে কার্যকরী ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন ক্রেগ ইভান্স।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
প্রতিভাবান অল-রাউন্ডার হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে ব্যর্থ ছিলেন। দীর্ঘদেহী ও মজবুত গড়নের অধিকারী হিসেবে ক্রিকেটের পাশাপাশি গল্ফার ও রাগবি ইউনিয়নে জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নিয়েছেন।
১৯৯০-৯১ মৌসুম থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ক্রেগ ইভান্সের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। মার্চ, ২০০০ সালে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের ইতিহাসে যে-কোন উইকেটে নতুন রানের রেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। ডির্ক ভিলজোয়েনের সাথে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩৩০ রান তুলেন। এ পর্যায়ে তিনি ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫৩ রানের ইনিংস খেলেন। প্রথম ইনিংসে ম্যাশোনাল্যান্ড এগিয়ে যায় ও ৪/৫ বোলিং গড়ে দলকে ২৭৬ রানের বিশাল জয় এনে দেন। ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের দিকেও তার নজর ছিল। ২০০১-০২ মৌসুমে ব্যাট হাতে নিয়ে বিশাল রান তুলেন। চার খেলায় চারটি সেঞ্চুরি হাঁকান। মনিকাল্যান্ডের বিপক্ষে ২১০ রানের ইনিংস খেলার পর ৬/৩৭ নিয়ে ফলো-অনের কবলে পড়া মনিকাল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৩ রানের জয় এনে দেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনটিমাত্র টেস্ট ও তিপ্পান্নটি ওডিআইয়ে[১][২][৩] অংশগ্রহণ করেছেন ক্রেগ ইভান্স। ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে কলম্বোয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ৯ অক্টোবর, ২০০৩ তারিখে পার্থে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
টেস্টে তেমন সফলতা না পেলেও একদিনের আন্তর্জাতিকে নিজেকে বেশ মেলে ধরেছিলেন। ১৯৯৬ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৬ সালে কলম্বোর এসএসসিতে সিঙ্গার বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ৯৬ রান করেছিলেন।
সীমিত ওভারের খেলায় শুরুরদিকে সফলতা পান। ২২ বছর বয়সে ১৯৯২ সালে ভারতের প্রথম সফরে একমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নেন। ১৯৯৬ সালের পূর্ব-পর্যন্ত দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা লাভ করেননি। ঐ বছরই তিনি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এর পাঁচ মাস পর জানুয়ারি, ১৯৯৭ সালে রোমাঞ্চকর ৪০ ও ৪৩ রান তুলেন। খেলাগুলোয় প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষে যথাক্রমে টাই ও ৩ উইকেটের জয় ছিল। ঐ জয়টি দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ওয়ান-ডে সিরিজে জিম্বাবুয়ের প্রথম ওডিআই জয় ছিল।
এরপর থেকে খেলার মান কমতে থাকায় ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বে দলের বাইরে চলে যান। দুইটি টেস্টে ব্যর্থতার স্বাক্ষর রাখাসহ জিম্বাবুয়ের পক্ষে ৪৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়ে মাত্র একটি অর্ধ-শতরান ও ১৯ উইকেটের সন্ধান পান। ক্রিকেটবোদ্ধাদের অনেকেই তাকে প্রতিভাধর খেলোয়াড় হিসেবে গণ্য করলেও অনিয়ন্ত্রিত খেলোয়াড়ের তকমা লাগিয়ে দেয়। এরপর তার আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেটে অংশগ্রহণের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তাসত্ত্বেও, ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশ নিতে থাকেন।
অবসর
২০০২-০৩ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও একটি সেঞ্চুরি করলে দল নির্বাচকমণ্ডলী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবারও তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করে। এ পর্যায়ে তার বয়স ৩৩ বছর ছিল। সফররত পাকিস্তান দলের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেন। প্রথম একদিনের খেলায় পাকিস্তান ৩০২/৪ তুলে। ৩২/৪ অবস্থায় ইভান্স উইকেটে নামেন। ধীরলয়ে সূচনা করে আক্রমণধর্মী খেলা অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে নিয়ে উপহার দেন। এ দুজন ১৩৫ রান তুলে ইভান্স রান আউটের শিকার হন ও জিম্বাবুয়ে জয়ের আশা হতাশায় পরিণত হয়।
ফলশ্রুতিতে, বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনাও তিরোহিত হতে থাকে। তিনটি খেলায় অংশ নিয়ে ব্যর্থ হলে দল নির্বাচকমণ্ডলী তাকে দলের বাইরে রাখে। কেনিয়ার বিপক্ষে খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকেও তাকে বিরত রাখা হয়। তাসত্ত্বেও, ঐ বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের উদ্বোধনী খেলায় তাকে রাখা হয়। সফরকারী দল ইনিংস ও ১৭৫ রানে জয় পায়। পাশাপাশি ক্রেগ ইভান্সেরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা শেষ হয়ে যায়।