ক্যাডেট পোলেন হত্যাকাণ্ড বলতে ২০০৫ সালে ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজে ক্যাডেট শর্মিলা শাহারিন পোলেন হত্যাকাণ্ডকে বোঝায়। কলেজ কর্তৃপক্ষ তার হত্যার বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করেছিল এটিকে একটি আত্মহত্যার ঘটনা বলে।[১][২][৩]
ইতিহাস
পোলেন ছিলো ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের ১২তম গ্রেডের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সে ২০০৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিলো এবং আসন্ন এইচএসসির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।[৪] তার বাবা আবুল বাশার পাটোয়ারী একজন অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনী কর্মকর্তা। ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ তারিখে তাকে কলেজের একটি হল শান্তি হাউসে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ তারিখে তার বাবা কগনিজেন্স কোর্ট নং -১ এ একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।[৫] ২০০৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তার বাবা এবং মা তাপসী কাওসার মজুমদার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণে অস্বীকার করার অভিযোগ এনে পুলিশ রিপোর্টকে খারিজ করেছিলেন এজন্য যে তাতে পোলেন আত্মহত্যা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিলো। তারা কলেজের অ্যাডজাস্টেন্ট মেজর নাজমুলকে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করেছিল এবং অভিযোগ করেছিল যে অতীতে তিনি পোলনকে যৌন হেনস্তা করেছিলেন।[৬] কলেজ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সেনাবাহিনীর সদর দফতর তাদের নিজস্ব তদন্ত করেছিলো।[৪]
আদালত এই ঘটনার তদন্তের জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছিলো। পুলিশের তদন্তের সাথে সিআইডিও একমত হয়েছিল। পাটোয়ারী আদালতকে বিচারিক তদন্তের জন্য বললে আদালত ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর হোসেনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তদন্তকালে জাহাঙ্গীর হোসেনকে বদলি করা হয় এবং ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। ২২ শে মার্চ ২০১৩-তে বিচারিক তদন্তে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে হত্যায় পাঁচজনকে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত করে। অভিযুক্তরা হলেন কলেজের অ্যাডজাটেন্ট মেজর নাজমুল হক, ডেপুটি অ্যাডজাটেন্ট মেজর মনির আহমেদ চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক আবুল হোসেন, সার্জেন্ট নওশের-উজ-জামান এবং কলেজ-রক্ষী হেনা বেগম।[৭]
তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, তাকে একটি ভোঁতা যন্ত্র দিয়ে আঘাত ও নির্যাতন করা হয়েছিল এবং অচেতন অবস্থায় ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল। তাকে অ্যাডজাস্টেন্ট মেজর নাজমুল শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিল। তারপরে তাকে একটি স্কার্ফ দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে এটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া যায়।[৪]
১৪ ই জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে আসামির বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল।[৭][৮] ১৬ ই মে, ২০১৬-তে, বাংলাদেশ হাই কোর্ট এই মামলার কার্যক্রম বন্ধের জন্য অভিযুক্তদের দ্বারা আপিল গঠন করেছিল।[৫] ৫ জুন ২০১৭-তে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশ হাইকোর্টের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসামিদের আপিলের আবেদনকে বাতিল করে দেয়। এরপর ময়মনসিংহের নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার অনুমতি দেয়।[৯]
অভিযুক্ত নাজমুল এর পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ সেনা সদর দফতরে অবস্থান করছেন। সার্জেন্ট নওশের-উজ-জামানকে ওয়ারেন্ট অফিসার হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল এবং রাঙ্গামাটি সেনানিবাসে প্লাটুন কমান্ডার হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন। অধ্যাপক আবুল হোসেন বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত এবং ঢাকায় বসবাস করছেন, হেনা বেগম এখনও কলেজে কর্মরত আছেন। মেজর মুনির আহমদ নিখোঁজ রয়েছেন।[৪]
তথ্যসূত্র