কেভিন তাতেন্দা কাসুজা (ইংরেজি: Kevin Kasuza; জন্ম: ২০ জুন, ১৯৯৩) মুতারে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী জিম্বাবুয়ীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য তিনি। ২০২০-এর দশকের সূচনালগ্ন থেকে জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ইস্টার্ন লায়ন্স, মাউন্টেনিয়ার্স, মাউন্টেনিয়ার্স বি দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন কেভিন কাসুজা। এছাড়াও, ডানহাতে অফ ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে উইকেট-রক্ষণে পারদর্শী তিনি।
শৈশবকাল
পরিবারের সাহচর্য্যে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন কেভিন কাসুজা। মুতারের চিরোওয়াকামি প্রাইমারি স্কুলে প্রথমবারের মতো খেলেন। প্রশিক্ষক ফস্টার মুপিতার পরিচালনায় নিজেকে ক্রিকেটের দিকে আত্মনিবেশ ঘটান। এরপর, মুতারে বয়েজ হাই স্কুলে ফারাই চারি’র ছত্রচ্ছায়ায় আসেন। তারা উভয়েই তার উত্তরণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। তিনি দ্রুততার সাথে অগ্রসর হন। মনিকাল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে প্রতিনিধিত্ব করেন। ঐ দলের অনূর্ধ্ব-১৩ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলতে থাকেন। অনূর্ধ্ব-১৪ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরূপে শতরানের ইনিংস খেলেন।
মুতারেভিত্তিক ক্লাব ক্রিকেটে খেলতে শুরু করেন। দ্বিতীয় স্তরের সদস্য থাকাকালীন মুতারে স্পোর্ট ক্লাবে প্রথম অংশ নেন। তবে, আয়োজক দল হিসেবে প্রতিপক্ষ ছিল টাইটান্স। বিদ্যালয় ও ক্লাব ক্রিকেটের সূচনালগ্নে উইকেট-রক্ষণেও পারদর্শী ছিলেন। তবে, সময়ের ব্যবধানে তিনি কেবলমাত্র ব্যাটিংয়েই মনোনিবেশ ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন।[১]
দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের সদস্যরূপে উপর্যুপরী অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলে প্রথমবারের মতো সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হন। চাপের মুখে থেকেও প্রথম খেলায় তার ৫৪ রানের ইনিংসের ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা দল সাত উইকেটে জয় পায়।[২] দ্বিতীয় অর্ধ-শতরানের ইনিংসটিও বেশ চাপের মধ্যে ছিল। ৬৮ রান তুলেন কিন্তু, জিম্বাবুয়ে দলের ইনিংস গুটিয়ে গেলে খেলায় তারা ৩৯ রানে পরাজিত হয়।[৩]
অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের ক্রিকেটে পাঁচটি খেলায় অংশ নেন। দুইটি অর্ধ-শতরান সহযোগে ৫ খেলায় ১২৩ রান তুলেন। সবগুলো খেলাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছিল। ২৪.৬০ গড়ে রান সংগ্রহের পাশাপাশি তিনটি ক্যাচ ও উইকেট-রক্ষক হিসেবে একটি স্ট্যাম্পিং করেন।[৪]
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
২০১১ সাল থেকে কেভিন কাসুজা’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রয়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জোড়া শতক করে সকলের নজরে আসেন। এ পর্যায়ে বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দল মাউন্টেনিয়ার্সের সদস্যরূপে দলকে সঙ্কটময় অবস্থান থেকে তুলেন আনেন ও নিজের শক্তিমত্তা তুলে ধরেন। উভয়ক্ষেত্রেই তার দল জয়লাভ করেছিল। এছাড়াও, অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে দলের পক্ষে খেলেছেন।[৫]
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ তারিখে মাউন্টেনিয়ার্সের সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। তিনি ও টেন্ডাই চাতারা মাতাবেলেল্যান্ড তুস্কার্সের বিপক্ষে দলকে পাঁচ উইকেটে জয় এনে দেন।[৬]
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুইটি শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। মাউন্টেনিয়ার্সের পক্ষে লোগান কাপে অপরাজিত ১৩২ রান তুলে সকলের পাদপ্রদীপে চলে আসেন। কিকিতে মিড ওয়েস্ট রাইনোসের বিপক্ষে ঐ খেলায় গ্যারি ব্যালেন্সের শতরানের কল্যাণে প্রতিপক্ষ দল ৩০৯ রান তুলে। তবে, শূন্য রানেই তাকে বিদেয় করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। এর জবাবে মাউন্টেনিয়ার্সের সংগ্রহ ৭৭/৬ থাকাকালে তিন নম্বরে নামা কেভিন কাসুজাকে যোগ্য সঙ্গ দেন শিঙ্গি মাসাকাদজা। তবে, তেমন সঙ্গ দিতে না পারলেও তাপিয়া মুফুদজা’র সাথে শেষ উইকেটে ৯২ রান যুক্ত করেন। দলকে তিনি কোনরকমে ২২৪ রানে নিয়ে যান। তবে, দূর্বলমানের ব্যাটিংয়ের ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে মাউন্টেনিয়ার্স তেমন সুবিধে করতে পারেনি। চূড়ান্ত দিন তিন উইকেট হাতে রেখে তার দল জয়লাভ করতে সক্ষম হয়। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ২৭ রান করেছিলেন। এটিই কেভিন কাসুজা’র খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা মুহূর্ত ছিল। গ্যারি ব্যালেন্সের ক্যাচ তালুবন্দী করতে না পারায় তিনি বেশ চাপে ছিলেন। তবে, সঠিক সময়ে শতরানের ইনিংস খেলে এ গ্লানি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হন।[৭]
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় শতরানের ইনিংসটি খেলেন। প্রো৪০ প্রতিযোগিতার খেলায় সাউদার্ন রক্সের বিপক্ষে ১২৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। দলের সংগ্রহ ২২৯ হলেও তার দল ঐ খেলায় টিকে থাকে। কিন্তু, দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি খুব দ্রুত বিদেয় নেন। দলের বিপর্যয়ে তিনি এগিয়ে আসেন। শুধুমাত্র নিজস্ব প্রতিভা নয় বরঞ্চ চরম দূর্যোগেও তিনি নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন।[৮] এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন যে, পূর্বের তুলনায় তার শারীরিক ভারসাম্য বজায় থাকায় এ ধরনের ব্যাটিংয়ের উত্তরণ ঘটে। কোচ গ্যারি ব্রেন্ট তাকে সর্বদাই বলতেন যে, যদি শতরান করতে চাও তাহলে শারীরিকভাবে মজবুত থেকো।[১]
ডিসেম্বর, ২০১১ সালে কোকাকোলা প্রো৫০ চ্যাম্পিয়নশীপে মাউন্টেনিয়ার্সের পক্ষে আরও একটি শতরানের ইনিংস খেলে দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টিতে আসেন। ১৯৯ রানে পিছিয়ে থেকে তিনি ১১০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এ সংগ্রহের জন্যে তিনি মাত্র ৯১ বল খরচ করেন। প্রতিপক্ষীয় মাতাবেলেল্যান্ড তুস্কার্সের বোলারদের বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ান। তুস্কার্সের পরাজয়বরণে তার এ ইনিংস বেশ কার্যকর ছিল।[৯]
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন কেভিন কাসুজা। ১৯ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে হারারেতে সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে ঢাকায় স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
২০১৯-২০ মৌসুমে শ্রীলঙ্কা দল জিম্বাবুয়ে সফরে আসে। এ সফরকে সামনে রেখে জানুয়ারি, ২০২০ সালে তাকে জিম্বাবুয়ের টেস্ট দলে অংশগ্রহণের জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়।[১০] ১৯ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে তার টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়।[১১]
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ