বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, যা সংক্ষেপে কর্ণফুলী টানেল নামেও পরিচিত, হলো বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে অবস্থিত একটি সড়ক সুড়ঙ্গ। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সুড়ঙ্গ পথটির উদ্বোধন করেন।[২] এই সুড়ঙ্গটি চট্টগ্রাম শহরের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হয়ে নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে গিয়ে নদীর অপর প্রান্তে পৌঁছে নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করেছে। এই সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হয়।[৩] কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। এই সুড়ঙ্গটি বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।[৪][৫] চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এই সুড়ঙ্গের নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।[৬] কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে সুড়ঙ্গটি ১৫০ ফুট গভীরে অবস্থিত।[৬]
ইতিহাস
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।[৬] শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।[৭] ২৮ অক্টোবর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।[৮]
২০২৩ সালের সংশোধিত বাজেটে, প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এছাড়া, নির্মাণ ব্যয়ও ১৬৪ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়।[৯]
অর্থায়ন
সুড়ঙ্গ নির্মাণে ব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।[১০][১১][১২]। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং এর ঢাকা সফরে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসাবে দুই শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকার করছে।[১৩][৬][১৪]
টোল
কর্ণফুলী টানেলের টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে।[১৫]
টোল হার
যানবাহনের ধরন
|
টোল হার
|
ব্যক্তিগত গাড়ি এবং পিক আপ ট্রাক
|
২০০
|
মাইক্রোবাস
|
২৫০
|
বাস (< ৩১ আসন)
|
৩০০
|
বাস (৩২ আসন বা তার অধিক)
|
৪০০
|
বড় বাস (ত্রিএক্সএল)
|
৫০০
|
ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত)
|
৪০০
|
ট্রাক (৮ টন)
|
৫০০
|
ট্রাক (১১ টন)
|
৬০০
|
ত্রিএক্সএল ট্রেলার
|
৮০০
|
ফোরএক্সএল ট্রেলার
|
১০০০
|
এক্সএল প্রতি অতিরিক্ত চার্জ
|
২০০
|
নির্মাণ
নদীর নিচের সুড়ঙ্গটির নির্মাণ কাজ করে চীনা কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। সুড়ঙ্গের বিভিন্ন অংশ চীনের ঝেনজিয়াংয়ে উত্পাদন করে বাংলাদেশে আনা হয়। ২০২২ সালের মধ্যে সুড়ঙ্গটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৩ সাল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ অব্যাহত ছিল। টানেলের প্রতি টিউবের প্রস্থ ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ১৬ ফুট। এছাড়া, দুটি টিউবের মধ্যবর্তী ব্যবধান ১১ মিটার।[১৩] সুড়ঙ্গটির মূল দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। তবে এর সঙ্গে ৫.৩৫ কিলোমিটারের সংযোগ সড়ক যুক্ত।[১৩]
আর্থিক ক্ষতি
কর্ণফুলী টানেল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে উদ্বোধনের পর থেকে প্রথম একবছরে দৈনিক আয়ের চেয়ে চারগুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে।[১৬] মূলত আশানুরূপ যান চলাচল না করায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে টানেল কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে
২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত এই টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার ৯১০টি যানবাহন চলাচল করেছে, যেখান থেকে দৈনিক গড় আয় ১০ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, বিপরীতে দৈনিক পরিচালন ব্যয় ৩৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। টানেল থেকে পর্যাপ্ত আয় না হওয়ায় এসব ব্যয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকেই প্রদান করা হচ্ছে।[১৭]
তথ্যসূত্র