ইরানের অর্থনীতি বৃহৎ সরকারী ক্ষেত্র সংবলিত মিশ্র ও ক্রান্তিকালীন অর্থনীতি। এটি ক্রয়ক্ষমতা সমতা অনুযায়ী বিশ্বের আঠারতম অর্থনীতি।[৭] ইরানের অর্থনীতির ৬০ ভাগ কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত।[২২][২৩] এই অর্থনীতি তেল ও গ্যাস উৎপাদন প্রধান, যদিও তেহরান স্টক এক্সচেঞ্জে চল্লিশের অধিক শিল্প জড়িত। তেহরান স্টক এক্সচেঞ্জ গত দশকের বিশ্বের অন্যতম সফল স্টক এক্সচেঞ্জ।[২৪][২৫] বিশ্বের ১০% তেল ও ১৫% গ্যাস সঞ্চয়সহ ইরানকে পরমাণু শক্তিধর বলে গণ্য করা হয়।[২৬][২৭][২৮][২৯]
ইরানের অর্থনীতিতে ধস নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনের পর ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে এর প্রভাব পড়ায়। ফলে প্রায় ৬০০,০০০ ব্যারেল তেল রফতানি হ্রাসসহ অর্ধেক আমদানি ও রফতানি বন্ধ হয়ে যায়।[৩০][৩১] ইরানের অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হল যাকে তারা বনিয়াদ নামক বহু ধর্মীয় ফাউন্ডেশনের উপস্থিতি। এদের সম্মিলিত বাজেটের পরিমাণ কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয়ের চেয়েও ৩০ শতাংশ বেশি।[৩২]
৫৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পার্সিরা লিডিয়ার ক্রয়েসুসকে পরাজিত ও বন্দী করে। তারা স্বর্ণকে মুদ্রার প্রধান ধাতব পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করে।[৩৩][৩৪] বাইবেলীয় বুক অব এস্থার-এ উল্লেখ রয়েছে যে প্রথম ক্ষয়ার্ষর রাজত্বকালে (৪৮৫-৪৬৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) সুসা থেকে ভারত ও কুশ রাজ্যের সীমান্তবর্তী প্রদেশ পর্যন্ত দূত প্রেরণ করা হয়। হিরোডোটাসের সময়ে (আনু. ৪৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) পারস্য সাম্রাজ্যের সুসা শহরের কারুন (২৫০ কিলোমিটার পূর্বে) থেকে স্মার্না (বর্তমান ইজমির, তুরস্ক) বন্দরে এজিয়ান সাগর পর্যন্ত ২,৮৫৭ কিলোমিটারের রাজপথ ছিল।
ইরানের আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা শুরু হয় ১৮২০-এর দশকে যখন আমির কবির সনাতন কৃষি ব্যবস্থায় একাধিক পরিবর্তন নিয়ে আসেন। এসব পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে উন্নত বীজ আমদানি ও অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর। ১৮৯৮ সালে রাশিরার জারতন্ত্রী সরকার লাজার পলিয়াকভের এস্তেকরাজি ব্যাংক নিয়ে আসে এবং পরে ১৯২০ সালে এক চুক্তির মাধ্যমে তা ইরানি সরকারের আওতাধীন হয়।[৩৫] ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত এটি ব্যাংক ইরান নামে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং এই সময়ের পরে নতুন প্রতিষ্ঠিত কেশবার্জি ব্যাংক নামধারণ করে।[৩৫][৩৬]
১৮৮৫ সালে পার্সিয়ার সকল বড় শহরের অফিস নিয়ে ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব পার্সিয়া প্রতিষ্ঠা করা হয়।[৩৫]রেজা শাহ পহলভি (রাজত্বকাল ১৯২৫-৪১) দেশের সামগ্রিক কাঠামো উন্নত করেন, শিক্ষামূলক সংস্কার নিয়ে আসেন, বৈদেশিক প্রভাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, আইনি ব্যবস্থার সংস্কার করেন এবং আধুনিক শিল্পকারখানা চালু করেন। এই সময়ে ইরানে সামাজিক পরিবর্তন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখা যায়।[৩৬]
১৯৪১ সালে রেজা শাহ পহলভির সিংহাসন ত্যাগের পর তার পুত্র মোহাম্মদ রেজা শাহ পহলভি (রাজত্বকাল ১৯৪১-৭৯) সিংহাসনে আরোহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে (১৯৩৯-৪৫) এবং পরবর্তী কয়েক বছরে ইরানের অর্থনীতিতে কোন মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি। তবে ১৯৫৪ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তেলের আয় ও টেকসই বৈদেশিক সহায়তা বৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগ, বিশেষ করে সরকারি খাতে, বৃদ্ধি পায় ও দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। পরবর্তী কালে, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়, মুদ্রার (রিয়াল) মান কমে যায়, এবং বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি দেখা যায়। এই সকল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রণীত আর্থিক নীতির কারণে ১৯৬১ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ও মাথাপিছু আয় কমতে থাকে।[৩৬]
১৯৭৯ সালের পূর্বে ইরান দ্রুত উন্নতি লাভ করে। ঐতিহ্যগতভাবে কৃষিনির্ভর দেশটি ১৯৭০-এর দশকের শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে যায়।[৩৭][৩৮]ইরানি বিপ্লবের কিছুদিন পূর্বে ১৯৭৮ সালে মূলধন পাচারের পরিমাণ $৩০ থেকে $৪০ বিলয়নে পৌঁছালে এই প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে।[৩৯]
১৯৭৯ সালে জাতীয়করণের পর এবং ইরাক-ইরান যুদ্ধ শুরু হলে অর্থনীতির ৮০ ভাগ সরকারি নিয়ন্ত্রণের অধীনে চলে আসে।[৩২] ইরাকের সাথে আট বছরের যুদ্ধে কমপক্ষে ৩০০,০০০ জন ইরানি নিহত এবং আরও ৫০০,০০০ জন আহত হয়েছিল। এই যুদ্ধের ব্যয় ছিল প্রায় $৫০০ বিলিয়ন।[৪০][৪১]
১৯৮৮ সালে সকল বৈরিতা দূর হওয়ার পর সরকার দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবহন, উৎপাদন, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও শক্তি খাতে (পারমাণবিক শক্তিসহ) উন্নয়ন এবং পার্শ্ববর্তী দেশের যোগাযোগ ও পরিবরণ ব্যবস্থার সাথে ইরানের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার যোগসূত্র স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়।[৪২]
ইরানি বিপ্লবের পর থেকে সরকারের দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্যসমূহ ছিল অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, পূর্ণ কর্মসংস্থান, ও আরামদায়ক জীবনযাত্রার মান, কিন্তু ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ইরানের জনসংখ্যা দ্বিগুনের বেশি হয়ে যায় এবং এর মধ্যবয়স্ক জনসংখ্যার পরিমাণ কমে যায়।[৪৩] যদিও বেশিরভাগ ইরানিই কৃষক, ১৯৬০-এর দশক থেকে কৃষিজ উৎপাদনও ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। ১৯৯০-এর দশকের শেষভাগ থেকে ইরান খাদ্য আমদানি শুরু করে। এই সময়ে গ্রামাঞ্চলে আর্থিক দুর্ভোগের কারণে বিপুল পরিমাণ জনগণ শহরে চলে আসতে থাকে।[৩৯]
দুই-তৃতীয়াংশের অধিক জনগণ (৭৪ মিলিয়ন জনগণ) ৩০ বছরের নিচে। নেট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভর্তির পরিমাণ প্রায় ১০০%, যা থেকে বুঝা যায় এখানে জনসংখ্যার বৃদ্ধি পাচ্ছে।[৪৪][৪৫][৪৬]
২০০৫ সালে ইরানের জাতীয় বিজ্ঞান বাজেট ছিল প্রায় $৯০০ মিলিয়ন, যা ১৯৯০ সালের পরিমাণের প্রায় কাছাকাছি।[৪৭] ২০০০ সালের শুরুর দিকে ইরান তাদের জিডিপির ০.৪% গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ করে, যা বিশ্বের গড় বরাদ্দের চেয়ে ১.৪% পিছনে।[৪৮] ২০০৯ সালে সরকারের মাঝারিমানের সীমা ২.৫% এর বিপরীতে গবেষণা খাতে জিডিপির ০.৮৭% বরাদ্দ রাখা হয়।[৪৯] ২০১১ সালে ইরান বৈজ্ঞানিক প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বে প্রথম স্থান এবং ২০১২ সালে বৈজ্ঞানিক উৎপাদনে ১৭তম স্থান অধিকার করে।[৫০][৫১]
ইরানের শিল্প খাত বিস্তৃত ও বৈচিত্রপূর্ণ।[৫২]দি ইকোনমিস্ট-এর প্রতিবেদন অনুসারে শিল্পোন্নত দেশের তালিকায় ইরানের অবস্থান ৩৯তম, এবং ২০০৮ সালের এখানে প্রায় $২৩ বিলিয়ন মূল্যের শিল্প পণ্য উৎপাদিত হয়।[৫৩] ২০০৮ সালে সংগঠিত আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটে নিজেদের দূরে রেখে ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালে ইরান বার্ষিক শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধিতে ৬৯তম অবস্থান থেকে ২৮তম অবস্থানে পৌঁছায়।[৫৪]
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে শিল্প খাত (খনি ও উৎপাদন) ও কৃষি খাতের পর তৃতীয় বৃহত্তম খাত ছিল সেবা খাত। ২০০৮ সালে স্থুল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ছিল প্রায় $৩৮৪.৩ বিলিয়ন এবং মাথাপিছু স্থুল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ছিল $৫,৪৭০।[৫৫]
পরবর্তী পাঁচ বছরে জাতীয় স্থুল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দ্বিগুণ হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়।[৫৬] তবে বাস্তবিক অর্থে স্থুল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করা হয় ২০১২-১৬ পর্যন্ত বছরে গড়ে ২.২%, যা বেকারত্বের হার কমানোর জন্য অপর্যাপ্ত।[৫৭] তাছাড়া তেল রফতানি অর্ধেক হ্রাস পাওয়ায় অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।[৫৮][৫৯] ২০১২ সালে ইরানি রিয়ালের মূল্য অর্ধেক কমে যায়, ফলে ইরান আমদানির বিকল্প শিল্প ও প্রতিরোধকারী অর্থনীতিতে পরিণত হয়।[৫৮][৬০][৬১]আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিবেদন অনুসারে ইরানের অর্থনীতি হল পরিবর্তনমূলক অর্থনীতি, যা পরিকল্পিত অর্থনীতি থেকে বাজার অর্থনীতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে।[৬২]
জাতিসংঘ ইরানের অর্থনীতিকে অর্ধ-উন্নত হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করে।[৬৩] ২০১৪ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরানের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বিশ্লেষণে ইরান ১৪৪টি দেশের মধ্যে ৮৩তম স্থান অধিকার করে।[৬৪] রাজনৈতিক, নীতি ও তারল্যের স্থিতিশীলতাকে ইরানে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সমস্যাপূর্ণ উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মূলধন যোগানে সমস্যাও অপর একটি বড় কারণ, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে। ইরানের অধিকাংশ আর্থিক সম্পদ উৎপাদনের পরিবর্তে বাণিজ্য, চোরাচালান ও ফটকা ব্যবসা থেকে আসে।[৬৫] গোল্ডম্যান স্যাক্সের প্রতিবেদন অনুসারে ইরানের একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।[৬৬][৬৭] ইরানের রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানি ২০১৪ সালে বলেন যে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে ইরানের শীর্ষ দশ অর্থনীতির দেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।[৬৮]
ইরানের পঞ্চম পরিকল্পনা হল একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদক্ষেপের ধারাবাহিক কার্যক্রম, যার মধ্যে রয়েছে সংস্কারে ভর্তুকি, ব্যাংকিং খাতে পুনঃপুজিবাদ, তারল্য, কর, শুল্ক, নির্মাণ, কর্মসংস্থান, দেশব্যাপী পণ্য ও সেবা বণ্টন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং উৎপাদনশীলতা। এর অন্যান্য প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জনস্বাস্থ্য ও বৈদেশিক সম্পর্ক।[৭০] এর লক্ষ্য ছিল দেশটিকে ২০১৫ সালের মধ্যে স্বাবলম্বী করে তোলা।[৭১][৭২][৭৩][৭৪] এই সংস্কারের লক্ষ্য ছিল দেশটির প্রধান অসচ্ছলতা ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের উৎস খুঁজে বের করা এবং সকল আর্থিক খাতকে পুনর্গঠন করা। যেমন - শক্তি খাতে ভর্তুকি হ্রাস করে ইরান দেশের শিল্পকে আরও দক্ষ ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করে তোলে। ২০১৬ সালের মধ্যে ইরানের এক তৃতীয়াংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন থেকে এসেছে। ভর্তুকি হ্রাস করার ফলে ব্যাংকিং খাতে সম্ভাব্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়, কিন্তু তা সরাসরি ব্যাংকে প্রভাব ফেলবে পরিকল্পনা এমন ছিল না।[৭৫]
জাতীয় পরিকল্পনা
ইরানের বাজেট পরিকল্পনা করে ইরানের ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা সংস্থা এবং সরকার কর্তৃক সংসদে প্রস্তাব পেশ করা হয় বছরের শেষে। মজলিস কর্তৃক বাজেটের অনুমোদন পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যংক বিস্তারিত আর্থিক ও ঋণ নীতি অনুমোদনের জন্য অর্থ ও ঋণ পরিষদের নিকট উপস্থাপন করে। এরপর, পঞ্চবার্ষিকী অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে এই নীতির প্রধান উপাদানসমূহের যোগসূত্র স্থাপন করা হয়।[৩৬] ২০১০-১৫ সালের জন্য পঞ্চম উন্নয়ন পরিকল্পনা এমনভাবে নকশা করা হয় যেন জনগণ ক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে এবং জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির বিকাশ ঘটানো যায়।[৭৬] এই পরিকল্পনাটি দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নতির একটি কৌশল "রূপকল্প ২০২৫"-এর অংশ।[৭৭]
২০১৬-২০২১ সময়কালের জন্য নির্ধারিত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনার তিনটি অগ্রাধিকার পাওয়া বিষয় হল:
ইরাকের সাথে যুদ্ধের পর সরকার ঘোষণা দেয় অধিকাংশ শিল্পকে বেসরকারিকরণ করা হবে এবং অর্থনীতিকে স্বাধীন ও বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে।[৭৯] সংসদে জাতীয়তাবাদী সংখ্যাগরিষ্ঠদের বিরোধিতার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে বিক্রি করা শুরু হয়। ২০০৬ সালে অধিকাংশ শিল্প তথা ইরানের অর্থনীতির শতকরা ৭০ ভাগই রাষ্ট্র-মালিকানায় থেকে যায়। ভারী শিল্পগুলো তথা স্টিল, পেট্রোকেমিক্যাল, কপার, অটোমোবাইল ও যন্ত্রাংশের অধিকাংশই সরকারি খাতে রয়ে যায় এবং অধিকাংশ হালকা শিল্পগুলো বেসরকারী খাতে চলে যায়।[৫৫]
শ্রমশক্তি
ইরানি বিপ্লবের পর সরকার জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে যা প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার হার বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ২০০৮ সালে ৮৫% প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা শিক্ষিত ছিল, যা এই অঞ্চলের গড় সাক্ষরতার হার ৬২% থেকে অনেক বেশি।[৮০][৮১] ২০১৩ সালে মানব উন্নয়ন সূচক ছিল ০.৭৪৯, যার ফলে ইরান "উচ্চ মানব উন্নয়ন" তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
প্রতি বছর ৭৫০,০০০ নতুন শ্রমশক্তির দ্রুত কর্মসংস্থানে প্রবেশের জন্য বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রয়োজন শতকরা ৫ ভাগের উপরে।[৮২] কৃষি স্থুল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে ১০% অবদান রাখে এবং শ্রমশক্তির ছয় ভাগের এক অংশ এতে ব্যয় হয়। ২০১৭ সাল মোতাবেক, শিল্প খাত তথা খনি, উৎপাদন ও নির্মাণ, স্থুল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে ৩৬% অবদান রাখে এবং ৩৫% শ্রমশক্তিকে কর্মসংস্থান প্রদান করে।[৭] খনিজ পণ্য, বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম ইরানের ৮০% রফতানি আয়ে অবদান রাখে, যদিও খনিতে ১% এরও কম শ্রমশক্তি ব্যয় হয়।[৪৯] ২০০৪ সালে সেবা খাত ছিল স্থুল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অন্যতম বড় খাত, যা ৪৮% অবদান রাখে এবং ৪৪% শ্রমশক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।[৫৫] ২০১২ সাল মোতাবেক তরুণদের (১৫-২৪ বছর) বেকারত্বের হার ২৯.১%, যার ফলে ব্যাপক পরিমাণ মেধা পাচার হচ্ছে।[৫৫][৮৩] সরকারের হিসাব অনুসারে, সরকারি খাতে শ্রমশক্তির ৪০% হয় অতিরিক্ত, নয়ত অযোগ্য।[৮৪]
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; IMF111 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑Iles, Toby (মার্চ ৫, ২০১৪)। প্যাট ট্যাকার, সম্পাদকগণ। "Iran: risk assessment" (ইংরেজি ভাষায়)। Economist Intelligence Unit (subscription required)। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৯।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: সম্পাদক প্যারামিটার ব্যবহার করছে (link)
↑Balamir Coşkun, Bezen (Winter ২০০৯)। "Global Energy Geopolitics and Iran"(পিডিএফ)। Uluslararası İlişkiler (ইংরেজি ভাষায়)। 5 (20): 179–201। এপ্রিল ১, ২০১৪ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৯।
↑গেসারি, আলি (২০০৯)। Contemporary Iran: Economy, Society, Politics (ইংরেজি ভাষায়)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ৭–৮ (পেপারব্যাক সংস্করণ)। আইএসবিএন978-0-19-537849-8।
↑"Country Reports – Iran]. UNESCO" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০০। Archived from the original on ১০ জুন ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৯।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑"Iranian unemployment rate not reduced to target" (ইংরেজি ভাষায়)। প্রেস টিভি। জানুয়ারি ২৬, ২০১০। Archived from the original on সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৯।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑"Table H"(পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। United Nations Development Program (2009)। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৯।
↑মালেকজাদে, রেজা; মকরি, আজারাক্ষ; আজারমিনা, পেজমান। "Medical Science and Research in Iran" (ইংরেজি ভাষায়)। Academy of Medical Sciences of Iran। ১৭ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৯।
↑ কখ"The foreign trade regime of the Islamic Republic of Iran"(পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। Ministry of Commerce (Iran)। ২০০৯। Archived from the original on ১০ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৯।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑"Iran at a glance: 2012-16"। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ ডিসেম্বর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৯।
↑ কখদারেইনি, আলি আকবর (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "Iran Leader Unveils 'Economy of Resistance'"। এবিসি নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৯।
↑ব্লাস, জাভিয়ার (২৮ নভেম্বর ২০১২)। "Sanctions take heavy toll on Iran"। ফিনান্সিয়াল টাইমস (subscription required) (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৯।
↑"The N-11: More Than an Acronym"(পিডিএফ)। গোল্ডম্যান স্যাক্স (ইংরেজি ভাষায়)। মার্চ ২৮, ২০০৭। সেপ্টেম্বর ১১, ২০০৮ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৯।
↑"Iran Investment Monthly"(পিডিএফ)। তর্কোয়াইস পার্টনার্স (ইংরেজি ভাষায়)। জানুয়ারি ২০১১। ৯ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৯।
↑"Iran – Country Brief" (ইংরেজি ভাষায়)। বিশ্ব ব্যাংক। সেপ্টেম্বর ২০১০। ২০১১-০২-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৯।
↑"Planned Economic Reforms"। আতিয়েহ বাহার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৮। মে ১৩, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৯।
↑"Iran Investment Monthly"(পিডিএফ)। তর্কোয়াইস পার্টনার্স (ইংরেজি ভাষায়)। অক্টোবর ২০১০। ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৯।
↑আয়সে, ভ্যালেনটাইন; ন্যাশ, জেসন জন; লেল্যান্ড, রাইস (জানুয়ারি ২০১৩)। The Business Year 2013: Iran। লন্ডন: দ্য বিজনেস ইয়ার। পৃষ্ঠা ৪১। আইএসবিএন978-1-908180-11-7। ২০১৬-১২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৯।
↑"Overview"। বিশ্ব ব্যাংক (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৯।
↑"دسترسی غیر مجاز" [Decentralization key to solving economic problems]। ইরান ডেইলি। ১২ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯।