ইভো মোরালেস বলিভিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আদি ও মূল জনগোষ্ঠীর একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। বলিভিয়ার জনসংখ্যার ৬০ ভাগই আদিবাসী। ক্ষমতা হাতে আসার পর মুভমেন্ট টু ওয়ার্ডস সোশ্যালিজমের শীর্ষ নেতা মোরালেস বলিভিয়ায় একের পর এক জনহিতকর নীতি প্রণয়ন করতে শুরু করেন।[১][২] গণ বিক্ষোভের মুখে ১০ নভেম্বর ২০১৯ তিনি পদত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি মেক্সিকোতেঅ্যাসাইলাম হিসেবে রয়েছেন।
জন্ম
ইভো মোরালেসের জন্ম ১৯৫৯ সালের ২৬ অক্টোবর। আদিবাসী এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে তার শৈশব কেটেছে। বালক বয়সেই বাবা ডিওনিস্তো মোরালেসের সঙ্গে আন্দিজ পর্বতমালায় গবাদিপশু চরাতে যেতে হতো তাকে। মা-বাবা ও ভাইবোনদের সঙ্গে বাস করতেন এক কুটিরে। ইভোর মায়ের নাম মারিয়া মামানি। মা-বাবার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ছোটবেলায়ই কৃষিপণ্য বিক্রি করতে সম্প্রদায়ের অন্যান্য লোকের সঙ্গে ১৫ দিনের হাঁটা পথে বহু দূরের বাজারে যেতে হতো তাকে। ফেরার সময় বাজার থেকে খাবারও কিনে আনতে হতো। তাই আসা-যাওয়ায় ছিল সমান পরিশ্রম। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে মোরালেস পরবর্তী সময়ে বলেন, 'হাজার তারকার হোটেল ছাড়া তখন আমি কোথাও রাত কাটাতাম না।[১][২]
লেখাপড়া
ছেলেবেলায়ই প্রবল আগ্রহ ছিল তার পড়াশোনার প্রতি। কিন্তু পরিবারের সামর্থ্য সীমিত। তাই বাড়ি থেকে তিন মাইল দূরের এক ছোটোখাটোো বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে স্প্যানিশ ভাষা পড়তে ও লিখতে শিখেন তিনি। কিন্তু এখান থেকে শিক্ষা অর্জনের পরিপূর্ণ স্বাদ মেটেনি। তাই কোথাও কোনো শিক্ষক এসেছেন শুনলে ছুটে যেতেন তার কাছে। ইভোর সম্প্রদায় ইভোকে জীবনের তিনটি মূলনীতি শিখিয়ে দিয়েছিল : মিথ্যা বলো না, চুরি করো না আর দুর্বল হবে না। বেশি দূর পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। জীবিকার তাগিদে কখনো রুটি বানিয়েছেন, আবার কখনো বা নাম লিখিয়েছিলেন রাজমিস্ত্রীর খাতায়। বলিভিয়ান মিলিটারিতেও সময় দিয়েছেন কিছুদিন। কিন্তু সামরিক জীবন অতটা আকর্ষণীয় মনে হয়নি। তবে খেলার প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। তিনি ছিলেন আইমাদের ফুটবল টিমের অধিনায়ক। ফুটবলার হিসেবেও সে সময় বেশ সুখ্যাতি ছিল তার। ১৯৮৩ সালে বাবা মারা গেলেন। ইভোর বয়স তখন মাত্র ২৩। কৃষিজীবী পরিবারকে বাঁচতে হলে জমিতে ফসল ফলাতে হবে। বাবা নেই তাই সত্যিকার অর্থেই মাঠে নামতে হয় ইভোকে। পারিবারিক জমিতে কোকা উৎপাদন শুরু করেন তিনি। কঠোর পরিশ্রমী আর নিষ্ঠাবান ছিলেন বলে আঞ্চলিক কোকা চাষি ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠতে বেশি দিন সময় লাগেনি।[১]
শৈশব
বলিভিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের ওরুরোতে এক দরিদ্র পরিবারে ইভো মোরালেসের জন্ম। ছোটবেলায় তিনি লামার রাখাল ছিলেন, বাবা-মাকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করতেন। তার ছয় ভাইবোনের মধ্যে চারজনই দুই বছরের আগে অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে মারা গেছে।
আয়মারা ভাষাভাষী গোষ্ঠীর মধ্যে ইভো মোরালেস বেড়ে উঠেছেন। বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষা অর্জনের জন্য তরুণ বয়সে বেশ কষ্ট করেই স্প্যানিশ শিখতে হয়েছিল তাকে। খরার কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে তিনি আশির দশকের শুরুর দিকে কোকো-উৎপাদনকারী এলাকায় চলে যান। তখনই তিনি গানের দল গড়ে তোলেন, ফুটবল খেলায় জড়িয়ে পড়েন। গান আর ফুটবলের কারণে তিনি দেশের বাইরে ভ্রমণের সুযোগ পান।
অবদান
৬৫ শতাংশ আদিবাসীর দেশ বলিভিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কেব্ল কার চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে ইভো মোরালেসের শাসনামলে। দেশের প্রথম স্যাটেলাইটও উৎপেক্ষণ হয়েছে তার আমলেই। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে অগ্রগতিও হয়েছে অনেকটা।
তথ্যসূত্র
↑ কখগইভো মোরালেস, এজি মাহমুদ, দৈনিক কালের কণ্ঠ। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ২৪ অক্টোবর ২০১০ খ্রিস্টাব্দ।