এই নিবন্ধে অপর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে অনেকেই নিবন্ধটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে অপরিচিত। দয়া করে উইকিপিডিয়ার রচনাশৈলি অনুসারে, নিবন্ধটির উন্নয়নে অংশ নিন।(জুলাই ২০১৫)
ইবনে কাসির (আরবি: ابن كثير) (১৩০১–১৩৭৩) ছিলেন একজন মুহাদ্দিস, ফকিহ, মুফাসসির ও ইতিহাসবিদ।[৯][১০] তার পুরো নাম আবুল ফিদা হাফিয ইমাদ উদ্দিন ইসমাঈল ইবন আবু হাফস উমর ইবন কাসির ইবন দূ ইবন কাসির ইবন দিরা আল-কুরায়শী আল-বুসরি আল-শাফিয়ি রা.। তিনি ‘’বিচার দিবসের পূর্বের চিহ্ন’’ নামক বইয়ের লেখক। তার রচিত তাফসিরের জন্য তিনি অধিক প্রসিদ্ধ। এই তাফসিরকে প্রামাণ্য হিসেবে ধরা হয়।
জন্ম ও বংশ
ইবনে কাসির (রহ.) ৭০০ হিজরি মতান্তরে ৭০২ হিজরি সনে সিরিয়ার বসরান মাজদল নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তবে ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থে তাঁর জন্মস্থান সিরিয়ার ‘মুজায়দিল’ নামক স্থানে উল্লেখ রয়েছে (এটি দুর্বল মত)। ইবনে কাসির কুরায়শের বনী হাসালা শাখা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। সন্ত্রান্ত এ গোত্রটির খ্যাতি রয়েছে। তাঁর পিতার নাম খতীব শিহাবউদ্দীন আবু হাফস উমর ইব্ন কাসীর। তিনি বসবাস করতেন বুসরা নগরীর পশ্চিমে অবস্থিত ‘শারকাব্বীন’ গ্রামে।
৭০১ হিজরীতে তার পিতা খতীব শিহাব উদ্দীন ইন্তেকাল করেন। তখন ইবনে কাসির (রহ.) এর বয়স মাত্র তিন বছর।[১১]
শৈশব ও যৌবন
ইবন কাসীর (র) - এর সহোদর আবদুল ওহহাব ৭০৭ হিজরীতে সপরিবারে দামেশকে চলে যান । তার সম্পর্কে ইবনে কাসীরের
মন্তব্য, "তিনি আমাদের সহোদর এবং আমাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহবৎসল ছিলেন । "
ইবন কাসীর (র) হিজরী ৮ম শতাব্দীতে
মামলুক সুলতানদের শাসনামলে তাঁর যৌবনকাল অতিবাহিত করেন। তাতারদের আক্রমণ, একাধিক দুর্ভিক্ষ, হৃদয়-বিদারক দুর্যোগগুলো
তিনি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন । তখন দুর্ভিক্ষে লক্ষ-লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটে । তিনি ফিরিঙ্গীদের সাথে সংঘটিত ক্রুসেড যুদ্ধগুলোও দেখেছেন ।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের প্রতিষ্ঠা, শাসকদের পারস্পারিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদি তাঁর সম্মুখেই সংঘটিত হয় । এতদসত্ত্বেও এ যুগে শিক্ষা-দীক্ষা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে উৎকর্ষ
সাধনের প্রবল উদ্দিপনা পরিলক্কজিত হয় ।
আমীর-উমারাদের আগ্রহ এবং বিজ্ঞান ও শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোর জন্যে অকাতরে দান করার কারণে প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও
বহুসংখ্যক গ্রন্থ রচিত ও সংকলিত হয়।[১২]
কর্মজীবন
আল্লামা যাহাবী -এর পর তিনি উন্মুসসা’ওয়াত তানাকুরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তিনি ‘নুজায়বিয়ায়’ শিক্ষকতা করেন এবং ৭৪৮ হিজরী সনে ফাওকানী বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন।
জ্ঞানের স্বীকৃতি
তার জীবনীতে বিভিন্ন গুণী ব্যক্তি পর্যালাচনায় বুঝা যায় তিনি ইতিহাস শাস্ত্র,হাদীস শাস্ত্র,তাফসীর এবং অঙ্ক শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন । বিভিন্ন খ্যাতিমান ব্যক্তিদের চোখে ইবনে কাসির
১। দাউদী তার প্রশংসা করেছেন এভাবে- ‘আমরা যাদেরকে পেয়েছি তাদের মধ্যে ইব্ন কাসীর (র) হাদীসের মূল পাঠ কণ্ঠস্থকারীদের মধ্যে অগ্রগামী ছিলেন ।
২। হাফিজ যাহাবী বলেন, "তিনি হাদীসসমূহের উৎস নির্ণয় করেছেন, সেগুলো যাচাই-বাছাই করেছেন, গ্রন্থ রচনা করেছেন, তাফসীর গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং এসব ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা গ্ৰহণ করেছেন"।
৩। আল মুজামুল মুখতাস গ্রন্থ প্রনেতা বলেছেন, ‘তিনি ফতোয়াবিশারদ ইমাম, প্রাজ্ঞ ও প্ৰসিদ্ধ মুহাদিছ, বিজ্ঞ ফকীহ এবং হাদীসের বরাত সমৃদ্ধ তাফসীরে সিদ্ধহস্ত।’
৪। আবুল মুহাসিন হুসাইনী বলেছেন, ‘তিনি একই সাথে ফতোয়া দিয়েছেন, শিক্ষকতা করেছেন, তর্কযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, ফিকাহ, তাফসীর ও ব্যাকরণ শাস্ত্ৰে নতুন রচনাশৈলী উদ্ভাবন করেছেন এবং হাদীস বর্ণনাকারী ও হাদীসের সত্যাসত্য বিচারের ক্ষেত্রে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
৫। আল্লামা সুয়ুতী তার সম্পর্কে বলেছেন, তার তাফসীর গ্রন্থটি অভূতপূর্ব, তার পদ্ধতিতে আর কোন তাফসীর গ্রন্থ সংকলিত হয়নি।
শিক্ষকবৃন্দ
ইবনে কাসির শত শত শায়েখ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন ।
এর মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য শায়েখগন হলঃ
১। শায়খ তকী উদ্দীন ইবন তাইমিয়া -(ফকিহ বিষয়ক)
২। সিরিয়ার কাসিম ইবন মুহাম্মদ বিরযালী -(ইতিহাস বিষয়ক)
৩। শায়খ মিযয়ী ইউসুফ ইব্ন আবদুর রহমান জামালুদ্দীন -(হাদিস বিষয়ক) [নোটঃ এই শায়েখের মেয়ে জায়নবকে তিনি বিয়ে করেন]
৪। উস্তাদ হাযরী -(গণিত বিষয়ক)
৫। জনাব ইজুদ্দীন আবু ইয়া’লা
৬। ইবনুল কালানসী
৭। ইবরাহীম ইবন আবদুর রহমান গাযারী
৮। নাজমুদ্দীন মূসা ইবন আলী ইব্ন মুহাম্মদ
রচনাবলী
ইবন কাসীর বিশেষত ইতিহাস, তাফসীর এবং হাদীস বিষয়ে প্রচুর গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার প্রকাশিত বহু গ্ৰন্থ রয়েছে । তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ;—
১। আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া(৭৫১ হিজরি)
২। তাফসীরুল কুরআনিল আযীম। তাফসিরে ইবন কাসির নামে বিশ্ববিখ্যাত
৩। আল ইজতিহাদ কী তালাবিল জিহাদ
৪। ইখতিসার-ই-উলুমিল হাদীস
৫। শামাইলুর রাসূল ওয়া দালাইলু নুবুওয়াতিহী ওয়া ফন্যায়েলিহী ও খাসাইসিহী
১৩। আল ওয়াদিহুন নাফীফ ফী মানাকিবিল ঈমাম মুহাম্মদ ইব্ন ইদ্রীস
১৪। কিতাবুল আহকাম
১৫। আল আহকামুল কবীরা
১৬। ইখতিসারু কিতাবি আল মাদখাল। ইলা কিতাবিস সুনান লিল বায়হাকী
১৭। আস-সিমাত
১৮। শারহু সহীহ আল-বুখারী
মৃত্যু
ইবনে কাসির ৭৭৪ হিজরী সনের ২৬ শাবান বৃহস্পতিবার তার ইনতিকাল হয়। তার জানাযায় বহুসংখ্যক লোকের সমাগম ঘটে। তার ওসীয়ত অনুসারে তার সর্বশেষ আবাসস্থল শায়খুল ইসলাম তকী উদ্দীন ইব্ন তাইমিয়্যা (র)-এর কাছে তাকে দাফন করা হয়। যা দামেশকের বাব আন-নাসর-এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত।
↑Spevack, Aaron (২০১৪)। The Archetypal Sunni Scholar: Law, Theology, and Mysticism in the Synthesis of Al-Bajuri। State University of New York Press। পৃষ্ঠা 129। আইএসবিএন978-1-4384-5370-5।
↑Mirza, Y. “Was Ibn Kathir the Spokesperson for Ibn Taymiyya? Jonah as a Prophet of Obedience.” Journal of Qur'anic Studies 16, no. 1 (2014), p. 5