আসাদি তুসি

গারসাস্প সাগসরদের সাথে লড়াই করছেন, যারা গাছের শাখা ব্যবহার করছে অস্ত্র হিসেবে। গারসাস্পনামা থেকে সাদিকি বেগ-এর একটি চিত্রকর্ম, ইরান, ১৫৭৩। ব্রিটিশ লাইব্রেরি

আবু নাসর আলী ইবনে আহমেদ আসাদি তুসি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ফারসি কবি, ভাষাবিদ এবং লেখক। তিনি ১১শ শতাব্দীর শুরুর দিকে তুসে, খোরাসানের একটি প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১০৮০-এর দশকের শেষ দিকে তাবরিজে মৃত্যুবরণ করেন। আসাদি তুসি ইরানের জাতীয় মহাকাব্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ ফারসি কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন । তার সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা হলো গারসাস্পনামা, যা শাহনামা-র শৈলীতে লেখা। []

জীবন

আসাদি তুসির জীবনের বিষয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। খোরাসান প্রদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল তুর্কি গোষ্ঠীর সহিংস আক্রমণের শিকার হয়েছিল। অনেক পণ্ডিত এই সময় পালিয়ে যায়, আর যারা থেকে গিয়েছিলেন তারা সাধারণত নিভৃত জীবন যাপন করতেন। আসাদি তার প্রথম কুড়ি বছর তুসে কাটান। খ্রিস্টাব্দ ১০১৮ থেকে ১০৩৮ সালের মধ্যে তিনি দায়লামি শাসক আবু নাসর জাস্তানের দরবারে কবি হিসেবে কাজ করেন। এখানে ১০৫৫-১০৫৬ সালে আসাদি আবু মনসুর মুওয়াফফাক হেরাভির লেখা কিতাব আল-আবনিয়া আল-আদবিয়া (Ketāb al-abnīa al-adwīa) অনুলিপি করেন। পরবর্তীতে তিনি নাখজাভানে চলে যান এবং ১০৬৫-১০৬৬ সালের দিকে তার প্রধান রচনা গারসাস্পনামা সম্পন্ন করেন। এই রচনা নাখজাভানের শাসক আবু দোলাফকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। এরপর আসাদি শাদাদীয় রাজবংশের রাজা মানুচেহরের দরবারে কাজ করেন, যিনি আনি শহরের শাসক ছিলেন। কবির সমাধি তাবরিজে অবস্থিত।

রচনা

আসাদি তুসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রচনা হলো গারসাস্পনামা (গারসাস্পের মহাকাব্য)। তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য অবদান হলো আধুনিক ফারসি ভাষার একটি শব্দকোষ। এছাড়াও তার লেখা পাঁচটি মোনাযারাত এখনো সংরক্ষিত রয়েছে।

গারসাস্পনামা (গারসাস্পের মহাকাব্য)

এই মহাকাব্যটি আসাদি তুসির প্রধান রচনা, এখানে ৯,০০০টি কবিতায় দ্বিপদী রয়েছে। কবিতার নায়ক গারসাস্প (কারিমানের পিতা এবং শাম-এর প্রপিতামহ)। শাহনামা-তে প্রাচীন ইরানি নায়ক কেরাসাস্পার (আভেস্তান ভাষায়) সাথে অনেকটা মিল রয়েছে। তিনি ছিলেন থ্রিতার পুত্র এবং ইয়ামা বংশের একজন সদস্য। আসাদি তুসি এই গল্পটি দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অব গারসাস্প নামের একটি বই থেকে রূপান্তরিত করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে এটি শাহনামার কাহিনিগুলোর পরিপূরক। কবিতাটি শুরু হয় ইয়ামা অথবা জামশিদ)কে দিয়ে, জামশিদ গারসাস্পের পিতা। জহাক-এর কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ঘুরাং রাজার কাছে জাবুলিস্তানের (বর্তমান কোয়েটার নিকটবর্তী) চলে যান। তিনি জাবুলিস্তানে জামশিদ রাজকন্যার প্রেমে পড়েন এবং তাদের গারসাস্প নামে একটি সন্তান হয়। তবে জামশিদ পালাতে বাধ্য হন। গারসাস্পের মা বিষ পান করে আত্মহত্যা করার পর, তিনি তার দাদার কাছে বড় হন। তিনি জমশিদের মতো একজন দক্ষ যোদ্ধা হয়ে ওঠেন। ঘুরং-এর মৃত্যুর পর জাহাক রাজা হন। তবে কারিমানের জন্ম না হওয়া পর্যন্ত এই গোপনীয়তা বজায় থাকে।

জাহাক রাজা হিসেবে জাবুলিস্তান ভ্রমণে আসেন এবং তরুণ গারসাস্পকে একটি ড্রাগন হত্যা করার চ্যালেঞ্জ দেন। বিশেষ অস্ত্র এবং ড্রাগনের বিষের প্রতিষেধক নিয়ে তিনি দানবটিকে হত্যা করেন। দক্ষতা দেখে জাহাক মুগ্ধ হন এবং তাকে ভারতে পাঠান। সেখানে জাহাকের অধীনস্থ রাজা এক বিদ্রোহী যুবরাজের কাছে অপসারিত হয়। গারসাস্প বিদ্রোহীকে পরাজিত করেন এবং ভারতের বিস্ময় পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি দর্শন ও ধর্ম নিয়ে আলোচনা করেনএরপর গারাসস্প সারান্দিব (সিলন) যান এবং সেখানে বুদ্ধের পায়ের ছাপ দেখেন (যা মুসলিম ঐতিহ্যে আদমের পায়ের ছাপ হিসেবে পরিচিত)। আসাদি এখানে আদম সম্পর্কে নানা কাহিনি বর্ণনা করেন। গারাসস্প এরপর একজন ব্রাহ্মণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তার কাছে দর্শন ও ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। তিনি রোমের এক রাজকুমারীকে বিয়ে করেন এবং তার পিতার জাবুলের সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সিস্তান শহর নির্মাণ করেন। এরপর তিনি কাইরোয়ানকর্ডোবাতে যুদ্ধ করেন। ইরানে ফিরে আসার পর তার পিতা মারা যায় এবং তিনি জাবোলেস্তানের রাজা হন। নিজের কোনো সন্তান না থাকায় তিনি নারেমানকে (যিনি রোস্তমের প্রপিতামহ) দত্তক নেন এবং তাকে উত্তরাধিকারী করেন। তার শেষ যুদ্ধ ট্যাঞ্জিয়ারের রাজার সঙ্গে হয় এবং আরেকটি ড্রাগনকে হত্যা করে। এরপর তিনি সিস্তানে ফিরে আসার পরে মৃত্যুবরণ করে।

খোরাসানি (ফার্সি অভিধান)

এই শব্দকোষটি আরান এবং ইরানি আজারবাইজানের জনগণকে পূর্ব ফারসি কবিতার অজানা শব্দগুলো পরিচিত করানোর জন্য লেখা হয়। এটি বিদ্যমান প্রাচীনতম ফারসি অভিধান। এখানে হারিয়ে যাওয়া সাহিত্যকর্ম যেমন কালিলা ও দিমনা (রুদাকি) এবং ভামিক উ ‘আদরা (উনসুরি) এর কিছু অংশ রয়েছে। ইরান ও অন্যান্য স্থানে এর বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়। সবচেয়ে পুরোনো পাণ্ডুলিপিটি (১৩২২) সম্ভবত তেহরানের মালেক লাইব্রেরিতে রয়েছে। একই সময়ে সাফিনা-ই তাবরিজ-এ লেখা একটি পাণ্ডুলিপিও রয়েছে।[]

মোনারাত (বিতর্ক)

রসিক কবিতার কাসিদা রচনাতে পাঁচটি মোনারাত (তর্ক) সংরক্ষিত রয়েছে। আরবি বা নতুন পারসিক ভাষায় এই ধরণের কাসিদার না থাকলেও এটি মধ্য পারসিক পার্সিয়ান মধ্য ফারসি(পাহলভি) ঐতিহ্যের অংশ। বিদ্যমান বিতর্কগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • আরব ও আজম (আরব বনাম পারস্য)
  • মগ ও মুসলমান (জরথুস্ত্রী বনাম মুসলমান)
  • শব ও রোজ (রাত বনাম দিন)
  • নেইজা ও কামান (বর্শা বনাম ধনুক)
  • আসমান ও জমিন (আকাশ বনাম মাটি)

আরব বনাম পারস্য বিতর্কে পারসিক বিজয়ী হয় আর জরথুস্ত্রী বনাম মুসলমান বিতর্কে মুসলমান জয়লাভ করে।

  1. "Asadi Tusi, Abu Mansur Ali ibn Ahmed"The Great Soviet Encyclopedia (3rd সংস্করণ)। 1970 – 79। সংগ্রহের তারিখ 14 May 2015TheFreeDictionary.com-এর মাধ্যমে।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!