আসাদ ইবনে জুরারা

আসাদ ইবনে জুরারা (আরবি: أسعد بن زرارة) (মৃত্যু: ৬২৩), যিনি কুনিয়া আবু উমামা নামে পরিচিত, ছিলেন ইসলামের নবী মুহাম্মদের একজন সঙ্গী এবং মদিনার প্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।

পরিবার

আস'আদ ছিলেন মদিনার খাজরাজ গোত্রের নাজ্জার গোষ্ঠীর মালিক শাখার জুরারা ইবনে উদাস ও সওয়াদ (আল-ফুরাইয়া) বিনতে রাফির পুত্র। তাঁর এক ভাই, সা'দ,^{[১]:৪৭৩} এবং দুই বোন, আল-ফারিয়া ও রুয়াইবা ছিলেন।^{[২]:২৮৫} সা'দ ইবনে মু'আধ, যিনি আওস গোত্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন, ছিলেন তাদের মাতৃকুলের প্রথম চাচাত ভাই।^{[১]:৪৭৩[২]:২৪৮}

তিনি আমিরা (উমাইরা) বিনতে সা'হলকে বিয়ে করেছিলেন, যিনি নাজ্জার গোত্রের মালিক শাখার অন্তর্গত ছিলেন। তাদের তিন কন্যা ছিল: আল-ফুরাইয়া, হাবিবা ও কাবশা।^{[১]:৪৭৩[২]:২৮৫} ৬২০ সালের মধ্যেই তিনি নাজ্জার গোষ্ঠীর নেতা হয়ে ওঠেন।^{[৩]:২৩৫}

ইসলাম গ্রহণ

মদিনা একটি বিভক্ত শহর ছিল। খাজরাজ এবং আওস গোত্র পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ করত^{[৪]:২৫৩} এবং ইহুদিদের উপরও আক্রমণ চালাত।^{[৩]:১৯৬} ইহুদিরা মুশরিকদের সতর্ক করেছিল: "একজন নবী শীঘ্রই প্রেরিত হবেন। তাঁর আগমন আসন্ন। আমরা তাঁকে অনুসরণ করব এবং তাঁর সহায়তায় তোমাদের ধ্বংস করব, যেমন আদ ও ইরাম ধ্বংস হয়েছিল।"^[৩]

^:১৯৭

৬২০ সালে আস'আদ একটি আইনি বিবাদে জড়িয়ে পড়েন জাখওয়ান ইবনে আবদ কায়সের সঙ্গে। সেই বছরের গ্রীষ্মে হজের মৌসুমে তারা উভয়েই মক্কায় যান, উতবা ইবনে রাবিয়া তাদের মধ্যে মীমাংসা করবেন এই আশায়।^{[৫]:২৫২[৬]:৪৭৩} উতবা তাদের মুহাম্মদের সম্পর্কে বলেন, "যিনি বিশ্বাস করেন যে তিনি আল্লাহর প্রেরিত একজন বার্তাবাহক।"^{[৫]:২৫২} সেই সময় মুহাম্মদ কুরাইশদের বিরুদ্ধে সামরিক মিত্র খুঁজছিলেন। তিনি নিজেকে একজন নবী হিসেবে যেকোনো গোত্রের কাছে উপস্থাপন করছিলেন যারা তাঁর কথা শুনবে।^{[৫]:২৫০-২৫১[৭]:১৯৪-১৯৬} জাখওয়ান, যিনি জানতেন আস'আদ একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী, তাঁকে বললেন, "তাঁকে ছেড়ে দাও; এটাই তোমার বিশ্বাস!"^{[৫]:২৫২}

আস'আদ এবং তাঁর পাঁচজন বন্ধু মুহাম্মদের সঙ্গে মক্কার বাইরে সাক্ষাৎ করলেন। মুহাম্মদ শুনলেন যে তারা খাজরাজ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত, এবং জিজ্ঞেস করলেন তারা কি ইহুদিদের মিত্র। তারা সম্মতি দিলে, মুহাম্মদ তাদের বসার আমন্ত্রণ জানান।^{[৭]:১৯৭} তিনি তাদের ইসলাম বোঝালেন এবং কুরআন পাঠ করলেন।^{[৬]:৪৭৩} মুহাম্মদের বার্তা শুনে তারা একে অপরকে বলল, "এটাই সেই নবী যার সম্পর্কে ইহুদিরা আমাদের সতর্ক করেছিল। তাদের এর আগে পৌঁছাতে দিও না!" আস'আদ প্রথমে মুহাম্মদের শিক্ষা গ্রহণ করে মুসলমান হন,^{[৬]:৪৭৪} এবং তাঁর পাঁচজন বন্ধু তাঁকে অনুসরণ করেন।^{[৫]:২৫১[৬]:৪৭৩[৭]:১৯৭} মুহাম্মদ তাদের অনুরোধ করেন তাঁর বার্তা তাদের জনগণের কাছে নিয়ে যেতে।^{[৫]:২৫৩} তারা বলল, "কোনো গোত্র আমাদের মতো ঘৃণা ও বিদ্বেষে বিভক্ত নয়। হয়তো আল্লাহ তোমার মাধ্যমে তাদের ঐক্যবদ্ধ করবেন। আমাদের তাদের কাছে যেতে দাও এবং তাদের তোমার ধর্মের প্রতি আহ্বান করি; যদি আল্লাহ তাদের এতে ঐক্যবদ্ধ করেন, তবে তোমার চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ থাকবে না।"^{[৭]:১৯৭}

তারা মদিনায় ফিরে গেল মদিনার প্রথম মুসলমান হিসেবে।^{[৬]:৪৭৪[৭]:১৯৭} আস'আদ তাঁর গোত্রের মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলেন।^{[৬]:৪৭৫} তারা তাদের লোকদের ইসলাম সম্পর্কে বলল, এবং খবরটি মদিনা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল, এমনকি মুহাম্মদ সম্পর্কে প্রতিটি বাড়িতে আলোচনা হতে লাগল।^{[৭]:১৯৮}

মক্কায় মিশন

প্রথম আকাবা ৬২১ সালের গ্রীষ্মে আস'আদ ১১ জন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মক্কার বাণিজ্য মেলায় যান। সেখানে তারা মুহাম্মদের সঙ্গে আকাবায় সাক্ষাৎ করেন। তারা তাঁকে নারীদের অঙ্গীকার দেন: যদিও তারা মুহাম্মদের আনুগত্য স্বীকার করেন, তাতে যুদ্ধের কোনো উল্লেখ ছিল না।^{[৬]:৪৭৪[৭]:১৯৮}

তথ্যসূত্র

1. মুহাম্মদ ইবনে সা'দ, কিতাব আল-তাবাকাত আল-কবীর ভলিউম ৩। অনুবাদ: বেভলি, এ। (২০১৩)। দ্য কম্প্যানিয়নস অফ বদর। লন্ডন: তা-হা পাবলিশার্স।
2. মুহাম্মদ ইবনে সা'দ, কিতাব আল-তাবাকাত আল-কবীর ভলিউম ৮। অনুবাদ: বেভলি, এ। (১৯৯৫)। দ্য উইমেন অফ মদিনা। লন্ডন: তা-হা পাবলিশার্স।
3. মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক, সীরাত রাসূল আল্লাহ। অনুবাদ: গিয়োম, এ। (১৯৫৫)। দ্য লাইফ অফ মুহাম্মদ। অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস।
4. মুহাম্মদ ইবনে সা'দ, কিতাব আল-তাবাকাত আল-কবীর ভলিউম ১। অনুবাদ: হক, এস. এম. (১৯৬৭)। ইবনে সা'দের কিতাব আল-তাবাকাত আল-কবীর ভলিউম ১ পার্ট ১ ও ২। দিল্লি: কিতাব ভবন।
5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Saad12 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Saad32 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
7. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Ishaq2 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি