আরবীয় নকশা (আরাবস্ক) হলো এক ধরনের শৈল্পিক অলংকরণ যা "ভূপৃষ্ঠের উপর স্ক্রোলিং এবং পাতা, লতা অথবা সরল রেখাগুলির ছন্দময় রৈখিক প্যাটার্ন দ্বারা গঠিত; প্রায়শই এগুলিকে অন্যান্য উপাদানের সাথে যুক্ত করা হয়"।[১] আরেকটি সংজ্ঞা হলো, "ইসলামী বিশ্বে ব্যবহৃত পাতা-সদৃশ অলংকরণ, যেখানে সাধারণত পাতার ব্যবহার হয়; এগুলো স্টাইলাইজড অর্ধ-পামেট থেকে উদ্ভূত যেগুলিকে প্যাঁচানো কান্ডের সাথে যুক্ত করা হয়েছে"।[২] এটি সাধারণত একটি একক নকশা নিয়ে গঠিত যা বারবার, যতবার ইচ্ছা 'টাইল্ড' বা বিরামহীনভাবে পুনরাবৃত্তি হতে পারে।[৩] উপমহাদেশীয় সাজসজ্জা শিল্পের বিশাল পরিসরের মধ্যে এই মৌলিক সংজ্ঞার সাথে মিলে যায় এমন মোটিফ রয়েছে। আরবীয় নকশা বা আরাবস্ক শব্দটি শিল্প ইতিহাসবিদরা ধারাবাহিকভাবে একটি কারিগরি শব্দ হিসেবে ব্যবহার করেন; শুধুমাত্র দুটি পর্যায়ে পাওয়া অলংকরণের উপাদান বর্ণনা করার জন্য: প্রায় নবম শতাব্দীর পর থেকে ইসলামিক শিল্পে এবং রেনেসাঁর পরবর্তী সময় থেকে ইউরোপীয় সাজসজ্জা শিল্পে। আন্তঃসম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের প্যাটার্ন অলংকরণ বোঝাতেও এটি ব্যবহার করা হয়।
আরবীয় নকশা ইসলামী শিল্পের একটি মৌলিক উপাদান। ইউরোপীয় শিল্প সম্পর্কে এই শব্দটির অতীত এবং বর্তমান ব্যবহার বিভ্রান্তিকর এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কিছু পশ্চিমা আরবীয় নকশা ইসলামিক শিল্প থেকে উদ্ভূত, তবে অন্যগুলি ঘনিষ্ঠভাবে প্রাচীন রোমান সাজসজ্জার উপর ভিত্তি করে তৈরি। পশ্চিমে এগুলি মূলত সাজসজ্জা শিল্পে পাওয়া যায়। তবে ইসলামিক শিল্পের সাধারণত অ-আলংকারিক প্রকৃতির কারণে, আরবীয় নকশার অলংকরণ প্রায়শই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলিতে একটি খুবই বিশিষ্ট উপাদান হয়ে থাকে এবং স্থাপত্যের সজ্জায় একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
আরবীয় নকশার ধর্মতাত্ত্বিক তাৎপর্য এবং বিশ্ব সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গির উৎপত্তি সম্পর্কে প্রায়শই দাবি করা হয়; যাইহোক, লিখিত ঐতিহাসিক উৎস থেকে এগুলোর কোনো সমর্থন পাওয়া যায় না। কারণ, বেশিরভাগ মধ্যযুগীয় সংস্কৃতির মতো, ইসলামিক বিশ্বও তাদের ব্যবহৃত আলংকারিক মোটিফের পেছনের উদ্দেশ্যগুলোর কোনো নথি আমাদের জন্য রেখে যায়নি।[৪] জনপ্রিয় পর্যায়ে এই ধরনের তত্ত্বগুলি প্রায়শই আরবীয় নকশার বৃহত্তর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অজ্ঞ বলে মনে হয়। একইভাবে, আরবীয় নকশা এবং জ্যামিতি সম্পর্কে আরবদের জ্ঞানের মধ্যে প্রস্তাবিত সংযোগগুলি বিতর্কের বিষয় হয়ে আছে; সমস্ত শিল্প ইতিহাসবিদ এই বিষয়ে একমত নন যে, আরবীয় নকশার স্রষ্টাদের কাছে এই ধরনের জ্ঞান পৌঁছেছিল, বা এটি প্রয়োজন ছিল।[৫] যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণ আছে যে এই ধরনের সংযোগের অস্তিত্ব ছিল। ইসলামী গণিতের সাথে এই নকশার সংযোগের ব্যাপারটি অনেক বেশি দৃঢ়। তবে এটি জ্যামিতিক প্যাটার্নের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর সাথে শিল্পে আরবীয় নকশাকে প্রায়শই যুক্ত করা হয়।[৬]