আমেরিকা মহাদেশগুলিতে ইউরোপীয়দের উপনিবেশ স্থাপন বলতে বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি আমেরিকা মহাদেশগুলিতে যেভাবে বসতি স্থাপন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল, তার ইতিহাসের বর্ণনাকে বোঝায়। সম্ভবত ১০ম বা ১১শ শতকে পশ্চিম নর্স নাবিকেরা বর্তমান কানাডার উপকূলে অভিযান চালায় এবং সাময়িকভাবে বসতি স্থাপন করে। এই অভিযানের কথা আইসল্যান্ডের লোকগাঁথা এবং প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণাদি থেকে জানতে পারা গেছে। তবে মহাদেশের আদিবাসীদের সাথে সহিংস যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে নর্সেরা এই বসতিগুলি পরিত্যাগ করে চলে যায়।[১]
১৪৯২ সালে আবার ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপন শুরু হয়। সে বছর জেনোয়ার অভিযাত্রী নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নেতৃত্বে একটি স্পেনীয় অভিযাত্রীদল ইউরোপ থেকে পশ্চিম অভিমুখে নৌযাত্রা শুরু করে যার লক্ষ্য ছিল দূরপ্রাচ্যে যাওয়ার একটি বাণিজ্যিক নৌপথ আবিষ্কার করা। কিন্তু এর পরিবর্তে তারা আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করে ফেলে। ইউরোপীয়রা এই নব্য-আবিষ্কৃত ভূখণ্ডের নাম দেয় "নতুন বিশ্ব"। কলম্বাস ১৪৯২ সালের ৫ই ডিসেম্বর হিস্পানিওলা দ্বীপের উত্তরাংশে নোঙর ফেলেন। সেখানে ৭ম শতাব্দী থেকেই তাইনো জাতির লোকেরা বাস করত। এটিই ছিল নর্সদের পর আমেরিকা মহাদেশে ইউরোপীয়দের প্রথম বসতি স্থাপনের ঘটনা। এর পরেই ইউরোপীয়রা আমেরিকা মহাদেশের ভূমিদখল, বড় মাপের অভিযান ও বসতি স্থাপন শুরু করে দেয়। কলম্বাস তার প্রথম দুইটি যাত্রাতে বাহামা, বিভিন্ন ক্যারিবীয় দ্বীপ যেমন হিস্পানিওলা, পুয়ের্তো রিকো এবং কুবা বা কিউবাতে পৌঁছান। ১৪৯৮ সালে ইংরেজ রাজাকে প্রতিনিধিত্বকারী নাবিক জন ক্যাবট ব্রিস্টল বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের উপকূলে অবতরণ করেন। এর এক বছর পরে কলম্বাসের তৃতীয় যাত্রা দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলের পৌঁছায়। কলম্বাসের অভিযানে অর্থবিনিয়োগকারী ইউরোপীয় শক্তি হিসেবে স্পেন উত্তর আমেরিকা থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার একেবারে দক্ষিণতম প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তীর্ণ সুবিশাল এক ভূখণ্ড স্পেনীয় সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসে।
এছাড়া ফরাসিরা তাদের প্রথম ফরাসি সাম্রাজ্য পর্বে আমেরিকা মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করে। তারা উত্তর আমেরিকার পূর্বভাগে, বেশ কিছু ক্যারিবীয় দ্বীপ এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু ক্ষুদ্র উপকূলীয় এলাকায় উপনিবেশ নির্মাণ করেছিল।
পর্তুগাল বর্তমান ব্রাজিল অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করে। এছাড়া তারা বর্তমান কানাডার পূর্বভাগেও উপনিবেশ গড়ার চেষ্টা করেছিল। তারা বেশ দীর্ঘ সময় ধরে রিও দে লা প্লাতা নদীর উত্তর-পশ্চিম দিকে নদীর পূর্ব উপকূলে বসতি স্থাপন করেছিল।
শেষ পর্যন্ত পশ্চিম গোলার্ধের বেশির ভাগ এলাকা ইউরোপীয় সরকারগুলির অধীনে চলে আসে, ফলে এদের ভূপ্রকৃতি, জনসংখ্যা, উদ্ভিদ ও প্রাণীজীবনের ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ১৯শ শতাব্দীতে ৫ কোটিরও বেশি ইউরোপীয় আমেরিকা মহাদেশগুলির অভিবাসন করে।[২] ১৪৯২ সালের পরের পর্বটি কলম্বীয় হস্তান্তর নামে পরিচিত। এসময় আমেরিকা মহাদেশগুলিতে নাটকীয়ভাবে প্রাণী, উদ্ভিদ, সংস্কৃতি, জনগণের প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে যায়। এমনকি ইউরোপীয় ও আদিবাসী আমেরিকি সংক্রামক রোগব্যাধিগুলিও আটলান্টিক মহাসাগরের একপাড় থেকে অন্যপাড়ে স্থানান্তরিত হয়।