আমজাদ হোসেন (১৯২৪-১৯৭১) ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে তাকে পাবনার অন্যতম প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বেসামরিক বাহিনীকে একত্রিত করেছিলেন।
প্রাথমিক জীবন
আমজাদ হোসেন ১৯২৪ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চর সাদিরাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন, পরে তার বাবা শেখ রফিক উদ্দিন ও মা পরিজন নেছা পাবনা নগরের নুরপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেন।
আমজাদ হোসেন ছাত্রাবস্থায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাকে রাজনীতিতে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেন, এভাবেই তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়। তিনি ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা আন্দোলনের সংগঠক ছিলেন এবং ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখেন।
হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার হলে তিনি তরুণ আমজাদ হোসেনকে তার রাজনৈতিক সচিব হিসাবে নিয়োগ দেন। তার আশ্চর্যজনক প্ররোচিত করার ক্ষমতা এবং কর্মদক্ষতার কারণে, আমজাদ হোসেন তার দলের এবং সাধারণ মানুষের কাছে প্রচুর বিশ্বাস ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালে মোট দুইবার পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।[১][১][২] ১৯৭০ সালের নির্বাচনে,[৩] তিনি মওলানা আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে নির্বাচন জিতেছিলেন।
আমজাদ হোসেন পাবনা জেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের নিকটতম বিশ্বাসী হিসেবে, আমজাদ হোসেন ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৭০-এর দশকের প্রথম দিকে বৃহত্তর পাবনা জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাবনায়১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সমন্বয় সাধন করেন, যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ
আমজাদ হোসেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন।[৪] ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানেঅপারেশন সার্চলাইট শুরু করার পর তিনি অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে জনগণকে সংগঠিক করার কাজ শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের নির্দেশ অনুযায়ী আমজাদ হোসেন হানাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কৌশল প্রণয়ন করেছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে সামরিক সাহায্য চেয়ে বিশেষ দূত পাঠান, যেহেতু শান্তিপূর্ণ উপায়ে মুক্তিযুদ্ধ সমাধানের কোন উপায় ছিল না।
মৃত্যু
১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল আমজাদ হোসেন মৃত্যুবরণ করেন।[৫]
স্বাধীনতা পরবর্তী স্মৃতিস্তম্ভ
পাবনার আমজাদ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় তার নামে নামকরণ করা হয়।[৬]