আমজাদ খান (জন্ম: ১৪ অক্টোবর, ১৯৮০) কোপেনহ্যাগেন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০০-এর দশকের শেষদিকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। অদ্যাবধি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ডেনমার্কের পক্ষে প্রথম খেলোয়াড়ের সম্মাননা লাভ করেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্ট ও সাসেক্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন ‘অ্যামি’ ডাকনামে পরিচিত আমজাদ খান।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
আমজাদ খানের পিতা-মাতা পাকিস্তান থেকে ডেনমার্কে অভিবাসিত হন।[১] ডেনমার্কে জন্মগ্রহণ করেন ও সেখানেই তিনি বড় হন। জন্মসূত্র ডেনমার্কের অধিবাসী আমজাদ খান সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে ১৭ বছর বয়সে ডেনমার্ক ক্রিকেট দলে খেলেন।
২০০১ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আমজাদ খানের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ২০০২ সালে কেন্টের পক্ষে নিজস্ব প্রথম পূর্ণাঙ্গ মৌসুম খেলেন। ঐ মৌসুমে ৬৩ উইকেট দখল করেন তিনি। তবে, পরবর্তী দুই মৌসুমে এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারেননি। সবমিলিয়ে মাত্র ৩১ উইকেট পেয়েছিলেন। ২০০২ সালে এনবিসি ডেনিস কম্পটন পুরস্কারে ভূষিত হন। পরবর্তী মৌসুমগুলোয়ও তিনি বেশ ভালো খেলেন। ২০০৫ সালে ৫৫ উইকেট পান। পরের বছর আঘাতের কারণে অধিকাংশ সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তাসত্ত্বেও ৩৪ উইকেট দখল করেন।
আমজাদ খান বিরল কৃতিত্বের অধিকারী। ডেনিশ ফাস্ট বোলার হিসেবে ১৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ডেনমার্কের পক্ষে খেলেন। ২০০২ সালে কেন্টের পক্ষে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ মৌসুম অতিবাহিত করেন। অভিষেক মৌসুমে ৬৩ উইকেট পান তিনি। তবে, পরবর্তী মৌসুমগুলোয় এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারেননি তিনি। কিন্তু, ২০০৫ সালে পুনরায় স্বরূপ ধারণ করেন। ৫৫ উইকেট নিয়ে কেন্টের শিরোপা বিজয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ডিসেম্বর, ২০০৬ সালে কাঙ্ক্ষিত ব্রিটিশ নাগরিকত্ব লাভের অধিকারী হন। এরফলে ইংল্যান্ড দলে খেলার জন্যে বিবেচিত হন ও একাডেমি দলে স্থান লাভ করেন। এক মাস পরই ইংরেজ দল নির্বাচকমণ্ডলীবাংলাদেশ গমনার্থে ইংল্যান্ড এ দলের ১৪-সদস্যের তালিকায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর, ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপকে ঘিরে ৩০-সদস্যের প্রাথমিক তালিকায় তাকে রাখলেও চূড়ান্ত তালিকায় তার ঠাঁই হয়নি। তবে, গোঁড়ালীতে গুরুতরভাবে আঘাত লাভের ফলে তাকে দেশে ফিরে আসতে হয় ও অস্ত্রোপচারের পর পুরো ২০০৭ সালই মাঠের বাইরে থাকেন।
ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ সাল শেষে অস্ত্রোপচারের কারণে পুরো মৌসুমই তিনি দলের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হন।[২] ২০০৮ সালের পর উদীয়মান খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ডেভেলপম্যান্ট দলের সদস্য হন। ঐ গ্রীষ্মে কিছুটা ভালোমানের খেলা উপহার দেন। ফলশ্রুতিতে, পারফরম্যান্স দলের সদস্যরূপে ভারত গমনের জন্যে মনোনীত হন। পেস ও সুইংয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করার স্বীকৃতিস্বরূপে ইংল্যান্ড দলে তাকে রাখা হয়।[৩]
দল পরিবর্তন
পুনরায় হাঁটুর আঘাতের ফলে ২০০৯ সালের অধিকাংশ সময় অনুপস্থিত থাকেন। অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী পেস বোলারদের দাপটে তাকে কেন্ট দল থেকে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়। এরফলে, ২০১১ সালকে ঘিরে সাসেক্স দলের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। এ দলেই তিনি তার সেরা খেলা প্রদর্শন করেন। কিন্তু, তাকে আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
২০১৩ সালেও আঘাতগ্রস্ত থাকেন। এ মৌসুমের কোন খেলায় অংশ নিতে পারেননি তিনি। ফলশ্রুতিতে, সাসেক্স দলে আর তাকে চুক্তিতে রাখা হয়নি। ২০১২ সালের শেষদিকে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। এরপর, তিনি দ্বিতীয় একাদশ দলে খেলেন। তাসত্ত্বেও, দক্ষিণ আফ্রিকায় ফাস্ট বোলারদের প্রশিক্ষণ শিবিরে তাকে প্রেরণ করা হয়।
অধিনায়কত্ব লাভ
২০ মার্চ, ২০১৪ তারিখে সাসেক্স কর্তৃপক্ষ পূর্বতন মৌসুমে ক্রমাগত আঘাতের কারণে আমজাদ খানকে অব্যাহতি দেয়।[৫]
২০১৬ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্ব ক্রিকেট লীগ চতুর্থ বিভাগ প্রতিযোগিতায় ডেনমার্ক দলের নেতৃত্বে ছিলেন। দলের নিয়মিত অধিনায়ক মাইকেল পেডারসনের পারিবারিক সমস্যায় ঐ প্রতিযোগিতা থেকে চলে আসতে হলে তিনি এ সুযোগ পান।[৬]
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে একটিমাত্র টেস্ট ও একটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশগ্রহণ করেছেন আমজাদ খান। ৬ মার্চ, ২০০৯ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এটিই তার একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। এরপর আর তাকে কোন টেস্টে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এছাড়াও, ১৫ মার্চ, ২০০৯ তারিখে একই মাঠে ও একই দলের বিপক্ষে একমাত্র টি২০আইয়ে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। তাকে কোন ওডিআইয়ে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হয়নি।
নভেম্বর, ২০০৮ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত একদিনের আন্তর্জাতিক খেলার উদ্দেশ্যে সাজিদ মাহমুদসহ তাকে স্টুয়ার্ট ব্রড ও অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের ঘাটতি পূরণের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়।[৩] তবে, মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার ফলে একদিনের দলে যোগ দেননি ও সিরিজটি বাদ দেয়া হয়। কিন্তু, এরপর দুই টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে আঘাতপ্রাপ্ত রায়ান সাইডবটমের পরিবর্তে খেলার জন্যে যুক্ত হন।[৭]
টেস্ট অভিষেক
অবশেষে, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে তার টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমনকল্পে রবি বোপারাসহ তাকে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের খেলার জন্যে আমন্ত্রণ করা হয়। এ পর্যায়ে, উরুর আঘাতপ্রাপ্ত অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের পরিবর্তে তাকে রাখা হয়।[৮]
৬ মার্চ, ২০০৯ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে নিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। তার প্রথম ওভারটি নয় বলে গড়া ছিল। তিনটি নো-বল করেন। সবমিলিয়ে ঐ ওভারে ৭ রান খরচ করেন। তৃতীয় দিনে একমাত্র টেস্ট উইকেট পান। খেলায় ছন্দ হারানো রামনরেশ সারওয়ানকে এলবিডব্লিউতে বিদেয় করেন তিনি। খেলায় অতিরিক্ত আবেদনের ফলে ম্যাচ রেফারি কর্তৃক তাকে সতর্ক করে দেয়া হয়।[৯]
পুণঃপুণঃ আঘাতে জর্জড়িত ফাস্ট বোলার রায়ান সাইডবটমের ওডিআই বা টি২০আইয়ে অনুপস্থিতির কারণে টেস্ট সিরিজ শেষে তাকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[১০]
↑Andrew McGlashan (৯ মার্চ ২০০৯)। "Sidebottom out of one-day series"। Cricinfo.com। ১২ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০০৯।