মৌলভী আব্দুল আলী (১৭৮৬- ১৮৬৬) বা পাগলা মৌলভী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অন্যতম বড় জমিদার ছিলেন। উনিশ শতকের প্রথম দিকে ঢাকার একজন সুপরিচিত জমিদার হিসেবে তার বেশ নাম ডাক ছিল। উগ্রমেজাজী, অত্যাচারী স্বভাব ও কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি ঢাকাবাসীর কাছে 'পাগলা মৌলভী' হিসেবে পরিচিত ছিলেন।[১]
আব্দুল আলীর পিতা মৌলভী বরকতউল্লাহ ছিলেন নয়াবাড়ির মিলিক গ্রামের জমিদার। মৌলভী বরকতউল্লাহ "পরগণা নুরুল্লাহপুর, তপপে হাউলি জাহানাবাদ, তপপে আরঙ্গাবাদ, তপপে শায়েস্তানগর এবং পরগণা ইদ্রাকপুরের কিয়দংশ নিজ জমিদারিভুক্ত করিয়াছিলেন। তৎপরে মৌলভী আবদুল আলী ইদ্রাকপুর পরগণার অবশিষ্টাংশ এবং বড়বাদু নামক পরগণা তাঁহার জমিদারির অন্তর্ভুক্ত করেন।"[১]
আব্দুল আলী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের আদি ছাত্রদের একজন। নবাব আব্দুল গণি, ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ব্রজসুন্দর মিত্রের সাথে আব্দুল আলীর ঘনিষ্টতা ছিলো। ঢাকা শহরে আব্দুল আলীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ঢাকার আরেক প্রভাবশালী জমিদার নীলকর ওয়াইজ। তার সাথে আব্দুল আলীর প্রায়ই মামলা-মোকদ্দমা চলতো। আব্দুল আলী ফৌজদারী মামলা করতে ভালবাসতেন। তিনি বছরে ষাট সত্তুর হাজার টাকা আয় করতেন। স্বভাবে একটু কৃপণ হওয়ায় তার সহায় সম্পত্তিও ছিল অনেক।[১]
কিন্তু তিনি মুসলমানদের জন্য দান-দক্ষিণাও করেছিলেন। তিনি ঢাকায় একটি মাদ্রাসা ও অতিথিশালা স্থাপন করেছিলেন। নিজ গ্রাম নয়াবাড়িতে একটি স্কুল স্থাপন করেছিলেন।
ঢাকায় তিনি বাস করতেন চকের পানিয়াটি লেনের একটি প্রাসাদোপম বাড়িতে। তার বাড়ির পাশে তৎকালীন মুকিম কাটারায় একটি বাজার বসিয়েছিলেন যা বর্তমানে চকের মৌলভীবাজার নামে পরিচিত। ১৮৬৬ সালে আশি বছর বয়সে পরলোকগমন করেছিলেন আব্দুল আলী।
আব্দুল আলী সম্পর্কে ঢাকার তৎকালীন পত্রিকা ঢাকা প্রকাশের কিছু উদ্ধৃতিঃ
“
|
দেবতার মধ্যে শ্মশানকালী
আর মানুষের মধ্যে আবদুল আলী।
|
”
|
“
|
নীলকর ওয়াইজ সাহেবের সহিত প্রতিযোগিতা সংরক্ষণে এতদঞ্চলে ইনিই একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন। পরিশেষে ওয়াইজ সাহেবের দ্বারাই ইহার সর্ব্বনাশের উপক্রম হইয়াছে।
|
”
|
“
|
মৌলভী আবদুল আলী বহুকাল হইতে ৩টা কার্য্য করিয়া আসিতেছিলেন। কিন্তু তাঁর উপকার কেবল মুসলমানদের জন্য।
|
”
|
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ গ মুনতাসীর মামুন, "ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী", পরিবর্ধিত ৩য় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারি ২০০০, অনন্যা প্রকাশনালয়, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২০, আইএসবিএন ৯৮৪-৪১২-১০৪-৩।