আবে ইসু (৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৬৫ - ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯)[১][৩][৪] ছিলেন একজন জাপানি খ্রিস্টান সমাজতান্ত্রিক, সংসদ সদস্য ও শান্তিবাদী। তিনি মূলত জাপানে বেসবলের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন এবং তাকে "জাপানি বেসবলের জনক" বলা হতো। তিনি ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বেসবল ক্লাব তৈরি করেছিলেন।[৫]
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
আবে ১৮৬৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ফুকুওকায় জন্মগ্রহণ করেন।[৪][৬] তিনি ১৮৭৯ সালে দোশিশা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৮৮২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, জোসেফ হার্ডি নিসিমার মাধ্যমে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা লাভ করেন।[৫] ১৮৯৮ সালে, তিনি দোশিশায় জাপানের প্রথম ভোক্তা সমবায় তৈরি করেন। দোশিশা থেকে স্নাতক পাশ করার পর, তিনি বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিদেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে তিনি কানেকটিকাটের হার্টফোর্ড থিওলজিক্যাল সেমিনারিতে যোগ দেন।[৭] হার্টফোর্ডে পড়ার সময়ই তিনি সমাজতন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।[৮]
কর্মজীবন
জাপানে ফিরে আসার পর, ১৮৯৯ সালে[৮] একজন ঐক্যবাদী প্রচারণার কাজে মনযোগী হন। তিনি ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন, যাকে টোকিও সেমন গাক্কো বলা হয়।[১] সেখানে তিনি ২৫ বছর অধ্যাপনা করেন।[১][৯] তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন যেমন প্রথম স্কুল অফ পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ইকোনমিক্সের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট। ১৯০১ সালে তিনি জাপানি সোশ্যাল-ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিলেন, সরকার দলটিকে দ্রুত'ই নিষিদ্ধ করেছিল।[৫]
রুশ–জাপান যুদ্ধের সময়, তিনি অসহযোগের পক্ষে ছিলেন এবং বিভিন্ন প্রাথমিক নারীবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধবিরোধী সংবাদপত্র হেইমিন শিম্বুন (পিপলস উইকলি নিউজ) নিষিদ্ধ হলে, তিনি তার নিজস্ব পত্রিকা শিনকিগেন (এ নিউ এরা) শুরু করেন।[১০] সংসদীয় সমাজতন্ত্রের প্রচারের জন্য তিনি এটিকে একটি সাবানবাক্স হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন।[৮] ১৯০৬ সালে, তিনি প্রথম জাপানি সমাজতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যেখানে তিনি একটি খ্রিস্টান সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে ছিলেন। পরবর্তীতে, ১৯০৭ সালে সরকার এই দলটিকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, যখন তিনি আবার সক্রিয় হন, তখন তিনি জনজীবন থেকে দূরে সরে আসেন।[১] ১৯২১ সালে তিনি জাপানিজ ফ্যাবিয়ান সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন,[১] এবং ১৯২৪ সালে, তিনি তাদের প্রথম সভাপতি হন। সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সেক্রেটারি-জেনারেল হওয়ার জন্য তিনি তার শিক্ষকতার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।[১][৫] ১৯২৮ সালে, আবে জাপানি জাতীয় আইনসভায় নির্বাচিত হন, যেখানে তিনি টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য ছিলেন।[১] ১৯৩২ সালে, তিনি শাকাই তাইশুতো (সামাজিক গণ পার্টি) দলের চেয়ারম্যান হন।[১][৬] তৎকালীন সরকারের ক্রমবর্ধমান সামরিক প্রকৃতির কারণে তিনি ১৯৪০ সালে রাজনীতি থেকে সরে আসেন।[১]
জাপানে বেসবলের জনক
তিনি জাপানে বেসবলের বিকাশ ও প্রসারে অবদান রেখেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন জ্ঞান যেমন শেখার মাধ্যমে তৈরি হয়, তেমন ব্যক্তিত্ব তৈরি হয় খেলাধুলার মাধ্যমে।[৪][৮] ১৯০১ সালে ওয়াসেদা বেসবল ক্লাবের প্রথম ম্যানেজার হয়ে তিনি ওয়াসেদা কেইও-তে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করেন।[৯] ১৯০৫ সালে, রুশ–জাপান যুদ্ধের সময়, তিনি দলটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান এবং সেখান থেকে জাপানে অনেক কৌশল নিয়ে আসেন। তিনি কৌশলগুলি গোপন রাখেননি, সেগুলিকে তার বই দিয়ে পুরো জাপানে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি জিগোরো কানোর সাথে জাপান অ্যামেচার স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (পরে জাপান স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন) প্রতিষ্ঠা করেন।[৫] এছাড়াও, তিনি ১৯১২ সালে স্টকহোম অলিম্পিক গেমসে জাপানের প্রথম অলিম্পিক দলকে সংগঠিত করতে সহায়তা করেছিলেন[১১] ১৯৩০ সালে, তিনি টোকিও বিগ৬ বেসবল লীগ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান স্টুডেন্ট বেসবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম চেয়ারম্যান হন।
এই ধরনের অবদানের জন্য তাকে জাপানে ' জাপানি বেসবলের জনক বা ' ফাদার অফ স্টুডেন্ট বেসবল' বলা হয়। ১৯৪৯ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর ওয়াসেদা বেসবল দলের প্রধান স্টেডিয়াম টোটসুকা গ্রাউন্ডের নাম পরিবর্তন করে আবে গ্রাউন্ড রাখা হয়।[১২] ১৯৫৯ সালে যখন জাপানি বেসবল হল অফ ফেম খোলার সময় তাকে হলটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
তথ্যসূত্র
|
---|
সাধারণ | |
---|
জাতীয় গ্রন্থাগার | |
---|
বৈজ্ঞানিক ডাটাবেজ | |
---|
অন্যান্য | |
---|