আবুল হোসেন (১৫ আগস্ট, ১৯২২ - ২৯ জুন, ২০১৪) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি। ত্রিশের দশকে অবিভক্ত ভারতে তার লেখালিখির সূত্রপাত। ৪০ দশকের বাংলা ভাষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবি ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের কবিতা শাখায় তার অবদানের জন্য তিনি ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তার অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
আবুল হোসেন ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট বাগেরহাট জেলারফকিরহাট উপজেলার আরুয়াডাঙা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার মায়ের নাম মেহেরুন নেসা।[২] তার পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে ২৪ এপ্রিল বাগেরহাটে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে নিহত হন। তার ছোট ভাই আমজাদ হোসেন একসময় পাকিস্তানের মন্ত্রী ছিলেন।[৩]
হোসেনের পৈতৃক নিবাস খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামে। তার শৈশব কাটে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণ নগরে, এরপর কলকাতায় ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশে। তিনি ১৯২৯ সালে সাত বছর বয়সে কৃষ্ণনগর কলিজিয়েট স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন।[২] অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন এই স্কুল ম্যাগাজিনে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়।[৩] ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন কুষ্টিয়া হাইস্কুল থেকে। তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪২ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক ও পরে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন
সরকারি চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। কর্মজীবনে তিনি উচ্চপ্রদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে প্রথম তিনি কলকাতা আয়কর কমিশনারের অফিসে, এক্সামিনার অব অ্যাকাউন্টস পদে যোগ দেন। ভারত ভাগের পর তিনি ময়মনসিংহে সহকারী বিক্রয় কর অফিসার হিসেবে আসেন।এর দুই-আড়াই বছর পর ১৯৫০ সালের মাঝামাঝিতে তিনি ঢাকার রেডিও পাকিস্তানে একটি সমপর্যায়ের চাকরিতে যোগ দেন। এরপর তিনি ব্যাংককে সিটো পাবলিক ইনফরমেশন অফিসে ইন্টারন্যাশনাল স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর তিনি সেখান থেকে বাংলাদেশে ফিরে তিনি জনসংযোগ বিভাগে যোগ দেন এবং
প্রথমযৌবনে লেখক হিসেবে দাঁড়িয়ে-পড়া এই শিল্পী ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।[১]
১৯৫৮ সালে তিনি প্রখ্যাত লেখক আকবর উদ্দিনের জেষ্ঠ কন্যা সাহানার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সাহানা ১৯৯৪ সালে মারা যান।[৩]
সাহিত্যকর্ম
তিনি কবিতাচর্চা শুরু করেছিলেন স্কুল জীবন থেকেই। তখন থেকেই তিনি সাহিত্যচর্চা আর সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠনের লালনে তিনি সময় দিয়েছেন। তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। তার লেখালেখির শুরুর সময়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতা হল ডাইনামো, ট্রেন, ডি এইচ রেলওয়ে, ঘোড়সওয়ার, ও বাংলার মেয়ে।[৩] বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির কার্যকরী পরিষদ, পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ডের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। রবীন্দ্র চর্চাকেন্দ্রের সভাপতি ছিলেন। তার গ্রন্থসংখ্যা ২৫টি। তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ নববসন্ত ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয়।[৪]
২০০৭ সালে 'আবুল হোসেনর ব্যঙ্গ কবিতা' ও গদ্যের বই 'দুঃস্বপ্নের কাল', ২০০৮ সালে 'প্রেমের কবিতা' ও 'কালের খাতায়', ২০০৯ সালে গদ্য 'স্বপ্ন ভঙ্গের পালা' বইগুলি প্রকাশিত হয়।[২] তার অনুবাদ করা কবিতাগুলি হচ্ছে- 'ইকবালের কবিতা', 'আমার জন্মভূমি', 'অন্য ক্ষেতের ফসল'। ২০০০ সালে তিনি 'আমার এই ছোট ভুবন', ২০০৫ সালে 'আর এক ভুবন' নামে দুটি স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ লিখেন। তার অনুবাদ করা উপন্যাস হচ্ছে 'অরণ্যের ডাক'। 'পার্বত্যের পথে' নামক ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন তিনি।
এছাড়াও তার আরও অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।
মৃত্যু
২০১৪ সালের ২৯ জুন, তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন।[১][৫][৬]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য তিনি ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮০ সালে একুশে পদক পান।[১][৭] এছাড়া তিনি জাতীয় কবিতা পুরস্কার নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, পদাবলী পুরস্কার, কাজী মাহবুবুল্লাহ পুরস্কার ও স্বর্ণপদক, আবুল হাসানাৎ সাহিত্য পুরস্কার, জনবার্তা স্বর্ণপদক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, জনকন্ঠ গুণীজন সম্মাননা ও জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক সংবর্ধনাসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।[২]