আওরাকি / কুক পর্বত (ইংরেজি: Aoraki / Mount Cook) নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ পর্বত। এই পর্বতের উচ্চতা ২০১৪ সালের পরিমাপ অনুযায়ী ৩৭২৪ মিটার। তবে ১৯৯১ সালের পরিমাপে তা ৩৭৬৪ মিটার নির্ণীত হয়েছিল। উচ্চতার হ্রাসের কারণ ভূমিধ্স।[১] কুক পর্বত দক্ষিণাঞ্চলীয় আল্পসে অবস্থিত। দক্ষিণাঞ্চলীয় আল্পস পর্বতশ্রেণী দক্ষিণ আইল্যান্ডের দৈর্ঘ্য জুড়ে বিস্তৃত। কুক পর্বত নিউজিল্যান্ডের অন্যতম পর্যটন গণ্তব্যস্থল[২] এবং পর্বতারোহীদের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয়। কুক পর্বতে তিনটি চূড়া রয়েছে। দক্ষিণ থেকে উত্তরে, এগুলো হল লো পিক (৩৫৯৩ মিটার), মিডল পিক (৩৭১৭ মিটার) এবং হাই পিক। এই চূড়াগুলো দক্ষিণাঞ্চলীয় আল্পসের সামান্য দক্ষিণ ও পূর্বে অবস্থিত। তাসমান হিমবাহ দক্ষিণাঞ্চলীয় আল্পসের আরো পূর্বে এবং হুকার হিমবাহ পশ্চিমে অবস্থিত।
অবস্থান
এই পর্বতটি আওরাকি / মাউন্ট কুক জাতীয় উদ্যান এলাকায় অবস্থিত। ক্যান্টারবারি অঞ্চলে এই উদ্যানটির অবস্থা। ১৯৫৩ সালে এই উদ্যানটি স্থাপিত হয়। একই সময়ে ওয়েস্টল্যান্ড জাতীয় উদ্যান, মাউন্ট অ্যাসপায়ারিং জাতীয় উদ্যান এবং ফিওর্ডল্যান্ড জাতীয় উদ্যান স্থাপিত হয়। এই উদ্যানগুলো ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্ভুক্ত। আওরাকি / কুক পর্বত জাতীয় উদ্যানে ১৪০টি পর্বতচূড়া রয়েছে যেগুলোর উচ্চতা ২০০০ মিটারের অধিক। এছাড়া রয়েছে ৭২টি হিমবাহ। হিমবাহগুলো এই উদ্যানের ৪০% এলাকাজুড়ে অবস্থিত। উদ্যানটির আকার ৭০০ বর্গকিলোমিটার বা ১৭০,০০০ একর।
কুক পর্বতের নিকটে রয়েছে একটি গ্রাম, যার নাম মাউন্ট কুক ভিলেজ'। এটি একটি পর্যটন গণ্তব্য এবং কুক পর্বতের পর্বতারোহীদের নিকট বেজ ক্যাম্প হিসেবে সুপরিচিত। তাসমান হিমবাহ থেকে গ্রামটি ৭ কিলোমিটার এবং আওরাকি / কুক পর্বতের চূড়া থেকে ১২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
নামকরণ ও আবিষ্কার
আওরাকি হল নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ অঞ্চলের উপজাতিদের একটি ঐতিহ্যবাহী নাম। এছাড়া দক্ষিণ আইল্যান্ডের পুরাতন নাম তে ওয়াকা ও আওরাকি। অতীতে অনেকেই মনে করতেন এর অর্থ মেঘ ভেদকারী। ao অর্থ বিশ্ব, দিবস, মেঘ এবং raki বা rangi-এর অর্থ দিন, আকাশ, আবহাওয়া ইত্যাদি। নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় অধিবাসী মাওরিরা আওরাঙ্গি (Aorangi) নামে এই পর্বতকে চেনে।
১৪শ শতাব্দীতে নিউজিল্যান্ডে আগমনের সময় থেকেই মাওরি সম্প্রদ্বায় এই পর্বতকে চেনে। ইউরোপীয় হিসেবে কুক পর্বতকে ১৬৪২ সালের ডিসেম্বরে সর্বপ্রথম দর্শন করেন অ্যাবেল তাসমানের নাবিকদল। অ্যাবেল তাসমান ছিলেন ওলন্দাজ অভিযাত্রী এবং ব্যবসায়ী। এই পর্বতের ইংরেজি নামকরণ (মাউন্ট কুক) করেন ক্যাপ্টেন জন লর্ট স্টোক্স। ক্যাপ্টেন জেমস কুকের সম্মানার্থে এই নামকরণ করা হয়। জেমস কুক ১৭৭০ সালে নিউজিল্যান্ডের চারপাশ সমুদ্রপথে পরিভ্রমণ করেন। তবে সেসময় ক্যাপ্টেন জেমস কুক পর্বতটি দেখেনি।
১৯৯৮ সালে কুক পর্বতের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আওরাকি / কুক পর্বত। এর কারণ ছিল ঐতিহাসিক মাওরি নামটি পর্বতের সাথে সংস্লিষ্ট করা। এছাড়া সেসময় একই কারণে দক্ষিণ আইল্যান্ডের বেশ কয়েকটি জায়গার নামও পরিবর্তন করা হয়। পর্বতের বর্তমান নামটিই একমাত্র নাম যেখানে মাওরি নাম ইংরেজি নামের পূর্বে অবস্থিত।
ভূতত্ত্ব
প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও ইন্দো-অস্ট্রেলীয় টেকটনিক পাতের সংঘর্ষের ফলে দক্ষিণাঞ্চলীয় আল্পসের সৃষ্টি হয়। এই দুই টেকটনিক পাতের সংঘর্ষের কারণে আওরাকি / কুক পর্বতের প্রতি বছর প্রায় ৭ মিলিমিটার করে উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আবহাওয়াজনিত কারণে পর্বতের ক্ষয়ও সাধিত হয়ে থাকে। পর্বত অঞ্চলে চরম আবহাওয়ার কারণ ৪৫ ডিগ্রী অক্ষাংশ হতে আগত পশ্চিমা বায়ু।দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার পরে দক্ষিণাঞ্চলীয় আল্পসে এই বায়ু আঘাত করে। এরপরে এটি পূর্বে দক্ষিণ মহাসাগরের দিকে ধাবিত হয়।
১৮৮১ সালে জি. যে. রবার্টস আওরাকি / কুক পর্বতের উচ্চতা প্রথম নির্ণয় করেন। ১৮৮৯ সালে টি. এন. ব্রডরিক ক্যান্টারবারির রিক থেকে পর্বতের উচ্চতা নির্ণয় করেন। উভয় পরিমাপ থেকে উচ্চতা নির্ণীত হয় ৩,৭৬৪ মিটার। ১৯৯১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে প্রায় ১২-১৪ মিলিয়ন কিউবিক মিটার ভূমি ও তুষারধ্বসের কারণে পর্বতের উচ্চতা ১০ মিটার হ্রাস পায়।[৩][৪] পরবর্তীতে ভূমিক্ষয়ের কারণে ২০১৩ সালে নির্ণীত পরিমাপে পর্বতের উচ্চতা ৩০ মিটার হ্রাস পেয়ে ৩৭২৪ জানা যায়।[৫][৬]
দক্ষিণাঞ্চলীয় আল্পসের ৬৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সক্রিয় ফাটলের মধ্যবর্তী স্থানে আওরাকি / কুক পর্বতের অবস্থান। একারণে পর্বতটির স্থান প্রায়ই পরিবর্তিত হয়। প্রতি ১০০ থেকে ৩০০ বছরে পর্বতটি সরতে দেখা যায়। সর্বশেষ ১৭১৭ সালে এটির অবস্থানের আংশিক পরিবর্তন ঘটে।[৭]
হুকার উপত্যকা থেকে দৃশ্যমান আওরাকি / কুক পর্বত।
জলবায়ু
মাউন্ট কুক ভিলেজ, নিউজিল্যান্ড (১৯৮১-২০১০)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
↑. The landslide carried with it another 40 million cubic metres of rock and ice.The impact caused an earth quake of 3.9 on the Richter scale. <P207 In search Of Ancient NZ.Campball and Hutching.GNS science/Penguin.2011.>
Michael J. Crozier। "Mt Cook landslide"। Te Ara - the Encyclopedia of New Zealand। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০০৭।
↑T. J. Chinn; M. J. McSaveney (১৯৯২)। "Mount Aoraki (Mount Cook) rock avalanche"। Tai Awatea - Knowledge Net (More of Te Papa online)। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০০৭।