আইফেল টাওয়ার (ফরাসি: Tour Eiffel, তুর্ এফ়েল্, [tuʁɛfɛl]ⓘ) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত পেটাই লোহা দ্বারা নির্মিত একটি সুউচ্চ স্থাপনা। স্থাপনাটির নাম গুস্তাভ আইফেলের নামানুসারে দেওয়া হয়েছে, যাঁর কোম্পানি ১৮৮৭ থেকে ১৮৮৯ সালের মধ্যে এই স্থাপনার নির্মাণ করেছিল। মূলত ১৮৮৯ সালের বিশ্বমেলার কেন্দ্র হিসাবে এবং ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষ পালনের জন্য আইফেল টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও তখনকার অগ্রগণ্য শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা এর আধুনিক নকশার সমালোচনা করেছিল, এই স্থাপনাটি ফ্রান্সের বৈশ্বিক প্রতীক হয়ে গিয়েছে।[৫]
আইফেল টাওয়ার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেখা স্থাপত্য, যা দেখতে গেলে প্রবেশমূল্য দিতে হয়।[৬] ২০২২ সালে আইফেল টাওয়ারে ৫৮,৮৯,০০০ জন পর্যটক এসেছিল।[৭] ২০১৫ সালে প্রায় ৬৯ লাখ ব্যক্তি এই স্থাপনায় চড়েছিল। ১৯৬৪ সাল থেকে এটি ফ্রান্সের একটি "মন্যুমঁত ইস্তরিক" (monument historique) বলে চিহ্নিত। ১৯৯১ সাল থেকে এটি প্যারিস, সেইন নদীর তীর নামক ইউনেস্কোবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অংশ।[৮]
আইফেল টাওয়ার ৩৩০ মিটার (১,০৮৩ ফুট) উঁচু,[৯] যা প্রায় ৮১-তলা ভবনের সমান। এটি প্যারিসের সর্বোচ্চ স্থাপনা। এর বর্গাকার ভূমির দৈর্ঘ্য ১২৫ মিটার (৪১০ ফুট)। নির্মাণের সময় আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা ওয়াশিংটন মনুমেন্টকে ছাপিয়ে গিয়েছিল, ফলে এটি ৪১ বছর যাবৎ পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপনা ছিল। পরে ১৯৩০ সালে নিউ ইয়র্কেরক্রাইসলার বিল্ডিং আইফেল টাওয়ারকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। ১৯৫৭ সালে সম্প্রচার ব্যবস্থা যোগ করার ফলে আইফেল টাওয়ার এখন ক্রাইসলার বিল্ডিঙের তুলনায় ৫.২ মিটার (১৭ ফুট) লম্বা।
ভূপৃষ্ঠ বাদ দিয়ে আইফেল টাওয়ারে পর্যটকদের জন্য তিনটি তলা রয়েছে, যার মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রেস্তোরাঁ রয়েছে। চতুর্থ তলাটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৭৬ মিটার (৯০৬ ফুট) উঁচু, যা জনগণের জন্য উন্মুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণিকা। সিঁড়ি বা লিফটে করে প্রথম তলা (ভূপৃষ্ঠ) থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ওঠার জন্য টিকিট কাটা যায়। সিঁড়িতে করে দ্বিতীয় তলায় উঠতে প্রায় ৩০০টি ধাপ পার করতে হয়, একইভাবে দ্বিতীয় তলা থেকে তৃতীয় তলায় উঠতে প্রায় ৩০০টি ধাপ পার করতে হয়। সুতরাং সিঁড়িতে করে প্রথম তলা থেকে তৃতীয় তলায় উঠতে মোট ৬০০টি ধাপ পার করতে হয়। চতুর্থ তলায় ওঠার জন্য সিঁড়ি থাকলেও সাধারণত লিফটে করেই সেখানে পৌছনো সম্ভব। এটি আদতে গুস্তাভ আইফেলের জন্য নির্মিত একটি ব্যক্তিগত ফ্ল্যাট, যা জঁ লাশেজের আসবাবপত্র দ্বারা সজ্জিত। সেখানে তিনি টমাস এডিসনের মতো বন্ধুদের আমন্ত্রিত করেছিলেন।
ইতিহাস
গুস্তাভো ইফেল রেলের জন্য সেতুর নকশা প্রণয়ন করতেন এবং টাওয়ারটি নির্মাণে তিনি সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছিলেন। ১৮,০৩৮ খণ্ড লোহার তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ছোট-বড় কাঠামো জোড়া দিয়ে এই টাওয়ার তৈরি করা হয়েছিল। ৩০০ শ্রমিক এই নির্মাণ যজ্ঞে অংশ নিয়েছিল।[৫] এটির উপর দুইবার অ্যান্টেনা স্থাপনের ফলে আইফেল টাওয়ারের বর্তমান উচ্চতা ৩৩০ মিটার (১০৮৩ ফুট)। [১০]
নকশা
ধাতু
আইফেল টাওয়ারের পেটাই লোহার ওজন ৭,৩০০ টন (৭৩,০০,০০০ কিলোগ্রাম; ১,৬১,০০,০০০ পাউন্ড),[১১] কিন্তু লিফট, দোকান ও অ্যান্টেনার জন্য স্থাপনাটির মোট ওজন প্রায় ১০,১০০ টন (১,০১,০০,০০০ কিলোগ্রাম; ২,২৩,০০,০০০ পাউন্ড)-এ দাঁড়িয়েছে।[১২] আইফেল টাওয়ারের ৭,৩০০ টন লোহাকে গলিয়ে দিলে প্রাপ্ত ১২৫ মিটার (৪১০ ফুট) দৈর্ঘ্যের বর্গাকার ভূমির উচ্চতা মাত্র ৬.২৫ সেন্টিমিটার (২.৪৬ ইঞ্চি)। এক্ষেত্রে লোহার ঘনত্ব ৭.৮ টন প্রতি ঘনমিটার ধরে নেওয়া হয়েছে।[১৩] অন্যদিকে, আইফেল টাওয়ারকে সমমাপের (৩২৪ মিটার × ১২৫ মিটার × ১২৫ মিটার) একটি আয়তঘন দ্বারা আবদ্ধ করলে সেখানে ৬,২০০ টন (৬২,০০,০০০ কিলোগ্রাম; ১,৩৭,০০,০০০ পাউন্ড) বায়ু থাকবে, যা ঐ স্থাপনার লোহার ওজনের প্রায় সমান। পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রাভেদে স্থাপনার শীর্ষ সূর্য থেকে ১৮ সেন্টিমিটার (৭ ইঞ্চি) পর্যন্ত সরে যেতে পারে। আসলে সূর্যের দিকে লোহার তাপীয় প্রসারণের জন্য এটি ঘটে থাকে।[১৪]
পারিপার্শ্বিক বায়ুপ্রবাহ
নির্মাণের সময়ে অনেকেই আইফেল টাওয়ারের আকৃতি দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল, আর প্রকৌশলের মূলনীতির কথা মাথায় না রেখে শিল্পসুলভ কিছু তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে গুস্তাভ আইফেল অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তবে আইফেল ও তাঁর গোষ্ঠী বায়ুপ্রবাহের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত ছিলেন, আর জানতেন যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপনা নির্মাণের সময় এটি যেন বায়ুপ্রবাহ সহ্য করতে পারে। তিনি কোনো গাণিতিক সূত্রের উপর অবলম্বন না করে আইফেল টাওয়ারের দৃঢ়তা নির্ধারণ করার জন্য লৈখিক পদ্ধতি আর বায়ুপ্রবাহের জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছিলেন। স্থাপনার চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে একপ্রকার সূচক ফাংশনের আকৃতি পাওয়া যায়।[১৫] স্থাপনার প্রয়েক অংশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস যোগ করা হয়েছে যাতে এটি বায়ুর বাধাকে সর্বোচ্চ সহ্য করতে পারে।[১৬]
নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন প্রকৌশলীরা আইফেল টাওয়ারের নকশার সাফল্যকে ব্যাখ্যা করার জন্য বিভিন্ন গাণিতিক প্রকল্প পেশ করেছে। সবচেয়ে সাম্প্রতিক গাণিতিক প্রকল্প একটি অরৈখিক সমাকল সমীকরণ, যা স্থাপনার কোনো বিন্দুর বায়ুচাপকে ঐ বিন্দুতে বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে টানের মাধ্যমে ব্যর্থ করে দেওয়ার ধারণা থেকে উদ্ভূত। ১৮৮৫ সালের আইফেলের চিঠির ইংরেজি অনুবাদের পর ২০০৪ সালে এই প্রকল্প পেশ করা হয়েছে।[১৫]
বায়ুপ্রবাহের ফলে আইফেল টাওয়ার ৯ সেন্টিমিটার (৩.৫ ইঞ্চি) পর্যন্ত আন্দোলিত হতে পারে।[১৭]
তলা
ভবন না হলেও আইফেল টাওয়ারে চারটি তলা রয়েছে, যার মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রেস্তোরাঁ রয়েছে। চতুর্থ তলাটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৭৬ মিটার (৯০৬ ফুট) উঁচু, এবং এটি একটি পর্যবেক্ষণিকা। সিঁড়ি বা লিফটে করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ওঠার জন্য টিকিট কাটা যায়, তবে সাধারণত কেবল লিফটে করে চতুর্থ তলায় যাওয়া যায়।
প্রথম তলা
আইফেল টাওয়ারের চারটি স্তম্ভে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় যাওয়ার জন্য সিঁড়ি ও লিফট রয়েছে, তবে দক্ষিণের স্তম্ভে কেবল তৃতীয় তলার রেস্তোরাঁয় যাওয়ার লিফট জনগণের জন্য উন্মুক্ত।
দ্বিতীয় তলা
দ্বিতীয় তলায় যাওয়ার সিঁড়ি ও লিফট উভয়ই জনগণের জন্য উন্মুক্ত। প্রথমদিকে এখানে তিনটি রেস্তোরাঁ ছিল: একটি ফরাসি, একটি রুশ ও একটি ফ্লেমিশ। এছাড়া সেখানে একটি "অ্যাংলো-আমেরিকান বার" ছিল। বিশ্বমেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ফ্লেমিশ রেস্তোরাঁকে একটি ২৫০টি আসনের থিয়েটারে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। বর্তমানে এখানে "ল্য ৫৮ তুর এফেল" (Le 58 Tour Eiffel) রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।
তৃতীয় তলা
তৃতীয় তলায় যাওয়ার সিঁড়ি ও লিফট উভয়ই জনগণের জন্য উন্মুক্ত। এখানে "ল্য জুল ভার্ন" (Le Jules Verne) নামক একটি গুরমে (gourmet) রেস্তোরাঁ রয়েছে এবং দক্ষিণের স্তম্ভ থেকে সরাসরি লিফটে করে সেখানে সরাসরি পৌঁছনো যায়।[১৮] কল্পবৈজ্ঞানিক লেখক জুল ভার্নের নামানুসারে এই রেস্তোরাঁর নাম রাখা হয়েছে।
চতুর্থ তলা
চতুর্থ তলায় যাওয়ার কেবল লিফটই জনগণের জন্য উন্মুক্ত এবং এটি আইফেল টাওয়ারের সর্বোচ্চ তলা। প্রথমদিকে এখানে বিভিন্ন গবেষণার জন্য গবেষণাগার এবং অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য গুস্তাভ আইফেলের একটি ক্ষুদ্র ফ্ল্যাট ছিল। এই ফ্ল্যাটটি এখন জনগণের জন্য উন্মুক্ত এবং এটি সাজসজ্জায় পরিপূর্ণ। এখানে আইফেল ও তাঁর কিছু বিখ্যাত অতিথিদের মূর্তি রয়েছে।[১৯] ১৯৩৭ থেকে ১৯৮১ সাল অবধি চতুর্থ তলায় একটি রেস্তোরাঁ ছিল। তবে প্রকৌশলীদের মতে রেস্তোরাঁটি খুব ভারী ছিল এবং এর ভারে স্থাপনাটি বসে যাচ্ছিল, তাই ১৯৮১ সালে এক আইফেল টাওয়ার থেকে সরানো হয়েছিল।[২০]
খোদাই করা নামসমূহ
মূলত ফরাসি শিল্পীদের প্রতিবাদের ভয়ে গুস্তাভ আইফেল এই সুউচ্চ স্থাপনা নির্মাণে অবদানকারী ৭২ জন ফরাসি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও গণিতবিদের নাম খোদাই করেছেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে সেই খোদাইয়ের উপর রং চালানো হয়েছিল, তবে স্থাপনাটির পরিচালক "সসিয়েতে নুভেল দেক্সপ্লইতাসিওঁ দ্য লা তুর এফেল" (Société Nouvelle d'exploitation de la Tour Eiffel) ১৯৮৬–৮৭ সালে এর পুনরুদ্ধার করেছিল।[২১]
নন্দনশিল্প
আইফেল টাওয়ার রঙের বিভিন্ন মাত্রায় রঞ্জিত: উপরের দিকে হালকা এবং যত নিচে যাচ্ছে রং তত গাঢ় হচ্ছে।[২২] প্রথমদিকে এর রং লালাভ বাদামি ছিল, যা ১৯৬৮ সালে "আইফেল টাওয়ার ব্রাউন" নামক ব্রোঞ্জ রঙে রঙিন করা হয়েছে।[২৩]২০২৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সময় আইফেল টাওয়ারকে সাময়িকভাবে সোনালী রঙে রঙিন করা হয়েছিল।[২৪][২৫]
২০২৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের পর প্যারিসের নগরপ্রধান আন হিদালগোঅলিম্পিক বলয়সমূহকে আইফেল টাওয়ারে স্থায়ীভাবে রাখার প্রস্তাব করেছিলেন। ২৯ মিটার (৯৫ ফুট) চওড়া ও ১৩ মিটার (৪৩ ফুট) বলয়সমূহকে অলিম্পিকের জন্য আইফেল টাওয়ারে বসানো হয়েছিল এবং প্যারালিম্পিকের পরে এদের সরানোর কথা ছিল। তবে আইফেল পরিবার ও কিছু বাসিন্দা হিদালগোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন, কারণ এর ফলে সংরক্ষিত স্থাপত্যটি পরিবর্তিত হয়ে যাবে। দীর্ঘস্থায়ীভাবে রাখার জন্য মূল ৩০-টন অলিম্পিক বলয়সমূহকে হালকা বলয়সমূহ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে।[২৬]
জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে প্যারিসের জানলায় সবসময় আইফেল টাওয়ারকে দেখানো হয়।[২৭] বাস্তবে প্যারিসে জোনিং বিধিনিষেধের ফলে সেখানকার বেশিরভাগ ভবনের উচ্চতা ৭ তলা হওয়ার জন্য খুব কমসংখ্যক উচ্চ ভবন থেকে আইফেল টাওয়ারকে পরিষ্কারভাবে দেখতে পাওয়া যায়।[২৮]
মাত্র
উচ্চতা পরিবর্তন
কয়েকবছর ধরে আইফেল টাওয়ারের পিনাকল উচ্চতা একাধিকবার পরিবর্তিত হয়েছে, যা নিচের সারণিতে দেখানো হয়েছে:[২৯]
শুরু
শেষ
উচ্চতা (মিটার)
সংযোজন
মন্তব্য
১৮৮৯
১৯৫৬
৩১২.২৭
পতাকার খুঁটি
স্থাপত্যগত উচ্চতা ৩০০ মিটার (৯৮০ ফুট), ১৯৩০ সাল অবধি পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপনা ছিল, পরে ক্রাইসলার বিল্ডিং এর উচ্চতাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। ১৯৫৬ সাল অবধি পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবন নয় এমন স্থাপনা ছিল, পরে কেসিটিভি ব্রডকাস্ট টাওয়ার এর উচ্চতাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল।
১৯৫৭ সালে সম্প্রচার অ্যান্টেনা যোগ করা হয়েছিল, যার ফলে এটি পুনরায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবন নয় এমন স্থাপনা ছিল। পরে ১৯৫৮ সালে সম্পন্ন টোকিও টাওয়ার এর উচ্চতাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল (তবে টোকিও টাওয়ার নিজেই আইফেল টাওয়ার দ্বারা অনুপ্রাণিত)।
১৮৮৯ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে ৩০ কোটির বেশি মানুষ আইফেল টাওয়ারে ভ্রমণ করেছেন।[৫][৩১] ২০১৫ সালে প্রায় ৬৯ লাখ মানুষ আইফেল টাওয়ারে ভ্রমণ করেছিল।[৩২]
সময় পরিক্রমা
১০ সেপ্টেম্বর ১৮৮৯
টমাস এডিসন এই তোরণটি পরিদর্শন করেন। তিনি নিম্নলিখিত বার্তাটি লিখে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন, “শ্রদ্ধা জানাই সেই সাহসী প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকৌশলী এম আইফেলের প্রতি আধুনিক প্রকৌশলের নিদর্শনস্বরূপ এই বিশাল ও মৌলিক সৃষ্টির জন্য যিনি টমাস এডিসন, বন ডিউ এর মত বিশ্ববিখ্যাত প্রকৌশলীসহ সকল প্রকৌশলীদের জন্য গর্বের এবং মর্যাদার”।
১৯১০
ফাদার থিওডর উলফ টাওয়ারের পাদদেশ এবং চূড়ার বিকিরিত শক্তি পরিমাপ করেন যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ছিল এবং কসমিক রশ্মি(Cosmic Ray) তখনই প্রথম আবিষ্কার হয়।[৩৩]
৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১২
ফ্রাঞ্জ রেইচেল্ট নামক একজন ফরাসি দর্জি তার নিজের তৈরী প্যারাস্যুট নিয়ে আইফেল টাওয়ারের ৬০ মিটার উচ্চতা থেকে লাফিয়ে পড়েন এবং মৃত্যু বরণ করেন।
১৯১৪
টাওয়ারে অবস্থিত একটি রেডিও ট্রান্সমিটার মার্নের প্রথম যুদ্ধের (The First War of Marne) সময় জার্মান বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
১৯২৫
ভিক্টর লাস্টিগ নামক একজন শিল্পী টুকরো ধাতব হিসেবে টাওয়ারটি বিক্রি করেন দু’টি ভিন্ন কিন্তু সম্পর্কিত সময়ে।[৩৪]
১৯৩০
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে ক্রাইসলার ভবন তৈরী হবার পর আইফেল টাওয়ার পৃথিবীর সর্বোচ্চ কাঠামোর মর্যাদা হারায়।
১৯২৫-১৯৩৪
টাওয়ারের চারদিকের তিন দিকেই "সিত্রোয়াঁ"(Citroen)’’ মোটর গাড়ির জন্য আলোক সজ্জিত করা হয় যা সেই সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতায় স্থাপিত বিজ্ঞাপন চিত্র ছিল।
১৯৪০-১৯৪৪
প্যারিস জার্মানির অধীনস্থ থাকাকালীন ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ফরাসিরা টাওয়ারের লিফটের তার কেটে ফেলে। ফলস্বরূপ এডলফ হিটলারকে পদব্রজে চূড়ায় উঠতে হয়েছিল। তখন এমনটি বলাবলি হতো যে হিটলার ফ্রান্স বিজয় করলেও আইফেল টাওয়ার বিজয় করতে পারেন নি।
৩ জানুয়ারি ১৯৫৬
টাওয়ারের ঊর্ধভাগ আগুনে পুড়ে বিনষ্ট হয়।
১৯৫৭
বর্তমান রেডিও অ্যানটিনাটি টাওয়ারের শীর্ষে স্থাপন করা হয়।
১৯৮০
টাওয়ারের মধ্যবর্তী উচ্চতায় রেস্তোরাঁ এবং তা তৈরীতে দরকারি লৌহগুলো খুলে পৃথক করে রাখা হয়। নিউ অরলিনস, লুসিয়ানায় এসব পুণঃস্থাপন করা হয়।
৩১ মার্চ ১৯৮৪
রবার্ট মরিয়ার্টি টাওয়ারের বৃত্তাকার অংশ দিয়ে একটি ‘বিচক্রাফ্ট বনানজা’(‘’Beechcraft Bonanza’’) উড়ান।[৩৫]
১৯৮৭
এ. জে. হ্যাকেট আইফেল টাওয়ারের শীর্ষ থেকে প্রথমবারের মত ‘বাঙ্গী লম্ফন’(‘’bungee jumps’’) করেন, ভূমিতে পৌছানোর পর তিনি প্যারিস পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন। [৩৬]
২৭ অক্টোবর ১৯৯১
থিয়েরী ডিভক্স টাওয়ারের দ্বিতীয় স্তর অনেকগুলো বাঙ্গী লম্ফন করেন যা অননুমোদিত ছিল। প্রশাসনিক লোক পৌঁছানোর আগেই তিনি ছয়টি লম্ফন করেছিলেন।[৩৭]
১৪ জুলাই ১৯৯৫
জিন মাইকেল জার ‘’Concert For Tolerance’’ নামক একটি কনসার্টের আয়োজন করেন ইউনেস্কোকে (UNESCO) সহায়তা করার জন্য। সেখানে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ উপস্থিত ছিল।
১৯৯৯
আইফেল টাওয়ারে প্যারিসের সহস্র বর্ষ উদযাপিত হয়। এই উপলক্ষে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ টাওয়ারটি
আলোকোজ্জ্বল করা হয়।[৩৮]
টাওয়ারের সম্প্রচার কক্ষে আগুন ধরে যায়। ৪০ মিনিট পর সম্পূর্ণ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
২০০৪
টাওয়ারের প্রথম স্তরে স্কেটিং খেলার আয়োজন শুরু করা হয়।[৪০]
২০০৮
ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয়বারের মত সভাপতিত্ব পাওয়ায় ইফেল টাওয়ারে ১২টি দেশের পতাকা লাগানো হয় এবং নীল আলোয় সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেয়া হয়।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১০
সম্ভব্য বোমা হামলার আশঙ্কায় আইফেল টাওয়ার দর্শকদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। অণুসন্ধান চালিয়ে কোন বোমা পাওয়া না যাওয়ায় পরদিন আবারো তা খুলে দেয়া হয়। [৪১][৪২]
↑SETE (২০১০)। "The Eiffel Tower Laboratory"। Official Eiffel Tower website। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৭।
↑SETE। "The Eiffel Tower gets beautified"(পিডিএফ)। Official Eiffel Tower website। ২১ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০১৫।
↑SETE। "Painting the Eiffel Tower"। Official Eiffel Tower website। ২৬ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৭।
↑Wulf, Theodor. Physikalische Zeitschrift, contains results of the four-day long observation done by Theodor Wulf while at the top of the Eiffel Tower in 1910.
↑Letcher, Piers (2003). Eccentric France. Bradt Travel Guides