আইএনএস সরযূ ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রথম সৌর শ্রেণীর টহল জাহাজ। গোয়া শিপইয়ার্ড লিমিটেড এই জাহাজের নকশা এবং নির্মাণ করেছে। আন্দামান নিকোবর কমান্ডের (এএনসি) আওতায় এই জাহাজের প্রধান ঘাঁটি হলো পোর্ট ব্লেয়ার। এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ সাগরমুখী টহল জাহাজ।[৩][৪][৫]
নকশা এবং উন্নয়ন
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নৌবাহিনীর জন্য সরযূ শ্রেণীর টহল জাহাজের আবেদন করে। মূলত উপকূলে টহলের জন্য এটি চাওয়া হয়।[৪] গোয়া শিপইয়ার্ড লিমিটেড(জিএসএল) প্রথম ভারতীয় শিপইয়ার্ড হিসেবে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে এই শ্রেণীর জাহাজের নকশা ও নির্মাণ করে।[৫]
সরযূ টহল জাহাজ নকশা, কর্মক্ষমতা এবং মানের দিক থেকে গোয়া শিপইয়ার্ডে নির্মিত সর্বাধুনিক জাহাজ। একটি দেশীয় নকশাকারীদের দল জাহাজটির নকশা করেন এবং এটি নির্মাণে খরচ হয় ₹ ৬.২ বিলিয়ন (ইউএস$ ৭৬ মিলিয়ন) রূপী।[২] একটি ভারতীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গিয়ারবক্স সরবরাহ করতে দেরী হওয়ায় জাহাজের নির্মাণ কিছুটা প্রলম্বিত হয়। পরবর্তীতে নতুন একটি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে গিয়ারবক্সের আবেদন জানানো হয়, যেগুলো ২০১১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ সরবরাহ করা হয়। সরযূ-এর নির্মাণ অবশেষে ২০১২ সালের নভেম্বরে শেষ হয়, জাহাজটি নির্মাণে প্রায় সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছিলো॥ নৌবাহিনীর জন্য এই শ্রেণীর আরো তিনটি জাহাজ নির্মিত হচ্ছে, যেগুলো, সরযূ বাহিনীতে নিযুক্ত নিয়োজিত হবার ১৮ মাসের মধ্যে সরবরাহ করা হবে, অর্থাৎ প্রতি ৬ মাসে একটি করে।[৬][৭][৮][৯][৫][১০]
নৌবাহিনী প্রধান সুরেশ মেহতা ২০০৯ সালের ৩০ মার্চ আইএনএস সরযূ উদ্বোধন করেন।[১১] নৌবাহিনী ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর জাহাজটি গ্রহণ করে[১২][১৩] এবং ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি জাহাজটি সেবায় নিয়োজিত হয়। আন্দামান ও নিকোবর কমান্ডের সর্বাধিনায়ক ভাস্কো দা গামায় জাহাজটি নিয়োগ করেন।[৫][৮][১৪]
বিবরন
এই জাহাজের পাল্লা প্রায় ৬,০০০ কিলোমিটার (৩,২০০ নটিক্যাল মাইল), এবং কোন প্রকার সরবরাহ ছাড়াই এটি সমুদ্রে প্রায় দুই মাস মোতায়েন থাকতে পারে। আট জন অফিসার এবং ১০৫ জন নাবিক জাহাজটি পরিচালনা করে। এটি ইতালির তৈরী ওটিও মেলারা ৭৬-মিলিমিটার (৩.০ ইঞ্চি) কামান; দুটি রাশিয়ায় তৈরি একে-৬৩০ সিক্স-ব্যারেল্ড ৩০-মিলিমিটার (১.২ ইঞ্চি) ক্লোজ-ইন উইপন সিস্টেম (CIWS), এবং সিক্স সেলফ-প্রটেকশন কাফ লাঞ্চার প্রভৃতি অস্ত্রে সজ্জিত। এগুলো জাহাজে একটি ইলেক্ট্রো অপ্টিক ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হয়।[১৫] এছাড়াও এতে নৌচালনা ও দ্রুত সতর্ককারী রাডার এবং একটি সমন্বিত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম রয়েছে। এই জাহাজে এইচএএল ধ্রুব এবং এইচএএল চেতকের মতো বহুমাত্রিক ব্যবহার উপযোগী হেলিকপ্টার এবং দুটি দ্রুতগামী মটর বোট রয়েছে।[৮][১৬]
এই জাহাজের স্বয়ংক্রিয় পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম রয়েছে এবং পরিচালনা ও শক্তি একটি রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের সাহায্যে পরিচালিত হয়। এই জাহাজে নাবিকদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জাহাজের সরঞ্জামগুলোর ব্যবহার সহজ করার জন্য জাহাজে একটি সম্পূর্ণ একীভূত এলএএন এবং সিসিটিভি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। দুটি এসইএমটি পাইলস্টিক ইঞ্জিন দ্বারা জাহাজটি পরিচালিত হয়; যা ভারতীয় নৌবাহিনীর এই শ্রেণীর জাহাজের ক্ষেত্রে বৃহত্তম এবং জাহাজটিকে ২৫ নট (৪৬ কিমি/ঘ; ২৯ মা/ঘ) এর অধিক চালনা করে।[৮]
সেবা তথ্য
এএনএস এর আওতায় সরযূর প্রধান ঘাঁটি হলো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের পোর্ট ব্লেয়ার। কমান্ডার আমানপ্রিত সিং জাহাজটির প্রথম কমান্ডিং অফিসার,[৪] যিনি দ্বিতীয় বারের জন্য কোন জাহাজ পরিচালনা করতে যাচ্ছেন। জাহাজটি আন্দামান ও নিকোবর কমান্ডের উপকূলীয় এলাকায় নজরদারি এবং টহল ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, এটি ভারতের সতন্ত্র অর্থনৈতিক এলাকা এবং সমুদ্র যোগাযোগ পথে টহল ও নিরাপত্তা কাজে ব্যবহৃত হবে।[১৫] এটি উপকূলবর্তী এলাকায় জলদস্যুতা নিরসন, দ্রুত অপারেশন পরিচালনা এবং মূল্যবান সম্পদের প্রহরায় ব্যবহৃত হবে।[৫][৮][৯][১০]
তথ্যসূত্র