অ্যাস্টেরিক্স বা অ্যাস্টেরিক্সের অভিযান (ফরাসি: Astérix or Astérix le Gaulois, IPA:asteʁikslə ɡolwa) রনে গোসিনি লিখিত এবং আলবেয়ার উদেরজো কর্তৃক চিত্রিত (১৯৭৭ সালে গোসিনির মৃত্যুর পর উদেরজো লেখার দায়িত্বও গ্রহণ করেন), ফরাসি ভাষায় লিখিত কমিক বই। পিলট নামে এক ফরাসি পত্রিকায় ২৯শে অক্টোবর, ১৯৫৯ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ২০১৩ সালে উদেরজো যখন তার অংশ হেচেটের কাছে বিক্রয় দেয় তখন এর দায়িত্ব জিন-ইয়েভেস ফের্রি (কাহিনী) এবং ডিডিয়ার কনরাড (চিত্রাঙ্কন) এর অর্পিত হয়। ২০১৭ সালের শেষাবধি পর্যন্ত এর মোট ৩৭ টি কার্টুন বই বের হয়েছে।
গল্পগুলো রোমান সাম্রাজ্যের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে লিপ্ত প্রাচীন এক গল গ্রামকে ঘিরে সম্পাদিত হয়েছে। তারা তাদের ড্রুড বা পুরোহিতের বানানো এক ধরনের জাদুর শরবত পান করে প্রচন্ড শক্তিশালী হয়ে এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতো। গল্পের নায়ক বা প্রধান চরিত্র ‘অ্যাস্টেরিক্স’ ও তার বন্ধু ওবেলিক্স দু’জনে মিলে অনন্য সাধারণ অভিযানে লিপ্ত হতো। প্রতিটি চরিত্রের নামের শেষে যে ‘ক্স’ বিভক্তিটি ব্যবহার করা হয়েছে তা অনেকটা ‘ভারসিঙ্গটরিক্স’ নামে এক ঐতিহাসিক গল প্রধানের নামের উচ্চারণের সাথে মিল রয়েছে। যদিও এ সকল গল্পের ঘটনাগুলো গ্রামের আশেপাশের ব্যাপার ঘিরে গড়ে উঠলেও, অনেকগুলো গল্পই এই দু’জনকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করতে নিয়ে গেছে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় (ভলিউম ৪ থেকে ২৯), গল্পের ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে একবার গল এবং পরেরবার বিদেশকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। জোড় সংখ্যার বইগুলো বিদেশ এবং বেজোড় সংখ্যার বইগুলো গল, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রামকে ঘিরে গড়ে উঠেছে।
সারা পৃথিবীতে অ্যাস্টেরিক্স-এর কাহিনীগুলো ফ্রাঙ্কো-বেলজিয়ান কমিক বইগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয়, এ কাহিনীগুলো মোটামুটি ১১১টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[১]
এই বিশাল জনপ্রিয়তার কারণে কিছু বই ১৩ টি সিনেমায় রূপান্তরিত করা হয়েছে; যার মাঝে ৯ টি অ্যানিমেটেড (কার্টুন) আর চারটি সিনেমা। এছাড়া এর চরিত্রের উপর নির্ভর করে বেশ কিছু গেমস ও প্যারিসের কাছে ‘পার্ক অ্যাস্টেরিক্স’ নামক একটি থিম পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই ৩৭ কাহিনী ৩৭০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে সারা বিশ্বে।[২] যার ফলশ্রুতিতে লেখকদ্বয় ফ্রান্সের বর্হিবিশ্বের সেরা লেখক হিসেবে স্থান পেয়েছেন।[৩][৪]
ইতিহাস
অ্যাস্টেরিক্সের কাহিনীগুলো লেখার আগে, গোসিনি ও উদেরজো তাদের আউম্পাহ-পাহ, নামক আরেকটি চিত্রকাহিনীর মাধ্যমে বেশ সাফল্য অর্জন করেছিলেন। এ কাহিনীটি টিনটিন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপানো হতো।.[৫]
অ্যাস্টেরিক্স প্রথম ধারাবাহিকভাবে বের হওয়া শুরু হয় পিলট পত্রিকায়, এবং প্রথম সংখ্যাটি বের হয় ২৯ অক্টোবর ১৯৬৯।[৬] ১৯৬১ সালে প্রথম বই আকারে বের হয় অ্যাস্টেরিক্স দা গল। এর পর থেকে সাধারণত প্রতি বছর একটি করে বই প্রকাশিত হতে শুরু করে ।
উদেরজো প্রথম যখন রেখাচিত্র অঙ্কন করেন তখন গল যোদ্ধাদের বৈশিষ্ট্য মোতাবেক অ্যাস্টেরিক্সকে বিশাল আকৃতির একজন শক্তিশালী যোদ্ধা হিসেবে চিত্রিত করেন। কিন্তু গোসিনির চিন্তাধারা ছিল অন্যরকম। তিনি অ্যাস্টেরিক্সকে একজন ক্ষুদ্রাকৃতির বুদ্ধিমান যোদ্ধা হিসেবে কল্পনা করেছিলেন, যে শক্তির চাইতে বুদ্ধিমত্তাকে বেশি ব্যবহার করবে। তথাপি, উদেরজো মনে করেছিলেন এরকম ক্ষুদ্রাকৃতির নায়কের প্রয়োজন একজন অনুজ্জ্বল কিন্তু শক্তিশালী সহচর। ধারণাটি গোসিনির কাছেও ভালো লেগেছিল। আর তাই জন্ম নিলো ওবেলিক্স।[৭] যদিও এসময় অ্যাস্টেরিক্সের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছিল, কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে পিলটের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। এসময় পিলটকে জর্জ দারগদ কিনে নেয়।[৭]
গোসিনির মৃত্যুর পর পাঠকদের অনুরোধে উদেরজো নিজেই কাহিনীর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে শুরু করেন। কিন্তু কমিকটির প্রকাশনা কিছুটা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এই কাহিনীর বেশির ভাগ সমালোচক এবং ভক্তরা গোসিনির লেখাকেই পছন্দ করত।[৮] উদেরজো এসময় লে এডিশন Albert-René নামে নিজের একটি প্রকাশনা সংস্থা খোলেন। সেখান থেকে পরবর্তীতে উদেরজো নিজের লেখা এবং অঙ্কিত বইগুলি ছাপানো হয়।[৭] যদিও, দারগদ, সর্বপ্রথম কাহিনীগুলোর প্রকাশক, তারা প্রথম ২৪টি কাহিনী যার লেখক উদেরজো এবং গোসিনি দু’জনেই, সেগুলো প্রকাশের স্বত্ব রেখে দিয়েছিল। ১৯৯০ সালে লেখকদ্বয়ের পরিবার স্বত্ব ফেরত পাবার জন্য দারগদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯৮ সালে দীর্ঘস্থায়ী এক মামলার পর দারগদ কাহিনীগুলো প্রকাশ এবং বিক্রি করবার অধিকার হারিয়ে ফেলে। উদেরজো পরবর্তীতে আলবার্ট-রেন এর পরিবর্তে হ্যাচেটের কাছে স্বত্ব বিক্রয় করে দিলেও নতুন কাহিনী প্রকাশনার স্বত্ব আলবেয়ার উদেরজো (৪০%), সিলভিয়া উদেরজো (২০%) এবং অ্যান গোসিনি (৪০%) কাছেই রয়ে যায়।
যদিও উদেরজো প্রথমে ঘোষণা দিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর পরে এর আর কোন নতুন কাহিনী লেখা হবে না, যে ধরনের অনুরোধ অ্যার্জে করে যান তার বিখ্যাত টিনটিনের অভিযান সম্পর্কে, কিন্তু ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে হ্যাচেটের কাছে তার অংশ বিক্রয় (যারা তার কোম্পানি অধিগ্রহণের মাধ্যমে কমিক্সের স্বত্বের মালিকানা লাভ করেছে) করার পর তার মনোভাবের পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে দু’পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয় ।[৯]
ফ্রান্সের দৈনিক পত্রিকা ল্য মোঁদ এর কাছে লেখা এক চিঠির মাধ্যমে উদেরজো নিজের মেয়ে সিলভিয়া তার বাবার পারিবারিক প্রকাশনা কেন্দ্র বিক্রয় এবং তার মৃত্যুর পরেও অ্যাস্টেরিক্সের কাহিনী বের করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছেন। তিনি লিখছেন, “...অ্যাস্টেরিক্সের সহলেখক, গল যোদ্ধাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে আজ যোগ দিয়েছে রোমানদের সাথে- যারা শুধু কলকারখানা আর পয়সা বোঝে।”[১০][১১] অ্যানে গোসিনি অবশ্য তার স্বত্ব একই সময়ে বিক্রয় এবং নতুন প্রকাশনা চালিয়ে যাবার অনুমতি দেন।[১২] কয়েকমাসের মধ্যেই উদেরজো নতুন কাহিনী রচনার কাজে তিনজন অঙ্কনশিল্পী, যারা তার সাথে অনেক দিন ধরে কাজ করেছিল তাদেরকে নিয়োগ দেন।[৮]
গ্রন্থতালিকা
১ - ২৪, ৩২ এবং ৩৪ নম্বর বইগুলো উদেরজো ও গোসিনি একসাথে লিখেছিলেন। ২৫ – ৩১ এবং ৩৩ নম্বর বইগুলো উদেরজোর একার লেখা এবং আঁকা। ব্যবহৃত তারিখ প্রথম প্রকাশের উপর নির্ভর করে দেয়া হয়েছে এবং এখানে মূল ফরাসী নামের পরিবর্তে ইংরেজি নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
০১. অ্যাস্টেরিক্স দা গল (Asterix the Gaul) (১৯৬১)[১৩]
০২. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা গোল্ডেন সিকল (Asterix and the Golden Sickle) (১৯৬২)[১৩]
০৩. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা গথস (Asterix and the Goths) (১৯৬৩)[১৩]
০৪. অ্যাস্টেরিক্স দা গ্লাডিয়েটর (Asterix the Gladiator) (১৯৬৪)[১৩]
০৫. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা ব্যাঙ্কউইট (Asterix and the Banquet) (১৯৬৫)[১৩]
০৬. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ক্লিওপ্যাট্রা (Asterix and Cleopatra) (১৯৬৫)[১৩]
০৭. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা বিগ ফাইট (Asterix and the Big Fight) (১৯৬৬)[১৩]
০৮. অ্যাস্টেরিক্স ইন বৃটেন (Asterix in Britain) (১৯৬৬)[১৩]
০৯. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা নর্মান্স (Asterix and the Normans) (১৯৬৬)[১৩]
১০. অ্যাস্টেরিক্স দা লেজিওন্যারি (Asterix the Legionary) (১৯৬৭)[১৩]
১১. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা চিফট্যান্স শিল্ড (Asterix and the Chieftain's Shield) (১৯৬৮)[১৩]
১২. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা অলিম্পিক গেমস (Asterix at the Olympic Games) (১৯৬৮)[১৩]
১৩. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা কলড্রন (Asterix and the Cauldron) (১৯৬৯)[১৩]
১৪. অ্যাস্টেরিক্স ইন স্পেন (Asterix in Spain) (১৯৬৯)[১৩]
১৫. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা রোমান এজেন্ট (Asterix and the Roman Agent) (১৯৭০)[১৩]
১৬. অ্যাস্টেরিক্স ইন সুইজারল্যান্ড (Asterix in Switzerland) (১৯৭০)[১৩]
১৭. দা ম্যান্সন অভ দি গডস (The Mansions of the Gods) (১৯৭১)[১৩]
১৮. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা লরেল রেথ (Asterix and the Laurel Wreath) (১৯৭২)[১৩]
১৯. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা সুথসেয়ার (Asterix and the Soothsayer) (১৯৭২)[১৩]
২০. অ্যাস্টেরিক্স ইন করসিকা (Asterix in Corsica) (১৯৭৩)[১৩]
২১. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা সিজারস গিফট (Asterix and Caesar's Gift) (১৯৭৪)[১৩]
২২. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা গ্রেট ক্রসিং (Asterix and the Great Crossing) (১৯৭৫)[১৩]
২৩. ওবেলিক্স অ্যান্ড কোঃ (Obelix and Co.) (১৯৭৬)[১৩]
২৪. অ্যাস্টেরিক্স ইন বেলজিয়াম (Asterix in Belgium) (১৯৭৯)[১৩]
২৫. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা গ্রেট ডিভাইড (Asterix and the Great Divide) (১৯৮০)[১৩]
২৬. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা ব্ল্যাক গোল্ড (Asterix and the Black Gold) (১৯৮১)[১৩]
২৭. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড সান (Asterix and Son) (১৯৮৩)[১৩]
২৮. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা ম্যাজিক কার্পেট (Asterix and the Magic Carpet) (১৯৮৭)[১৩]
(অস্বীকৃত) হাও ওবেলিক্স ফেল ইন্টু দা ম্যাজিক পোসন হোয়েন হি ওয়াজ অ্যা লিটল বয় (How Obelix Fell into the Magic Potion When he was a Little Boy) (১৯৮৯)
২৯. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা সিক্রেট ওয়েপন (Asterix and the Secret Weapon) (১৯৯১)[১৩]
৩০. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ওবেলিক্স অল অ্যাট সি (Asterix and Obelix All at Sea) (১৯৯৬)
৩১. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা অ্যাকট্রেস (Asterix and the Actress) (২০০১)
৩২. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা ক্লাস অ্যাক্ট (Asterix and the Class Act) (২০০৩)
৩৩. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা ফলিং স্কাই (Asterix and the Falling Sky) (২০০৫)
৩৪. অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ওবেলিক্স বার্থ ডেঃ দি গোল্ডেন বুক (Asterix and Obelix's Birthday: The Golden Book) (২০০৯)[১৪]
৩৫.অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা পিক্টস (২০১৩)
৩৬.অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা মিসিং স্ক্রোল (২০১৫)
৩৭.অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা চ্যারিয়ট রেস (২০১৭)
সিরিজ বহির্ভূত বই:
অ্যাস্টেরিক্স কঙ্কারস রোম, ২৩তম বই হওয়ার কথা, ওবেলিক্স অ্যান্ড কোং (১৯৭৬) আগে
ওবেলিক্স কীভাবে ম্যাজিক পোশনের মধ্যে পড়লো (১৯৮৯)
দি টুয়েল্ভ টাস্ক অভ অ্যাস্টেরিক্স (২০১৬)
উদারজো ক্রোক পার সেস আমিস (১৯৯৬)
অ্যাস্টেরিক্স কঙ্কারস রোম (Asterix Conquers Rome) গল্পটি অ্যানিমেটেড কাহিনী দা টুয়েলভ টাস্ক অভ অ্যাস্টেরিক্স (The Twelve Tasks of Asterix) চিত্র থেকে অভিযোজন করা হয়েছে। বইটি ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হওয়ায় কাহিনীটাকে অ্যাস্টেরিক্সের ২৩তম গল্প হিসেবে বলা যেতে পারে। কিন্তু বইটি পরবর্তীতে খুব একটা প্রকাশিত হয় নি বলে মূল কাহিনীর অংশ নয় canonical বলে বিবেচিত হয়। বইটির ইংরেজি অনুবাদ ‘অ্যাস্টেরিক্সের বার্ষিকী ১৯৮০’ ছাড়া মাত্র একবারই সঙ্কলন আকারে বের হয়েছিল ১৯৮৪ সালে।
এছাড়া ২০০৭ সালে লে এডিশন আলবার্ট রেন Astérix et ses Amis নামে একটি শ্রদ্ধাজ্ঞাপক সঙ্কলন বের করে, এই বইটি নানারকম ছোট গল্প (এক থেকে চার স্ট্রিপের মধ্যে) অবলম্বনে রচিত হয়েছিল। বইটি ইউরোপীয় ৩৪জন বিখ্যাত চিত্র-কাহিনীকারের (Comics Artists) পক্ষ থেকে উদেজোর ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একটি শ্রদ্ধা জ্ঞাপক বই ছিল। বইটি নয়টি ভাষায় অনূদিত হয়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত ইংরেজিতে অনূদিত হয়নি।[১৫]
ভাষান্তর
অ্যাস্টিরেক্সের ৩৭টি বই (একটি ছোট গল্পের সঙ্কলন সহ) বিশ্বের ১১১টি ভাষা, উপভাষা এবং আঞ্চলিক কথ্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। মূল ফরাসি ভাষাকে বাদ দেবার পরে যে কটি ভাষায় বইগুলি পাওয়া যায় সেগুলো হলো, এস্তোনিয়ান, ইংরেজি, চেক, ডাচ, জার্মান, গ্যালিসিয়ান, ড্যানিস, আইসল্যান্ডিক, নরোয়েজিয়ান, সুইডিস, ফিনিস, স্প্যানিস, ক্যাটালান, বাস্ক, পর্তুগীজ (ব্রাজিলীয় পর্তুগীজ সহ), ইতালীয়, আধুনিক গ্রিক, হাঙ্গেরিয়ান, পোলিস, রোমানিয়ান, তার্কিস, স্লভেন, বুল্গেরিয়ান, সার্বিয়ান, ক্রোয়েসিয়ান, লাতভিয়ান, ওয়েলস।[১৬] আধুনিক ইউরোপের দেশগুলোর ভাষা ছাড়াও বিবিধ কিছু ভাষাতেও এর কাহিনী অনুবাদ করা হয়েছে, যেমন, এস্পারা্নটো, ইন্দোনেশিয়ান, পার্সিয়ান, ম্যান্দারিন(চাইনিজ), কোরিয়ান, জাপানি, বাংলা, আফ্রিকান, আরবী, হিন্দি, হিব্রু, ফ্রিসিয়ান, লাতিন, রোমানস্ক, ভিইয়েতনামিজ, সিনহালা (সিংঘালিজ) এবং পৌরাণিক গ্রিক।[১৬]
ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড এবং বিশেষ করে জার্মানিতে বেশ কিছু বই বিভিন্ন উপভাষা এবং আঞ্চলিক কথ্য ভাষায় ভাষান্তরিত হয়েছে, যেমন, ফ্রান্সের আলসাতিয়ান, ব্রেটন, টিমি (পিকার্ড); জার্মানির বাভারিয়ান, সোয়াবিয়ান এবং নিচুশ্রেণির জার্মান; পোল্যান্ডে কাসুবিয়ান এবং সিলেসিয়ানিন; এবং ফিনল্যান্ডের সাভো, ক্যারেলিয়া, রওমা অঞ্চলের কথ্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়া, পর্তুগালে, অ্যাস্টেরিক্সের প্রথম সংখ্যার 'অ্যাস্টেরিক্স দা গল' এক বিশেষ সংস্করণটি স্থানীয় ভাষা মিরান্ডিযে প্রকাশ করা হয়েছে।.[১৭] গ্রিসে অনেকগুলি সংখ্যাই ক্রেটান গ্রিক, কিপ্রিয়ট গ্রিক এবং পন্টিক গ্রিক কথ্য ভাষায় এবং পৌরাণিক গ্রিক ভাষায় প্রকাশ করা হয়।[১৮]
শ্রিলঙ্কায় সিঙ্গহালা ভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে। এটাই একমাত্র আন্তর্জাতিক কমিক্স বই যা প্রথমবারের মত শ্রিলঙ্কায় অনুবাদ সত্ত্বেও কাহিনীর মৌলিকতা ধরে রাখতে পেরেছে।.[১৭]
ইতালীয় ভাষায় অনূদিত বইগুলিতে দেখা যায় গলেরা সাধারণত ইতালীয় ভাষায় কথা বলছে আর রোমান সৈন্যরা রোমান ভাষা ব্যবহার করছে।
ইংরেজি অনুবাদ
বইগুলিকে ব্রিটিশ ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ডেরেক হকরিজ এবং অ্যান্থিয়া বেল । তাদের অনূদিত বইগুলো প্রকাশ করে ব্রকহ্যাম্পটন প্রেস ১৯৬৯ সালে।
বাংলায় অনুবাদ
কিছু সংখ্যক বই কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স-এর তরফে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। বইগুলোর অনুবাদকদের নাম উল্লেখ করা হয় নি এবং কিছু কিছু চরিত্রের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
অন্য মাধ্যমে অভিযোজন
কাহিনীগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোজিত হয়েছে।
চলচ্চিত্র
বেশ কয়েকটি কাহিনীকে নির্ভর করে সিনেমা তৈরি করা হয়েছে।
টু রোমানস ইন গল (Two Romans in Gaul), ১৯৬৭, চলচ্চিত্র, যেখানে অ্যাস্টেরিক্স এবং ওবেলিক্স চরিত্র দুটিকে দেখানো হয়।
অ্যাস্টেরিক্স দা গল (Asterix the Gaul), ১৯৬৭, কার্টুন ছবি, অ্যাস্টেরিক্স দা গল বইটিকে অবলম্বন করে।
অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা গোল্ডেন সিকল (Asterix and the Golden Sickle), ১৯৬৭, কার্টুন ছবি, একই নামে রচিত কমিক বই অবলম্বন করে, অসম্পূর্ণ এবং কখনো মুক্তি পায়নি।
অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ক্লিওপ্যাট্রা (Asterix and Cleopatra), ১৯৬৮, একই নামে রচিত কমিক বই অবলম্বন করে।
দা ডগম্যাটিক্স মুভি (The Dogmatix Movie), ১৯৭৩, কার্টুন ছবি, ডগম্যাটিক্স আর তার প্রাণী বন্ধুদেরকে নিয়ে রচিত অদ্বিতীয় কাহিনী অবলম্বনে, উদারযো পরবর্তীতে এই মুক্তি না পাওয়া সিনেমাটি অবলম্বনে ২০০৩ সালে একটি কমিক্স বই রচনা করেন।
দা টুয়েল্ভ টাস্ক অভ অ্যাস্টেরিক্স (The Twelve Tasks of Asterix), ১৯৭৬, কখনো কমিক্স হিসেবে বের হয়নি এমন অদ্বিতীয় কাহিনী অবলম্বনে রচিত কার্টুন ছবি।
অ্যাস্টেরিক্স ভার্সাস সিজার (Asterix Versus Caesar), ১৯৮৫, অ্যাস্টেরিক্স দা লেজিওনারি এবং অ্যাস্টেরিক্স দা গ্ল্যাডিয়েটর বইদুটি অবলম্বনে রচিত কার্টুন ছবি।
অ্যাস্টেরিক্স ইন বৃটেন (Asterix in Britain), ১৯৮৬, একই নামে রচিত কমিক বই অবলম্বন করে কার্টুন ছবি।
অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা বিগ ফাইট (Asterix and the Big Fight), ১৯৮৯, অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা বিগ ফাইট এবং অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা সুথসেয়ার বইদুটি অবলম্বন করে কার্টুন ছবি।
অ্যাস্টেরিক্স কনকয়ার্স আমেরিকা (Asterix Conquers America), ১৯৯৪, কার্টুন ছবি, খানিকটা অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা গ্রেট ক্রসিং অবলম্বন করে নির্মিত।
অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ওবেলিক্সঃ মিশন ক্লিওপ্যাট্রা (Asterix and Obelix: Mission Cleopatra), ২০০২, চলচ্চিত্র, অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ক্লিওপ্যাট্রা বই অবলম্বনে।
অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ওবেলিক্স ইন স্পেন (Asterix and Obelix in Spain), ২০০৪, চলচ্চিত্র, অ্যাস্টেরিক্স ইন স্পেন অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি অসমাপ্ত রয়ে গেছে অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা ভাইকিংগসের কারণে যেটি অ্যাস্টেরিক্স কনকয়ার্স আমেরিকার পরে নির্মিত প্রথম কার্টুন ছবি।
অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা ভাইকিংস (Asterix and the Vikings), ২০০৬, খানিকটা অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা নর্মান গল্প অবলম্বনে নির্মিত কার্টুন ছবি।
অ্যাস্টেরিক্স অ্যাট দা অলিম্পিক গেমস (Asterix at the Olympic Games), ২০০৮, চলমান চিত্র, কিছুটা একই নামে রচিত কমিক্স বই অবলম্বন করে।.[১৬][১৯][২০]
অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ওবেলিক্সঃ গড সেভ ব্রিটানিয়া (Asterix and Obelix: God Save Britannia),২০১২, চলচ্চিত্র, অ্যাস্টেরিক্স ইন বৃটেন ও অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড দা নর্মান্স অবলম্বনে রচিত।
অ্যাস্টেরিক্সঃ দি ম্যান্সন অভ দা গডস (The Mansions of the Gods) অবলম্বনে তৈরি প্রথম ত্রিমাত্রিক কার্টুন ছবি। এবং এটাই অ্যাস্টেরিক্সের প্রথম ত্রিমাত্রিক (3D) চলচ্চিত্র।
অ্যাস্টেরিক্সঃ দি সিক্রেট অভ দা ম্যাজিক পোশন, অ্যানিমেটেড, ডিসেম্বর ২০১৮ তে মুক্তি পাবে।
গেমস
অনেক খেলার বই (gamebook), বোর্ড গেমস (boardgame) এবং ভিডিও গেম অ্যাস্টেরিক্সের কাহিনী অবলম্বনে বানানো হয়েছে।
বিভিন্ন কম্পিউটার গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমের জন্য গেমস বের করেছে। যেমনঃ
অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ওবেলিক্স XXL ২: মিসন লা ভেগম
২০০৫
X
X
X
X
অ্যাস্টেরিক্স ইন দা অলিম্পিক গেমস
২০০৭/২০০৮
X
X
X
X
X
অ্যাস্টেরিক্স ব্রেন ট্রেনার
২০০৮
X
অ্যাস্টেরিক্সঃ দি রোমানস ইজ ক্রেজি
২০০৯
X
থিম পার্ক
পার্ক অ্যাস্টেরিক্স, প্যারিস থেকে ২২মাইল উত্তরে অবস্থিত একটি অ্যাস্টেরিক্সের ধারা অণুকরণে নির্মিত থিম পার্ক। ১৯৮৯ সালে এটি চালু হয়, এখানে বছরে প্রায় ১.৬ মিলিয়ন লোক বেরাতে আসে।
↑ কখগKessler, Peter (2)। Asterix Complete Guide (First সংস্করণ)। Hodder Children's Books;। আইএসবিএন0340653469।অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |year= / |date= mismatch (সাহায্য); |সংগ্রহের-তারিখ= এর |ইউআরএল= প্রয়োজন (সাহায্য)