অ্যালবার্ট ডক ইংল্যান্ডের লিভারপুলের একটি নৌবন্দর। এর ডিজাইন করেছিলেন জেস হার্টলি এবং ফিলিপ হার্ডউইক। ১৮৪৬ সালে এটি চালু হয়। এটিই ব্রিটেনের প্রথম স্থাপত্য যেখানে ঢালাই লোহা, ইট আর পাথর ব্যবহার করা হয়েছিলো। পৃথিবীর প্রথম অদাহ্য গুদামব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত বন্দরও এই অ্যালবার্ট ডক।[১]
নির্মাণকালে অ্যালবার্ট ডককে একটি যুগান্তকারী বন্দর-ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হত। কারণ, এখানে জাহাজগুলো সরাসরি গুদামে গিয়ে মাল খালি করতে পারতো। চালু হওয়ার দুই বছর পর বন্দরটিতে পৃথিবীর প্রথম হাইড্রোলিক ক্রেন ব্যবহার করা হয়। [২] খোলামেলা আর নিরাপদ গঠনের জন্য অ্যালবার্ট ডক মূল্যবান মালামাল মজুদ (ব্র্যান্ডি, কটন, চা, সিল্ক, তামাক, আইভরি, চিনি) রাখার জন্য দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অ্যালবার্ট ডকের এমন অগ্রবর্তী ডিজাইন থাকা সত্ত্বেও এর ৫০ বছরের মধ্যেই আরও প্রশস্ত বন্দরে একে উন্নীত করার প্রয়োজন পড়েছিলো। এমনকি তখনও একে মূল্যবান মালপত্র রাখার কাজে ব্যবহার করা হতো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নৌবাহিনীর অণুরোধে অ্যালবার্ট ডককে ব্রিটিশ আটলান্টিক ফ্লীটের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো। ১৯৪১ সালে মে ব্লিটজের সময় লিভারপুলে বিমানবাহিনী আক্রমণ করলে বন্দরটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যুদ্ধের পর পর মালিকপক্ষের আর্থিক সমস্যা আর বন্দরের সার্বিক পতনের কারণে বন্দরটির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। স্থাপনাগুলোকে পূণপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এগুলো কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি, ১৯৭২ সালে বন্দরটিকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় দশ বছর এভাবেই অবহেলায় পড়ে ছিলো এই বন্দর। অবশেষে ১৯৮১ সালে নতুন করে কাজ শুরু হয়। মার্সেইসাইড ডেভেলোপমেন্ট কোম্পানি এই দায়িত্ব চমৎকারভাবে পালন করে। ১৯৮৪ সালে পুনরায় চালু হয় অ্যালবার্ট ডক।
আজ অ্যালবার্ট ডক শহরের অন্যতম এক পর্যটন কেন্দ্র। লন্ডনকে বাদ দিলে পুরো যুক্তরাজ্যের মধ্যেই একে অন্যতম বলা চলে। [৩] মেরিটাইম মার্সেন্টাইল সিটি এখন লিভারপুলের ইউনেস্কো স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ। তার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ এই অ্যালবার্ট ডক। তাছাড়া, বন্দর স্থাপনা এবং গুদামগুলো যুক্তরাজ্যের সর্ববৃহৎ একক গ্রেড-ওয়ান লিস্টেড বিল্ডিং সমগ্র বলে বিবেচিত।
ইতিহাস
প্রারম্ভিকা এবং শুরুর কথা
অ্যালবার্ট ডকের শুরুটা সেই ১৮৩৭ সালে। জেস হার্টলি একটি সংযুক্ত বন্দর ব্যবস্থার পরিকল্পনা করেছিলেন। [১] হার্টলি আর তার বন্ধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ফিলিপ হার্ডউইক যে পরিকল্পনাটি করেছিলেন, তৎকালীন সময়ের জন্য তা ছিলো অনন্যসাধারণ। নৌবাহনগুলো সরাসরি গুদাম থেকে মাল তুলবে এবং নামাবে![৪] এধরনের ভাবনা অবশ্য একেবারে প্রথম নয়, ১৮০৩ সালের ওয়ারহাউজিং অ্যাক্টের পর থেকে এমন স্থাপত্য গঠনের অণুমোদন রয়েছে। এই ধারণা ব্যবহার করে সেইন্ট ক্যাথারিন'স ডকও লন্ডনে গঠিত হয়ে গেছে ততদিনে। ১৮২৮ সাল থেকে চলমান তারা।[৫] তবে নতুন কিছু হিসেবে হার্টলি যোগ করলেন আগুন-বিরোধী এক নকশা। ১৮ফিট (৫.৫ মিটার) দৈর্ঘ্য ও ১০ ফিট (৩মিটার) প্রস্থ এক অবয়ব প্রস্তুত করে তার ভেতর কাঠ আর আলকাতরা ভরে দিলেন। তারপর জ্বালিয়ে দিলেন আগুন। বেশ কয়েকবার পরীক্ষার পর তিনি ঢালাই লোহা, ইট, স্যান্ডস্টোন আর গ্র্যানাইট পাথরের মিশ্রণে থিতু হলেন। [৬] অণুমোদন পেতে এই ডিজাইনটিকে ১৮৩৯ সালে জমা দেন তারা, তবে রাতারাতি তা পাওয়া যায়নি। ১৮৪১ সালে আইনসভা এই ডিজাইন অণুমোদন দিলে নির্মাণকাজ শুরু হয়। [৭][৮]
পূর্বে সল্টহাউজ ডক, উত্তরে জলপথের প্রবেশমুখে ক্যানিং ডক আর দক্ষিণে ডিউকস ডক; মাঝের জমিটুকুই নির্ধারণ করা হল অ্যালবার্ট ডকের জন্য। জমি ফাঁকা করতে খুব দ্রুত উচ্ছেদ করা হল ৫৯ পরিবার ভাড়াটে আর এক পানশালা। সেই সঙ্গে কয়েকটি বাড়ি আর ডক ট্রাস্টির ডকইয়ার্ডও খালি করে ফেলা হল। [৬] সল্টহাউজ ডক আর ক্যানিং ডকের একাংশ উধাও করে দেওয়া হল, সেখানে স্থাপিত হল অ্যালবার্ট ডকের প্রবেশপথ। একই সাথে শতেক নেভিগেশন ইঞ্জিনিয়ার নতুন নদীপাড় তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কাজটা শেষ হল ১৮৪৫ এর ফেব্রুয়ারিতে। প্রথম জাহাজটি প্রবেশ করলো অ্যালবার্ট ডকে। অবশ্য, তখনও গুদামগুলোর নির্মাণকাজ পুরোদমে চলছে। জাহাজগুলো তখন বন্দরে খানিক বিরতি নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারতো না।[৯]
১৮৪৬ সালে প্রিন্স কনসর্ট অ্যালবার্ট (রাণী ভিক্টোরিয়ার স্বামী) বন্দরটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তার নামেই বন্দরটির নাম রাখা হয়।[১০] প্রথমবারের মত রাজপরিবারের কেউ শহরের বুকে পা রাখায় উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পরিবেশ। দ্য প্রিক্টোরিয়াল টাইমস এই সংবর্ধনাকে যেভাবে উল্লেখ করে:
"ভদ্রলোকের আগমণ বেশ উদ্দীপনাময় ছিলো। বেলকনিগুলো লম্বা লাইনে ভরে গেছিলো। বাড়িঘরের জানালাগুলো পর্যন্ত উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিলো। পতাকা আর ব্যানারে ছেয়ে যায় শহর, সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। শহরে দুই লক্ষ আগন্তুক পা রেখেছে শুধু এই অণুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। অধিবাসীরা নেমে এসেছে রাস্তায়।"
প্রিন্স অ্যালবার্ট শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দর্শন দিয়েছিলেন। নগর ভবন তাদের মধ্যে একটি স্থান। মার্সেইর চেশায়ার অংশ হয়ে তিনি দক্ষিণে অ্যালবার্ট ডকে পৌঁছান। [১১][১২] এই যাত্রাপথ নিয়ে দ্য পিকটোরিয়াল টাইমস উল্লেখ করে:
"চেশায়ার সাইড হয়ে নদী পার হচ্ছিলেন যখন, হাজার জনতার উল্লাস আর আর্টিলারির গর্জনের শব্দে কান পাতা দায়। দৃশ্যটি ভুলবার মতো ছিলো না। নৌকাভর্তি মানুষের সংখ্যাধিক্যের কারণে নদীর পানি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিলো না।"
১৮৪৬ সালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে গেলেও, ১৮৪৭ এর আগে বন্দরের কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ হল না। ১৮৪৮ সালে নতুন অফিস তৈরি করা হল। হাইড্রোলিক ক্রেনের ব্যবস্থাও করা হল একটা। পৃথিবীর প্রথম হাইড্রোলিক ক্রেন ছিলো ওটা।[২] এর পরের কয়েক দশক ধরে বেশ কয়েকটা বিল্ডিং নির্মিত হল ওখানে, পিয়ার মাস্টার, তার সহকারী এবং গুদাম তত্ত্বাবধায়কের বাসভবন এদের মধ্যে কয়েকটা। বন্দরের গুদামঘর প্রশস্ত করা হল এরপর, চাহিদা ততোদিনে বেড়ে গেছিলো প্রচুর।
ভাগ্যবদল আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভূমিকা
অ্যালবার্ট ডকের ডিজাইনের দিকে তাকালেই বোঝা যায় সরাসরি মাল ওঠা-নামা করানোর সুযোগটা একে লিভারপুলের অন্য যে কোন বন্দরের চেয়ে নিরাপদ করে তুলেছে। ফলাফলস্বরূপ এই বন্দর অচিরেই ব্র্যান্ডি, কটন, চা, সিল্ক, তামাক, আইভরি আর চিনির মতো মূল্যবান সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। তাছাড়া, খোলামেলা পরিবেশ আর আলো-বাতাসের উপস্থিতি একে চিনিজাত দ্রব্যসামগ্রী বেশিদিন টাটকা রাখার জন্য অধিক উপযোগী হিসেবে প্রমাণ করে তুললো। [৪] চীনের ৯০% রেশম আমদানী হতে থাকলো এই বন্দরের মাধ্যমে। পূবাঞ্চলের অর্ধেকের বেশি বাণিজ্যিক অর্জনের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত হল এই বন্দর। [১৩]
শহরের সমৃদ্ধির জন্য এতসব অবদান রাখার পরও নির্মাণের মাত্র ২০ বছরের মধ্যেই অস্তিত্ব রক্ষায় রীতিমত যুঝতে শুরু করলো এই বন্দর। এক হাজার টন পর্যন্ত পালতোলা জাহাজ নোঙ্গর করার মত ডিজাইন বন্দরটির ছিলো, অথচ বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এর কোলে ভেড়া মাত্র ৭% জাহাজ ছিলো পালতোলা।[৮] ১৯শতকের শেষ দিকে বাষ্পচালিত জাহাজের আগমনের সাথে সাথে বন্দরটি অপ্রতুল হয়ে ওঠে। সরু প্রবেশপথে এতো বড় জাহাজগুলো আর ঢুকতে পারছিলো না।[১৩] বাষ্পচালিত জাহাজ পালতোলা জাহাজের চেয়ে দ্রুত মাল নামাতে আর ওঠাতে পারে। নিয়তির নির্মম পরিহাস, একসময় যে গুদাম ব্যবস্থার জন্য বন্দরটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলো, আজ সেটাই ভবিষ্যত উন্নয়নের দাবীদার হয়ে উঠলো। [৪] তারপরও লিভারপুলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হয়ে রইলো অ্যালবার্ট ডক, ১৮৭৮এ পাম্প হাউজ স্থাপন করা হল এখানে, ১৮৯৯ সালে নর্থ স্ট্যাকের এক অংশ বরফ প্রস্তুতকারক এবং হিমাগার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হল।[১৪]
১৯২০ সালে অ্যালবার্ট ডকের সব ধরনের নোঙ্গর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে এর গুদাম ব্যবস্থা এবং সংরক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহার চলতে থাকে, নদী, সড়ক আর রেলপথের জন্য।.[১৪][১৫] এরপর শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ব্রিটিশ নৌবাহিনী মনে করলো অ্যালবার্ট ডককে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা চলে। ১৯৩৯ সালে সাবমেরিন, ছোট যুদ্ধ্বজাহাজ আর ল্যান্ডিং ক্র্যাফট জড়ো করা হল সেখানে। স্বভাবতঃই বেশ কয়েকবার বোমাবর্ষণের শিকার হল এই বন্দর। ১৯৪০ সালের এই ঘটনাগুলো বন্দরের জাহাজগুলোকেও ধ্বংস করে দিলো। পরবর্তীতে ১৯৪১-এ মে ব্লিটজের সময় আরও ভয়াবহ ধ্বংসলীলা চলেছিলো এখানে। জার্মান বিমানবাহিনী সাউথওয়েস্ট স্ট্যাকের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। [১৫] বোমাবর্ষণের প্রচণ্ডতা এতোটাই বেশি ছিলো যে, যুদ্ধশেষে অ্যালবার্ট ডকের মাত্র ১৫% মেঝে ব্যবহারের উপযুক্ত ছিলো।[১৬]
যুদ্ধ পরবর্তী ইতিহাস এবং বন্দরের পতন
যুদ্ধশেষে অ্যালবার্ট ডকের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে গেল। বন্দরের মালিকপক্ষ, মার্সেই ডকস অ্যান্ড হার্বার বোর্ড (এমডিএইচবি) অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে যান। যুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতি মেরামত না করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।[১৭] একই সঙ্গে গোটা ইউরোপ জুড়েই ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন এলো। যুক্তরাজ্যের যে কোন শহরের মতোই লিভারপুলের এই বন্দরকে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বহন করতে হল। এরপরও বন্দরের স্থাপনাগুলোকে গ্রেড-১ লিস্টেড বিল্ডিং হিসেবে ১৯৫২ সালে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।[১৪]
স্বীকৃতি পাওয়ার পরও এমডিএইচবি ১৯৬০ সালের মধ্যেই এই বন্দর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো। বন্দর ভেঙ্গে নতুন একটা কিছু করার সিদ্ধান্ত নিলো তারা।[১৫] জমিটুকু ওল্ডহ্যাম এস্টেটের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হল, ডেভেলোপার গ্রুপটির মালিক তখন হ্যারি হিয়ামস।[১৭] এই ভূ-খণ্ডে কি করা হবে তার ওপর অসংখ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিলো, তাদের মধ্যে একটিতে হোটেল, রেস্তোঁরা, বার আর শুকিয়ে যাওয়া বন্দরের অববাহিকায় ভূ-গর্ভস্থঃ পার্কিং লটের ব্যবস্থাসহ এক মিনি-সিটি পত্তনের পরিকল্পনাও ছিলো। জনতার প্রতিবাদের মুখে তারা এই পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়। ওল্ডহ্যাম এস্টেট এরপর ১৯৭০ সালে নতুন আরেকটি পরিকল্পনা হাতে নেয়। এই পরিকল্পনাটি অ্যাকুয়ারিয়াস সিটি নামে পরবর্তিতে পরিচিত হয়। প্রকল্পটির মাঝে ৪৪তলার এক দীর্ঘতম বিল্ডিং নির্মাণের কথা ছিলো। প্রকল্পটির ঘোষণা দিতে না দিতেই এমডিএইচবি-র অর্থনৈতিক অবস্থা লাটে উঠে গেল। অবস্থা বেগতিক বুঝে হাত গুটিয়ে নিলো ওল্ডহ্যাম এস্টেটও। পুরো পরিকল্পনাটাই বাতিল হয়ে যায় এভাবে।[১৭]
এমডিএইচবি দেউলে হয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে পুরো দক্ষিণ বন্দর ব্যবস্থাই বিক্রি করে দেওয়া হল। গুদাম খালি করে ফেলা হল দ্রুত। ১৯৭২ সালে অ্যালবার্ট ডক চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়ে গেল। ব্রুনসউইক ডকের দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হল, ওপথে মার্সেই নদীর পানির প্রবাহ আবারও পূনঃপ্রতিষ্ঠিত হল। বন্দরের আবর্জনা পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া শুরু হল এভাবে। [১৮][১৯] বহুমাত্রিক অর্থেই অ্যালবার্ট ডক লিভারপুলের সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচ্য ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পর এর এমন এক পতন স্থানীয় অর্থনীতিকেও চিরতরে পর্যুদস্থ করে দেয়।[২০]
পুরো ৭০-এর দশক জুড়েই নানা রকম প্রকল্পের কথা বিবেচনা করা হয়েছিলো। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা ছিলো বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। বন্দরের অববাহিকায় ময়লা ফেলার প্রস্তাব এদের মধ্যে একটা। এই প্রস্তাবটি করেছিলো লিভারপুল সিটি কাউন্সিল। কিন্তু মার্সেই ডক অ্যান্ড হার্বার কোম্পানি (এমডিএইচসি) মনে করলো এই জমি থেকে অন্যভাবে আরও বেশি পয়সা কামানো যেতে পারে। বালূ দিয়ে অববাহিকা ভরাট করে কোন গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাবটি তারা দেয়। আরেকটি প্রকল্প সে সময় বেশ গুরুত্ব পেয়েছিলো, লিভারপুল পলিটেকনিকের (বর্তমান জন মূরস ইউনিভার্সিটি) নতুন ক্যাম্পাস হিসেবে জায়গাটি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো। এমনকী সরকার এজন্য তিন মিলিয়ন ইউরোর ফান্ডিং দিতেও রাজি হয়ে গেছিলো। তবে অন্যান্য অসংখ্য প্রকল্পের মতোই, এটিও ঠিক বাস্তবায়ন পর্যায় পর্যন্ত যেতে পারেনি। [২১]
মার্সেইসাইড কাউন্টি কাউন্সিলের (এমসিসি) পত্তন অ্যালবার্ট ডকের জন্য নতুন আশার সঞ্চার করলো, স্থানটির উন্নয়নকেই গুরুত্ব দিলো তারা। দ্রুতই এমডিএইচসি-র সঙ্গে চুক্তিতে এলো তারা, দক্ষিণ অংশের বন্দরটি পরিচালনার দায়িত্ব নিলো এমসিসি।[২২] পদক্ষেপগুলো আশাব্যঞ্জক ছিলো, তবে মালিকপক্ষ, লিভারপুল সিটি কাউন্সিল (স্থানীয় কর্তৃপক্ষ) এবং মার্সেইসাইড কাউন্টি কাউন্সিল (বন্দরের নব-উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠান)-এর মধ্যে রাজনৈতিক টানাহ্যাচড়া চলতে থাকলো। কোনরকম উন্নয়নই সম্ভব হলো না এবার।[২১] তিন পক্ষের এমন আচরণে বিরক্ত হয়ে নব-নির্বাচিত মার্গারেট থ্যাচারের কনজারভেটিভ পার্টি তাদের সংস্কারের দায়িত্বপালনে অযোগ্য ঘোষণা করলেন। মার্সেইসাইড মন্ত্রী মাইকেল হেজেলটাইনের তত্ত্বাবধায়নে মার্সেইসাইড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন-কে শহরটির দক্ষিণ বন্দরের সবধরনের সংস্কার করার নির্দেশ দেওয়া হল।[২০][২৩]
মারসেইসাইড ডেভেলোপমেন্ট করপোরেশন (এমডিসি) এবং অ্যালবার্ট ডকের পূণঃসংস্কার
১৯৮১ সালে মার্সেইসাইড ডেভেলোপমেন্ট করপোরেশনের পত্তনের সাথে সাথে কনজারভেটিভ সরকার লিভারপুলের দক্ষিণ বন্দরের ৮০০ একর (৩.২ বর্গ কিলোমিটার) সংস্কার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পাবলিক সেক্টরের বিনিয়োগ ব্যবহার করে এমন এক এলাকাতে তারা সংস্করণ চালিয়ে যান, যাতে করে প্রাইভেট সেক্টরেও প্রভাব পড়ে। এভাবে এমডিসি সরাসরি দায়িত্ব গ্রহণ না করলেও কাজ এগিয়ে চললো। খুব দ্রুতই অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে গেল, অবরুদ্ধ বন্দরের ৪০ ফিট পর্যন্ত পরিষ্কার করে ব্যবহার উপযোগী করে ফেলা হল। পুণরুজ্জীবিত হতে শুরু করলো অ্যালবার্ট ডক। [২৩]
১৯৮২ সালে এমডিসি লন্ডন-ভিত্তিক ডেভেলোপারস অ্যারোক্রফটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হল। প্রাইভেট সেক্টর বিনিয়োগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপটি ভাল ভূমিকা রাখে। একবার সাইট পরিদর্শন করে এসে অ্যারোক্রফট পরিচালক লিওনার্ড এপেল জানালেন বাড়িগুলো যেন তার সাথে "কথা বলেছে"। লন্ডনে ফেরার সাথে সাথে কোম্পানির বোর্ডকে প্রকল্পটি নিতে প্রভাবিত করলেন। [২৪] ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যারোক্রফটের সঙ্গে এমডিসির চুক্তি সাক্ষরিত হয়ে গেল। অ্যালবার্ট ডকের পুণর্সংস্কারের শুরু ওখানেই।[২৫]
সংস্কারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিলো বন্দর ব্যবস্থা পূণরুদ্ধার করা। ব্রুনসউইক ডকের গেট খুলে দেওয়ার পর থেকে ধ্স নেমেছিলো যাতে। বন্দরের অববাহিকা থেকে ময়লা অপসারণ করা হল, সেতুগুলোকে মেরামত করা হল, এর মধ্যে বন্দরের দেওয়ালগুলো পূনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়ে যায়। [২৬] অ্যালবার্ট ডক কোম্পানি টারম্যাকের সাথে চুক্তি করলো, তারা নতুন করে বন্দরের গুদাম নির্মাণ করে দেবে। বোমাবর্ষণের পর থেকে ও অবস্থাতেই পড়ে ছিলো গুদামঘরগুলো। স্ট্রাকচারাল সার্ভে থেকে দেখা গেল ইট-নির্মিত অংশ এবং ভিত্তিপ্রস্তর চমৎকারভাবে টিকে গেছে। হার্টলির অনন্যসাধারণ স্থাপনাকৌশল এগুলোকে দেড়শ বছর পরও বেশ টিকিয়ে রেখেছিলো।
অ্যালবার্ট ডকের সংস্কারকাজ অত্যন্ত বড় ধরনের একটা কাজ ছিলো, সেই সাথে এডওয়ার্ড প্যাভিলিয়নেরও পূন:সংস্কার করা হয়। ১৯৮৪ সালের টল শিপ রেস অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় নাগাদ তাদের কাজ শেষ হয়। রেসটি পুরো শহরের জন্য সফলতা বয়ে আনে। চারদিনব্যাপী এই অণুষ্ঠানে ১,৬০,০০০ দর্শনার্থী এসে অ্যালবার্ট ডকে ভিড় জমান। এমডিসির দুই প্রকল্পের পাশাপাশি এই শিপ রেস দেখার জন্য মোট পঁয়ত্রিশ লাখ মানুষ সে বছর লিভারপুল ভ্রমণ করেন। ১৯৮৪ সালেই ডক ট্রাফিক অফিসের পূণর্নিমাণ কাজ শেষ হয়। বাড়িটিকে গ্রেনাডা টেলিভিশনের কাছে লীজ দেওয়া হয়।[২৭]
সাফল্যের এই ছোঁয়া অ্যারোক্রফট কোম্পানিকে উজ্জীবিত করে তোলে। অ্যালবার্ট ডকের সংস্কারে বিশেষ মনোযোগ দেয় তারা। এডওয়ার্ড প্যাভেলিয়ন মেরামতের পর এমন সাফল্য আসায় তারা দ্রুতই ব্রিটানিয়া আর আটলান্টিক প্যাভেলিয়নও দাঁড় করিয়ে ফেলে। শেষটিকে অবশ্য বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন করে দাঁড় করাতে হল, বোমাবর্ষণ আটলান্টিক প্যাভেলিয়ন একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছিলো। ১৯৮৬ সালে মার্সেইসাইড মেরিটাইম মিউজিয়ামও অ্যালবার্ট ডকে প্রতিস্থাপিত হয়ে আসে। ১৯৮৪ থেকে তারা এখানে কিছু এক্সিবিশন দেখিয়ে এসেছিলো।[২৫] ১৯৮৬ সালেই বন্দরের বৃহৎ গুদামগুলো নিয়ে কাজ শুরু হয়। নিচতলাতে দোকান আর অফিস রাখা হয়। ওপরে থাকে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং। প্রথম ৩৭টি অ্যাপার্টমেন্ট ১৯৮৮ সালের মধ্যেই সম্পূর্ণ করা হয়েছিলো। যে গতিতে এগুলো বিক্রি হয়েছিলো যেন বিরাট কোন মূল্যছাড় দেওয়া হচ্ছে![২৮]
অ্যালবার্ট ডকের আনুষ্ঠানিক পূনঃউদ্বোধন হয় ১৯৮৮ সালে। ওয়ালসের রাজকুমার,[২৯] যাঁর প্র-প্র-প্র-পিতামহ ছিলেন প্রিন্স অ্যালবার্ট, এই উদ্বোধন করেন। কাকতলীয়ভাবে একই সময় টেট লিভারপুলের উদ্বোধন হয়।[৩০]
১৯৮৮ সালে আইটিভি-র নতুন প্রাতঃ অণুষ্ঠান দিস মর্নিং অ্যালবার্ট ডকের ভেতর এক স্টুডিও থেকে প্রচারিত হতে থাকে। এই অণুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আবহাওয়া-বার্তা পাঠ করার সময় ফ্রেড ট্যালবট ব্রিটিশ আইলের একটি ভাসমান মানচিত্র ব্যবহার করেন। দুই বছর পর, ১৯৯০ সালে দ্য বীটলস স্টোরি জাদুঘর খোলা হয় এখানে, অ্যালবার্ট ডক নতুন ধরনের মনোযোগ পেতে শুরু করে আবারও।[২৯]
পুরো নব্বইয়ের দশক জুড়েই এই উন্নয়ন চলতে থাকে, বড় বড় হোটেল, টেলিওয়েস্টের (বর্তমান ভার্জিন মিডিয়া) মত বড় কোম্পানিও এখানে জায়গা কিনে নেয়। অবশেষে, অ্যালবার্ট ডকের পূনঃনির্মাণের ২২ বছর পর ২০০৩ সালে, শেষ শুন্যস্থানটিও প্রিমিয়ার লজ হোটেল খোলার জন্য কিনে নেওয়া হয়। [২৯]
স্থাপত্য নকশা এবং নির্মাণকার্য
নির্মাণকার্য শেষ হওয়ার পর এটিকে বন্দরব্যবস্থার আধুনিকতম উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। [১৩] প্রায় পুরো নকশাটি ঢালাই লোহা, পাথর আর ইটের তৈরী করা হয়েছিলো আগুন থেকে একে সুরক্ষিত করতে। পৃথিবীর প্রথম অদাহ্য গুদামব্যবস্থা ছিলো এটি। অ্যালবার্ট ডকের রয়েছে ১২,৯০,০০০ বর্গফুট (১,২০,০০০ বর্গমিটার) গুদাম এলাকা আর ৭.৭৫ একর বন্দর অববাহিকা। দুই কোটি ত্রিশ লক্ষ ইট এটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৪৭,০০০ টন চূণ। [১] মোট খরচ হয়েছে ৭,৮২,২৬৫ ইউরো (বর্তমান প্রায় চার কোটি দশ লাখ ইউরো),[৪] আজ এর আনুমানিক মূল্য দাঁড়িয়েছে তেইশ কোটি ইউরোতে।[৩১]
বিল্ডিংটির নকশায় ব্যবহার করা হয়েছে বর্তমান যুগের অনেকরকম স্থাপত্য নির্মাণ কৌশল। তিন ফুট প্রশস্ত দেওয়াল গুদামগুলোর ভার বহন করছে, ওপরের দিকে এই দেওয়ালগুলোর প্রশস্থতা কমে ১৯ ইঞ্চি পর্যন্ত নেমে আসে।[৩২] গুদামের মেঝেগুলো বড় বড় লোহার স্তম্ভ দিয়ে ঠেক দিয়ে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যবর্তী স্থানগুলোকে বলা হচ্ছে "বেশ নমনীয়"। এতে করে দালানটিকে ঝুঁকির মুখে না ফেলেই নতুন জানালা, সিঁড়ি অথবা লিফট স্থাপন করা যাবে।
অবয়বটিতে কাঠের ব্যবহার নেই, তবে এর ফাউন্ডেশনে ১৩,৭২৯টি কাঠের তক্তা ব্যবহার করা হয়েছে। একে অন্যের সাথে স্পর্শ করিয়ে লম্বা করা হলে ৪৮মাইল পর্যন্ত চলে যাবে এরা (৭৭ কিলোমিটার)। এত শক্ত ভিত্তির প্রয়োজন ছিলো। মার্সেই নদীর পাশে স্থাপনাটির অবস্থান। এই নদীর পলির "চোরাবালি" স্বভাব রয়েছে, সর্বোচ্চ স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতেই ভিত্তি এত মজবুত করা হয়েছে। [৬]
নদীতীরের বড় বড় ঢালাই লোহার স্তম্ভগুলো এই স্থাপনার এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।[৩৩] ১৫ ফুট (৪.৬ মিটার) উঁচু আর ১৩ ফুট (৪মিটার) পরিধির এই স্তম্ভগুলো ডোরিক স্টাইলের স্থাপত্যবিদ্যা ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে। [৩৪] হার্টলির ঢালাই লোহা ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি অর্থনৈতিকভাবে ফলপ্রসূ ছিলো। সে সময় গ্র্যানাইটের চেয়ে ঢালাই লোহার খরচ কম পড়েছিলো। তবুও, বন্দরের দেওয়ালের জন্য এত বেশি পরিমাণ গ্র্যানাইটের প্রয়োজন পড়েছিলো, ডক ট্রাস্টি অবস্থা বেগতিক দেখে স্কটল্যান্ডে নিজস্ব গ্র্যানাইট খনি কিনে নিতে বাধ্য হন। [৪][৩৩][৩৪]
আজকের অ্যালবার্ট ডক
আজকের দিনে অ্যালবার্ট ডক লিভারপুলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটক আকর্ষণ কেন্দ্র। শহরের ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মেরিটাইম মার্সেন্টাইল সিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। লিভারপুলের এক নম্বর পর্যটক আকর্ষক তো বটেই, একাধিক উদ্দেশ্যে ভ্রমণোপযোগি স্থান হিসেবে যুক্তরাজ্যের ভেতরে লন্ডনের পর পরই রয়েছে অ্যালবার্ট ডকের অবস্থান। চল্লিশ লাখ পর্যটক প্রতি বছর এখানে ঘুরতে আসেন।[৩] মার্সেইসাইড মেরিটাইম মিউজিয়াম, বীটলস স্টোরি, টেট লিভারপুল ইত্যাদি আকর্ষণের পাশাপাশি এখানে আরও আছে দুটো হোটেল, একটি হলিডে ইন, একটি প্রমিয়ার ইন। দুটোই অবশ্য ব্রিটানিয়া প্যাভেলিয়নে অবস্থিত। [৩৫] পাঁচটি গুদাম আছে ওখানে, এ,বি,সি,ডি,ই নামে নামকরণ করা হয়েছে তাদের। এরা প্রত্যেকেই গ্রেড -১ লিস্টেড বিল্ডিং। আরেকটি গ্রেড-১ লিস্টেড বিল্ডিং হল প্রাক্তন ডক ট্রাফিক অফিস। বন্দরের আর বিল্ডিংগুলোকে গ্রেড-২ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে প্রাক্তন হাইড্রোলিক পাম্পিং স্টেশন, ঝুলন্ত সেতু। ২০০৯ সালের জুনে অ্যালবার্ট ডকের দক্ষিণপার্শ্বের পার্কিং লট বন্ধ করে দিয়ে সেখানে আরেকটি নতুন জাদুঘর নির্মাণের কাজ চলছে।
১৯৮০ সালের দিকে বন্দরের পূণঃনির্মাণের সময় নতুন কিছু নীতিমালা ধার্য করা হয়। খুচরো বিক্রেতাদের জন্য এগুলো ছিলো আকর্ষণীয়। বেশ কয়েকবছর শহরের অন্যান্য বিক্রয়-অঞ্চলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে অ্যালবার্ট ডক কোম্পানি লিমিটেড ২০০৭ সালে পানশালা ও রেস্তোঁরার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়। ২০০৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, অ্যালবার্ট ডকের ভেতরের পানশালা এবং রেস্তোঁরাগুলোর মধ্যে পানাম বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, ব্লু বার অ্যান্ড গ্রিল, স্পাইস লাউঞ্জ, সার্কো এবং হোয়াটস কুকিং? উল্লেখযোগ্য।