হেনরি ফায়োল (ফরাসি: Henri Fayol; জন্ম: ২৯ জুলাই, ১৮৪১ - মৃত্যু: ১৯ নভেম্বর, ১৯২৫) একজন ফরাসি খনি প্রকৌশলী ও খনির পরিচালক। তিনি ইস্তাম্বুলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ের সাধারণ তত্ত্বের উন্নয়ন সাধন করেছেন।[১] পরবর্তীকালে তিনি ও তার সহকর্মীবৃন্দ বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনায় এ তত্ত্বের উন্নয়নে স্বতন্ত্র ও খসড়াভাবে কাজ করেছেন। আধুনিক ব্যবস্থাপনার ধারণায় তিনিই সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। আধুনিক ব্যবস্থাপনা জনক কিংবা প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার জনক হিসেবে তাকে গণ্য করা হয়।[২]
ফাইয়ল ১৮৬০ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ফ্রান্সের কোমঁত্রি শহরে অবস্থিত "কোঁপাইনি দ্য কোমঁত্রি-ফুরশম্বো-দ্যকাজভিল" (ফরাসি Compagnie de Commentry-Fourchambault-Decazeville) নামের একটি খনি প্রতিষ্ঠানে একজন প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। ফাইয়ল তার স্বীয় মেধা ও যোগ্যতাবলে ১৮৮৮ সালে প্রায় দেউলিয়া পর্যায়ের ঐ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯০০ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ফ্রান্সের অন্যতম লৌহ ও ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।[১]
১৯১৮ সালে তিনি যখন এ দায়িত্ব থেকে অবসর নেন তখন প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিল এবং ঐ সময় প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় দশ হাজার শ্রমিক কাজ করতো। কয়লা খনির শীর্ষ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনকালে ফাইয়ল ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক যেসব জটিলতার সম্মুখীন হয়েছিলেন সেগুলো নিরসনে তিনি গভীর মনোনিবেশ করেন। তিনি ১৯১৬ সালে তার গবেষণালব্ধ জ্ঞান ফরাসি ভাষায় আদমিনিস্ত্রাসিওঁ আঁদুস্ত্রিয়েল এ জেনেরাল (Administration Industrielle et Général) শিরোনামের বইটিতে প্রকাশ করেন।[৫]
অবদান
১৮৭০-এর দশক থেকে ফাইয়ল খনিজ বিজ্ঞান বিষয়ে একগুচ্ছ নিবন্ধ লেখেন। তার প্রথমদিককার নিবন্ধগুলি ফরাসি বুলতাঁ দ্য লা সোসিয়েতে দ্য লাঁদুস্ত্রি মিনেরাল (Bulletin de la Société de l'Industrie minérale) নামক গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৮৮০-এর দশকের শুরু থেকে তার নিবন্ধগুলি ফরাসি বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির মুখপাত্র গবেষণা পত্রিকা কোঁত রঁদু দ্য লাকাদেমি দে সিয়ঁস-এ (Comptes rendus de l'Académie des sciences) প্রকাশিত হত।
শুধুমাত্র নিজস্ব ব্যবস্থাপকীয় অভিজ্ঞতাকে অবলম্বন করে তিনি প্রশাসনিক বিষয়ে নিজ ধারণার উত্তরণ ঘটান। ১৯১৬ সালে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার উপর তার বই পরবর্তীকালে অন্যান্য লেখকদেরকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করে। একই সময়ে ফ্রেডরিক উইন্সলো টেইলরপ্রিন্সিপল্স অফ সায়েন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট বইটি প্রকাশ করেন।
ব্যবস্থাপনার নীতি প্রবর্তন করেছেন ফাইয়ল। তিনি ব্যবস্থাপনার ৫টি কার্যাবলি এবং কেন্দ্রীকরণ ও একতাসহ ১৪টি মূল নীতি প্রবর্তন করেন।[৬]
কাজ
1949 সালে "সাধারণ ও শিল্প প্রশাসন" প্রকাশের মাধ্যমে ফায়লের কাজটি আরও পরিচিত হয়ে ওঠে, [৭] ইংরেজি অনুবাদ [৮] 1916 সালের কাজ "Administration industrielle et générale"। এই কাজে ফায়োল তার ব্যবস্থাপনার তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যা ফায়োলিজম নামে পরিচিত। এর আগে ফায়ল 1870-এর দশক থেকে শুরু হওয়া খনির প্রকৌশলের উপর বেশ কিছু নিবন্ধ এবং প্রশাসনের কিছু প্রাথমিক কাগজপত্র লিখেছিলেন। [৯]
মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং
১৮৭০ এর দশকে শুরু করে, ফায়ল খনির বিষয়গুলির উপর একটি সিরিজ নিবন্ধ লিখেছিলেন, যেমন কয়লার স্বতঃস্ফূর্ত উত্তাপ (1879), কয়লা বিছানার গঠন (1887), মন্তব্যের অবক্ষেপন এবং উদ্ভিদের জীবাশ্ম (1890)।
তাঁর প্রথম প্রবন্ধগুলি ফরাসি বুলেটিন দে লা সোসাইটি দে ল'ইন্ডাস্ট্রি মিনারলে প্রকাশিত হয়েছিল এবং 1880-এর দশকের গোড়ার দিকে কম্পটেস রেন্ডুস দে ল'অ্যাকাডেমি দেস সায়েন্সেস, ফ্রেঞ্চ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের কার্যপ্রণালীতে প্রকাশিত হয়েছিল।
ফায়লের কাজ ছিল ব্যবস্থাপনার একটি সাধারণ তত্ত্বের প্রথম ব্যাপক বিবৃতিগুলির মধ্যে একটি। তিনি প্রস্তাব করেছিলেন যে ছয় ধরনের সাংগঠনিক কার্যকলাপ রয়েছে, যার মধ্যে একটি হিসাবে ব্যবস্থাপনা, ব্যবস্থাপনার পাঁচটি প্রাথমিক কাজ এবং পরিচালনার চৌদ্দটি নীতি।
সাংগঠনিক কার্যকলাপের ধরন
Fayol একটি শিল্প উদ্যোগের মধ্যে গৃহীত কার্যক্রমের পরিসরকে ছয় প্রকারে ভাগ করেছেন:-
তার মূল কাজ, Administration industrielle et générale; অগ্রাধিকার, সংগঠন, আদেশ, সমন্বয়, নিয়ন্ত্রণ, পাঁচটি প্রাথমিক ফাংশন চিহ্নিত করা হয়েছিল:
পরিকল্পনা
আয়োজন
কমান্ডিং
সমন্বয়কারী
নিয়ন্ত্রণ করছে
ফ্রেঞ্চ কন্ট্রোলার থেকে কন্ট্রোল ফাংশনটি এই অর্থে ব্যবহৃত হয় যে একজন ব্যবস্থাপককে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে এবং বিচ্যুতিগুলি বিশ্লেষণ করার জন্য একটি প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া পেতে হবে। ইদানীং ব্যবস্থাপনার পণ্ডিতরা নির্দেশনা ও সমন্বয় ফাংশনকে একটি অগ্রণী ফাংশনে যুক্ত করেছেন।
তথ্যসূত্র
↑ কখMorgen Witzel (2003). Fifty key figures in management. Routledge, 2003. ISBN 0-415-36977-0p.96.
↑Book: The History of Management Thoughts by Claude S. George Jr
↑Daniel A. Wren, Arthur G. Bedeian, John D. Breeze, (2002) "The foundations of Henri Fayol's administrative theory", Management Decision, Vol. 40 Iss: 9, pp.906 - 918 state: "It was not until the Storr's translation that Fayol's (1949) Administration Industrielle et Générale reached a wider audience, especially in the USA and established Fayol as a major authority on management."
↑The first English translation by J.A. Coubrough in 1930 didn't have that much impact. The first translation in German was published around the same time in 1929.