৩জি (ইংরেজি: 3G) হল থার্ড জেনারেশন বা তৃতীয় প্রজন্ম-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি হল তৃতীয় প্রজন্মের তারবিহীন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি।[১] এই প্রযুক্তিতে প্রতি সেকেন্ডে কমপক্ষে ২০০ কিলোবিট হারে তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব। অবশ্য বর্তমানে থ্রিজি প্রযুক্তিতে এর চেয়েও অধিক গতি পাওয়া সম্ভব। এটি আগের সকল তারবিহীন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিগুলোর চেয়ে অধিক গতিসম্পন্ন এবং উন্নত। থ্রিজি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিতে টুজি নেটওয়ার্কের সুবিধাসমূহের পাশাপাশি আরও কিছু সুবিধা উপভোগ করা যায়। যার মধ্যে রয়েছে দ্রুত গতির ইন্টারনেট, ভিডিও কল এবং মোবাইল টিভি।
ইতিহাস
১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নেরগবেষণার মাধ্যমে থ্রিজি প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটে। প্রায় ১৫ বছরের গবেষণার মাধ্যমে এর মানোন্নয়ন ঘটেছে। এটি জনসাধারণের জন্য অবমুক্ত করা হয় আইএমটি-২০০০ নামে। তরঙ্গ বর্ণালির ৪০০ মেগাহার্জ থেকে ৩ গিগাহার্জ পর্যন্ত থ্রিজি-এর জন্য বরাদ্দ ছিল। বর্তমানে সরকার এবং যোগাযোগ কোম্পানি উভয়েই থ্রিজি অনুমোদন করেছে। ১৯৯৮ সালে প্রথম প্রাক-বাণিজ্যিক থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু করে জাপানের কোম্পানি এনটিটি ডোকোমো[২] এবং এর বাণিজ্যিকীকরণ করা হয় ফোমা নামে। ২০০১ সালের মে মাসে ডাব্লিউ-সিডিএমএ-এর জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করা হয়।[৩] বাণিজ্যিকভাবেও প্রথম এনটিটি ডোকোমো থ্রিজি চালু করে। এটি চালু করা হয় ২০১১ সালের ১ অক্টোবর। প্রথম ইউরোপীয় প্রাক-বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক ছিল ইউএমটিএস নেটওয়ার্ক। আইল অফ ম্যানে এটি চালু করে মাংক্স টেলিকম এবং প্রথম ২০০১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক চালু করে টেলিনর।
২০০২ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় এসকে টেলিকম প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সিডিএমএ ভিত্তিক ১xইভি-ডিও প্রযুক্তি চালু করে। মে মাসের মধ্যে টেলিযোগাযোগ কোম্পানি কেটি দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্বিতীয় থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু করে। ফলে কোরিয়াতেই প্রথম থ্রিজি অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সিডিএমএ২০০০ ১x ইভি-ডিও ভিত্তিক থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু করে মোনেট মোবাইল নেটওয়ার্ক, কিন্তু তারা পরবর্তীতে তাদের সেবা বন্ধ করে দেয়। ২০০২ সালের জুলাইয়ে, যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় থ্রিজিনেটওয়ার্ক চালু করে ভেরিজন ওয়্যারলেস।[৪]
সিডিএমএ২০০০: সিডিএমএ২০০০ এর পূর্ণরূপ হল কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাকসেস। এটি আইএমটি মাল্টি-ক্যারিয়ার নামেও পরিচিত। মোবাইল ফোন এবং সেল সাইটগুলোর মধ্যে ভয়েস তথ্য, সাংকেতিক তথ্য এবং অন্যান্য তথ্য আদান-প্রদানে এটি সিডিএমএ চ্যানেল অ্যাকসেস ব্যবহার করে।
টিডি-এসসিডিএমএ: টিডি-এসসিডিএমএ এর পূর্ণরূপ হল টাইম ডিভিশন সিঙ্ক্রোনাস কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাকসেস। এটি ইউএমটিএস-টিডিডি নামেও পরিচিত।
ডাব্লিউ-সিডিএমএ (ইউএমটিএস): ডব্লিউ-সিডিএমএ এর পূর্ণরূপ হল ওয়াইডব্যান্ড কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাকসেস। এটি জাপানের এনটিটি ডোকোমোর ফোমা নেটওয়ার্কের ভিত্তি। এটিকে কখনও কখনও ইউএমটিএস-এর প্রতিশব্দ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
গ্রহণ
৩জি প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী খুব ধীর গতিতে গৃহীত হয়। ৩জি এবং ২জি নেটওয়ার্কের বেতার কম্পাঙ্ক এক নয়। তাই নেটওয়ার্ক অপারেটরদের অধিক ডাটা স্থানান্তর হার অর্জনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন লাইসেন্স, নেটওয়ার্ক এবং কম্পাঙ্ক স্থাপন আবশ্যক। এছাড়া প্রেরক হার্ডওয়ারের উন্নয়নও ব্যয়বহুল, বিশেষ করে, ইউএমটিএস এর জন্য অধিকাংশ সম্প্রচার টাওয়ারের প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। এধরনের জটিলতার কারণে অনেক অপারেটর ৩জি নেটওয়ার্ক স্থাপনে অক্ষম হয় নতুবা দেরি করে। মোবাইল সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০০৭ সালের ডিসেম্বর অনুযায়ী, বিশ্বের ৪০টি দেশে ১৯০টি ৩জি নেটওয়ার্ক এবং ৭১টি দেশে ১৫৪টি এইচএসডিপিএ নেটওয়ার্ক চালু আছে। এশিয়া, ইউরোপ, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলো ৩জি সেবা প্রদানের জন্য ডাব্লিউ-সিডিএমএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।In Bangladesh teletalk bring 3G in 2013
বাড়তি স্পেক্টার্মের লাইসেন্সিং ফি এর অধিক মূল্যের কারণে বিভিন্ন দেশে ৩জি নেটওয়ার্ক স্থাপন হতে দেরি হয়। ইউরোপের কিছু দেশে লাইসেন্স ফি অতিরিক্ত বেশি ছিল।
এই সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হল স্মার্টফোন (উদাহরণস্বরূপ আইফোন এবং এনড্রয়েড পরিবার), যা মোবাইল ফোনের সাথে পিডিএ এর সক্ষমতাকে সমন্বিত করে, যার ফলে মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগের অধিক প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ৩জি থেকে “মোবাইল ব্রডব্যান্ড” শব্দটির উত্পত্তি ঘটেছে। কারণ এর গতি এবং ক্ষমতা এটিকে ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর টেকসই বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলেছে।
অবশ্য তখনও, ৩জি এর কিছু অপরিহার্য স্বত্ব তাদের স্বত্বধারীদের দ্বারা ঘোষিত হয় নি। মনে করা হয় যে নরটেল এবং লুসেন্টের কাছে অপ্রকাশিত কিছু স্বত্ব আছে যা ৩জি এর জন্য অপরিহার্য।[৭]