রাম সিং (বিচার চলাকালীন মারা যান); দণ্ডিত অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্ক আসামীদের ফাসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড; কিশোর আসামীকে তিন বছরের জন্য একটি সংশোধনাগারে প্রেরণ
২০১২ সালের দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনাটি দিল্লির মুনিরকা এলাকায় ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের রাতে ঘটা একটি গণধর্ষণ এবং মারাত্মক হামলার ঘটনা ছিল।[২] ঘটনাটি একজন ২৩ বছর বয়সী ফিজিওথেরাপি ইন্টার্ন জনৈকার সাথে ঘটেছিলো, যার নাম জ্যোতি সিংহ পান্ডে; তিনি যখন তার ছেলেবন্ধু অন্দ্র প্রতাপ পান্ডের সাথে একটি বেসরকারি বাসে ভ্রমণ করছিলেন তখন তাকে পিটুনি দেওয়া হয় এবং তারপর তাকে গণধর্ষণ করা হয়। ঐ বাসে চালকসহ আরো ৬ জন ছিলেন যাদের প্রত্যেকেই পান্ডেকে ধর্ষণ করে এবং তার বন্ধুকে পিটুনি দেয়। হামলার তেরো দিন পর, তাকে জরুরী চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, কিন্তু দুই দিন পর তিনি তার আঘাতের প্রতিক্রিয়ায় মারা যান। এই ঘটনাটি ভারত এবং ভারতের বাইরে ব্যাপক সাড়া জাগায় এবং ধর্ষণের প্রতিবাদেও ধর্ষকদের শাস্তি দাবি করে প্রচুর সভা সমাবেশ ও প্রতিবাদ হতে দেখা যায়।
ঘটনাটি
২০১২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রাত্রি ৯:৩০ টায় জ্যোতি এবং তার বন্ধু অন্দ্র লাইফ অব পাই চলচ্চিত্রটি দেখে বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। মুনিরকা থেকে ধরকা-গামী বাসটিতে তখন মাত্র ৮ জন যাত্রী ছিল (চালক সহ)।
বাসের একজন সাহায্যকারী বলেছিল যে তারা ধরকা যাচ্ছেন।
কিন্তু অন্দ্রের মনে সন্দেহ জেগে ওঠে যখন বাসটি তার নির্ধারিত রুট ছেড়ে অন্য রুটে ঢুকে পড়ে।
তিনি আরও খেয়াল করেন যে বাসের যাত্রীরা তাদের দিকে সরে এসে বসে। যখন তিনি জানতে চান যে বাসটি আসলে কোথায় যাচ্ছে এবং অন্য যাত্রীদের আচরণের প্রতিবাদ জানান তখন তাদেরকে জিজ্ঞাস্য করা হয় যে তারা এতো রাতে কোথায় কি করতে গিয়েছিল। তারপর তাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়।
জ্যোতিকে তারপর বাসের এক কোনায় নিয়ে গিয়ে পিটানো হয় এবং তাকে একে একে ড্রাইভার ছাড়া প্রত্যেকে ধর্ষণ করে। এই সময়ে ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পরবর্তীতে হেল্পার গাড়ি চালান এবং ড্রাইভার ধর্ষণ করেন।
দিল্লী পুলিশ আনুমানিক রাত ১১ টার সময় জ্যোতি এবং তার ছেলেবন্ধুকে রাস্তা থেকে অর্ধউলঙ্গ এবং আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।
সাফদারজাং হাসপাতালে তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে কৃত্রিম ভাবে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়।
ভিক্টিম
উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলার একটি ছোট্ট গ্রামে, কৃষক পরিবারের মেয়ে জ্যোতি। তার বাবা তার খরচ মেটাতে সকল ফসলি জমি বিক্রি করে দেন। চূড়ান্ত কাজ করে মেয়ের পড়াশুনোর খরচ মেটান।
ভারতীয় আইন অনুযায়ী প্রথমে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। পরবর্তীতে তার নাম প্রকাশ করা হয়(প্রথমে নাম প্রকাশ হয় দিল্লিমেইল নামক ট্যাবলয়েড পত্রিকায়।)
অন্য ভিক্টিম, অন্দ্র প্রতাপ পেশাগতভাবে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তার বাড়িও উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরে।
প্রাথমিকভাবে, দিল্লি-মেইলের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশ জ্যোতির নাম প্রকাশের জন্য মামলা করে। কিন্তু তার পরিবারের কোন আপত্তি না থাকায় পরবর্তীতে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।
চিকিৎসা ও মৃত্যু
১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচবার অস্ত্রোপচার করা হয়। ২১ ডিসেম্বর ভারত সরকার একটি মেডিকেল কমিটির গঠন করে জ্যোতির জন্য সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তিনি অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, জ্বর ও বিভিন্ন অঙ্গের ইনফেকশনজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। ২৬শে ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ২৭শে ডিসেম্বরে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।
২৯শে ডিসেম্বর সকাল ৪-টে ৪৫ এ তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, নিউমোনিয়া এবং তলপেটে ইনফেকশনকে দায়ী করা হয়।
ঘটনার পাঁচদিনের মধ্যে সকল দোষী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। বিচার চলাকালীন অবস্থায় রাম সিং আত্মহত্যা করে ১১ ই মার্চ ২০১৩ তারিখে তিহার জেলে। এছাড়াও নাবালক মহম্মদ আফ্রোজ(অজ্ঞাত পরিচয়) কে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বাকি চারজন আরোপিকে মৃত্যু দন্ডে দণ্ডিত করেন হাইকোর্ট। চার আরোপিত ব্যক্তি তাদের মৃত্যু দন্ড খারিজের জন্য বেশ কয়েকবার আবেদন জানান কিন্তু বার বার তাদের আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়। অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, মুকেশ সিং ও পবন গুপ্ত এই চারজন দোষী কে ২০ মার্চ ২০২০ তে কাক ভোরে ৫.৩০ মিনিটে তাদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় তিহার জেলে। এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে Delhi crime নামে Netflix একটি ধারাবাহি ওয়েব সিরিজ তৈরি করেন।