স্যার হুবার্ট অ্যাশটন, কেবিইএমসি (ইংরেজি: Hubert Ashton; জন্ম: ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৮ - মৃত্যু: ১৭ জুন, ১৯৭৯) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার, ফুটবলার ও রাজনীতিবিদ ছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন
১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৮ তারিখে কলকাতায় অ্যাশটনের জন্ম। অ্যাশটনের মাতা 'ভিক্টোরিয়া আলেকজান্দ্রিনা ইংলিশ' লক্ষ্মৌ অধিগ্রহণকারী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কমান্ডার স্যার 'জন ইয়ার্ডলি উইলমট ইংলিশ' ও 'জুলিয়া সেলিনা থেসিগার' দম্পতির কন্যা ছিলেন।[১]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ
উইনচেস্টার কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯১৬ সালে উইনচেস্টার থেকে চলে আসার পর রয়্যাল ফিল্ড আর্টিলারিতে যোগদেন ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পুরোটা সময় ব্যয় করেন।
২৭ আগস্ট, ১৯১৮ তারিখে ট্রন্স উড এলাকায় সম্মুখ সমরে অংশ নেন ও শত্রুদের রুখে দিতে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন।[২] বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণের জন্য মিলিটারি ক্রস পদক লাভ করেন তিনি। যুদ্ধশেষে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন।
খেলোয়াড়ী জীবন
১৯২৭ সালে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।[৩][৪]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ছুটির দিনগুলোয় এসেক্সের পক্ষে খেলতেন।
১৯২১ ও ১৯২২ সময়কালে সহস্রাধিক রান সংগ্রহ করেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তিন বছর খেলার পর অ্যাশটনের ব্যাটিং গড় দাঁড়ায় ৪৬-এর অধিক।
আর্চি ম্যাকলারেনের নেতৃত্বাধীন শৌখিন দলের সদস্য মনোনীত হন ও ১৯২১ সালে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে ইস্টবোর্নে খেলেন। ইংরেজ একাদশ মাত্র ৪৩ রানে অল-আউট হবার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬০/৪ থাকাবস্থায় ৭১ রানে পিছিয়ে ছিল। এ অবস্থায় অব্রে ফকনারের সাথে জুটি গড়েন হুবার্ট অ্যাশটন। অ্যাশটন ৭২ মিনিটে ৭৫ রান ও ফকনার ১৫৩ রান তুললে ম্যাকলারেনের দল ২৮ রানের জয় তুলে নেয়।
অর্জনসমূহ
১৯২২ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হন হুবার্ট অ্যাশটন।[৫] এরজন্য মূলতঃ ঐ ইনিংসটি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল।
ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে খেলা চলাকালীন অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাথে নিজ নামকে সম্পৃক্ত করে রেখেছেন হুবার্ট অ্যাশটন। খেলায় তিনি বোল্ড হন। তবে বেইল শূন্যে উঠলেও পুনরায় স্ট্যাম্পে পূর্বের জায়গায় অবস্থান করে। ফলশ্রুতিতে তিনি অপরাজিত থাকেন।[৬]
পারিবারিক অংশগ্রহণ
গিলবার্ট, পার্সি ও ক্লদ নামীয় অ্যাশটনের আরও তিন ভাই ছিল। তারা প্রত্যেকেই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে গিলবার্ট, হুবার্ট ও ক্লদ ১৯২১ থেকে ১৯২৩ সময়কালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ধারাবাহিকভাবে তিন মৌসুম দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।
১৯২২ সালের ক্রিকেট মৌসুম শেষে হুবার্ট অ্যাশটন বার্মা অয়েল কোম্পানিতে যোগ দেন।
১৯২৬-২৭ মৌসুমে আর্থার জিলিগানের নেতৃত্বাধীন সফরকারী এমসিসি দলের বিপক্ষে খেলার জন্য ভারত ও বার্মা দলের পক্ষে খেলেন। ১৯২৭ সালে এসেক্সের পক্ষে পুনরায় অংশ নিয়ে বেশ কয়েকটি খেলায় অংশগ্রহণ করেন।
১৯৩০-এর দশকে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ব্যাটহাতে বেশ দক্ষতা প্রদর্শন করেন যা ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল।
অন্যান্য
ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ফুটবলার হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। ওয়েস্ট ব্রোমউইচ অ্যালবিওনের পক্ষে ফুলব্যাক অবস্থানে খেলেন। এছাড়াও করিন্থিয়ান্স, ব্রিস্টল রোভার্স ও ক্ল্যাপটনের পক্ষে খেলেছেন হুবার্ট অ্যাশটন।
ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হন। প্রথমে ক্রিকেট প্রশাসনে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৪১ সাল থেকে এসেক্সের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর যুক্তরাজ্যের জাতীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৩ সালে এসেক্সের হাই শেরিফ মনোনীত হন। ১৯৫০ সালের সাধারণ নির্বাচনে চেমসফোর্ড সংসদীয় এলাকা থেকে রক্ষণশীল দলের সংসদ সদস্য মনোনীত হন। ১৯৬৪ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব-পর্যন্ত আরও তিনবার এ আসন ধরে রেখেছিলেন তিনি।
১৯৫৯ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত হন।[৭] এরপর ১৯৬০-৬১ মৌসুমে এমসিসির সভাপতি মনোনীত হন স্যার হুবার্ট অ্যাশটন।
ব্যক্তিগত জীবন
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত অ্যাশটন ১৯২৭ সালে হিউ গেইটস্কেলের বোন ডরোথি গেইটস্কেলের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির দুইপুত্র ও দুইকন্যা সন্তান ছিল।[৮]
১৭ জুন, ১৯৭৯ তারিখে ৮১ বছর বয়সে এসেক্সের উইল্ডসাইড এলাকায় তার দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ