হলদিয়া শিল্পাঞ্চল |
---|
|
|
---|
শহর | হলদিয়া |
---|
প্রধান শিল্প | পেট্রোকেমিক্যালস,রাসায়নিক শিল্প,তৈল শোধনাগার,রাসায়নিক সার |
---|
|
• মোট | ৩৫০ বর্গকিমি (১৪০ বর্গমাইল) |
---|
হলদিয়া শিল্পাঞ্চল[১] হল ভারতের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় গড়ে ওঠা একটি শিল্পাঞ্চল। হলদিয়া বন্দর কে কেন্দ্র করে এই শিল্পাঞ্চলটি গড়ে উঠেছে। এই শিল্পাঞ্চলটির প্রধান শিল্প হল পেট্রোকেমিক্যালস শিল্প। হলদিয়া মহকুমার ৩৫০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা নিয়ে শিল্পাঞ্চলটি গড়ে উঠেছে। এই শিল্পাঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের সর্বাধুনিক শিল্পাঞ্চল।
অবস্থান
হলদিয়া শিল্পাঞ্চল তিন দিক দিয়ে নদী বেষ্টিত। উত্তর দিকে রূপনারায়ণ নদ ও হুগলি নদী, পূর্ব দিকে হুগলি নদী এবং দক্ষিণ দিকে হলদি নদী। শিল্পাঞ্চলটি থেকে বঙ্গোপসাগর ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সমুদ্র সমতল থেকে শিল্পাঞ্চলটি ১০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।
পরিকাঠামো
হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে রয়েছে উন্নত শিল্প পরিকাঠামো। এখান কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ-এর যোগান পাওয়া যায়। এছাড়া হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের বাসুদেবপুরে একটি ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। হলদিয়ার ঝিকুরখালি গ্রামে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার হলদিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সিইএসই এর অধীনস্থ সংস্থা হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড-এর দ্বারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০১৪ সালে চালু হয়েছে।
শিল্পাঞ্চলটি ৪১ নং জাতীয় সড়ক (বর্তমানে জাতীয় সড়ক ১১৬) দ্বারা ৬ নং জাতীয় সড়ক (বর্তমানে জাতীয় সড়ক ১৬) বা কলকাতা-মুম্বাই রোডের সঙ্গে যুক্ত। দক্ষিণ-পূর্ব রেল-এর পাঁশকুড়া-হলদিয়া রেলপথ দ্বারা শিল্পাঞ্চলটি সমগ্র ভারতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। জাতীয় জলপথ ১ (হুগলি নদী ও গঙ্গা নদী) দ্বারা শিল্পাঞ্চলটি কলকাতার পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড, বিহার ও উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এখানে একটি বড় সমুদ্র বন্দর রয়েছে যা হলদিয়া বন্দর নামে পরিচিত। প্রায় ৯ মিটার গভীরতার (৮ মিটার থেকে- ৮.৫ মিটার) বন্দরটি এই শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের যোগাযোগের মাধ্যম।
প্রধান শিল্প গুলি
- তেল শোধন শিল্প
১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশন-এর অধীনে প্রায় ৪৫৬ একর জমির ওপর হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে একটি খনিজ তৈল শোধনাগার স্থাপিত হয়। এই শোধনাগারে শোধিত তেল ছাড়াও রান্নার গ্যাস, মোটর স্পিরিট, ন্যাপথা, কেরোসিন, লুব্রিকেটিং তেল, বিটুমেন বা আলকাতরা প্রভৃতি উপজাত দ্রব্যও উৎপাদিত হয়। বর্তমানে শোধনাগারের পাশেই ৮০ একর জমিতে ৩৩০০ কোটি টাকা লগ্নি করে আরও একটি কারখানা গড়ছে আইওসি। সেখানে শোধনাগারের বর্জ্য ফার্নেস অয়েল এবং বিটুমিন থেকে তৈরি হবে কোক, ডিজেল ও কেরোসিন তেল। [২]
- সার শিল্প
আমদানিকৃত ফসফেট ও হলদিয়া তেলশোধনাগার থেকে প্রাপ্ত ন্যাপথার ওপর নির্ভর করে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন-এর অধীনে একটি রাসায়নিক সার উৎপাদন কারখানা গড়ে উঠেছে। এই কারখানা থেকে উন্নতমানের রাসায়নিক সার উৎপাদন করা হয়।
- পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প
পশ্চিমবঙ্গ সরকার, চ্যাটার্জি শিল্প গোষ্ঠী এবং ইন্ডিয়াল ওয়েল কর্পোরেশনের প্রচেষ্টা ও আর্থিক আনুকূল্যে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে একটি আধুনিক পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প গড়ে উঠেছে। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় হয় ₹ ৫,১৭০ কোটি (ইউএস$ ৬৩১.৯৪ মিলিয়ন) টাকা। ২০০০ সালের ২ এপ্রিল পেট্রোকেমিক্যাল কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করে। এখানে ন্যাপথা থেকে ইথিলিন, প্রোপিলিন, পলিইথিলিন, পলিপ্রোপিলিন, বেঞ্জিন, বিউটানিন প্রভৃতি রাসায়নিক সামগ্রী উৎপাদিত হয়। [৩][৪]
মিৎসুবিশি কেমিক্যাল কর্পোরেশনের অধীনে এখানে পলিয়েস্টার তন্তু, টেরেফথালিন অ্যাসিড উৎপাদিত হয়। দ্য সাউথ এশিয়ান পেট্রোকেমিকেল লিমিটেডের অধীনে ব্টল গ্রেড পেট রেসিন প্লানট গড়ে উঠেছে।
- কীটনাশক ওষুধ শিল্প
শ'ওয়ালেস সংস্থার অধীনে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে একটি কীটনাশক তৈরির কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এখানে চার ধরনের কীটনাশক তৈরি হয়।
- সাবান শিল্প
হিন্দুস্তান লিবার নামে একটি সংস্থার অধীনে এখানে একটি সাবান উৎপাদন কারখানা স্থাপিত হয়েছে।
- ফসফেট শিল্প
১৯৭৯ সালে হিন্দুস্তান লিভার-এর উদ্যোগে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে ২০০ একর জমির উপর ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিটার্জেন্ট উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ফসফেট তৈরির কারখানা স্থাপিত হয়। এই কারখানা থেকে বর্তমানে পূর্ব ভারতের ফসফেটের যোগানের বেশিরভাগ অংশ উৎপাদিত হয়।
- ব্যাটারি শিল্প
ক্লোরাইড (ইন্ডিয়া) লিমিটেডের একটি ব্যাটারি তৈরির কারখানা হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে রয়েছে।
- কার্বন-ব্ল্যাক শিল্প
পেট্রো-কার্বন সংস্থার অধীনে এখানে একটি কার্বন-ব্ল্যাক তৈরির কারখানা রয়েছে।
- অন্যান্য শিল্প
হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, প্লাস্টিক, বেকারি প্রভৃতি শিল্প কেন্দ্র ও কারখানা গড়ে উঠেছে।
তথ্যসূত্র