স্থল পরিবহন হলো মানুষ, জীবজন্তু বা পণ্য ও মালামালের এক জায়গা থেকে অন্যত্র স্থানান্তর। রেল পরিবহন ও সড়ক পরিবহন - এই দুইয়ের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে স্থল পরিবহন।
পদ্ধতি
স্থল পরিবহন ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এবং অবকাঠামো ব্যবহার করা হয়, একদম প্রথমিকভাবে মানব বাহিত পদ্ধতি হতে শুরু করে অত্যাধুনিক অত্যাধুনিক জালিকা বিভাজন ও অবকাঠামোর দ্বারা গঠিত যানবাহন নিয়ে যার পরিচালন পদ্ধতি। এই ব্যবস্থা তিন ধরনের মাধ্যমে গঠিত হয় - মানব চালিত, পশু চালিত এবং যন্ত্র চালিত।
মানব চালিত পরিবহণ
টেকসই পরিবহনের একটি পদ্ধতি মানব চালিত পরিবহন যাতে মানুষের পেশি শক্তি দিয়ে ব্যক্তি এবং/বা পন্যের পরিবহন করা হয় হাঁটা, দৌঁড়ান এবং সাঁতারের মাধ্যমে। আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের ক্ষমতাকে উন্নত করার সুযোগ করে দিয়েছে। মানব চালিত পরিবহন ব্যয় সংকোচন, অবসর, শারীরিক ব্যায়াম এবং পরিবেশবাদের কারণে জনপ্রিয় হয়ে থাকে; বিশেষ করে অনুন্নত এবং দুর্গম এলাকায় মানব চালিত পরিবহনই একমাত্র ভরসা।
যদিও মানুষ কোনো ধরনের অবকাঠামো ছাড়াই হেঁটে চলাচল করতে পারে, তবুও মানব শক্তি ব্যবহার করা হয় এধরনের বাহণে রাস্তা ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করা যেতে পারে, বিশেষতঃ যখন বাইসাইকেল এবং সরলরৈখিত স্কেটে মতো বাহনের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন পরিবেশে ব্যবহারযোগ্য মানব-চালিত যানবাহনগুলির উন্নয়ন ঘটানো হয়, যেমন তুষার ও পানিতে জলযানে করে চলে ও স্কিইং করে; এমন কি আকাশেও মানব চালিত বিমান দিয়ে ভ্রমণ করা যায়।
পশু-চালিত পরিবহন বলতে বুঝায় মানুষ এবং পণ্য স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কর্মক্ষম প্রাণী ব্যবহার করাকে। মানুষ এধরনের কিছু প্রাণীতে সরাসরি পড়তে পারে, পণ্য বহন করতে ভারবাহী প্রাণী হিসাবে তাদের ব্যবহার করতে পারে, এক বা একাধিকের সাহায্যে গঠিত একটি দলের দ্বারা স্ল্যাড বা চাকাযুক্ত গাড়ি টেনে আনতে পারে।
দুই বা ততোধিক স্থানের মধ্যকার সনাক্তযোগ্য রুট, পথ বা রাস্তাকে সড়ক বলে।[১] সড়ক সাধারণত মসৃণ, সমতল কৃত বা সহজ ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত করা হয়;[২] যদিও এমনটি করার প্রয়োজন সর্বদা হয়ও না এবং ঐতিহাসিকভাবে অনেক সড়কই কোনোরূপ আনুষ্ঠানিক নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই কেবল স্বীকৃত পথ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[৩] শহর এলাকায়, সড়ক কোনো নগর বা গ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে পারে এবং সেই রাস্তাটিকে পথ হিসাবে নামকরণ করা হতে পারে, যা শহুরে স্থানকে সহজীকরণ এবং যোগাযোগ পথ হিসাবে দ্বৈত ভূমিকা পালন করে থাকে।[৪]
সবচেয়ে সাধারণ সড়ক যান হলো ছোট যান্ত্রিক গাড়ি; এটি চাকা যুক্ত যাত্রী বহনকারী বাহন যেটি তার নিজস্ব মোটর বহন করে থাকে। সড়কে চলাচলকারী অন্যান্য বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল এবং পথচারী অন্তর্ভুক্ত। ২০০২ সালে বিশ্বব্যাপী ৫৯০ মিলিয়ন ছোট যান্ত্রিক বাহন ছিল। ছোট যান্ত্রিক বাহনগুলি বায়ু দূষণ সৃষ্টি করে যার ফলে মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়। সড়ক পরিবহন প্রয়োজন অনুসারে এর রাস্তা ব্যবহারকারিদের এক লেন থেকে আরেক লেন এবং এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায় স্থানান্তর করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়। স্থান, দিক, গতি এবং ভ্রমণের সময় পরিবর্তনের এই সুবিধাটি পরিবহনের অন্যান্য মাধ্যমে এতোটা সহজে পাওয়া যায় নয়। সড়ক পরিবহনের মাধ্যমে দরজায় দরজায় সেবা পৌছানো সম্ভব।
ছোট যান্ত্রিক যানবাহনগুলো স্বল্প স্বক্ষমতায় উচ্চ নমনীয়তা প্রদান করে, তবে উচ্চ শক্তি এবং বিশাল এলাকা ব্যবহার করে এবং শহরের শব্দ এবং বায়ু দূষণের প্রধান উৎস বলে বিবেচনা করা হয়; সে তুলনায় বাসগুলো স্বল্প খরচে আরো দক্ষ ভ্রমণের সুযোগ দেয়।[৫] মালবাহী পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ট্রাক দ্বারা সড়কে পরিবহন করা হয়।
পাইপলাইন পরিবহনে একটি পাইপের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হয়; সাধারণতঃ তরল এবং গ্যাস জাতীয় পদার্থ প্রেরণ করা হয়, কিন্তু বায়ু-প্রবাহের দ্বারা পরিবহনে সক্ষম নলের মধ্যে সংকুচিত বাতাস ব্যবহার করে কঠিন খন্ড পাঠাতে যায়। তরল/গ্যাসের ক্ষেত্রে, যেকোন রাসায়নিকভাবে স্থিতিশীল তরল বা গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে পাঠানো যায়। পয়োঃ, স্থিতিস্থাপক মন্ড, পানি এবং বিয়ারের জন্য স্বল্প দূরত্বের পদ্ধতি এবং খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য দীর্ঘ দূরত্বের পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়।
তারের মাধ্যমে পরিবহন একটি বিস্তৃত পন্থা যেখানে যানবাহনগুলিকে অভ্যন্তরীণ শক্তি উৎসের পরিবর্তে তারের দ্বারা টেনে নেওয়া হয়। এটি সাধারণত ধীরে ধীরে উর্ধমুখী পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়। উর্ধ-বাহিত ট্রামওয়ে, এলিভেটর, এসক্যালেটর এবং স্কি লিফট এই পদ্ধতির বাহনের অন্তর্ভুক্ত; এদের মধ্যে কিছু সয়ংক্রিয় গড়ানো বাহকের মাধ্যমে পরিবহন হিসাবে গন্য করা হয়।
অন্যান্য পন্থার সাথে সংযোগ
বিমানবন্দর
বিমানবন্দর আকাশপথে পরিবহন কার্যক্রমে একটি সেবাদান স্থান হিসাবে কাজ করে, তবে অধিকাংশ লোক এবং মালামাল বিমান পরিবহন দ্বারা চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য স্থল পরিবহন ব্যবহার করতে হয়।
যখন সংযোগকারী বিমানে ভ্রমণের জন্য যাত্রীদের সারারাত কাছাকাছি হোটেল বা মোটেলে থাকার প্রয়োজন হয় তখন বিমানবন্দর ভিত্তিক সন্নিবিষ্ট পরিষেবাদি কখনও কখনও ব্যবহার করা হয়। সংস্থাগুলি ভাড়া গাড়ি, ব্যক্তিগত বাস এবং ট্যাক্সি পরিষেবা সরবরাহ করে, পক্ষান্তরে সাধারণ জনগণের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণত পৌরসভা বা জনসাধারণ কর্তৃক প্রাপ্ত অন্য উৎসের তহবিলের দ্বারা সরবরাহ করা হয়।
ডেভভার ইন্টারন্যাশনাল এবং জেএফকে ইন্টারন্যাশনালসহ অসংখ্য বৃহত বিমানবন্দরে বিভিন্ন ধরনের স্থল পরিবহন সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন ধরনের স্থল পরিবহন পরিষেবাদানকারী সংস্থার সাথে মিলিতভাবে। ছোট বিমানবন্দরে সচরাচর কেবল কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়ী ভাড়া কোম্পানি এবং একটি বাস পরিষেবাদানকারী সংস্থা থাকে। বৃহত্ বিমানবন্দরে বিভিন্ন বিকল্প পরিবহন প্রস্তাবের ব্যবস্থা থাকে। বৃহত্তর বিমানবন্দরে কখনও কখনও হালকা রেল এবং/অথবা সড়ক পথ থাকে যা বিমানবন্দরের চারপাশে চক্রাকার পরিবহন পথের সৃষ্টি করে যার দ্বারা একাধিক বিমান উড্ডয়ন-অবতরন স্থলে গমনাগমন করা যায়।
সমুদ্রবন্দর
বিমান পরিবহনের ন্যায় সমুদ্র পরিবহনেও সাধারণত মানুষ এবং পণ্যের চূড়ান্ত গন্তব্য পৌঁছানোর জন্য ভ্রমণ পথের সর্বশেষের উভয় প্রান্তিকে স্থল পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। সমুদ্র ও স্থল পরিবহন ব্যবস্থায় মধ্যে মানুষ এবং পণ্য স্থানান্তরের জন্য বন্দরে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ব্যবহার করা হয়।
পন্য উৎপাদন এবং সেই পণ্যগুলি বিভিন্ন অবস্থানে পৌছানোর জন্য পরিবহন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় উপাদান। পরিবহন সারা বিশ্বজুড়ে সম্প্রসারণ হয়েছে; ভাল পরিবহন ব্যবস্থা বাণিজ্যের বিস্তৃতি ঘটায় এবং অধিক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সর্বদা পরিবহন ক্ষমতা এবং পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির উপর নির্ভরশীল।[৬] তবে পরিবহনের অবকাঠামো ও পরিচালনা ব্যবস্থাটি ভূমি উপর বড় প্রভাব ফেলে এবং শক্তির সর্বনিম্ন ব্যবহার করা টেকসই পরিবহন ব্যবস্থার সংগঠনের প্রধান উপজীব্য।
আধুনিক সমাজে আবাসস্থল এবং কর্মস্থলের মধ্যে দূরত্বে রয়েছে, যা মানুষকে তার কাজের জায়গায় বা শিক্ষালয়ে অস্থায়ীভাবে গমনের জন্য এবং অন্যান্য দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের জন্য স্থানান্তরিত হতে পরিবহন ব্যবহার করতে বাধ্য করে। পর্যটনের জন্য যাত্রীবাহী পরিবহন বিনোদনমূলক পরিবহন ব্যবস্থার প্রধান অংশ। বাণিজ্যস্থলে ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য কর্মীদের পরিবহনের প্রয়োজন হয়, যা সামনাসামনি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি নেয়ার জন্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় বা বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের তাদের প্রয়োজনীয় জায়গায় স্থানান্তরিত করার জন্য প্রয়োজন হয়।
পরিবেশগত
পরিবহন শক্তি ব্যবহারের একটি প্রধান ক্ষেত্র এবং বিশ্বের অধিকাংশ পেট্রোলিয়াম এক্ষেত্রে পোড়ানো হয়। এটি নাইট্রাস অক্সাইড এবং আরো বিবিধ কণাগুলির দ্বারা বায়ু দূষণ সৃষ্টি করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের মাধ্যমে বৈশ্বয়িক উষ্ণতা বৃদ্ধির একটি উল্লেখযোগ্য অবদানকারী,[৭] যার জন্য পরিবহন ক্ষেত্রটি ক্রমবর্ধমান দ্রুততম নির্গমন ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচিত হয়।[৮] উপবিভাগগুলোর মধ্যে, সড়ক পরিবহন খাত বৈশ্বয়িক উষ্ণতা বৃদ্ধির বৃহত্তম ক্ষেত্র।[৯] উন্নত দেশে পরিবেশগত প্রবিধানের মাধ্যমে প্রতিটি যানবাহনের নির্গমন হার হ্রাস করা হয়েছে; যদিও, যানবাহন সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রতিটি বাহনের ব্যবহারে বৃদ্ধি দ্বারা এর বৃদ্ধি ঘটছে।[৭] সড়ক পথে চলাচলকারী যাহবাহন কর্তৃক কার্বন নির্গমন উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে কিছু পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।[১০][১১] সড়ক হতে রেল ও মানব-শক্তি চালিত বাহনে এবং বিদ্যুতায়িত ও শক্তির সর্বোচ্চ ও যথাযথ ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির ঘটানো বাহনের দ্বারা শক্তির ব্যবহার এবং নির্গমন পন্থার পরিবর্তন ঘটলে বড় ধরনের পার্থক্য সৃষ্টি করে বলে পরিবেশবিদগণ পরিবহন মাধ্যমগুলোকে পরিবর্তনে বিশেষ জোর দিচ্ছেন।
পরিবহন ব্যবস্থার অন্যান্য পরিবেশগত প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে পরিবহন পথ ও বাহনের বিস্তরণ যার ফলশ্রুতিতে প্রাকৃতিক বাসস্থান এবং কৃষি জমি ব্যবহৃত হওয়ায় পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি হয়। বিশ্বব্যাপী পরিবহন ও এটি কর্তৃক অপদ্রব্যের নির্গমন হ্রাস করলে পৃথিবীর বায়ু গুণাগুণ, অ্যাসিড বৃষ্টি, ধোঁয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের উপর উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।[১২]
↑"Major Roads of the United States"। United States Department of the Interior। ২০০৬-০৩-১৩। ১৩ এপ্রিল ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০০৭।
↑Climate forcing from the transport sectors, Jan Fuglestvedt, Terje Berntsen, Gunnar Myhre, Kristin Rypdal, and Ragnhild Bieltvedt Skeie, January 15, 2008, vol. 105, no. 2, PNAS.org