সূর্য দীঘল বাড়ী ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র।[১] ছায়াছবিটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী[২]। বিশিষ্ঠ গ্রন্থকার আবু ইসহাকের ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত কালজয়ী (উপন্যাস) সূর্য দীঘল বাড়ী[৩] অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করা হয়। এটিই বাংলাদেশের প্রথম সরকারি অনুদান প্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন ডলি আনোয়ার, রওশন জামিল, জহিরুল হক, আরিফুল হক, কেরামত মাওলা, এ টি এম শামসুজ্জামান।[৪]
কাহিনী সংক্ষেপ
বাংলা ১৩৫০ সনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অবিভক্ত ভারতের বাংলায় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে 'পঞ্চাশের আকাল' নামে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তাতে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষ প্রাণ হারায়। যারা কোনমতে শহরের লঙ্গরখানায় পাত পেতে বাঁচতে পেরেছিল তাদেরই একজন একালের সময় স্বামী পরিত্যক্ত জয়গুন। সঙ্গে তার মৃত প্রথম স্বামীর ঘরের ছেলে ও দ্বিতীয় স্বামীর ঘরের মেয়ে। আরো আছে মৃত ভাইয়ের স্ত্রী-পুত্র। তারা গ্রামে ফিরে এসে এমন এক খন্ড জমিতে ঘর তৈরী করে যেটি অপয়া ভিটে বলে পরিচিতি ছিল। জীবনযুদ্ধে যখন সে প্রাণপণ লড়ছে তখন তার প্রতি গায়ের মোড়লের দৃষ্টি পড়ে। দ্বিতীয় স্বামীও তাকে আবার ঘরে তুলতে চায়। সে কারো প্রস্তাবেই সায় দেয় না। কিন্তু এ দুজনের সাক্ষাত ঘটে এবং মোড়ল তার প্রতিযোগীকে হত্যা করে। ঘটনার একমাত্র দর্শক হিসেবে জয়গুনকেও মূল্য দিতে হয় অন্যভাবে।
--এই কাহিনীর বিচিত্রতার মধ্যে মূল বিষয় একটিই; তা হচ্ছে কুসংস্কার, সম্পদ, ধর্ম, প্রতিপত্তি, সামাজিক বাধা-নিষেধ, এমনকি জাতীয়তাবোধ- এ সব কিছুকেই কাজে লাগিয়ে শ্রমজীবী ক্ষুধার্ত মানুষকে ক্রমাগত শোষণ।
অভিনয় শিল্পী নির্বাচন
'জয়গুন' চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথমে ফেরদৌসী মজুমদারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য তিনি চরিত্রটি করতে পারেননি। ফেরদৌসী মজুমদারের জয়গুন চরিত্রে রূপদানের জন্য ডলি আনোয়ারের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। তাঁর প্রস্তাবনা অনুযায়ী জয়গুনের চরিত্রে ডলি আনোয়ারকে নেয়া হয়েছিল।[৫]
শ্রেষ্ঠাংশে
সংগীত
সূর্য দীঘল বাড়ী ছবিটির সংগীত পরিচালনা করেন আলাউদ্দিন আলী।
গানের তালিকা
পুরস্কার ও সম্মাননা
আন্তর্জাতিক সম্মাননা
সূর্য দীঘল বাড়ী ছবিটি ১৯৮০ সালের ম্যানহেইম চলচ্চিত্র উৎসব, জার্মানিতে অংশগ্রহণ করে এবং তিনটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।
- বিজয়ী ফিল্ম ডুকাট্ পুরস্কার
- বিজয়ী ক্যাথটিক জুরি পুরস্কার
- বিজয়ী এভান্গেলিক্যাল জুরি পুরস্কার
সূর্য দীঘল বাড়ী ছবিটি ফিগুএরা দা ফোজ চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৮০), পর্তুগাল এ একটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
সূর্য দীঘল বাড়ী ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও পরিচালক সহ মোট আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।[১][৬]
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র - মসিহউদ্দিন শাকের (প্রযোজক)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ পরিচালক - শেখ নিয়ামত আলী ও মসিহউদ্দিন শাকের[২]
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - ডলি আনোয়ার
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য - শেখ নিয়ামত আলী ও মসিহউদ্দিন শাকের
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণ - আনোয়ার হোসেন
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সম্পাদনা - সাইদুল আনাম টুটুল
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী - ইলোরা গহর ও সজিব
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী (বিশেষ শাখায়) - লেনিন
বাচসাস পুরস্কার
সূর্য দীঘল বাড়ী ছবিটি ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক পুরস্কার-এর মোট ছয়টি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
|
---|
১৯৭৫–১৯৮০ | |
---|
১৯৮১-২০০০ | |
---|
২০০১–বর্তমান | |
---|