খাদ্য ঐতিহাসিক কে.টি. আচ্য'র মতে, সাহিত্যে সাম্বারের প্রাথমিক উল্লেখ সতেরো শতকের দিকে হতে পারে।[১]
জনশ্রুতিতে বর্ণিত আছে যে, খাবারটি মারাঠার শাসক সম্ভাজি সর্বপ্রথম দুর্ঘটনাক্রমে তৈরি করেছিলেন, যখন তিনি তার রাঁধুনির অনুপস্থিতিতে ডাল তরকারি তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ডালের সাথে তেঁতুল যোগ করলেন, ফলস্বরূপ খাবারটি পরে 'সাম্বার' হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল।[২]
সাম্বারে প্রায়শই এক প্রকার অসমৃণ সাম্বার গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়, যা ভাজা মসুর ডাল, শুকনো গোটা মরিচ, মেথি বীজ, ধনিয়া বীজ এবং কখনও কখনও হিং এবং বারসুঙ্গার মিশ্রণে তৈরি করা হয়। আঞ্চলিক ভিন্নতার ভিত্তিতে জিরা, গোল মরিচ, কুড়ানো নারকেল, দারুচিনি বা অন্যান্য মশলা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
শাকসবজি, তেঁতুলের পাল্প, সাম্বার গুঁড়ো, হলুদ, লবণ এবং হিং সবজি আধা সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত একসাথে সিদ্ধ করা হয়। তারপরে রান্না করা মসুরের ডাল যুক্ত করে সবজি না হওয়া পর্যন্ত রান্না করা হয়। বাড়তি স্বাদ যুক্ত করতে রান্না করা সাম্বারে একটি মশলার-ঘ্রাণযুক্ত তেল যোগ করা হয় এবং খাবারটি তাজা ধনিয়া পাতা বা তরকারি পাতা (বারসুঙ্গা) দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়।
রান্না শেষে সরিষার তেল তেল এবং অনান্য সবজির তেলের মিশ্রণে তৈরি মশলার-ঘ্রাণযুক্ত তেল যোগ করা একটি সাধারণ ভারতীয় রন্ধনসম্পর্কীয় কৌশল এবং এটি টেম্পারিং (মিশ্রিতকরণ) হিসাবে পরিচিত। সরিষার বীজ, মাষকলাই, শুকনো গোটা মরিচ এবং ঘি বা উদ্ভিজ্জ তেলে ভাজা তরকারি পাতা সাম্বারের জন্য ব্যবহৃত অসংখ্য তেলের স্বাদের একটি উদাহরণ। কিছু পরিবর্তনের মধ্যে অতিরিক্ত উপাদান যেমন জিরা, পেঁয়াজ, মেথি বীজ এবং হিং-এর গুঁড়ো অন্তর্ভুক্ত।
এই মসুর ডাল এবং বিভিন্ন সবজির সংমিশ্রণটি একটি স্বাস্থ্যকর খাবার এবং এটি রান্না করা ভাত বা দক্ষিণ ভারতীয় অন্যান্য খাবার, যেমন ইডলি, দোসা, মেদু বড়া ইত্যাদি দিয়ে গরম পরিবেশন করা হয়।
সাম্বারের কিছু পরিবর্তনের মধ্যে মুগ ডাল এবং মিষ্টিকুমড়ার মতো উপাদান রয়েছে।
প্রকারভেদ
সাম্বার দক্ষিণ ভারতে মসুর ভিত্তিক উদ্ভিজ্জ ডালের একটি ঐতিহ্যের অংশ। যে অঞ্চলগুলিতে নারকেল চাষ হয়, বিশেষ করে তামিলনাড়ু, উপকূলীয় কর্ণাটক এবং কেরালার কিছু অঞ্চলে সাম্বার গুঁড়োর পরিবর্তে তাজা, কুড়ানো এবং ভাজা নারকেল এবং মশলার একটি পেস্ট দিয়ে সাম্বার ডাল তৈরি করা হয়।
কর্ণাটকে ব্রাহ্মণদের কাছে খাবারটি হুলি এবং অন্যদের কাছে সারু নামে পরিচিত। এই সারু কর্ণাটকের, বিশেষ করে পুরাতন মহীশূর অঞ্চলের একটি বিশেষত্ব। রান্না করা শাকসবজি ও মসুরের সাথে বাড়তি তেঁতুল যোগ করার কারণে এই সারু কিছুটা মিষ্টি।
অন্ধ্র প্রদেশে এটিকে সাম্বার বলা হয়। ডাল ও তেঁতুল ছাড়াও কয়েকটি শাকসবজি সাম্বার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, এর মাঝে কয়েকটি উপকরণ: পেঁয়াজ, দোশাকায়া, করলা, সজনে, ঢেঁড়স, বেগুন, কুমড়া এবং টমেটো।
মসুরবিহীন সাম্বারকে (তবে শাকসবজি বা শুকনো বা তাজা মাছ, বা মাংস সহ) তামিলনাড়ুতে কুজাম্বু বলা হয়।
পরিবেশনা
দক্ষিণ ভারতে আনুষ্ঠানিক এবং প্রতিদিন, উভয় রান্নায় অন্যতম প্রধান খাদ্যপদ হিসাবে সাম্বারকে ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়।
দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলিতে প্রাতঃরাশ বা সন্ধ্যা নাস্তার জন্য বড়া সাম্বার এবং ইডলি জনপ্রিয়। রাস্তার পাশের রেস্তোরাঁগুলি প্রায়শই ইডলি এবং বড়া'র জন্য বিনামূল্যে পুনরায় সাম্বার দিয়ে থাকে।
এছাড়াও সাম্বার দোসার একটি পার্শ্ব পদ হিসাবে পরিবেশিত হয়।