সমর্পিত ও বিজিত প্রদেশসমূহ (ইংরেজি: Ceded and Conquered Provinces) হল ১৮০৫ থেকে ১৮৩৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসিত ভারতের উত্তর দিকের একটি অঞ্চল।[১] এটি অধুনা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের প্রায় সমস্ত অঞ্চল (অবধের লখনউ ও ফৈজাবাদ বিভাগ ছাড়া) এবং দিল্লি অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছিল। ১৮১৬ সালের পর কুমায়ুন বিভাগ এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়। সেই সঙ্গে অধুনা উত্তরাখণ্ড রাজ্যের[১] ১৯৩৬ সালে এই অঞ্চল নিয়ে উত্তরপশ্চিম প্রদেশ (লেফট্যানেন্ট-গভর্নরের অধীনে) গঠিত হয়। পরে ১৯০৪ সালে আগ্রা প্রদেশ গঠিত হয় আগ্রা ও অবধের যুক্তপ্রদেশের মধ্যে।[১] গাড়ওয়াল বিভাগের একটি বড়ো অংশও[২] এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
সমর্পিত প্রদেশসমূহ
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে শুধুমাত্র অধুনা উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বেনারস বিভাগ ও এলাহাবাদের দুর্গটি ব্রিটিশ শাসনাধীনে ছিল।[১] ১৮০১ সালে অবধের নবাব সাদাত আলি উত্তরপশ্চিম দিক থেকে আহমদ শাহ দুরানির নাতি জামান শাহ দুরানির আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে অবধের কিছু অঞ্চল ব্রিটিশদের হাতে সমর্পণ করেন।[১] এই অঞ্চলের মধ্যে ছিল গোরখপুর ও রোহিলখণ্ড; এলাহাবাদ, ফতেপুর, কানপুর, এটাওয়া, মৈনপুরি, এটা জেলা; মির্জাপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল; এবং কুমায়ুনের "তরাই" পরগনাগুলি। এই অঞ্চলটি "সমর্পিত প্রদেশসমূহ" নামে পরিচিত হয়।[১] এক বছর বাদে ফারুকাবাদের নবাব ফারুকাবাদ জেলাটিকে ব্রিটিশদের হাতে সমর্পণ করেন।[১]
বিজিত প্রদেশসমূহ
দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সময় জেনারেল লেক মিরাট বিভাগ (আলিগড়ের যুদ্ধের পর আলিগড় সহ) এবং অনতিবিলম্বে আগ্রা বিভাগের অবশিষ্টাংশ (আগ্রা শহর সমেত) এবং দিল্লির পার্শ্ববর্তী জেলাগুলি জয় করেন।[১] সেই সঙ্গে বান্দা ও হামিরপুরের "যমুনোত্তর জেলাসমূহ" যুক্ত হয়। সেই সঙ্গে জালাউন জেলার অল্প কিছু অংশও যুক্ত হয়।[১]
১৮১৬ সালে সুগাউলির সন্ধি সন্ধি সাক্ষরের মাধ্যমে ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধ (১৮১৪-১৮১৬) সমাপ্ত হয়। এই সময় অধুনা উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন বিভাগ ও দেরাদুন জেলা অন্তর্ভুক্ত হয়।[১]
প্রশাসন
"সমর্পিত ও বিজিত প্রদেশসমূহ" ব্রিটিশ ভারতে কোম্পানির শাসনকালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির একটি অংশ ছিল।[১] নতুন অধিকৃত অঞ্চলগুলির থেকে প্রেসিডেন্সির রাজধানী কলকাতার দূরত্ব বেশি হওয়ায় প্রশাসনিক কাজে অসুবিধা হচ্ছিল।[৩] এই কারণে কিছু সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর না হওয়ায় ১৮৩১ সালে এই অঞ্চলের জন্য একটি স্বাধীন রাজস্ব বোর্ড এবং একটি পৃথক সদর দেওয়ানি ও নিজামৎ আদালত (প্রধান দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত) গঠিত হয়।[৩] ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হয়। এই আইন বলে "সমর্পিত ও বিজিত প্রদেশসমূহ" নিয়ে আগ্রা প্রেসিডেন্সি গঠিত হয়। নতুন প্রেসিডেন্সির জন্য একজন নতুন গভর্নরও নিযুক্ত হন।[৩] যদিও এই পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়নি। তাই ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আরেকটি আইন পাস করে এই অঞ্চলটিকে উত্তরপশ্চিম প্রদেশ নামে চিহ্নিত করা হয় এবং এই প্রদেশের জন্য একজন লেফট্যানেন্ট-গভর্নরের পদ সৃষ্টি করা হয়। প্রথম লেফট্যানেন্ট-গভর্নর চার্লস মেটক্যাফে ১৮৩৬ সালে নিযুক্ত হন।[৩]
আরও দেখুন
পাদটীকা
তথ্যসূত্র
- Alavi, Seema (১৯৯৩), "The makings of Company power: James Skinner in the Ceded and Conquered Provinces, 1802–1840", Indian Economic Social History Review, 30 (4): 437–466, ডিওআই:10.1177/001946469303000403
- Bayly, C. A. (২০০২), Rulers, Townsmen, and Bazaars: North Indian Society in the Age of British Expansion 1770–1870, Delhi: Oxford University Press. Pp. 530, আইএসবিএন 0-19-566345-4
- Imperial Gazetteer of India vol. V (১৯০৮), Abāzai to Arcot ("Agra Province" pp. 71–72), Published under the authority of His Majesty's Secretary of State for India in Council, Oxford at the Clarendon Press. Pp. viii, 1 map, 437.
- Imperial Gazetteer of India vol. XXIV (১৯০৮), Travancore to Zīra ("United Provinces" pp. 132–276), Published under the authority of His Majesty's Secretary of State for India in Council, Oxford at the Clarendon Press. Pp. vi, 1 map, 437.
- Mann, Michael (১৯৯৫), "A permanent settlement for the Ceded and Conquered provinces: Revenue administration in north India, 1801-1833", Indian Economic Social History Review, 32 (2): 245–269, ডিওআই:10.1177/001946469503200205