এই নিবন্ধটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ তম উপাচার্য সম্পর্কে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীর জন্য
শেখ আবদুস সালাম দেখুন।
শেখ আব্দুস সালাম (জন্ম: ১৯৫৫) একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, ক্রীড়া সংগঠক এবং অধ্যাপক। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (২০২০ - ২০২৪) ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে সংগঠক হিসাবে ক্যারাম বিভাগে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছেন।[১][২] বিভিন্ন জার্নালে তার প্রায় ৪০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।[৩] তিনি জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ার ১৪৫০ জন লেখকের মধ্যে একজন।[৪] তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
শেখ আব্দুস সালাম ১৯৫৫ সালে বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এ সময় তিনি যশোর বোর্ডে ৮ম স্থান অধিকার করেন। এরপর ১৯৭২ সালে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালে সেখান থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং তারপর ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি ভারতের পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।[৫]
কর্মজীবন
সালাম ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে চার বছর চাকরি করার পর ১৯৮৬-৮৭ সালে তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর ভলান্টারি স্টেরিলাইজেশনের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন।[৬]
১৯৮৭ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দানের মাধ্যমে তার শিক্ষকতা জীবন শুরু হয়। এর মাঝে, ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান এবং ২০০১ সাল পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তারপর ২০০৯ সালে তাকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন নিযুক্ত করা হয়।[৭]
এছাড়া, ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োজিত আছেন।[৮]
২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোস্যাল সায়েন্সেসের পরিচালক পদে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং রোমানিয়ার লুসিয়ান ব্লাগা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং অধ্যাপক, ব্রিটিশ কাউন্সিল হায়ার এডুকেশন লিঙ্ক প্রোগ্রামের সমন্বয়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নোমা প্রোগ্রামের পরিচালক এবং ফিন্যান্স কমিটির সদস্য পদে কাজ করেছেন।[৮]
২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।[৯][১০] ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে না পারায় ক্যাম্পাসে ভিসি অপসারণের আন্দোলন শুরু হয়।[১১][১২] ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।[১৩]
ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান
শেখ আব্দুস সালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবা ও ক্যারম কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি জাতীয় পর্যায়ে ক্যারাম এবং প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন।
ক্যারাম
আব্দুস সালাম বাংলাদেশ ক্যারম ফেডারেশন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন (১৯৯০) থেকে প্রায় ১৮ বছর সংস্থাটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১৪] এছাড়াও তিনি এশিয়ান ক্যারম কনফেডারেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং আন্তর্জাতিক ক্যারম ফেডারেশনের মিডিয়া কমিটির সাবেক সদস্য।[১৫] ১৯৯৫ সালে তার নেতৃত্বে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৫ম সার্ক ক্যারাম টুর্নামেন্টে মিক্সড ডাবলস-এ বাংলাদেশ দল ভারতকে হারিয়ে স্বর্ণ জয় করে।[১]
ক্রিকেট
প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেট খেলায় সম্পৃক্ত করতে ২০১৩ সালে আব্দুস সালাম বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড (বিসিএপিসি) প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার অধীনে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দল তাজমহল ট্রফি (২০১৪) সহ বেশ কয়েকটি ত্রিদেশীয় সিরিজে জয়লাভ করে।[১৬]
প্যারালিম্পিক
আব্দুস সালাম ২০১৯ সালের ২৯ মে থেকে ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।[১৭]
প্রকাশনা
আব্দুস সালাম নয়টি বই রচনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
এছাড়া বিভিন্ন জার্নালে তার প্রায় ৪০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন থাকাকালীন তিনি উক্ত অনুষদ থেকে প্রকাশিত "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়" পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন।[৩] এছাড়া, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত জ্ঞানকোষ– বাংলাপিডিয়ার ১৪৫০ জন লেখকের মধ্যে তিনি একজন।[৪]
পুরস্কার
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ গ Pratidin, Bangladesh (২০২২-০৫-১১)। "জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেলেন ইবি উপাচার্য"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১২।
- ↑ ক খ জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেলেন ৮৫ জন, যুগান্তর, ১১ মে ২০২২
- ↑ ক খ "ইবির নতুন ভিসি শেখ আব্দুস সালাম"। Dhakatimes। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১।
- ↑ ক খ "লেখকবৃন্দ"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১।
- ↑ "ইবির নতুন ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম"। দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১।
- ↑ "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য শেখ আব্দুস সালাম"। জাগো নিউজ। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১।
- ↑ "ইবির নতুন উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালাম"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০২০-১০-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১।
- ↑ ক খ "কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আব্দুস সালাম"। বাংলা ট্রিবিউন। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০। ২০২০-১০-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১।
- ↑ "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক সালাম"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য ড. আব্দুস সালাম"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১।
- ↑ "'আমি এখনো পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেইনিঃ ইবি ভিসি"। Daily Sokaler Somoy (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ "তিন দফা দাবিতে ইবি উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও"। banglanews24.com। ২০২৪-০৭-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগ"। প্রথম আলো। ১০ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর, সম্পাদকগণ (২০১২)। "ক্যারম"। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "অধ্যাপক ড. শেখ সালাম নিভৃতচারী ক্রীড়া সংগঠক"। দৈনিক জনকন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১।
- ↑ রনি, আহসান (২২ এপ্রিল ২০১৫)। "তাদের ভিন্নধর্মী যুদ্ধ"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "বিকেএসপিতে হকি ক্যাম্প|প্যারালিম্পিকের নতুন কমিটি"। দৈনিক যুগান্তর। ২০১৯-০৬-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১।
বহিঃসংযোগ