শামীম সিকদার |
---|
|
জন্ম | (1952-08-22) ২২ আগস্ট ১৯৫২ (বয়স ৭২)
চিংগাশপুর গ্রাম, মহাস্থানগড়, বগুড়া |
---|
মৃত্যু | ২১ মার্চ ২০২৩(2023-03-21) (বয়স ৭০)
|
---|
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
---|
শিক্ষা | বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, স্যার জন কাস স্কুল, লন্ডন |
---|
পরিচিতির কারণ | ভাস্কর |
---|
উল্লেখযোগ্য কর্ম | বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (১৯৭৪)
স্বোপার্জিত স্বাধীনতা, ছাত্র ও শিক্ষক কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (২৫ মার্চ ১৯৮৮)
স্বামী বিবেকানন্দ, জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৪) |
---|
আত্মীয় | আবদুর রাজ্জাক সিকদার (বাবা)
বাদশা আলম সিকদার (ভাই)
সিরাজুল হক সিকদার (ভাই) |
---|
পুরস্কার | একুশে পদক |
---|
শামীম সিকদার (জন্ম: ২২ অক্টোবর ১৯৫২[১][২]-২১ মার্চ ২০২৩[৩][৪]) একজন বাংলাদেশী ভাস্কর।[৫] তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন। তিনি সিমেন্ট, ব্রোঞ্জ, কাঠ, প্লাস্টার অব প্যারিস, কাদা, কাগজ, স্টিল ও গ্লাস ফাইবার মাধ্যমে কাজ করেন। প্রখ্যাত কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা সিরাজ সিকদার তার আপন বড় ভাই।
শিক্ষা জীবন
শামীম সিকদার ৩ বছরের একটি কোর্স সম্পন্ন করেন ভাস্কর্যের ওপরে ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত। এই কোর্সটির শিক্ষক ছিলেন মিস্টার সিভিস্কি যিনি একজন বিখ্যাত ফরাসি ভাস্কর। লন্ডনের স্যার জন স্কুল অব কাস থেকে তিনি একটি সনদ অর্জন করেন ১৯৭৬ সালে। ১৯৯০ সালে চীনে মিস্টার লি ডুলি নামের একজন বিখ্যাত ভাস্করের সাথে কাজ করেন এক বছরের মতো।[৬]
কর্মজীবন
শামীম সিকদার ১৯৮০ সালে শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন । ১৯৮৬ সালে সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব লাভ করেন। সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পান ১৯৯৩ সালে। এরপর ১৯৯৯ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।[৭] ভাস্কর শামীম সিকদার চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন। ৮ বছর আগে তিনি ইংল্যান্ড চলে যান।[৮]
বিখ্যাত কর্ম
১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত স্বোপার্জিত স্বাধীনতা শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। তার সহকারী ছিলেন শিল্পী হিমাংশু রায়। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫শে মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। [৯]স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ১৯৯৪ সালে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে অবস্থিত। ২০০০ সালে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য উদ্যানে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ইস্কাটনে অবস্থিত জাতীয় ভাস্কর্য গ্যালারিতে নির্মাণ করেন তিনি যেখানে আছে বিশ্বের অন্যান্য ব্যক্তিদের ভাস্কর্য , বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু ও ভয়ংকর রাজাকারদের ভাস্কর্য। জাতীয় ভাস্কর্য গ্যালারির প্রাথমিক কাজ শেষ হওয়ার পর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি খুলে দেওয়া হয়েছিল দর্শনার্থীদের জন্য। শুরুতে সকাল-সন্ধ্যা সবার জন্য খোলা থাকত। পরে নানা কারণে এটা বন্ধ হয়ে যায়। এখন দিন-রাতই দরজা বন্ধ থাকে। তবে আগ্রহীরা গ্যালারির বাঁ পাশের দরজায় নক করলে ঢুকতে দেওয়া হয়।[১০]
'স্ট্রাগলিং ফোর্স' ১৯৮২ সালে নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। 'একটি মধুর স্বপ্ন' ভাস্কর্যটি চারুকলা ইনসস্টিটিউটে রাখা আছে যা ১৯৮৩ সালে নির্মিত। আশা ও উদ্দীপনার একটি পাখি নামের ভাস্কর্যটি ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত মাদার তেরেসা চ্যারিটি হাসপাতালে স্থাপিত হয়েছে ১৯৯৪ সালে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তার নির্মিত ভাস্কর্য আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনোয়ার পাশায় তার নির্মিত অনেক ভাস্কর্য আছে।[৭]
তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কর্ম তালিকা করলে দাঁড়ায়ঃ
- ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতির জনকের ভাস্কর্য
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসিতে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হলে স্বামী বিবেকানন্দ
- স্ট্রাগলিং ফোর্স
- চারুকলা ইনসস্টিটিউটে একটি মধুর স্বপ্ন
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে সলিমুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল আর বুয়েট সংলগ্ন সড়ক দ্বীপে 'স্বাধীনতা সংগ্রাম'[১১]
প্রদর্শনী
১৯৭৫ সালে চারুকলা ইনন্সটিটিউটে শামীম সিকদারের একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।১৯৭৬ সালে লন্ডনের কমনওয়েলথ ইনস্টিটিউটে, ১৯৮২ সালে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে এবং ঐ বছরই শিল্পকলা একাডেমিতে তার ভাস্কর্যের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও তার অনেক একক প্রদর্শনী হয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক শিল্প গ্যালারিতে। তার ভাস্কর্যের দলগত প্রদর্শনী হয়েছে বিভিন্ন স্থানে নানা সময়। [৭]
প্রকাশিত গ্রন্থ
- ইনার ট্রুথ অব স্কাল্পচারঃ আ বুক অন স্কাল্পচার[১২]
- স্কালপচারকামিং ফ্রম হেভেন (২০০০)
- কনটেম্পোরারি আর্ট সিরিজ অব বাংলাদেশ [১৩]
ব্যক্তিগত জীবন
শামীম সিকদারের স্বামীর নাম জাকারিয়া চৌধুরী যিনি একজন কবি । তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তাদের নাম সুইটি ও শান্তি। তিনি ভাস্কর্যের পাশাপাশি ছবি আঁকা, জুডো, কারাতে, শ্যুটিং, বাগান করা ও গাড়ি চালাতে পারতেন। শামীম সিকদার কবিতা, সংগীত ও নাটকের ব্যাপারে আগ্রহ বোধ করেন। তিনি ইংল্যান্ড, ইতালি এবং চীন সফর করেছেন বিভিন্ন সময়।[৭]
সম্মাননা
ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টস পুরস্কার অর্জন করেন ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭৩ এবং ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৩ সালে অর্জন করেন সিলভার জুবলি অ্যাডওয়ার্ড অব ফাইন আর্ট পুরস্কার । ১৯৭৪ সালে ভাস্কর্যের ওপর প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার জিতে নেন। ২০০০ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
মৃত্যু
২১ মার্চ ২০২৩ এ বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।[১৪]
চিত্রশালা
-
স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্য, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
-
স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
-
স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ