শাওমি করপোরেশন (চীনা: 小米) লি জুন কর্তৃক ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি চীনা ইলেকট্রনিকস কোম্পানি, যার সদরদপ্তর চীনের বেইজিঙে অবস্থিত। শাওমি স্মার্টফোন, মোবাইল অ্যাপলিকেশন, ল্যাপটপ, ব্যাগ, ট্রিমার, ইয়ারফোন, মি টেলিভিশন, জুতো, স্বাস্থ্য ব্যান্ড এবং অন্য অনেক পণ্যে বিনিয়োগ করে। [২] ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ তালিকায় ৪৬৮তম অবস্থানে আসা সবচেয়ে কনিষ্ঠ কোম্পানি শাওমি। [৩]
শাওমি এর প্রথম স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ে আগস্ট ২০১১ সালে এবং ২০১৪ এর মধ্যে অতিদ্রুত বাজার দখলের মাধ্যমে এটি চীনের সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন কোম্পানিতে পরিণত হয়। ২০১৮ এর দ্বিতীয় অংশে শাওমি এর সবচেয়ে বড় দুটো বাজার চীন এবং ভারতে এর অবস্থানের জন্য হয়ে উঠে পৃথিবীর চতুর্থ সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক।[৪] পরবর্তীতে শাওমি আরও অনেক ভোক্তা ইলেকট্রনিকস পণ্য উন্নয়ন করে, যার মধ্যে রয়েছে স্মার্ট হোম যন্ত্র সহ বিভিন্ন ইন্টারনেট অব থিংস পণ্য।
চীন, ভারত, মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়-ফিলিপিন-দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে সব মিলিয়ে শাওমির প্রায় ১৬,০০০-এরও বেশি কর্মী রয়েছে। শাওমি পৃথিবীর চতুর্থ সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি উদ্যোগ, যার মোট মূল্য রয়েছে $৪৬ বিলিয়নেরও বেশি।
শাওমি ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে
বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা শুরু করে। ইতোমধ্যেই ব্র্যান্ডটি দেশের বাজারে বিভিন্ন মডেলের স্মার্টফোন এনেছে।
ইতিহাস
শাওমি ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল আটজন সহযোগীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলো। প্রথম ধাপের অর্থায়নে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তেমাসেক হোল্ডিংস, সিঙ্গাপুরের সরকারি মালিকানাধীন একটি বিনিয়োগ কোম্পানী, চীনা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড আইডিজি(IDG) ক্যাপিটাল, কিইমিং ভেঞ্চার পার্টনার্স [৫] এবং মোবাইল প্রসেসর ডেভলপার কোয়ালকমকে অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট তারিখে, শাওমি আনুষ্ঠানিকভাবে এর প্রথম অ্যান্ড্রয়েড-ভিত্তিক ফার্মওয়্যার এমআই ইউআই চালু করে।[৬] ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারজাত শুরু করে শাওমি।[৭]
ব্যবসার পলিসি
শাওমি স্মার্টফোন বিক্রির ক্ষেত্রে, শাওমি অন্যান্য স্মার্টফোন নির্মাতা যেমন- স্যামসাং এবং অ্যাপল থেকে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। লেই জুন, শাওমির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) উল্লেখ করেন যে, কোম্পানিটি ফোনের দাম প্রায় তৈরি খরচের সমানই রাখে,[৮] যদিও এ ক্ষেত্রে ফোনের গুণগত মান এবং কর্মক্ষমতা অন্যান্য প্রিমিয়াম স্মার্টফোনের তুলনায় কোনও অংশে কম নয়। কোম্পানিটি এছাড়াও ফোন সংক্রান্ত অন্যান্য পেরিফেরাল ডিভাইস, স্মার্ট হোম পণ্য, অ্যাপস, অনলাইন ভিডিও এবং থিম ইত্যাদি বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করে থাকে।
প্রস্তুতকেন্দ্র
এর মূল প্রস্তুতকেন্দ্রগুলো চীনে অবস্থিত হলেও , এখন ভারতে মোবাইলের কারখানা করেছে। নয়ডায় , চিত্তুর জেলা-র শ্রী সিটিতে ও কাঞ্চীপুরম জেলা-র শ্রীপেরুম্বুদুরে স্মার্টফোন ও পাওয়ার ব্যাংক প্রস্তুতকেন্দ্র রয়েছে। [৯]
পণ্যসমূহ
শাওমির বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করে, তবে এর মধ্যে মোবাইল ফোন, টিভি এবং রাউটার উল্লেখযোগ্য।[১০]
ল্যাপটপ
মি নোটবুক এয়ার
শাওমি তাদের প্রথম আল্ট্রাবুক মি নোটবুক এয়ার এর মাধ্যমে চীনের কম্পিউটারের বাজারে প্রবেশ করে।
মোবাইল ফোনসমূহ
এমআই সিরিজ
২০১৫ সালের জানুয়ারীর আগে পর্যন্ত শাওমি এর প্রধান মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলো ছিলো শাওমি এম আই সিরিজ। শাওমি এম আই ৪ মার্চ, মে এবং যথাক্রমে ২০১৪ সালের মার্চ, মে এবং জুলাইতে চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতে চালু করা হয়।[১১] এই সিরিজের সর্বশেষ ফোন এমআই ১১ আলট্রা
এমআই নোট
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে চীন এর বেইজিং এ, শাওমি আইফোন ৬ এর প্রায় অর্ধেক মূল্যে এম আই নোট ও এম আই নোট প্রো বাজারে আনে।[১২]
রেডমি সিরিজ
শাওমি রেডমি সিরিজ এমআই সিরিজের চেয়ে কম মূল্যের ফোন।[১৩] বাজেটবান্ধব রেডমি সিরিজের সবথেকে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি। এই সিরিজের অধিকাংশ মডেলেই ৩০০০ বা তদূর্ধ্ব মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে।
এমআই প্যাড
শাওমির প্রথম ট্যাবলেট পিসি হচ্ছে শাওমি এমআই প্যাড, এটি ২০১৪ সালে বাজারে আসে।[১৪] এরপর আসে এমআই প্যাড ২, এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন এমআই প্যাড ৩
মিআইইউআই (অপারেটিং সিস্টেম)
মিইইউআই(অপারেটিং সিস্টেম) হচ্ছে গুগোল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের উপরে ভিত্তি করে শাওমি কর্তৃক উন্নীত অপারেটিং সিস্টেম। এটি শাওমির শুরুর দিকের একটি পণ্য। বর্তমানে এর ১১ সংস্করণ মিআইইউআই ১২ তে উন্মোচিত হয়েছে।[১৫]
এমআই ওয়াই-ফাই (নেটওয়ার্ক রাউটার)
শাওমির এমআইওয়াই-ফাই(MiWiFi) সিরিজের রাউটার প্রথম বাজারে আসে ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল।
মি টিভি (স্মার্ট টিভি লাইন)
এমআই সিরিজের স্মার্ট টিভি ২০১৩ সাল হতে বাজারজাত করা শুরু করে শাওমি। এটি অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলে।
শাওমির আরও অন্যান্য পণ্য হচ্ছেঃ
এমআইবক্স (সেট-টপ বক্স)
এমআই ক্লাউড (ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস)
এমআইটক(ম্যাসেজিং সার্ভিস)
এমআই পাওয়ার ব্যাংক (এক্সটার্নাল ব্যাটারি)
এমআই ব্যান্ড (ফিটনেস মনিটর এন্ড স্লিপ ট্র্যাকার)
স্মার্ট হোম পণ্য
ব্লাড প্রেসার মনিটর
এয়ার পিউরিফাইয়ার
ই অ্যাকশন ক্যামেরা
এম আই স্মার্ট স্কেল
এম আই ওয়াটার পিউরিফাইয়ার
স্মার্ট হোম কিট
নাইনবুট মিনি
স্মার্ট রাইস কুকার
স্বীকৃতি
এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ অনুসারে শাওমি ২০১৫ সালের ৫০টি অন্যতম স্মার্ট কোম্পানির তালিকায় ২য় স্থানে রয়েছে। এছাড়াও ২০১৪ সালের সবচেয়ে ইনোভেটিভ কোম্পানির তালিকায় শাওমি ৩য় স্থানে রয়েছে, “বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল বাজারে স্মার্টফোন ব্যবসার মডেল উপস্থাপনের জন্য,”
যদিও কোনো কোনো মন্তব্যকারীদের দ্বারা শাওমি এর উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেল বিদ্যমান স্মার্টফোন শিল্পে একটি সংহতিনাশক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গিনেস বুক রেকর্ড কৃতীত্ব
শাওমি ২০১৫ এর ৬ এপ্রিল এমআই ফ্যান ফেস্টিভ্যাল এর মাধ্যমে এর ৫ম জন্মদিন উদ্যাপন করে। যেখানে অফার এবং ডিসকাউন্ট সুবিধাসহ একটি অনলাইন শপিং ডে পালন করা হয়। এক্ষেত্রে শাওমি তার কাস্টমাদের জন্য সরাসরি পরিচালিত ওয়েবসাইট এমআই ডট কম এর মাধ্যমে ২১,১২,০১০টি হ্যান্ডসেট বিক্রি করে, যা "২৪ ঘণ্টার মধ্যে একক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সবচেয়ে বেশি মোবাইল ফোন বিক্রির" বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টির মাধ্যমে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে স্থান করে নেয়।
তথ্যসূত্র
↑ কখগঘঙচ"Annual Results"(পিডিএফ)। ২৩ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২২।
↑小米47寸电视真机照曝光 (চীনা ভাষায়)। MyDrivers.com। ১৭ জুন ২০১৩। ২৫ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৯।