লেখকের বন্ধ্যাত্ব (রাইটার্স ব্লক বা লেখকের বাধা নামেও পরিচিত) মূলত লেখালেখির সাথে সম্পর্কিত এক ধরনের অবস্থা, যেখানে একজন লেখক নতুন সাহিত্য সৃজনে অক্ষম হন বা সৃজনশীলতায় ধীরগতি অনুভব করেন। সৃজনশীলতার এই অবরুদ্ধতা কোনো প্রতিশ্রুতিজনিত সমস্যা বা লেখালেখির দক্ষতার অভাবের ফল নয়।[১] অবস্থাটি লেখার মৌলিক ধারণা সৃজনে অসুবিধা থেকে শুরু করে বছরের পর বছর ধরে একটি শিল্পকর্ম তৈরি না করতে পারা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। শুধুমাত্র লেখালেখি বিহীন সময় অতিবাহনের মাধ্যমে লেখকের বন্ধ্যাত্ব পরিমাপ করা হয় না। হাতে থাকা কাজে উৎপাদনশীলতাহীনভাবে লেখকের কাল ক্ষেপণ দেখেও এটা পরিমাপ করা হয়।[১]
ইতিহাস
ইতিহাস জুড়েই লেখকের বন্ধ্যাত্ব একটি নথিভুক্ত সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।[২] এই দুর্দশার সাথে লড়াই করেছেন এমন পেশাদার ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন এফ. স্কট ফিট্জেরাল্ড[৩], জোসেফ মিচেল,[৪] কমিক স্ট্রিপ কার্টুনিস্ট চার্লস এম শ্যুলজ,[৫] সুরকার সের্গেই রাচমানিনোফ,[৬] এবং গীতিকার অ্যাডেল।[৭]প্রথম দিকের রোমান্টিক লেখকরা বিষয়টি সম্পর্কে খুব বেশি বুঝতে পারেননি; তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন যে লেখকের বন্ধ্যাত্ব এমন এক শক্তির কারণে ঘটে যে শক্তিটি চায় না যে তারা আর লিখুক। ফরাসি প্রতীকীবাদী যারা তখন বিখ্যাত কবি হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন এবং ভাব জ্ঞাপনের ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না বলে কর্মজীবনের শুরুর দিকেই লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছিলেন তাদের সময়ে এই ধারণা কিছুটা বেশি স্বীকৃত হয়েছিল। কিছু একটা লেখককে অবরুদ্ধ করে ফেলবে আর তাদের ভেতর আবেগীয় অস্থিরতার তৈরি করবে বলে গ্রেট আমেরিকান নভেলের যুগে অনেকটা স্বীকার করেই নেওয়া হয়েছিল।[৮] ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে এই বিষয়ে গবেষণা করা হয়েছিল। এই সময়ে গবেষকরা প্রক্রিয়া এবং প্রক্রিয়া পরবর্তী আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন আর এই কারণে লেখকের কর্ম সাধন প্রণালীর প্রতি তারা বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে অস্ট্রিয়ার মনোবিশ্লেষক অ্যাডমন্ড বার্গলার এই অবস্থাকে প্রথম বর্ণনা করেন।[৯] তার বর্ণনাতে মৌখিক মর্ষকাম বা আত্মনিগ্রহ, বোতলে সন্তান লালনকারী মা এবং অস্থির ও নিভৃত প্রেম জীবনকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[৮] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মনোরোগবিদ্যার ক্রমবর্ধমান খ্যাতি শব্দটিকে আরও বেশি স্বীকৃতি এনে দেয়।[১০] তবে, বার্গলারের বর্ণনা দেওয়ার কয়েক বছর আগে অনেক মহান লেখকই হয়তো লেখকের বন্ধ্যাত্বে ভুগছিলেন। যেমনটা হয়েছিল হারমান মেলভিলের বেলায়; তিনি মোবি ডিক লেখার কয়েক বছর পরে উপন্যাস লেখা ছেড়ে দিয়েছিলেন।[১১]
কারণ
লেখকের বন্ধ্যাত্বের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। একজন লেখকের কাজের মধ্যেই কিছু সৃজনশীলতা-বিষয়ক সমস্যা তৈরি হতে পারে। একজন লেখকের অনুপ্রেরণা কমে যেতে পারে, অথবা অন্যান্য ঘটনা দ্বারা তিনি ভ্রষ্ট হয়ে যেতে পারেন। জর্জ অরওয়েলের উপন্যাস কিপ দ্য অ্যাসপিডিস্ট্রা ফ্লাইং-এ এরকম একটি কাল্পনিক উদাহরণ পাওয়া যায়। সেখানে নায়ক গর্ডন কমস্টক লন্ডনের একটি দিন বর্ণনা করে একটি মহাকাব্যের কবিতা সম্পূর্ণ করার জন্য বৃথা চেষ্টা করে যান: "এটি তার জন্য খুব বড় ছিল, এটাই ছিল সত্য। এটার কখনো উন্নতি হয়নি, বরং টুকরো টুকরো হয়ে যায়।"[১২]
মাইক রোজ বলেছেন যে লেখকের বন্ধ্যাত্বের পিছে লেখকের অতীতের লেখা, সেই সম্পর্কিত নিয়ম এবং বিধিনিষেধের হাত থাকতে পারে। লেখকরা যখন বুঝতে পারেন বা অনুমান করেন যে পাঠকরা লেখা পড়ে কী উপলব্ধি করবেন, তখন তাদের লেখার মধ্যে দ্বিধাবোধ প্রবেশ করতে পারে।[১৩]
জেমস অ্যাডামস তার বই কনসেপচুয়াল ব্লকবাস্টিং-এ উল্লেখ করেছেন, এ ধরনের বাধার বিভিন্ন কারণের মধ্যে রয়েছে ঝুঁকি নেওয়ার ভয়, লেখার আগের সময়ে "বিশৃঙ্খলা", লেখার ভাবনা তৈরি ও তার বিচার করা, নতুন ভাবনা তৈরির ব্যাপারে অক্ষমতা, কিংবা অনুপ্রেরণার অভাব।[১৪]