লি খছিয়াং |
---|
|
২০১৯ সালে লি খছিয়াং |
|
|
দায়িত্বাধীন |
অধিকৃত কার্যালয় ১৫ই মার্চ, ২০১৩ |
রাষ্ট্রপতি | শি চিনফিং |
---|
উপ-প্রিমিয়ার | |
---|
উত্তরসূরী | লি ছিয়াং |
---|
পূর্বসূরী | ওয়েন চিয়াপাও |
---|
|
কাজের মেয়াদ 17 March 2008 – 15 March 2013 |
প্রিমিয়ার | ওয়েন চিয়াপাও |
---|
পূর্বসূরী | উ ই (ভারপ্রাপ্ত) |
---|
উত্তরসূরী | চাং কাওলি |
---|
|
কাজের মেয়াদ 13 December 2004 – 29 October 2007 |
ডেপুটি | Zhang Wenyue (Governor) |
---|
পূর্বসূরী | Wen Shizhen |
---|
উত্তরসূরী | Zhang Wenyue |
---|
|
কাজের মেয়াদ 30 December 2002 – 13 December 2004 |
ডেপুটি | Li Chengyu (Governor) |
---|
পূর্বসূরী | Chen Kuiyuan |
---|
উত্তরসূরী | Xu Guangchun |
---|
|
কাজের মেয়াদ 10 May 1993 – 23 June 1998 |
পূর্বসূরী | Song Defu |
---|
উত্তরসূরী | Zhou Qiang |
---|
|
|
জন্ম | (1955-07-01) ১ জুলাই ১৯৫৫ (বয়স ৬৯) Hefei, Anhui, People's Republic of China |
---|
রাজনৈতিক দল | Chinese Communist Party (1974–present) |
---|
দাম্পত্য সঙ্গী | Cheng Hong |
---|
সন্তান | 1 |
---|
বাসস্থান | Zhongnanhai |
---|
শিক্ষা | Hefei No. 8 High School |
---|
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | Peking University (LLB, PhD) |
---|
মন্ত্রীসভা | Li Keqiang Government |
---|
পুরস্কার | Nishan-e-Pakistan |
---|
ওয়েবসাইট | english.www.gov.cn/premier |
---|
Central institution membership
- 2007–: 17th, 18th Politburo Standing Committee
- 2007–: 17th, 18th Politburo
- 1997–: Full member, 15th, 16th, 17th, 18th Central Committee
- 1993–1998: Delegate, 8th National People's Congress
|
লি খছিয়াং (জন্ম: ১ জুলাই, ১৯৫৫) একজন চীনা রাজনীতিবিদ, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়না (সিপিসি)-র পলিটব্যুরো কার্যকরী কমিটির সপ্তম শীর্ষ সদস্য। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও’র শীর্ষ সহযোগী হিসেবে লি খছিয়াংয়ের দায়িত্বসমূহের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মূল্য নিয়ন্ত্রণ, অর্থায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও ব্যাষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা।
লি খছিয়াং কমিউনিস্ট ইয়ুথ লীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করে ক্রমিক পদোন্নতির মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত হেনান প্রদেশের গভর্নর ও প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি লিয়াওনিং প্রদেশের দলীয় প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন, যার মধ্য দিয়ে তিনি প্রদেশটির রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকাণ্ডের মুখ্য নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
লি খছিয়াংকে চীনের প্রধানমন্ত্রী ও সমতূল্য সরকারি এবং রাজনৈতিক পদসমূহে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াপাওয়ের একজন উত্তরসূরী হিসেবে ধারণা করা হয়।
জীবনী
প্রাথমিক জীবন
লি খছিয়াং ১৯৫৫ সালের ১ জুলাই তারিখে আনহুয়েই প্রদেশের তিংইউয়েন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আনহুই প্রদেশের একজন স্থানীয় কর্মকর্তা ছিলেন। লি খছিয়াং ১৯৭৪ সালে স্কুল শিক্ষা শেষ করেন এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ে বিশেষ গ্রাম কর্মসূচীতে অবদান রাখতে ঐ প্রদেশের ফেংইয়াং জেলায় প্রেরিত হন। এই কর্মসূচীতে যোগদানের মধ্য দিয়ে লি খছিয়াং ঐ অঞ্চল থেকে কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়নাতে যোগদান করেন এবং অঞ্চলটির উৎপাদন বিষয়ক দলপ্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন। দায়িত্ব পালনকালে লি খছিয়াং মাও সেতুংয়ের চিন্তাধারার উপর বিশেষ পারদর্শীতার স্বীকৃতিস্বরূপ একটি পুরস্কার লাভ করেন।[১]
তরুণ অবস্থায় লি খছিয়াং স্থানীয় জেলা পর্যায়ের রাজনীতিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে তার বাবার দেয়া প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন ও আইন বিষয়ে পড়ার উদ্দেশ্যে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি কমিউনিস্ট ইয়ুথ লীগের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্পাদক পদ লাভ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি কমিউন্সট ইয়ুথ লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ঘোষিত হন এবং সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে প্রবেশ করেন। এখানে বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি ও সিপিসির মহাসচিব হু জিনতাও’র সাথে তার ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ হয়।
১৯৯৩ সালে লি খছিয়াং কমিউনিস্ট ইয়ুথ লীগের মহাসচিব মনোনীত হন এবং ছয় বছর এই দায়িত্ব পালন করেন।
প্রাদেশিক পর্যায়ের দায়িত্বসমূহ
১৯৯৮ সালের জুনে যখন লি খছিয়াংকে হনান প্রদেশের গভর্নর মনোনীত করা হয়, তখন তার বয়স ছিল ৪৩। তিনি চীনের জনবহুলতম প্রদেশটির ইতিহাসের কনিষ্ঠতম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। হনানে বিদ্যমান বিভিন্ন জটিলতার কথা মাথায় রেখে লি খছিয়াং তার পরিবারকে বেইজিংয়ে রেখে চেংচৌতে (হনানের রাজধানী) একা যান। লি খছিয়াংয়ের সাথে কাজ করেছেন হনান প্রাদেশিক সরকারের এমন কর্মকর্তাদের মতে, গভর্নর থাকাকালীন খছিয়াং সরকারী কাজের সাথে জড়িত নয় এমন কোন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান বা বড় ভোজসভায় যোগ দেয়া থেকে বিরত ছিলেন।[২] গভর্নর হিসেবে তার দুর্ভাগ্যের বিষয়টিও আলোচনায় আসে কারণ ঐ পাঁচ বছর হেনানে বড় ধরনের তিনটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।.[৩]
হনানের গভর্নর হিসেবে খছিয়াং স্পষ্টবাদীতার জন্য পরিচিত হন এবং মধ্য চীনের নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রদেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি দারিদ্র্যক্লিষ্ট একাধিক অনুন্নত অঞ্চল চিহ্নিত করে সেখানে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালান এবং সেগুলোকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিণত করেন। লক্ষ্য প্রসঙ্গে অস্পষ্ট বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ না করে খছিয়াং সুনির্দ্দিষ্ট উন্নয়নমূলক কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেন, যার বদৌলতে ২০০৪ সালে জিডিপির তালিকায় হনান চীনের প্রদেশগুলোর মধ্যে নব্বইয়ের দশকের ২৮তম অবস্থান থেকে ১৮তম অবস্থানে উঠে আসে।
বলা হয়ে থাকে, হনানের গভর্নর হিসেবে লি খছিয়াং জনবহুল প্রদেশটিতে এইডসের বিস্তার রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
২০০৪ সালের ডিসেম্বরে লি খছিয়াংয়ের দায়িত্ব বদল করে তাকে লিয়াওনিং প্রদেশের সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে আসা হয়। লিয়াওনিংয়ে লি খছিয়াং প্রশংসিত ‘ফাইভ পয়েন্টস টু ওয়ান লাইন’ প্রকল্প গ্রহণ করে তার বাস্তবায়ন শুরু করেন, যার আওতায় ডালিয়ান ও ড্যাংডং-সহ কয়েকটি বন্দরকে একটি কার্যকরী সংযোগের মধ্যে আনা হয়।
জাতীয় রাজনীতি
আগেই ধারণা করা হয়েছিল ১৭তম পার্টি কংগ্রেসে লি খছিয়াং চীনের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান লাভ করবেন। ২০০৭ সালের অক্টোবরে এই ধারণা সত্যি প্রমাণিত হয় এবং লি খছিয়াং সিপিসির পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। ঝ্যাং ওয়েনউয়ে হেনানের গভর্নর হিসেবে লি খছিয়াংয়ের স্থলাভিষিক্ত হন।
লি খছিয়াংকে সিপিসির আগামী মহাসচিব হিসেবে হু চিন থাওয়ের একজন সম্ভাব্য উত্তরসূরী হিসেবে ধারণা করা হয়। সরকারী পদে তাকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াবাওর সম্ভাব্য উত্তরসূরী হিসেবে ধারণা করা হয়। ২০০৮ সালের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে জ্যেষ্ঠ উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হওয়ার ফলে লি খছিয়াংয়ের দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি জোরদার হয়। বলা হয়ে থাকে দ্বিতীয় এই পদোন্নতিটি ইতোমধ্যেই পেয়ে যাওয়াতে সিপিসির মহাসচিব পদে লি খছিয়াংয়ের চেয়ে অপর সিপিসি নেতা শি চিনফিং, যিনি বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উপ-রাষ্ট্রপতি, তার বেশি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।[৩]
পলিটব্যুরোতে অন্তর্ভুক্তির পর থেকে লি খছিয়াং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সরকারি দায়িত্ব পেতে শুরু করেন, যেগুলোকে তার সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীত্বের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ধারণা করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে লি খছিয়াংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ডাভোস, সুইজারল্যান্ডে ২০১০ বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে তার চীনের প্রতিনিধিত্ব, যেখানে তিনি সারা বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নেতৃবৃন্দের সামনে চীনের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক পরিকিল্পনা তুলে ধরেন। এই দায়িত্বটি লি খছিয়াংয়ের অ্যাসিড টেস্ট হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।[৪] তিনি বিশেষ ভাবে স্বয়ম্ভর উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব জ্বালানী, আয়ের ব্যবধান দূরীকরণ এবং কৌশলগত শিল্পসমূহের আধুনিকীকরণ বিষয়ে চীনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন। তিনি শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনের অঙ্গিকার ও নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রতি চীনের মনোযোগের উপর গুরুত্ব আরোপের পাশাপাশি সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক করেন।[৪] তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক যোগাযোগ দ্বিপক্ষীয়ও হতে পারে, বহুপক্ষীয়ও হতে পারে”। তিনি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারের তাগিদ দিয়ে বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিশ্বের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির যথাযথ প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন।[৫]
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে লি খছিয়াং সিপিসির মন্ত্রী ও প্রাদেশিক পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে চীনের অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন ও ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য স্থাপনের উপর একটি ভাষণ দেন। এই ভাষণটি কিছু সম্পাদনার মাধ্যমে সে বছরের জুনে কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়নার তাত্ত্বিক প্রকাশনা কিউশিতে স্থান করে নেয়। ভাষণটিতে লি খছিয়াং বলেন, চীন বর্তমানে অর্থনৈতিক ভাবে একটি ঐতিহাসিক পর্যায়ে রয়েছে; ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধির বর্তমান সন্তোষজনক হার বজায় রাখতে হলে এখনই দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোয় গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। লি খছিয়াং বিশেষ করে পণ্যের অভ্যন্তরীণ ভোগ বৃদ্ধির উপর জোর দেন এবং বলেন, এই প্রক্রিয়ার জন্য বিভিন্ন অঞ্চলের যথাযথ নগরায়ন অত্যন্ত জরুরী।[৬] তিনি বলেন, চীনকে একটি মধ্যবিত্ত-কেন্দ্রীক অর্থনীতি গড়ে তোলার উপর জোর দিতে হবে এবং এর সম্পদ বণ্টন পদ্ধতি এমন হতে হবে যাতে মধ্যবিত্ত চীনারাই দেশের অধিকাংশ অর্থের মালিক হয়।[৭]
লি খছিয়াং খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানী নিরাপত্তা, ব্যয়সীমাবদ্ধ গৃহায়ণ ও স্বাস্থ্য খাতের উপর গুরুত্ব আরোপের নীতি অবলম্বন করেন, এবং বলেন, এসবের পূর্বশর্ত হচ্ছে চীনের যথাযথ শিল্পায়ন, নগরায়ন ও কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ।[৮]
ব্যক্তিগত জীবন
লি খছিয়াং প্রফেসর চেং হঙ্গের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। প্রফেসর হং বেইজিঙ্গের ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অফ ইকনমিকস অ্যান্ড বিজনেস-এ শিক্ষকতা করেন। লি খছিয়াংয়ের শ্বশুর, অর্থাৎ চেং হঙ্গের পিতাও চীনের কমিউনিস্ট রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন এবং কমিউনিস্ট ইয়ুথ লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[৯]
বহিঃসংযোগ