লাল মুনিয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Amandava amandava) বা লাল মামুনিয়া বা রঙ টুনিEstrildidae (ইস্ট্রিল্ডিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত এক প্রজাতির ছোট চড়ুই আকৃতির পাখি। এটি ক্রান্তীয় এশিয়ার খোলা মাঠ এবং তৃণভূমিতে পাওয়া যায়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষদের রঙিন পালকের জন্য খাঁচা পাখি হিসেবে জনপ্রিয়। এটি বর্ষাকালে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রজনন করে। Amandava প্রজাতির নাম ভারতের গুজরাত প্রদেশের শহর আহমেদাবাদ-এর নামের অপভ্রংশ যেখান থেকে,এই পাখিপূর্বে পোষা ব্যবসায় রপ্তানি করা হত। অঞ্চল ভেদে এরা রাঙা মুনিয়া, আলতা মুনিয়া ও সোনামুনি নামে পরিচিত।[২]
বাসস্থান
লাল মুনিয়া প্রধানত সমতল সমভূমিতে, লম্বা ঘাস বা ফসল সঙ্গে জায়গায়, প্রায়ই পানির কাছাকাছি ঘাসবন, চাষের জমির আশপাশের গুল্ম-ঝোপঝাড়, আখখেত ইত্যাদি জায়গায় পাওয়া যায়। প্রজাতির চারটি উপপ্রজাতি আছে। এর মধ্যে Amandava প্রজাতিটি বাংলাদেশ,ভারত, শ্রীলঙ্কা,নেপাল ও পাকিস্তানে পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে এদের ঢাকা,সিলেট, রাজশাহী অঞ্চলে দেখা যায়।
বিবরণ
লাল মুনিয়া ছোট আকৃতির পাখি, দৈর্ঘ্য ১০ সেমি। প্রজনন মৌসুমে পুরুষটির গায়ের রঙ থাকে মূলত গাঢ় লাল। তবে চোখের পাশ, তলপেট ও লেজ কালো আর ডানা গাঢ় বাদামি রঙের হয়। সারা শরীরে বিশেষ করে বুক, ডানা আর পার্শ্বদেশে সাদা ফোঁটা থাকে। ছোট ত্রিভুজাকৃতির ঠোঁট সিঁদুরে লাল রঙের, পা ও পায়ের পাতা গোলাপি। প্রজনন মৌসুমের বাইরে পুরুষ পাখির মেয়ে পাখির সাথে অনেক সাদৃশ্য আছে। তখন এদের ঊর্ধ্বাঙ্গ নিষ্প্রভ বাদামি, পুচ্ছদেশ লাল ও নিম্নাঙ্গ ফ্যাকাশে সাদা বর্ণের হয়। তবে মেয়ে পাখিটি পুরুষটির চেয়ে অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল বর্ণের হয়, গাঁয়ে সাদা ফোটাও কম থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি অনেকটা হালকা হলদেটে বাদামি, লেজ কালচে, ঠোঁট হলদেটে, পা ও পায়ের পাতা গোলাপি। পাখিটির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে এদের ঠোঁটের রঙ পরিবর্তিত হয়।[৩] মে মাসে এই ঠোঁটের রঙ লাল হতে শুরু করে এবং নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে অন্ধকার হয়ে যায়। এরপর এপ্রিল মাসে ঠোঁট দ্রুত কালো হয়ে যায়।এদের মূল খাদ্য ধান-কাউন-তিল-সরষে-বিভিন্ন রকমের ঘাসের বীজ, ছোট ছোট পোকামাকড়সহ নানান রকম ডাল। ঝাঁক বেঁধে খুব দ্রুত ডানা ঝাপটে উড়ে যাওয়ার সময় সাধারণত উচ্চগ্রামে সিপ শব্দে ডাকে।
প্রজনন
মে থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে এদের প্রজনন সময়। এ সময় পুরুষ পাখি ঘাস ও নলের ডাঁটার উপরে বসে মেয়ে পাখিকে আকৃষ্ট করার জন্য গান গায়। পানির কাছে কাঁটা-ঝোপের নিচুতে ঘাস দিয়ে গোল বাসা বানায়। ৮ থেকে ১০টি ডিম দেয়। ডিমের রং সাদা। ১২ থেকে ১৬ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। আর ছানা ফোটার ১৯ থেকে ২৪ দিনে এরা বাসা থেকে উড়াল দেয়। দুজনে মিলে বাচ্চাদের লালন করে।[৪]