রিস্ট স্পিন হল ক্রিকেট খেলায় এক ধরনের বোলিং। এটিতে ক্রিকেটের কৌশল এবং হাতের নির্দিষ্ট চলন বোঝায়, যেটি ক্রিকেট বলকে একটি নির্দিষ্ট দিকে স্পিন করানোর সাথে জড়িত। অন্য স্পিনের কৌশল, যেটি সাধারণত বিপরীত দিকে বল স্পিন করতে ব্যবহৃত হয়, সেটি হল ফিঙ্গার স্পিন। হাতের পেছন থেকে বল ছেড়ে রিস্ট স্পিন বল করা হয়, যাতে বলটি কনিষ্ঠ আঙুলের উপর দিয়ে যায়। একজন ডানহাতি বোলার এই বল করলে, বোলারের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি বলকে একটি বামাবর্ত ঘূর্ণন দেয়। একজন বামহাতি রিস্ট স্পিনার বলকে ঘড়ির কাঁটার দিকে (দক্ষিণাবর্ত) ঘোরায়।
রিস্ট স্পিন নামটি সার্থক নাম নয়, কারণ বলের চরিত্রগত স্পিন তৈরির প্রক্রিয়াটিতে রিস্ট বা কব্জি গুরুত্বপূর্ণ নয়। রিস্ট স্পিন কৌশলে বলটিকে ছাড়ার সময় হাত সম্পূর্ণরূপে প্রোনেটেড অবস্থানে (যাতে হাতের তালু অধঃমুখী হয় বা ভেতরের দিকে থাকে) এবং আঙ্গুল বলের ভেতরের দিকে (ডানহাতি বোলারের জন্য বাম দিকে) থাকে। যদি এই প্রোনেটেড অবস্থানটি বল ছাড়ার সময় বজায় থাকে, আঙ্গুলগুলি স্বাভাবিকভাবেই বলের দিকটি সঙ্কুচিত করে এবং ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে স্পিন তৈরি করে। অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত লেগ স্পিনার বিল ও’রিলি এইভাবে লেগস্পিন বল করার জন্য বিখ্যাত।[১] দুটি অন্য উপায়ে বলের উপরে অতিরিক্ত স্পিন করানো যেতে পারে: বলটি ছাড়ার ঠিক আগে বাহুকে সুপিনেটেড অবস্থান (যাতে হাতের তালু ঊর্ধ্বমুখী হয় বা বাইরের দিকে থাকে) থেকে প্রোনেটেড অবস্থানে নিয়ে যাওয়া, এবং বল ছাড়ার মুহুর্তে কব্জিটির মোচড় বা প্রসার। দুটি কৌশলই স্পিনের প্রভাব বাড়িয়ে তোলে। একজন স্পিন বোলার যত ধীরে বল ছাড়ে, বলের ঘূর্ণির একই হার বজায় রাখতে তাকে আরও সক্রিয়ভাবে বলে স্পিন দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।[১]
যদিও কব্জি স্পিনের জৈব-যান্ত্রিক প্রক্রিয়া ডান এবং বাম হাতি বোলারদের জন্য একই, এই ধরনের বোলারদের প্রায়শই পৃথক বিভাগে রাখা হয়, কারণ ক্রিকেট পিচে বল পড়ার পর বলের স্পিন করার দিকটি পৃথক:
ডান হাতের রিস্ট স্পিন সাধারণত লেগ স্পিন নামে পরিচিত।
লেগ-স্পিন বল করার জন্য বলটিকে ধরতে, বল হাতের তালুতে রাখা হয় এবং বলের সেলাই (সিম) আঙুলের সাথে আড়াআড়ি ভাবে থাকে।[২] তর্জনী এবং মধ্যমা আঙুলদুটি ছড়িয়ে বলটিকে ধরা হয়, এবং অনামিকা ও কনিষ্ঠ আঙুলদুটি একসাথে বন্ধ হয়ে বলের পাশের দিকে থাকে।[৩] অনামিকার প্রথম বাঁকে বলের সিমটি ধরে রাখতে হবে। পাশে থাকা বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের অবস্থান বোলারের উপর নির্ভর করবে তবে সেটি বলে কোনও চাপ দেবেনা। বলটি করার সময় অনামিকা আঙুলটি বেশিরভাগ স্পিন প্রয়োগ করবে। বলটিকে ছাড়ার সময় কব্জিটি দ্রুত ডান থেকে বাম দিকে ঘুরে যাবে, এর ফলে বলে আরও স্পিন যুক্ত হবে। ফ্লাইট দেওয়ার জন্য বলকে ওপর থেকে ফেলা হয়। বল যখন ছাড়া হচ্ছে তখন ব্যাটসম্যান দেখবে হাতের তালুটি তার দিকে করা আছে।
গুগলি
গুগলি হল এক ধরনের স্পিন বলের প্রকার যেটি রিস্ট স্পিন বোলাররা করে। এর আবিষ্কারক বার্নার্ড বোসানকুয়েতের সম্মানে এটিকে মাঝেমধ্যে বোসি বলা হয়, উপাধি হিসাবে।
যখন একটি সাধারণ লেগ ব্রেক বল লেগের দিক থেকে অফ সাইডের দিকে ঘুরে যায়, অর্থাৎ ডানহাতি ব্যাটসম্যান থেকে দূরে সরে যায়, একটি গুগলি উল্টোদিকে স্পিন করে, অফের দিক থেকে লেগের দিকে অর্থাৎ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের দিকে (এবং এটি অফ ব্রেক বল থেকে আলাদা)। বোলার স্পিনের এই পরিবর্তনটি অর্জন করে সাধারন লেগ ব্রেক ব্রেক বল করার অবস্থান থেকে কব্জিটি খুব দ্রুত বাঁকিয়ে। এই বাঁকটি অর্জনের জন্য বল ছাড়ার আগে অগ্রবাহুর সর্বাধিক প্রোনেশন প্রয়োজন, পাশাপাশি চাই ভেতরের দিকে কাঁধের ঘূর্ণন: কনুইয়ের ডগা, যা বল করার সময় সাধারণত ডান হাতি বোলারের ডান দিকেই থাকে, সেটি ওপর দিকে উঠে যায়, এবং হাতের পিছনদিক, যা সাধারণত পিছনের দিকেই থাকে, সেটি ব্যাটসম্যানের সামনে চলে আসে।[৪] যখন বলটি হাত থেকে ছাড়া হয় (পাশের দিক থেকে কনিষ্ঠ আঙুলের উপর দিয়ে, যেমন একটি সাধারণ লেগ ব্রেকে হয়), এটি বলকে ঘড়ির কাঁটার দিকে (দক্ষিণাবর্ত) ঘোরায়। প্রচলিত লেগ ব্রেক হিসাবে বল করেও গুগলি অর্জন করা যেতে পারে তবে বলটি ছাড়ার ঠিক আগে আঙ্গুল দিয়ে আরও ঘূর্ণন দিতে হবে।