রিশার্ট কুন (৩ ডিসেম্বর ১৯০০- ১ আগস্ট ১৯৬৭) একজন অস্ট্রিয়ান-জার্মান প্রাণরসায়নবিদ ছিলেন,যিনি কার্টেনোয়েড ও ভিটামিনের উপর করা কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৩৮ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
জীবনী
প্রারম্ভিক জীবন
কুন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সেখানে ব্যাকরণ ও উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। শুরুতে নানাবিধ বিষয়ে আগ্রহ থাকলেও একসময় রসায়নেই তার আগ্রহ অভিনিবিষ্ট হয়। ১৯১০-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভোলফগাং পাউলির সহপাঠী ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৪৫ সালে পাউলি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯১৮ সালের দিকে কুন ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। কুন মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। এনজাইম বা উৎসেচকের উপর বৈজ্ঞানিক কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ও রিচার্ড উইলস্ট্যাটার ১৯২২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
রিশার্ট কুন মিউনিখে বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথমে মিউনিখ, তারপর সুইস ফেডারেল প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের জুরিখ শাখা ও ১৯২৯ সাল থেকে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। ১৯৩৭ সালে কুন রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯২৮ সালে তিনি ডেইজি হার্টমানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। রিশার্ট-ডেইজি দম্পতির দুই ছেলে ও চার মেয়ে ছিল।
গবেষণা
জৈব রসায়ন (অ্যালিফেটিক ও অ্যারোমেটিক যৌগের স্টিরিওরসায়ন), পলিন ও কিউম্যুলিনের সংশ্লেষণ, হাইড্রোকার্বনসমূহের অম্লত্ব , প্রাণ রসায়ন (কার্টোনয়েড, ফ্ল্যাভিন, ভিটামিন, উৎসেচক)-সহ বিভিন্ন বিষয়ে কুন বিস্তারিত গবেষণা করেছেন। ভিটামিন বি২ এবং ভিটামিন বি৬ নিয়েও কুনের অনেক কাজ রয়েছে।
১৯২৯ সালে কুন কাইজার ভিলহেল্ম চিকিৎসা গবেষণা ইনস্টিটিউটের রসায়ন বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন (১৯৫০ সালে এর নামকরণ করা হয় মাক্স প্লাংক চিকিৎসা গবেষণা ইনস্টিটিউট ;বর্তমানে এটি হাইডেলবার্গ শহরে অবস্থিত)। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এছাড়াও তিনি হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুদীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেন। একদা তিনি ফিলাডেলফিয়া শহরে অবস্থিত পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরবৃত্তীয় রসায়নের খণ্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন।
১৯৩৮ সালে রিশার্ট কুন রসায়নে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। কার্টেনয়েড ও ভিটামিনের উপর করা কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এ সম্মান অর্জন করেন। তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর ও নাৎসি পার্টির প্রধান অ্যাডলফ হিটলার নোবেল পুরস্কার গ্রহণে জার্মান নাগরিকদের বারণ করেছিলেন। এক হস্তলিখিত পত্রের মাধ্যমে কুন এ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন,"নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করা মানে ফুয়েরারের (হিটলার) নির্দেশ অমান্য করা। " [১][২]দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তিনি পুরস্কারটি গ্রহণ করেন। ১৯৪৪ সালে কুন প্রাণঘাতী নার্ভ এজেন্ট "সোমান" আবিষ্কার করেন। [৩]
১৯৪৮ সালে কুন "জুস্টুস লাইবিগস অ্যানালেন ডার কেমি" (জুস্টুস লাইবিগের রসায়নবিষয়ক ইতিবৃত্ত) সাময়িকী সম্পাদনা করেন।
১৯৬৭ সালে ৬৬ বছর বয়সে কুন জার্মানির হাইডেলবার্গে মৃত্যুবরণ করেন।
নাৎসি যুগ
হিটলার উচ্চপদস্থ জার্মান কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করেছিলেন। ১৯৩৬ সালে তিনজন ইহুদি সহকর্মীকে তিনি তীব্রভাবে ভর্ৎসনা করেন।
২০০৫ সালে জার্মান রসায়নবিদ সমিতি (গেসেলশাফট ডিউশার কেমিকার) রিশার্ট কুন পদক প্রদান কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। এটি নাৎসি যুগে কুনের কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানায়। কুন কি প্রকৃত অর্থেই নাৎসি আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, নাকি কর্মজীবনে প্রগতি লাভের জন্য উক্ত দলকে সমর্থন করেছিলেন - এ নিয়ে আজও বিতর্ক রয়েছে। তবে তিনি যে নাৎসি সাম্রাজ্যকে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক সহযোগিতা প্রদান করেছিলেন - এ ব্যাপারে আজ আর কোনো সংশয় নেই।
তথ্যসূত্র
↑U. Deichmann, "Dem Duce, dem Tenno und unserem Führer ein dreifaches Heil", published in D. Hoffmann and Mark Walker (eds.), "Physiker zwischen Autonomie und Anpassung" (Weinheim: Wiley-VCH Verlag, 2006