মেলানিয়া ট্রাম্প (জন্ম মেলানিজা নার্ভস;[১] এপ্রিল ২৬, ১৯৭০; মেলানিয়া নাউস নামেও পরিচিত) একজন স্লোভেনীয়-মার্কিন সাবেক মডেল। তিনি মার্কিন ব্যবসায়ী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী।
মেলানিয়া ট্রাম্প ইয়োগোস্লাভিয়াতে (বর্তমানে স্বাধীন দেশ স্লোভেনিয়া) জন্মগ্রহণ করেন। ২০০১ সাল থেকে তিনি আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাস শুরু করেন এবং ২০০৬ সালে নাগরিকত্ব পান। ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডির দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রারম্ভের জীবন
মেলানিয়া ২৬ এপ্রিল, ১৯৭০ সালে দক্ষিণ-পূর্ব স্লোভেনিয়াতে (তখনকার ইয়োগোস্লোভিয়ায়) জন্মগ্রহণ করেন।[২] তিনি আমালিজা ও ভিক্টর নাভস এর কন্যা। তার পিতা রাষ্ট্রয়াত্ব যানবাহন তৈরির কারখানার গাড়ি ও মোটরসাইকেলের ডিলার ছিলেন,[৩][৪] এবং স্লোভেনীয় কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্য ছিলেন। তার পিতৃনিবাস ছিল নিকটবর্তী রাদিচ শহরে।[৩] তার মা ছিলেন রাকা গ্রামের অধিবাসী,[৫] যিনি সেভনিকা শহরে জুটরাঞ্জা নামক একটি বাচ্চাদের কারখানায় সেলাইয়ের কাজ করতেন।[৩][৬] মেলানিয়ার একজন বড় বোন রয়েছে, তার নাম ইনেস,[৭] এবং একজন সৎ বড় ভাই আছে, যার সাথে তিনি কখনো দেখা করেননি,[৮] তার পিতার পূর্ব সম্পর্ক থেকে।[৩]
সেভনিকা শহরের একটি ইটের দেওয়ালে নির্মিত সাধারণ গৃহে তিনি বেড়ে উঠেছেন। যখন তিনি টিনএজার তখন তার পরিবার সেভনিকার একটি দ্বিতল বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। [৯] মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় তিনি একটি বহুতল ভবনে বসবাস করতেন।[৩]
তিনি ছয়টি ভাষায় কথা বলতে পারেন: তার স্থানীয় স্লোভেনীয়, সার্বো-ক্রোয়োশিয়, ইংরেজি, ফরাসি, ইতালীয় এবং জার্মান।[১৪]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন
যদিও তার আইনজীবী মিচেল উইলডেস উল্লেখ করেছেন যে তিনি ১৯৯৬ সালের আগস্টে প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন ব্যবসায়িক ভিসার মাধ্যমে, মূলতঃ ১৯৯৬-এর অক্টোবরে তিনি পেয়েছিলেন একটি H-1B ভিসা। এর পর তিনি নিয়মিত স্লোভেনিয়া ফিরে যেতেন ৪ টি আরো ১ বছরের ভিসা পেতে,কারণ তখন সকল ১ বছরের ভিসাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রহীত ছিল স্লোভেনিয়ার চুক্তি অনুযায়ী। পরবর্তীকালে তিনি গ্রীন কার্ড পান এবং ২০০১ সালে আইন স্বীকৃত একজন স্থায়ী বাসিন্দা হন, নিজেকে একজন মডেল হিসেবে গড়ে তুলেন। ২০০৬ সালে বিবাহের পর তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব পান।[১৫][১৬][১৭]
২০১৬ এর নভেম্বরে এপির প্রতিবেদনে বলা হয় যে ১৯৯৬ এর পূর্বে যখন তার আমেরিকায় কাজের বৈধতা ছিল না তখন ট্রাম্প তাকে ১০টি মডেলিংয়ের কাজে $২০০৫৬ মার্কিন ডলার দিয়েছিলো। কিন্তু তার আইনজীবীর মতে 'এপির প্রতিবেদনটি সঠিকভাবে যাচাইকৃত নয়'।[১৮][১৯]
কর্মজীবন
১৬ বছর বয়স থেকেই মেলানিয়া ট্রাম্প তার মডেলিং পেশা শুরু করেন, যখন তিনি স্লোভেনীয় ফ্যাশন আলোকচিত্রী স্টেন যার্কোর ছবির মডেল হন।[২০] ১৮ বছর বয়সে ইতালির মিলানের একটি ফ্যাশন এজেন্সীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।[২১] ১৯৯২-এ তিনি রানার্স-আপ হন যানা ম্যাগাজিন আয়োজিত "লুক অব দ্য ইয়ার" প্রতিযোগিতায়,যারা কথা দিয়েছিল সেরা তিন জনকে আন্তর্জাতিক মডেলিং অঙ্গনে উপস্থাপন করা হবে।[৩][২২]
লুজবাঞ্জজা বিশ্ববিদ্যালয় যোগদানের পরে,[২৩]প্যারিস এবং মিলান শহরের ফ্যাশন হাউজগুলোতে তিনি মডেলিং করতেন ১৯৯৬-এ নিউইর্য়ক শহরে আসার পূর্বে।[২১] তার পরিচিতি এবং ভিসা একজন ইতালিয় ব্যবসায়ি দ্বারা প্রত্যক্ষাত হয়েছিল।[৩] তিনি ভিন্নভাবে নানা ম্যাগাজিনে আবিভূর্ত হয়েছিলেন হারপার্স বাজার (বুলগেরিয়া), ওশান ড্রাইভ, ইন স্টাইল ওয়েডিংস, নিউইর্য়ক ম্যাগাজিন, এ্যাভিনিউ, আল্যাুরি, ভ্যানিটি ফেয়ার (ইতালি), ভোগ (ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিবাহ অনুসারে), এবং জিকিউ (ইউকে) ম্যাগাজিনে।[২৪] ২০০০ সালে তিনি বিকিনি মডেল হয়েছিলেন স্পোটর্স ইল্যাস্টেটেড স্যুইমসুট ইস্যুতে।[২৫][২৬] একজন মডেল হিসেবে তিনি নিয়োজিত ছিলেন ইরিনি ম্যারি ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্রাম্প মডেল ম্যানেজমেন্টে [২৭] ২০০০ সালে আফল্যাক ইন্সুরেন্সের বিজ্ঞাপনে তিনি কাজ করেছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিবাহ
১৯৯৬-এ নিউইর্য়ক আসার পর [২৮] ১৯৮৮ এর অক্টোবরে নিউইর্য়কের একটি ফ্যাশন সপ্তাহেডোনাল্ড ট্রাম্প এর সঙ্গে মেলানিয়ার দেখা হয়, যখন ট্রাম্প বিবাহিত ছিলেন কিন্তু মার্লা ম্যাপলস থেকে পৃথক ছিলেন।[১][২৯] ডোনাল্ড অন্য একটি দিনে আয়োজনে উপস্থিত ছিল, সেলেনা মিডেলফার্ট এবং মেলানিয়া প্রথমে ডোনাল্ডকে তার মোবাইল নম্বর দিতে অমত করলো।[২২] যখন এটি শুরু হলো মেলানিয়া সকল সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলল, কিন্তু কিছু মাস পরেই এই দম্পতি পুনরায় বন্ধুত্ব স্থাপন করে।[৩] তাদের সম্পর্ক সকলের নজর কাড়ে ১৯৯৯-এ দ্য হোয়ার্ড স্টার্ন শো নামক একটি টক-শো অনুষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে।[৩০] ২০০০ সালে, মেলানিয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আবিভূর্ত হন যখন সে বছর ডোনাল্ড রিফম পার্টি থেকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাড়ান।[৩০]
তাদের সম্পর্ক জনসম্মুখে প্রকাশ পায় ২০০৪ এর পর ডোনাল্ডের ব্যবসায়িক রিয়েলিটি টেলিভিশন শো দ্য এপারেন্টিস চালুর পর। ২০০৫-এ ডোনাল্ড তাদের দীর্ঘ সম্পর্কের কথা বর্ণনা করে বলেন "আমাদের সরাসরি কোন চুক্তি ছিল নাহ, 'লড়াই' শব্দটি ভুলে যাও ... আমরা খুব বেশি উপযুক্ত। আমরা একত্রে থাকবো।"[২৯]
২০০৪ সালে বাগদানের পর, জানুয়ারি ২২,২০০৫-এ মেলানিয়া ও ডোনাল্ড ফ্লোরিডার পাম সৈকতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, ডোনাল্ডের একটি নিজস্ব আবাসন স্থানে বিবাহের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।[৩১]
ট্রাম্পের বিবাহ অনুষ্ঠানটি মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত ছিলো।[২৮] ট্রাম্প মার্কিন $২০০০০০ ডলার মূল্যের একটি পোশাক পরিধান করেন যেটি তৈরি করেছিলেন জন গালিয়ানো। [৩১]
২০০৬-এ মেলানিয়া একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন যার নাম ব্যারন ট্রাম্প প্রথম নামটি ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছিলেন এবং মাঝের নামটি মেলানিয়া দিয়েছিলেন।[৩৩] নিউইর্য়কের ট্রাম্প টাওয়ারে ব্যারনের নিজস্ব একটি তলা রয়েছে।[৩৩] সে তার পিতার সাথে নিজস্ব গলফ মাঠে গলফ খেলে।[৩৪] সে স্যুট এবং টাই পরিধান করতে পছন্দ করে এবং মেলানিয়া তার নাম দিয়েছেন মিনি-ডোনাল্ড।[৪]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভূমিকা
২০১৫ এর নভেম্বরে যখন তাকে তারঁ স্বামীর নির্বাচনী প্রচারন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল,তখন মেলানিয়া বলেন : " আমি তাকে বেছে নিয়েছি কারণ আমি জানি সে কি করতে পারে এবং আমেরিকার জন্য কি করবে। তিনি আমেরিকার জনগনকে ভালবাসেন এবং তাদের সাহায্য করতে চান।[৩৫]নিউইর্য়ক টাইমস যখন প্রশ্ন করলো 'যদি ১৯৯৯-এ ডোনাল্ড রাষ্ট্রপতি হতো তাহলে তিনি কি ভূমিকা পালন করতেন ' তখন মেলানিয়া বলেন: "আমি খুবই ঐতিহ্যবাহী হতাম। যেমন: বেট্টি ফোর্ড অথবা জ্যাকি কেনেডির মতো হতাম। আমি তাকে সমর্থন দিতাম।"[৪]
একটি ট্রাম্প বিরোধী সংগঠন ২০১৬ সালে মেলানিয়ার একটি নগ্ন ছবি প্রকাশ করে যেটি ২০০০ সালের ব্রিটিশ "জিকিউ" ম্যাগাজিনের ফটোশটের অংশ ছিল। [৩৬] ছবিটি দেখায় যে তার হাত হ্যান্ডকাফ দিয়ে ব্যাগের সঙ্গে বাধা, মোটা কম্বল গায়ে দিয়ে ট্রাম্পের প্রাইভেট প্লেনে শুয়ে আছেন।[১][২৪][৩৭]
জুলাই ২০১৬-এ, মেলানিয়ার নিজস্ব ওয়েবসাইট বাদ দিয়ে সরাসরি Trump.com থেকে টুইটারে সংযোগ করা হয় , তিনি বলেছেন তার ওয়েব সাইটটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে এবং তার ওয়েবসাইটি তার ব্যবসায় ও পেশাগত ইচ্ছাকে প্রতিনিধিত্ব করছে নাহ।"[১৩][৩৮][৩৯][৪০][৪১][৪২][৪৩][৪৪]
জুলাই ১৮,২০১৬ মেলানিয়া জাতীয় রিপাবলিকান সম্মেলনে একটি বক্তব্য দেন যেটি ২০০৮ এ জাতীয় ডেমোক্রেটিক সম্মেলনে মিশেল ওবামার দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে অনেকটাই মিল লক্ষ্য করা যায়।[৪৫][৪৬][৪৭] যখন বক্তব্যটি সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করা হয় তখন তিনি বলেন' যতটা নিজে নিজে অন্যের সাহায্য ব্যতীত লেখা সম্ভব তিনি বক্তব্যটি লিখেছেন।[৪৮] দুই দিন পরে, ট্রাম্পের লেখক কর্মী ঘটনাটির জন্য দায় গ্রহণ করেন এবং দ্বন্দ্বের জন্য ক্ষমা চান।[৪৯]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি
মেলানিয়া ট্রাম্প ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি ভূমিকায় অবর্তীণ হন। লুইসা অ্যাডামস এর পর তিনিই একমাত্র বিদেশে জন্মগ্রহণ করা ফার্স্ট লেডি। লুইসা অ্যাডামস ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি হচ্ছেন জন কুইন্সি অ্যাডামস এর স্ত্রী। তিনি ১৮২৫-১৮২৯ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি ছিলেন।
↑ কখJoey Morona, Melania Trump didn't graduate from college as bio claims, reports say, Cleveland Plain Dealer (July 19, 2016) ("Her bio on her official website states she graduated with a degree in design and architecture from 'University in Slovenia.' It's a claim that's been repeated by the Melania campaign and the RNC itself, in the convention's official program. However, the Slovenian writers of her biography wrote that Melania actually dropped out from the University of Ljubljana after her freshman year. Politico's Julia Ioffe wrote the same thing in a profile of the presumptive Republican nominee's wife that appeared in GQ back in April."
↑Yglesias, Matthew (জুলাই ১৮, ২০১৬)। "Melania Trump, explained"। Vox (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১১, ২০১৬।
↑ কখগঘStoynoff, Natasha (জানুয়ারি ২৩, ২০০৫)। "Donald Trump Weds Melania Knauss"। People (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৭, ২০১৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)