মুবারক বেগম (উর্দু: مبارک بیگم; জন্ম: ১৯৩৫ - মৃত্যু: ১৮ জুলাই, ২০১৬) রাজস্থানের চুরু এলাকার সুজনগড়ে জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট ভারতীয় গায়িকা ছিলেন। হিন্দি এবং উর্দু ভাষায় গান গেয়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে বলিউডের চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় গায়িকা ছিলেন। এছাড়াও তিনি গজল এবং নাত-সহ অন্যান্য ঘরানার গান সঙ্গীতানুষ্ঠানে পরিবেশন ও রেকর্ড করেছেন তিনি।[১] হিন্দি চলচ্চিত্রে তার রেকর্ডকৃত গানের তালিকা পাওয়া যাবে এখানে।
কর্মজীবন
ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বেতার সংস্থা অল ইন্ডিয়া রেডিওতে সঞ্চালিত হালকা সঙ্গীত আবৃত্তি সহযোগে পরিবেশনের মাধ্যমে মুবারক বেগম তার কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৪৯ সালে নেপথ্য গায়িকা হিসাবে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন হিন্দি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র আইয়ের মাধ্যমে। এ চলচ্চিত্রে ভারত-পাকিস্তানের বিশিষ্ট সুরকার নশাদ মুবারক বেগমকে গানে কণ্ঠ দেবার সুযোগ প্রদান করেছিলেন। ঐ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি তার প্রথম গান "মোহে আনে লাগি আংগ্রেই, আজা আজা বালাম" (আইয়ে, ১৯৪৯) রেকর্ড করেন। পরবর্তীতে মুক্তিপ্রাপ্ত ঐ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে যৌথভাবে গান করেছিলেন।
তবে তার সঙ্গীত জীবনের প্রধান সফল গান ছিল "কাভি তানহাইও মে ইউন"। গানটির সুরকার ছিলেন স্নেহাল ভাটকর, যা কিদার শর্মার চলচ্চিত্র হামারি ইয়াদ আয়েগি চলচ্চিত্রের জন্য। গানটি অদ্যাবধি ধ্রুপদী গান হিসেবে মর্যাদা পেয়ে আসছে। সমগ্র কর্মজীবনে মুবারক বেগম ১১৫টি হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্য ১৭৮টি গান গেয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী মুবারক বেগম নিজ সম্প্রদায়ের জনাব শেখ সাহেবের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান ছিল। তার স্বামী এবং মেয়ে - উভয়ে মৃত্যুবরণ করলে নিজ পুত্র, জামাতা ও নাতনীর সাথে বসবাস করতে থাকেন।
সুপরিচিত গায়িকা হওয়া স্বত্ত্বেও মুবারক বেগম তার প্রতিভাকে বিকশিত করতে সক্ষম হননি। বিনোদন শিল্পের উপযোগী নেটওয়ার্কিংয়ে দক্ষতা না থাকায় তার কর্মজীবন অলংকারবহুল অবস্থায় রয়ে যায়। প্রতিযোগীধর্মী গায়িকা হিসেবে তিনি ব্যবসা-বৃত্তিতে জড়াতে পারেননি। অর্থ উপার্জনের চেয়ে গানের দিকেই তার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল বেশি। ফলশ্রুতিতে দিন দিন তার জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বৃদ্ধি পেতে থাকে ও তার মহত্ত্বের কারণে কোন অর্থও সঞ্চয় করতে পারেননি।
অক্টোবর, ২০১৫ সালে পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হয়ে তার কন্যা মৃত্যুবরণ করে। তারপর থেকেই মুবারক বেগমের স্বাস্থ্য গুরুতর পর্যায়ে চলে যায়। মে, ২০১৬ সালে সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় যে, তিনি হাসপাতালে রয়েছেন এবং তার পরিবার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছেন না। মুম্বইয়ের শহরতলির যোগেশ্বরীর বেহরাম বগের এক কক্ষবিশিষ্ট বাসায় বসবাস করেছেন। কেবলমাত্র প্রয়াত স্বামীর অবসর ভাতাই তার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ছিল।
এনডিটিভি সংবাদ মাধ্যমে প্রতিমাসে ৮০০ রূপী[২] এবং ভারতীয় সংবাদপত্র ডিএনএ ৩০০০ রূপী আয়ের কথা উল্লেখ করে যা ভারতের জীবনমানে বেশ অপর্যাপ্ত।[৩] পুত্র হোসেন শেখ ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে জড়িত ও মেয়ে জামাই তার সেবা-শ্রুশ্রুষা করে।
ইন্তেকাল
বেগমের বধূমাতা জরিনা হোসেন শেখ সংবাদ মাধ্যমে বলেছিলেন, বিশিষ্ট অভিনেতা সালমান খান দীর্ঘমেয়াদী আর্থিকভাবে তাদের পরিবারকে সাহায্য করা একমাত্র ব্যক্তি। তিনি বয়ষ্ক গায়িকা মুবারক বেগমের প্রয়োজনীয় সব ওষুধের খরচপত্রাদি পরিশোধ করেন। প্রখ্যাত গায়িকা লতা মঙ্গেশকর তার মেয়ের মৃত্যুর পর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন ও তাকে সমবেদনা প্রকাশ করেছিলেন। তিনিও পরিবারটিকে চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তাকল্পে এগিয়ে আসেন। জুন, ২০১৬ সালে মহারাষ্ট্রের বিজেপি মন্ত্রী বিনোদ তাওড়ে পরিবারকে সাহায্য করেন। তিনি সেখানে কোন সরকারী প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা দেখতে পাননি। জনগণের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে কিছু অর্থ প্রদান করা হয়। অতঃপর দীর্ঘ রোগশোকে আক্রান্ত হয়ে যোগেশ্বরীর নিজ বাসভবনে ১৮ জুলাই, ২০১৬ তারিখে তিনি ইন্তেকাল করেন।[৪]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ