ভাসানচর মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। এটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চর ঈশ্বর ইউনিয়ন এর অন্তর্গত। মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরে তাদের নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন।[১]
আয়তন ও জনসংখ্যা
নোয়াখালী জেলার বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ভাসানচরের মোট আয়তন ১৬ হাজার একর। এর মধ্যে ঠেঙ্গারচরের আয়তন ১০ হাজার একর এবং জালিয়ারচরের আয়তন ৬ হাজার একর। ভাসানচরের দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৪.৫ কিলোমিটার।[২]
অবস্থান
হাতিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত ভাসানচর। এছাড়া নোয়াখালী জেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ও উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচর উপজেলা হতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার পশ্চিম প্রান্ত থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রায় ২০ বছর আগে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন ও জনমানবশূন্য ভাসানচর।[২]
যোগাযোগ ব্যবস্থা
ভাসানচরকে জোয়ার এবং জলোচ্ছ্বাস হতে রক্ষার জন্য চারপাশে নয় ফুট উচ্চতার বেড়িবাঁধ রয়েছে।[৩] মাছধরার নৌকায় করে হাতিয়া থেকে ঠেঙ্গারচরে পৌঁছতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। জায়গাটি ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাপ্রবণ। যাতায়াত ব্যবস্থাও নাজুক। তবে চরটির সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ সহজ করতে এরই মধ্যে পল্টুন স্থাপন করা হয়েছে। হেলিকপ্টার অবতরণে হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে। নিরাপত্তায় রয়েছেন নৌবাহিনীর সদস্যরা। ভাসানচরকে জোয়ার-ভাটার হাত থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন স্থানে বালু ফেলে উঁচু করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে সড়ক।[২]
রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ণ
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ব্যাপক হারে মায়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। এ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭১ জন। তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা হল ৪৮ শতাংশ এবং মহিলা ৫২ শতাংশ। এছাড়া শিশু রয়েছে ৫৫ শতাংশ, এতিম ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭৭১ জন তাদের মা-বাবাকে হারিয়েছে।
এ অবস্থায় এক লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় দুই হাজার ৩১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়। নোয়াখালীর হাতিয়া থানাধীন চরঈশ্বর ইউনিয়নের ভাসানচরে এক লাখ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা এবং দ্বীপটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
এ প্রকল্পের আওতায় ভূমি উন্নয়ন ও শোর প্রোটেকশন ওয়ার্ক, বাঁধ নির্মাণ, এক লাখ তিন হাজার ২০০ জনের বসবাসের জন্য ১২০টি গুচ্ছগ্রামে এক হাজার ৪৪০টি ব্যারাক হাউস ও ১২০টি শেল্টার স্টেশন নির্মাণ, উপাসনালয় নির্মাণ, দ্বীপটির নিরাপত্তার জন্য নৌবাহিনীর অফিস ভবন ও বাসভবন, অভ্যন্তরীণ সড়ক, পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো, নলকূপ ও পানি সরবরাহ অবকাঠামো নির্মাণ, পেরিমিটার ফেন্সিং ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, বিভিন্ন যানবাহন ক্রয়, গুদামঘর, জ্বালানি ট্যাঙ্ক, হেলিপ্যাড, চ্যানেল মার্কিং ও মুরিং বয়, বোট ল্যান্ডিং সাইট, মোবাইল টাওয়ার, রাডার স্টেশন, সিসি টিভি, সোলার প্যানেল, জেনারেটর ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ইত্যাদি নির্মাণ করা হচ্ছে।[১]
পুলিশি থানা
মায়ানমারের রাখাইন থেকে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিচ্ছিন্ন ভাসানচরে অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ঘোষণার পর এ চরকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করার নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এখানকার নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার অবশেষে ভাসানচরে একটি পুলিশি থানা গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় ভাসানচর থানা প্রতিষ্ঠার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।[৪]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ