ব্ল্যাক (হিন্দি: ब्लैक; বাংলায়: অন্ধকার) সঞ্জয় লীলা ভন্সালী পরিচালিত ২০০৫ সালের ভারতীয় নাট্য চলচ্চিত্র। ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন সঞ্জয় লীলা ভন্সালী, ভবানী আইয়ার, ও প্রকাশ কাপাডিয়া। এতে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চন ও রানী মুখোপধ্যায়। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন আয়েশা কাপুর, শেরনাজ প্যাটেল, ধৃতিমান চ্যাটার্জি, নন্দনা সেন প্রমুখ।[৩]
অন্ধ ও বোবা মিশেল ম্যাকনেলি তার সাবেক শিক্ষক দেবরাজ সাহাইকে দেখতে যান। দেবরাজ এখন আলৎসহাইমারের রোগে আক্রান্ত। মিশেল তার শৈশবে ফিরে যান এবং শৈশব থেকে বর্তমান পর্যন্ত বর্ণনা করতে থাকেন।
দুই বছর বয়সে একটি রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করার পর মিশেল তার দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং এক অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকে। সে যতই বেড়ে ওঠতে থাকে ততই হতাশা তাকে ঘিরে ধরে এবং আট বছত বয়সী মিশেল আরও উগ্র হয়ে ওঠতে থাকে। তার পিতামাতা পল এবং ক্যাথরিন তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। এসময়ে তাদের আশার আলো হয়ে আসে দেবরাজ সাহাই। দেবরাজ অন্ধ ও বোবা একজন বয়স্ক মদ্যপ শিক্ষক, যে নিজেকে একজন জাদুকর বলে দাবী করে। সে তার জাদুকরী শক্তি দিয়ে মিশেলকে আলোতে নিয়ে আসার কাজে হাত দেয়। তার শিক্ষাদান কিছুটা কঠোর কিন্তু তা মিশেলের ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগে।
প্রথমদিকে তার শিক্ষাদানের পদ্ধতিতে মিশেলের বাবা অসম্মতি প্রদান করে এবং তাকে চলে যেতে বলে। মিশেলের বাবা তাকে চলে যেতে বললেও সে ব্যবসায়িক সফরে ২০ দিনের জন্য বাইরে চলে গেলে দেবরাজ শিক্ষক হিসেবে থেকে যান। মিশেলের মা উৎকণ্ঠিত হয়ে তাকে বলেন তার শিক্ষাদান কাজে না আসলে মিশলকে পাগলাগারদের পাঠাতে হবে। ২০তম দিনে দেবরাজ মিশেলকে কিছুর শব্দ ও আচরণ শিখাতে সমর্থ হন, কিন্তু সে অর্থ বুঝতে পারে না। মিশেলের বাবা ফিরে আসলে দেবরাজ তার ব্যাগ গুছিয়ে চলে যেতে যাওয়ার পূর্বে মিশেলের উগ্র ব্যবহারের কথা ভেবে সে দরজার সামনে সুটকেস রেখে মিশেলকে পানি ভর্তি একটি ঝর্নায় ফেলে দেয়। মিশেল হঠাৎ দেবরাজের শিক্ষার অর্থ বুঝতে শুরু করে। সে তার মা ও বাবাকে চিনতে পারে এবং কিছু শব্দের প্রথম অংশ মুখে নিয়ে আসে। ফলে ম্যাকনেলি দম্পতি দেবরাজকে মিশেলের শিক্ষক হিসেবে রেখে দেন।
কয়েক বছর পর মিশেল অনেক কিছু শিখে এবং অনেকটা শান্ত ও তার মনের ভাব প্রকাশে সমর্থ হয়। দেবরাজ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষকে তার সাক্ষাৎকার নিতে বলে যেখানে মিশেল পাস করে এবং প্রথম অন্ধ ও বোবা শিক্ষার্থী হিসেবে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রি নিতে ভর্তি হয়। মিশেল বাড়ি থেকে চলে যায় এবং দেবরাজ ও একজন গৃহপরিচারিকার সাথে থাকে। পরের দুই বছরে অকৃতকার্য হয়ে ডিগ্রি নিতে ব্যর্থ হয়। ১২ বছর পর মিশেল তার ডিগ্রি লাভ করে এবং তার ক্লাসে বক্তৃতাও দেয়। তার কালো গ্র্যাজুয়েশন পোশাক না পরে সে তার পিতামাতা ও শিক্ষককে ধন্যবাদ দেয় এবং বলে তার এই পোশাক সে তার শিক্ষকের সামনে প্রথম পরবে।
দেবরাজ এখন একটি মানসিক হাসপাতালে এবং সে পূর্বের সবকিছু প্রায় ভুলে গেছে এমনকি কীভাবে কথা বলতে হয় তাও। মিশেল গ্যাজুয়েশনের পোশাক পরে তার সাথে দেখা করতে যায়। দেবরাজ অল্প বুঝতে পারে মিশেল গ্যাজুয়েট হয়েছে এবং তারা বিজয় নৃত্য করে। জানালা খোলার পর দেখা যায় বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। মিশেল দেবরাজের হাত বাইরে বৃষ্টিতে নিয়ে যায় এবং তার প্রথম শেখা শব্দ "water" এর প্রথমাংশ শুনা যায় এবং পূর্বের ঘটনাবলী দেখা যায়। এখন দেবরাজ কথা বলা ও বুঝতে শিখছে।
শেষ দৃশ্যে মিশেল কালো কাপড় পরিহিত আরও লোকজনের সাথে মোমবাতি হাতে নিয়ে একটি গীর্জায় যাচ্ছে। সেখানে একটি কণ্ঠ শুনা যায়, মিশেল দেবরাজের বন্ধু মিসেস নায়ারকে লিখেছে স্কুলে তার শিক্ষক প্রথম দিনে একটি শব্দ শিখেছে, এবং তা হল "B L A C K"।
প্রথমে এ. আর. রহমানকে এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীতের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তার ব্যস্ত শিডিউলের কারণে তিনি প্রস্তাব বাতিল করেন।[৭] পরে মন্টি শর্মা এই চলচ্চিত্রের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেন।[৮] এই ছবিতে একটি মাত্র গান ছিল। "হাঁ ম্যাঁনে চুকার দেখা" গানটিতে কণ্ঠ দেন গায়ত্রী আইয়ার।[৯]
মুক্তি
ব্ল্যাক প্রথমে ১০ ডিসেম্বর, ২০০৪ তারিখে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বনশালি পরে মুক্তির তারিখ পিছানোর সিদ্ধান্ত নেন।[১০] ছবিটি ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ ভারতের ১৭০ টি শহরে মুক্তি পায়। এছাড়া ছবিটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, যেমন ক্যাসাব্লাঙ্কা চলচ্চিত্র উৎসব, ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ও কান চলচ্চিত্র উৎসব এ প্রদর্শিত হয়।
মূল্যায়ন
সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া
ব্ল্যাক চলচ্চিত্রটি ইতিবাচক সমালোচনা লাভ করে। সমালোচকগণ অমিতাভ বচ্চন, রানী মুখোপাধ্যায় ও আয়েশা কাপুর এর অভিনয় এবং সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর পরিচালনার প্রশংসা করেছেন। অমিতাভ ও রানী তাদের ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কারের পাশাপাশি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সমালোচক পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী সমালোচক পুরস্কার লাভ করেন। ইন্ডিয়া গিল্টজের সুভাষ কে. ঝা লিখেন প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে সঞ্জয় লীলা ভন্সালী একটি সেরা কাজ করেছেন। অমিতাভ বচ্চনের অভিনয় সম্পর্কে তিনি বলেন, "এটি তার সেরা কাজ বললেও কম বলা হবে" এবং রানীর অভিনয় সম্পর্কে বলেন, "তার অভিনয় দেখে মনে হচ্ছিল যেন সে অন্ধ হয়েই জন্ম নিয়েছে।" এছাড়া ঝা চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা ও আবহ সঙ্গীতের প্রশংসা করেছেন।[১১] রেডিফের সীতা মেনন বলেন রানীর অভিনয়ে পরিপক্কতা ছিল, অমিতাভের কিছু একক দৃশ্যে মেলোড্রামা ছিল এবং সর্বোপরি ভন্সালীর পরিচালনায় আবেগ, বেদনা ও আনন্দ ছিল।[১২]