সামাজিক দায়বদ্ধতা হল একধরনের ব্যবসায়িক শিষ্ঠাচার বা নীতি যা সমাজের প্রতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনকে ব্যবসার নিয়মের মধ্য অন্তর্ভুক্ত করে। একটি ব্যবসা নৈতিক ও আইনগত ভাবে পরিচালিত হলেই এর সমস্ত দায়মুক্তি হয়েছে তা বলা যায় না। যে পরিবেশে বা যে সমাজে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেই সমাজের প্রতি প্রতিষ্ঠানের কিছু দায়বদ্ধতা জন্মায়। বর্তমান যুগে অধিকাংশ বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই সিএসআর বা সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করছে এবং তাদের শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশের কিছু অংশ এই খাতে বরাদ্দ রাখছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই দায়বদ্ধতা পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় নেমে পরে এবং নিয়ম প্রতিপালনের উর্ধে চলে যায়। সেক্ষেত্রে সরকার আইন করে সেখানে সিএসআর নিয়ন্ত্রণ করে।[১][২]
সামাজিক দায়বদ্ধতা শব্দটি পশ্চিমা বিশ্বে ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সালের দিকে প্রচলিত হওয়া শুরু করে। বড় বড় ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এই ধরনের দায়বদ্ধতা সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দেওয়ার জন্য স্টেকহোল্ডার কথাটির প্রচলন করে। এই শব্দটির অর্থ হল সমাজের সেই সকল মানুষ যারা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রভাবিত হন।
প্রবক্তাদের মতে বড় কোম্পানিগুলো এই ধরনের দর্শন নিয়ে পরিচালিত হলে দীর্ঘমেয়াদে তাদের প্রতিষ্ঠান মুনাফায় পরিচালিত হয়, অপরদিকে সমালোচকদের মতে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় তাদের প্রধান কার্যকলাপ থেকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলে এবং এতে করে ব্যবসার যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়। ২০০০ সালে প্রকাশিত ম্যাকউইলিয়াম এবং সেইগেলের গবেষণাপত্রে তারা প্রায় ১০০০ শিক্ষাবিদের উদ্ধৃতি তুলে ধরে দেখান যে সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে কিছুটা হলেও প্রভাবিত করেছে। তার মতে প্রতিষ্ঠানসমূহ সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করতে গিয়ে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে তা যদি গবেষণা ও উন্নয়নে খরচ করা হত তাহলেই বরং সমাজ এর থেকে বেশি উপকৃত হত।
কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা
কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা হচ্ছে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও বিজনেস মডেলের সংমিশ্রণ।
কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বলতে বুঝায় যে যেসব কার্যক্রম সমাজ, মানুষ, পরিবেশকে প্রভাবিত করে, একটি প্রতিষ্ঠান তার সেসব কর্মের জন্য সমাজের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। এটা বলে যে, সমাজ বা মানুষের যেকোন ক্ষতি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠান অবহিত থাকবে এবং নিজের ভুল সংশোধনে সচেষ্ট থাকবে।[৩] এর জন্যে হয়তো একটি কোম্পানিকে কিছু মুনাফা ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে অথবা হয়তো এত মুনাফার একটি অংশ সমাজের উন্নয়নে ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দায়বদ্ধতা
যাইহোক, সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ হওয়ার মানে এই না যে কোম্পানি তার অন্যসব উদ্দেশ্যকে অবহেলা করে যাবে। একটি কোম্পানির বিভিন্নধরনের দায়বদ্ধতা আছে— অর্থনৈতিক, আইনগত, সামাজিক। একজন ম্যানেজারের চ্যালেঞ্জ এখানেই যে, কোনরকম দায়িত্ব অবহেলা না করে সমস্ত কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া। তাই এটা বলা যায় যে, সামাজিক দায়বদ্ধ কোম্পানি মানে যে অন্য কোম্পানির চেয়ে কম লাভজনক হবে, তা কিন্তু না। বরং অনেকেই এই বিশ্বাস করে যে, যখন কোন কোম্পানি সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ থাকে, তা সমাজ এবং অই কোম্পানি দুজনের জন্যেই লাভজনক। [৪]
সামাজিক দায়বদ্ধতা শব্দটি বিশ্বে ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭০ সালের দিকে প্রচলিত হওয়া শুরু করে এটি হচ্ছে এক ধরনের ব্যাবসায়িক নীতি যেটি সমাজের একএকটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনকে ব্যাবসার নিয়মের মধ্যে অন্তরভুক্ত করে
বরতমান যুগে অধিকাংশ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানই সামাজিক দায়দ্ধতার অংশ হিসেবে অনেক ধরনের উন্নয়ন মূলক কাজে অংশগ্রহন করছে
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
আরও পড়ুন