বেবী ইসলাম ১৯৩১ সালের ৩রা জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবুল হোসেন বিশ্বাস এবং মাতা মোতাহারুন নেসা। তিনি তার পিতামহ ও মায়ের সাথে শৈশব কাটান। তার মা ছিলেন একজন শিক্ষক। বেবী শিয়ালদহের একটি মিশনারি স্কুলে পড়াশুনা করেন এবং পরে ক্যাথেড্রাল মিশন হাই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি ১৯৪৫ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বঙ্গবাসী কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি চলচ্চিত্র বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে ইতালি যান।[২]
কর্মজীবন
চিত্রগ্রহণে তার হাতেখড়ি হয়েছিল ভারতের প্রখ্যাত পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক অজয় করের কাছে। হারানো সুর (১৯৫৭), 'বড়দি' ছবিতে অজয় করের সঙ্গে চিত্রগ্রহণের কাজ করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে যোগ দেন। এছাড়া তিনি এফডিসিতে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।[১] ১৯৫৯ সালে তিনি এফডিসি থেকে প্রযোজিত ও নির্মিত প্রথম চারটি ছবির একটি আকাশ আর মাটির চিত্রগ্রহণের কাজ করেন। সূর্যস্নান (১৯৬২), শ্যামলী, সাজঘর, নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭), সোয়ে নদীয়া জাগে পানি (১৯৬৮), এতটুকু আশা (১৯৬৮), নীল আকাশের নিচে (১৯৬৯), ক খ গ ঘ ঙ (১৯৭০), একাত্তরের যীশু (১৯৯৩) সহ অনেক ছবিতে মূর্ত হয়ে আছে তার চিত্রগ্রহণের শৈল্পিক দক্ষতা। ১৯৬৪ সালে উর্দু ভাষায়তানহা নামের একটি ছবি পরিচালনা করেন বেবী ইসলাম। পরে ১৯৭৫ সালে নির্মাণ করেন চরিত্রহীন। এই চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহকের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি নয়নের আলো (১৯৮৪) ও প্রেমিক (১৯৮৫) চলচ্চিত্রের জন্য আরও দুইবার এই বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩) ও যুক্তি তক্কো গপ্পো (১৯৭৭) ছবিরও চিত্রগ্রহণ করেছেন।[৩]
সমাজসেবা
জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু নানা কারণে তা পারেননি। দীর্ঘ ২৬ বছরে আর কোনো কাজ পাননি এই গুণী চিত্রগ্রাহক। অবসর জীবনে কর্মচঞ্চল এই মানুষটি নিজ গ্রাম চুয়াডাঙ্গায় গড়ে তুলেছেন মা মোতাহারুন্নেসার নামে একটি হাসপাতাল।[২]
মৃত্যু
তিনি ২৪শে মে ২০১০ মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।[১] তাকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।[২]