মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বুর্জোয়াশ্রেণী বলতে সমাজতাত্ত্বিকভাবে সংজ্ঞায়িত একটি সামাজিক শ্রেণীকে বোঝায়, যা মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সমতুল্য। এই শ্রেণীটি সাংস্কৃতিক ও আর্থিক পুঁজির মানদণ্ডে শ্রমিকশ্রেণী অপেক্ষা স্বতন্ত্র একটি শ্রেণী।[১] বুর্জোয়াশ্রেণীকে আবার পাতি-বুর্জোয়াশ্রেণী, মধ্যম বুর্জোয়াশ্রেণী, বৃহৎ বুর্জোয়াশ্রেণী, উচ্চতর বুর্জোয়াশ্রেণী, প্রাচীন বুর্জোয়াশ্রেণী, নব্য বুর্জোয়াশ্রেণী, ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত করা হতে পারে। পাশ্চাত্যে এটিকে ফরাসি শব্দ "বুর্জোয়াজি" (Bourgeoisie) দ্বারা নির্দেশ করা হয়।
বুর্জোয়া কথাটি একটি ফরাসি শব্দ, যার আক্ষরিক অর্থ হল মধ্যযুগে ইউরোপের "বুর্গ" নামের প্রাচীরবেষ্টিত নগরে অধিবাসী। তাই নগরের অস্তিত্বের সাথে বুর্জোয়াদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। নগর ও নাগরিক সনদ, অধিকার, আইনকানুন, ইত্যাদি ছাড়া বুর্জোয়াশ্রেণীর কোনও অস্তিত্ব নেই। অন্যদিকে মধ্যযুগীয় ইউরোপের গ্রামীণ কৃষকশ্রেণীর লোকেরা ভিন্ন একটি আইনব্যবস্থার অধীনে ছিল।
মার্কসীয় দর্শন অনুযায়ী বুর্জোয়াশ্রেণী হল সেই সামাজিক শ্রেণী যেটি আধুনিক শিল্পায়নের যুগে এসে অর্থনৈতিক উৎপাদন পদ্ধতির (means of production) অধিকারী হয় এবং যাদের সামাজিক উদ্বেগের বিষয় হল সম্পত্তির মূল্য এবং পুঁজির সংরক্ষণ যাতে সমাজে তাদের অর্থনৈতিক আধিপত্যের দীর্ঘস্থায়ীকরণ নিশ্চিত হয়।[২]
১৯শ ও ২০শ শতাব্দীর অস্ট্রীয় অর্থনীতিবিদ ইয়োজেফ শুম্পেটার (Joseph Schumpeter) সম্প্রসারণশীল বুর্জোয়াশ্রেণীর ভেতরে নতুন নতুন উপাদানের অঙ্গীভবনের ব্যাপারটি খেয়াল করেন। যেমন ব্যবসায়িক উদ্যোক্তারা, যারা ঝুঁকি নিয়ে সৃষ্টিশীল ধ্বংসসাধন নামক প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে শিল্পখাতে ও অর্থনীতিতে নবীকরণ ঘটায়। শুম্পেটারের মতে এই নতুন উপাদানগুলি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।[৩]