বাশার আল-আসাদ

বাশার আল-আসাদ
بشار الأسد
বাশার আল-আসাদ ২০২৪ সালে
সিরিয়ার ১৯তম রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
১৭ জুলাই ২০০০ – ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রধানমন্ত্রীমুহাম্মদ মুস্তফা মীরো
মোহাম্মদ নাজি আল ওতারি
আদেল সফর
রিয়াদ ফরিদ হিজাব
ওমর ইবরাহিম ঘালাওয়ানজি
ওয়ায়েল নাদির আল হাল্কি
ইমাদ খামিস
হোসাইন আরনুস
উপরাষ্ট্রপতিআব্দুল হালিম খাদ্দাম
জুহাইর মাশার্কা
ফারুক আল-শারা
নাজাহ আল-আতার
পূর্বসূরীহাফেজ আল-আসাদ
আব্দুল হালিম খাদ্দাম (কার্যনির্বাহী)
বাথ পার্টির মহা সচিব
কাজের মেয়াদ
২৪ জুন ২০০০ – ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
ডেপুটিসুলাইমান কাদ্দাহ
মোহাম্মদ সাঈদ বেখেইতান
হিলাল হিলাল
নেতাআব্দুল্লাহ আল-আহমার
পূর্বসূরীহাফিজ আল-আসাদ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মবাশার হাফেজ আল-আসাদ
(1965-09-11) ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ (বয়স ৫৯)
দামেস্ক, সিরিয়া
জাতীয়তাসিরীয়
রাজনৈতিক দলবাথ পার্টি
অন্যান্য
রাজনৈতিক দল
ন্যাশনাল প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্ট
দাম্পত্য সঙ্গীআসমা আখরাস (বি. ২০০০)
সম্পর্কআলী সুলাইমান আল-আসাদ (পিতামহ)
রিফাত আল-আসাদ (চাচা)
সন্তান
  • হাফিজ (জ. ২০০১) ক্রাউন প্রিন্স[]
  • জাইন (জ. ২০০৩) যুবরাজ
  • করিম (জ. ২০০৪) যুবরাজ
মাতাআনিসা মখলুফ
পিতাহাফেজ আল-আসাদ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসসি), (এমএসসি)[]
ধর্মশিয়া ইসলাম (আলবীয়)
স্বাক্ষর
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য সিরিয়া
শাখাসিরীয় সেনা বাহিনী
কাজের মেয়াদ১৯৮৮–২০২৪
পদফিল্ড মার্শাল
ইউনিটরিপাবলিকান গার্ড (২০০০ পূর্ব)
কমান্ডসিরিয়ার সশস্ত্র বাহিনী
যুদ্ধসিরীয় গৃহযুদ্ধ

বাশার আল-আসাদ (আরবি: بَشَّارُ حَافِظِ ٱلْأَسَدِ, প্রতিবর্ণীকৃত: Baššār al-ʾAsad, [baʃˈʃaːr ˈħaːfezˤ elˈʔasad]; ইংরেজি উচ্চারণ; জন্ম ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫) একজন সিরীয় রাজনীতিবিদ যিনি ১৭ জুলাই ২০০০ থেকে ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সিরিয়ার ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে ক্ষমতাসীন ছিলেন।[] তিনি বাথ পার্টির আঞ্চলিক সচিব এবং সাবেক সিরীয় রাষ্ট্রপতি হাফেজ আল-আসাদের পুত্র ও রাজনৈতিক উত্তরসূরী।[]

রাষ্ট্রপতিত্ব

বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বাধীন বাথ পার্টি বর্তমানে সাংবিধানিক ভাবে সিরিয়ার সরকারি দল। ২০০০ সালে রাষ্ট্রপতিত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত বাশার সিরিয়ার রাজনীতিতে তেমন ভাবে জড়িত হননি। রাজনৈতিক কার্যক্রম বলতে তিনি এর আগে সিরিয়ার কম্পিউটার সমিতির প্রধান ছিলেন। উল্লেখ্য এই কম্পিউটার সমিতির অবদানেই ২০০১ সালে সিরিয়ায় ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটে।

সংস্কার

বাশার আল-আসাদ ২০০১ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি পদে স্থায়িত্ব অর্জন করেন। আশা করা হয়েছিল যে বাশার দায়িত্ব নেয়ার পর সিরীয় প্রশাসন হাফেজ আল-আসাদের রক্ষণশীল নীতি থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসবে। দায়িত্ব নেয়ার পর বাশার আল-আসাদ এক সাক্ষাৎকারে জানান যে গণতন্ত্রই হতে পারে সিরিয়ার দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণের চাবিকাঠি। বাশার এও যোগ করেন যে গণতন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাব একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং তাড়াহুড়ো করে এর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।[] রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাশার খুব সতর্কতার সাথে একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন শুরু করেন যা সিরিয়ার তথাকথিত ডেমাস্কাস স্প্রিং বিতর্কের মধ্য দিয়ে চালিত হয়েছিল। বাশারের পিতা ও রাজনৈতিক পূর্বসূরী হাফেজ আল-আসাদ প্রায় ৩০ বছর যাবৎ সিরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন এবং ২০০০ সালে তার জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে হাফেজ যুগের অবসান ঘটে। এক্ষেত্রে হাফেজ আল-আসাদের তুলনামূলক রক্ষণশীল রাজনৈতিক নীতিমালা থেকে বেরিয়ে এসে নব্য রাষ্ট্রপ্রধান কি কি উপায়ে সিরিয়ার প্রশাসনকে আরও উদারপন্থী করে ক্রমশ গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, এই বিষয়ে ২০০০ সাল থেকে প্রায় এক বছর যাবত একটি রাজনৈতিক বিতর্ক চলছিল যা ডেমাস্কাস স্প্রিং নামে খ্যাতি লাভ করে। উল্লেখ্য যে ডেমাস্কাস স্প্রিং বাশারের পিতার রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতির সামলোচনা করলেও তিনি এই বিতর্ক হতে উত্থাপিত বেশ কিছু প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছিলেন ও বাস্তবায়িত করেছেন। যেমন মেজে নামক একটি কারাগার যেখানে রাজনৈতিক বন্দীদের আটক রাখা হত, বাশার এই কারাগারের সব রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করেন ও কারাগারটি বন্ধ ঘোষণা করেন।

২০০৬ সালে দামেস্কের একটি দেয়াল লিখন যেখানে বাশার আল-আসাদের প্রতিকৃতির পাশে লেখা রয়েছে "সৃষ্টিকর্তা সিরিয়াকে রক্ষা করুন"।

বাশার তার পিতার তুলনায় কিছুটা উদারপন্থী রাষ্ট্রনায়ক হলেও তিনি রাজনৈতিক স্বাধীনতার তেমন উন্নয়ন সাধন করেননি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি একনিষ্ঠ ভাবে পিতার নীতিমালা অবলম্বন করলেও সেগুলোর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমালোচনা এড়িয়ে যাবার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন ও লক্ষ্য রেখেছেন যে তার কার্যক্রম যেন কোন অসন্তোষের কারণ না হয়। [] মার্কিন এবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাশার বলেন, “আমাদের কারাগারে কোন ব্যক্তিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় আটক রাখা হয়নি”।

অর্থনৈতিক নীতিমালা

বাশার নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার অর্থনৈতিক আধুনিকীকরণ মূলত রাষ্ট্র মালিকানার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। অর্থিনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার উদ্দেশ্যে বাশার ব্যাঙ্কিং খাতে বেসরকারী উদ্যোগ ও ব্যাবসায় বাণিজ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগের পথকে সুগম করেছেন। উল্লেখ্য যে বাশারের এই নীতিমালাকে সিরিয়ার অর্থনীতির গতিপথ পরিবর্তনের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।[] কেননা অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস মতে ২০১৫ সাল নাগাদ সিরিয়াকে তেল রপ্তানির পরিবর্তে আমদানী করতে হতে পারে। যার কারণে ভবিষ্যতে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নিশ্চয়তা পেতে বর্তমানে তেল ব্যতীত অন্যান্য খাতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এই মুহুর্তে সিরিয়ার জিডিপির মাত্র ৩.১%[] দেশটির তেলখাত থেকে এসে থাকে। দেশটির অর্থনীতির তেল-নির্ভর পরিস্থিতি থেকে যে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা চলছে তা এই পরিসংখ্যানের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়।

সরকারী খাত

সরকারী খাতের আধুনিকীকরণে বাশার আল-আসাদের ভূমিকা আশানরূপ হয়নি। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় কর্মজীবি সিরীয়দের প্রায় অর্ধেকরই কর্মসংস্থান হয়ে থাকে সরকারী বা কোন না কোন রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে। ধারণা করা হয়ে থাকে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যেন কোন অবস্থাতেই সরকার বিরোধী অবস্থান নিতে বা অনুরঊপ কোন আন্দোলনে স্মর্থন যোগাতে উৎসাহী না হয় সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে উল্লিখিত হারটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।[].

রাজনৈতিক বিবেচনায় সিরিয়ার সরকার ব্যবস্থা পুরোপুরি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক না হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় বাশার আল-আসাদ একচ্ছত্র ভাবেই সিরিয়ার রাজনৈতিক ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন যেখানে তার বিরুদ্ধে কোন শক্তিশালী পক্ষ গড়ে উঠেনি বা অদূর ভবিষ্যতে গড়ে ওঠার সম্ভবনা দেখা যায় না। আগামী দিনগুলোতে সিরিয়ার রাজনৈতিক সংস্কার কীভাবে পরিচালিত হবে তা অনেকাংশেই নির্ভরশীল বাশার আল-আসাদের অর্থনৈতিক কর্ম পরিকল্পনার উপর। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে সিরিয়ায় তেল হতে অর্জিত রাজস্বর পরিমাণ ক্রমশ কমে আসছে এবং বিশেষজ্ঞদের মতে এই পরিস্থিতিতে যোগ্যতার পরিপূর্ণ প্রমাণ দিতে হলে বাশার আল-আসাদকে দেশটির আসন্ন অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সফল সমাধান করতে হবে।

বৈদেশিক নীতি

যুক্তরাষ্ট্র

ইরাকের সাথে সিরিয়ার দীর্ঘ বিরোধ ও সম্পর্কে বৈরিতা সত্ত্বেও বাশার আল-আসাদ ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর ইরাক অভিযানের বিরোধিতা করেছিলেন। বাশারের এই মতামত মূলত সাধারণ সিরীয় জনমতের প্রতিফলন ছিল। বাশার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ার অস্থায়ী আসনের ভোটাধিকার বলে উক্ত অভিযানের বিরুদ্ধে ভোট দেন।[১] মূলত এই কারণ সহ লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যাকান্ডে জড়িত থাকবার সন্দেহ ও অবিরত ভাবে ইসরায়েল-বিরোধী অবস্থান নিয়ে আসার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সাথে বাশার শাসিত সিরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি ঘটেছে, যা হাফেজ আল-আসাদ প্রশাসনের সাথেও খুব বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলনা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সিরিয়ার বৈরি সম্পর্কের আরেকটি কারণ ছিল লেবাননে সিরীয় সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি, যদিও ২০০৫ সালে সিরিয়া লেবানন থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ আনে যে ১৯৯৮ সালে বাশারের নির্দেশে সিরীয় কর্তৃপক্ষ লেবাননের সিরিয়াপন্থী জেনারেল এমিল লাহুদের রাষ্ট্রপতিত্বকে সমর্থন করার জন্য লেবানিজ সংসদ সদস্যদের উপর চাপ প্রয়োগ করেছিল। উল্লেখ্য যে বাশারের প্রভাবেই হোক আর যেভাবেই হোক, জেনারেল এমিল লাহুদ জনপ্রতিনিধিদের ভোটে ১৯৯৮ সালে ছয় বছরের জন্য লেবাননের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং সংসদের সম্মতিক্রমে আরও তিন বছরের বর্ধিত মেয়াদে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ম পালন করেন। উল্লেখ্য যে ২০০৪ সালে লেবাননের সংসদ কর্তৃক লাহুদের মেয়াদ বৃদ্ধির ঘটনাতেও যুক্তরাষ্ট্র বাশার আল-আসাদের হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছিল।

রাশিয়ান ফেডারেশান

২১ আগস্ট ২০০৮ তারিখে রুশ রাষ্ট্রপ্রতি দিমিত্রি মেদভেদেভের সাথে আল-আসাদ।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুলা দ্য সিলভা ২০০৩ সালে সিরিয়া সফরে এলে আল-আসাদ দামেস্কে তার সাথে বৈঠক করেন।

রাশিয়ার সাথে সিরিয়া বরাবরের মত ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বাশারের পিতা হাফেজ আল-আসাদ স্নায়ুযুদ্ধকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরবর্তীতে রাশিয়ান ফেডারেশানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং বাশার এই বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে উদ্যোগী হয়েছেন।

২০০৮ সালের জর্জিয়া তার স্বাধীনতাকামী ও রাশিয়াপন্থী দক্ষিণ ওসেশিয়া প্রদেশে সামরিক অভিযান চালাবার পর যে যুদ্ধের সূচনা হয়, বাশার সেই যুদ্ধ চলাকালে রাশিয়া সফর করেন। তিনি দক্ষিণ ওসেশিয়ার ঘটনাবলীর সাথে ইরাকের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাদৃশ্য তুলে ধরেন ও জর্জিয়ার আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান। উল্লেখ্য উক্ত যুদ্ধে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের পর রুশ সৈন্যরা দক্ষিণ ওসেশিয়াকে শত্রুমুক্ত করে জর্জিয়ার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। রুশ বাহিনী জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসির ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌছে গেলে ন্যাটো সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে জর্জিয়া সৈন্য ও অভিযান প্রত্যাহার করে ও সংকটের সমাপ্তি ঘটে।

আরব বিশ্ব

বাশার আল-আসাদ প্যালেস্টাইন লিবারেশান অর্গানাইজেশান (পিএলও)-র সাথে সিরিয়ার আবহমান বৈরি সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটান। তবে মার্কিন নীতির সমর্থক আরব রাষ্ট্রসমূহ বিশেষত সৌদি আরবের সাথে সিরিয়ার সম্পর্কের তেমন উন্নতি সাধিত হয়নি। এজন্য ইরানের সাথে সিরিয়ার আবহমান ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ককে দায়ী করা হয় যার ফলে অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলো মার্কিন প্রভাবে এবং এদিকে সিরিয়া কেউই সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগী হয় না।

২০০৫ লেবানন সঙ্কট

২০০৫ সালে লেবাননের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যাকান্ডের পর লেবাননে অনির্দিষ্টকালের জন্য রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এই হত্যাকান্ডের জন্য প্রধানত বাশার সহ সিরীয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে। বাশারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সূত্র ছিল এই যে হারিরি নেতৃত্বাধীন লেবানন সরকার সম্প্রতি সিরিয়াবিরোধী অবস্থান গ্রহণের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর এই প্রচারের ফলে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক জন্ম নেয়। বাশার আল-আসাদ রাফিক হারিরির হত্যাকান্ডকে দুঃখজনক ও হতাশাজনক আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের যথাযথতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। উল্লেখ্য যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে বাশার রফিক হারিরির হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন ও জড়িতদের কেউ সিরিয়ায় অবস্থান করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

২০০৬ লেবানন-ইসরায়েল সংঘর্ষ

২০০৬ সালে ঘটে যাওয়া লেবানন-ইসরায়েল সংঘর্ষ প্রসঙ্গে ঐ বছরের ১৫ আগস্টে বাশার আল-আসাদ মতামত দেন যে উক্ত সংঘর্ষে ইসরায়েলের শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে ও ইসরায়েলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লেবানিজ প্রতিরোধ অসীম সাহসিকতা দেখিয়েছে ও সাফল্য লাভ করেছে। বাশার আল-আসাদের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হয় ও অধিকাংশ গণমাধ্যমের কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।[২] এই মন্তব্যে বাশার আরও বলেন যে ইসরায়েল প্রকৃতপক্ষে শান্তির শত্রু। এর সাথে কোনরূপ শান্তি আলোচনা করে সাফল্য পাওয়া অসম্ভব কেননা ইসরায়েল ও তাদের বৃহত্তর মিত্ররা আগ্রাসী আচরণ করে ও একে অপরের আগ্রাসনকে সমর্থন করে। একই বক্তব্যে বাশার অন্যান্য আরব রাষ্ট্র যারা এই যুদ্ধে লেবাননের নিন্দা জানিয়েছিল তাদের কঠোর সমালোচনা করেন।

আল-আসাদ পরিবার

আল-আসাদ পরিবার

আল-আসাদ পরিবার সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিসরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা করে। পরিবারটি মূলত সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ আলাওয়াইট সম্প্রদায় হতে আগত যার আদিবাস মূলত লাতাকিয়া প্রদেশের ক্বারদাহা শহরে। আরবি ভাষায় আল-আসাদ শব্দের অর্থ ‘সিংহ’।

বাশার আল-আসাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ সিরিয়ার সামরিক অসামরিক বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী ও নেতৃস্থানীয় পদসমূহে আসীন রয়েছেন। পরিবারের সদস্য ছাড়াও মূল আলাওয়াইট সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ অধিকার করে আছেন।

  • হাফেজ আল-আসাদ, বাবা, সিরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি (১৯৭১-২০০০)
  • আনিসাহ মাখলুফ, মা
  • জামিল আল-আসাদ, চাচা, সংসদ সদস্য ও একটি মিলিশিয়ার প্রধান
  • বাসিল আল-আসাদ (মৃত্যু ১৯৯৪), বড় ভাই
  • আসমা আল-আসাদ, স্ত্রী
  • মাজ্‌দ আল-আসাদ, ছোট ভাই, একজন প্রকৌশলী
  • লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহের আল-আসাদ, ছোট ভাই, প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের প্রধান
  • ডাঃ বুশরা আল-আসাদ, একমাত্র বোন, একজন ফার্মাসিস্ট; উল্লেখ্য বোন হিসেবে তিনি রাষ্ট্রপতি বাশারের নীতি নির্ধারণীতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেন, প্রকৃতপক্ষে সব ভাইদের উপরই বোন বুশরার গভীর প্রভাব রয়েছে; জেনারেল আসেফ শাওকাতের স্ত্রী
  • জেনারেল আসেফ শাওকাত, ভগ্নীপতি, সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান
  • জেনারেল আদনান মাখলুফ, সম্পর্কে মামা, রিপাবলিকান গার্ডের প্রধান
  • আদনান আল-আসাদ, সম্পর্কে চাচা, দামেস্ক ভিত্তিক মিলিশিয়া স্ট্রাগ্‌ল কোম্পানীর নেতা
  • মুহাম্মাদ আল-আসাদ, সম্পর্কে চাচা, স্ট্রাগ্‌ল কোম্পানীর আরেক নেতা

রাজনৈতিক জীবন

সিরিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্রের কাঠামোয় সঙ্ঘটিত হয়। রাষ্ট্রের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি এবং বাথ পার্টির হাতে ন্যস্ত। সিরিয়া সংবধানমতে একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্র হলেও ১৯৬৩ সাল থেকে দেশটিতে একটি জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং বর্তমানে এর জনগণের সরকার পরিবর্তনের কোন ক্ষমতা নেই। দেশটি তাই কার্যত একটি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সিরিয়ার সরকার ইসরায়েলের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধকে জরুরি অবস্থার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সিরিয়ার প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হাফিয আল-আসাদ পাঁচ বার গনভোট বিজয়ের মাধ্যমে নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখেন। তার ছেলে ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদও ২০০০ সালের এক গনভোটে সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি পদে বহাল হন। রাষ্ট্রপতি ও তার মূল সহযোগীরাই, বিশেষত সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা, সিরিয়ার রাজনীতি ও অর্থনীতির মূল সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে থাকেন।

তথ্যসূত্র

  1. "¿Quién es el presidente de Siria Bashar al Assad?" [Who is the Syrian President Bashar al-Assad?]। CNN en Español (স্পেনীয় ভাষায়)। ১০ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১৭ 
  2. Leverett 2005, পৃ. 60।
  3. "স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতন: এখন পর্যন্ত কী কী ঘটল"প্রথম আলো। ৮ ডিসেম্বর ২০২৪। 
  4. "লন্ডনের চক্ষু চিকিৎসক থেকে সিরিয়ার কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ"বিবিসি বাংলা। ৮ ডিসেম্বর ২০২৪। 
  5. ইউটিউব - সিরীয় রাষ্ট্রপতি গণতন্ত্রের ব্যাপারে মতামত দিচ্ছেন
  6. "ভবিষ্যতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি পেতে ্হলে সিরিয়ায় জরুরি অর্থনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন"। ২৩ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ 
  7. সিরিয়ায়র অর্থনৈতিক অবস্থা[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. <http://www.macleans.ca/world/global/article.jsp?content=20060814_131615_131615 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে

বহিঃসংযোগ

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!