বর্ণচাকতি (color wheel) বা বর্ণবৃত্ত (colour circle)[১] হলো বৃত্তাকারে সাজানো বিভিন্ন রঙের হিউয়ের একটি বিমূর্ত ব্যাখ্যাচিত্র যা প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা চূড়ান্ত রঙসমূহের মধ্যে সম্পর্ক প্রদর্শন করে।
অনেক স্থানে color wheel এবং color circle শব্দবন্ধদুটি সমার্থকভাবে ব্যবহার করা হয়;[২][৩] তবে একটি শব্দবন্ধ হয়তো কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে বা সংস্করণে প্রযোজ্য, অন্যটি অন্যত্র। উদাহরণস্বরূপ, অনেকে বর্ণচাকতি ব্যবহার করে যান্ত্রিকভাবে ঘূর্ণনশীল ডিভাইস, যেমন কালার টপ বা ফিল্টার হুইলের ক্ষেত্রে। অন্যরা বিভিন্নরকম বর্ণচাকতিকে color disc, color chart, ও color scale নামে শ্রেণিবিভাগ করে।[৪]
শিল্পীরা তাদের বর্ণচাকতিতে অলঙ্করণমূলক মডেল হিসেবে সাধারণত তিনটি সমপরিমাণ পয়েন্টে লাল, হলুদ এবং নীল প্রাথমিক (আরওয়াইবি রং মডেল) রঙসমূহ ব্যবহার করে।[৫] মুদ্রাকর এবং অন্য যারা আধুনিক রং মেথড ও পরিভাষা ব্যবহার করে, তারা বিভাজক রং হিসেবে রাখে ম্যাজেন্টা, হলুদ ও সায়ান। বর্ণচাকতির মাঝখানের ও অধ্যন্তরীণ অংশে রঙগুলোর মিশ্রণ দেখানো হয়। পেইন্ট বা বিভাজক রং মডেলে "ভরকেন্দ্র" (center of gravity) সাধারণত (সবসময় না[৬]) কালো রঙের হয়, অর্থাৎ সব আলোর রং শোষিত হয়েছে। অন্যদিকে বর্ণচাকতিতে ভরকেন্দ্র হয় সাদা বা ধূসর, অর্থাৎ বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো তাতে মিশেছে (সব তরঙ্গদৈর্ঘ্য অথবা দুটো পরিপূরক রঙ)
আইজ্যাক নিউটনের উদ্ভাবিত আসল বর্ণবৃত্তে কেবল বর্ণালীর হিউগুলোই দেখানো হয়েছিল। তিনি ভেবেছিলেন যে উপস্থিত প্রতিটি বর্ণালী রঙের রশ্মির ভরকেন্দ্র থেকে হয়তো বিভিন্ন আলোর মিশ্রণের পর নতুন রং সৃষ্টির নিয়ম নির্ণয় করা যাবে।
তাও বিভিন্ন আলোর মিশ্রণের রঙের নিয়ম ব্যাখ্যা করার জন্য যে, উপস্থিত প্রতিটি বর্ণালী রঙের রশ্মির ভরকেন্দ্র থেকে হয়তো সেগুলো নির্ণয় করা যাবে।[৭] সে উদ্দেশ্যে তিনি ডায়াগ্রাম করে ছোট ছোট বৃত্ত আকারে রঙগুলো উপস্থাপন করেন। তবে বৃত্ত মধ্যস্থ ভাগগুলো সমান ছিল না, কারণ তিনি একাজে ডোরিয়ান মিউজিক স্কেলের ওপর নির্ভর করেছিলেন।[৮] পরবর্তীতে অধিকাংশ বর্ণচাকতিতে লাল ও বেগুনির মাঝে পার্পল রং অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং হিউ বিভাজনও সম-আকৃতির করা হয়েছে।[৯] রঙবিজ্ঞানী ও মনোবিদগণ প্রায়শই সংযোজী প্রাথমিক রং লাল, সবুজ ও নীল ব্যবহার করেন এবং সাধারণত সেটাকে "বর্ণচাকতি" না বলে "বর্ণবৃত্ত" নামে অভিহিত করেন.[১০]
গ্যালারি
নিউটনের মিউজিক্যাল ইন্টারভেল নির্ভর অপ্রতিসম বর্ণচাকতি। বৃত্তগুলো হতে আসা রশ্মি বিভিন্ন পরিমাণে মিশিয়ে উৎপন্ন হয় "z" রঙ