ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮

ফৌজদারি কার্যবিধি বা ক্রিমিনাল প্রসিজার কোড হলো একটি আইনি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে অপরাধমূলক কার্যকলাপের তদন্ত, অভিযুক্তের গ্রেফতার, আদালতে বিচার এবং অপরাধীদের শাস্তির বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হয়। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ সালে প্রণীত হয়েছিল এবং এটি ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে, যেমন বাংলাদেশ, ভারত, ও পাকিস্তানে প্রচলিত। এই কার্যবিধি মূলত অপরাধ দমন এবং অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য আইনি কাঠামো সরবরাহ করে।

ফৌজদারি কার্যবিধি বিভিন্ন ধরনের আদালতের বিচারিক ক্ষমতা এবং সেসব আদালতের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত বিধান দেয়। এর মাধ্যমে জানা যায়, কীভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে হবে, সাক্ষীদের কীভাবে তলব করা হবে, গ্রেফতারের পর কীভাবে তদন্ত পরিচালনা হবে, এবং অপরাধ দমনে পুলিশআদালতের ভূমিকা কী হবে।[] এছাড়াও, ফৌজদারি কার্যবিধি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়, যেমন সমন জারি, গ্রেফতারি পরোয়ানা, তল্লাশি পরোয়ানা, অভিযুক্তের সম্পত্তি ক্রোক করা, মামলার তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া। অপরাধ দমনে পুলিশের ক্ষমতা এবং তাদের উপর যে দায়িত্ব আরোপ করা হয়েছে তাও এই আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। [] ফৌজদারি কার্যবিধির মাধ্যমে মামলাগুলোতে জড়িত সকল পক্ষের ভূমিকা নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে একজন ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারক মামলার সব প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।[] এই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করলে মামলার সুষ্ঠু বিচার হওয়া সম্ভব নয়। অভিযুক্তের অধিকার সংরক্ষণ এবং ফৌজদারি মামলা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য উকিল, বিচারক এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান সম্যকভাবে জানা আবশ্যক।[] ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে, ম্যাজিস্ট্রেটের এখতিয়ারের মধ্যে অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করা, তদন্তের নির্দেশ দেওয়া, অপরাধীদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় সোপর্দ করা এবং প্রয়োজনে সম্পত্তি ক্রোক করা অন্তর্ভুক্ত।[] অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর, আদালত শাস্তি ঘোষণা করে বা অভিযুক্তকে খালাস প্রদান করে।[]

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ (Criminal Procedure Code, 1898), সংক্ষেপে "সিআরপিসি" নামে পরিচিত, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রণয়ন করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল অপরাধ দমনে এবং অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া সুসংগঠিত ও কার্যকর করা। এটি একটি বিস্তৃত আইন যা অপরাধের তদন্ত, অভিযোগ গঠন, বিচারের প্রক্রিয়া, শাস্তি প্রদানের পদ্ধতি, জামিন, আপিল এবং অন্যান্য বিষয়ক নির্দেশনা প্রদান করে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে, দেশটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর অনেক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আইন ও বিধি গ্রহণ করে এবং সেগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করে। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-ও সেই ধরনের একটি আইন যা পাকিস্তানের আমল থেকেই প্রযোজ্য ছিল এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের আইনগত কাঠামোর অংশ হিসেবে রয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করা হয়েছে, যাতে দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার সাথে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। বিশেষ করে নারীর অধিকার, শিশুদের সুরক্ষা, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংশোধনী করা হয়েছে।

প্রথম ভাগ: প্রারম্ভিক

প্রথম অধ্যায়

ফৌজদারি কার্যবিধির প্রথম ভাগটি প্রাথমিক অংশ নিয়ে গঠিত, যা আইনটির শিরোনাম, প্রয়োগ ক্ষেত্র বা এখতিয়ার এবং কিছু সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করে। এতে ১৮৯৮ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া এই আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সমগ্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য। প্রথম অধ্যায়ে অপরাধের বিভিন্ন সংজ্ঞা যেমন জামিনযোগ্য ও অজামিনযোগ্য অপরাধ, অভিযোগের ধরন, এবং তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এতে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট এবং আদালতের ক্ষমতা ও বিচারিক প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সংজ্ঞাগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।[]

দ্বিতীয় ভাগ: ফৌজদারী আদালত ও কার্যালয়ের স্থাপন ও ক্ষমতা

ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বিতীয় ভাগটি ফৌজদারি আদালত ও তাদের এখতিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে। এটি বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারি আদালত যেমন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, দায়রা আদালত, এবং উচ্চ আদালতের ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে। এছাড়াও আদালতগুলোর কাজের পরিসীমা, বিচারিক ক্ষমতা, এবং কোন আদালত কোন ধরনের মামলা পরিচালনা করবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ভাগটি বিচার ব্যবস্থার কাঠামো গঠন এবং আদালতগুলোর ভূমিকা স্পষ্ট করে, যাতে ফৌজদারি মামলা পরিচালনা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে হতে পারে। দ্বিতীয় ভাগটি দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ও পঞ্চম অধ্যায়ের সমন্বয়ে গঠিত।

দ্বিতীয় অধ্যায়: ফৌজদারি আদালতের প্রকারভেদ এবং তাদের ক্ষমতা

বাংলাদেশে ফৌজদারি আদালত দুটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত। এই শ্রেণিগুলো হলো সেশন আদালত এবং ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, সেশন আদালত গুরুতর অপরাধের বিচার করে এবং এই আদালতগুলোর প্রধান বিচারক হচ্ছেন সেশন জজ।[] দেশের প্রতিটি জেলা এবং মহানগর এলাকায় সেশন আদালত রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি হলো বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এবং দ্বিতীয়টি হলো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা মামলার বিচার কার্য পরিচালনা করেন এবং তারা চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা মহানগর এলাকায় "মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট" নামে পরিচিত।[] এছাড়াও রয়েছে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট যারা বিভিন্ন আদালতে কার্য সম্পাদন করেন। বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে এবং তারা ফৌজদারি মামলাগুলোর বিচারিক কার্য পরিচালনা করে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উল্লেখ্য, মহানগর এলাকায় প্রধান বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকেন, যিনি "প্রধান মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট" নামে পরিচিত।[] একইভাবে অন্যান্য এলাকায় প্রধান বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকেন যারা সেসব এলাকার আদালতগুলো পরিচালনা করেন।

বাংলাদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনে অঞ্চলভিত্তিক বিভাগসমূহ এবং জেলা গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি সেশন ডিভিশন একটি জেলা বা একাধিক জেলা নিয়ে গঠিত হতে পারে। তবে সরকার যদি চায়, তাহলে সেশন ডিভিশনের সংখ্যা বা সীমানা পরিবর্তন করতে পারে। কোনো সেশন ডিভিশন বা জেলার সীমানা সরকার কর্তৃক পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত থাকবে।[] মহানগর এলাকাকে এই বিধানের অধীনে সেশন ডিভিশন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এছাড়াও, সরকার একটি জেলা বিভিন্ন উপজেলায় ভাগ করতে পারে এবং গেজেটে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এর সীমানা নির্ধারণ করতে পারে। তদুপরি, উপজেলাগুলোকে এমনভাবে গঠন করতে হবে যাতে একটি থানার সীমানার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।[]

সেশন আদালত প্রতিটি সেশন ডিভিশনের জন্য সরকার দ্বারা গঠিত হয় এবং এতে একজন সেশন জজ দায়িত্ব পালন করেন। সেশন জজ ছাড়াও অতিরিক্ত সেশন জজ এবং সহকারী সেশন জজ নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এই আদালত গুরুতর অপরাধ, যেমন খুন, ডাকাতি ইত্যাদি বিচার করে।[] অন্যদিকে, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুটি ভাগে বিভক্ত: বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত হন—প্রধান মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট, দ্বিতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট, এবং তৃতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট। মহানগর এলাকার প্রধান মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন এবং মহানগরের বাইরের এলাকায় প্রধান বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকেন। প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটরা সাধারণত ছোটখাটো অপরাধের বিচার করেন এবং মহানগর এলাকায় তাদের মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট বলা হয়। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা ও এখতিয়ার অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর অপরাধ বিচার করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।[] নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রধানত প্রশাসনিক ও শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিযুক্ত থাকেন এবং বিভিন্ন অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনে তারা কাজ করেন এবং প্রশাসনিক আদেশ বা শৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেন।[] এই আদালতসমূহের কাঠামো এবং এখতিয়ার বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর অধীনে নির্ধারিত হয়েছে, যা বিচারিক প্রক্রিয়ার গতি ও সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে।[]

মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলি মহানগর এলাকার বিচার কার্য পরিচালনার জন্য গঠিত। মহানগর আদালতে বিচারিক কার্য সম্পাদনের জন্য প্রধান মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত প্রধান মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট এবং অন্যান্য মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়, যাদের নিয়োগ বাংলাদেশ বিচার বিভাগ থেকে করা হয়। সরকারের অনুমতিক্রমে এক বা একাধিক অতিরিক্ত প্রধান মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হতে পারে, এবং তাদেরকে প্রধান মহানগর ম্যাজিস্ট্রেটের সমস্ত ক্ষমতা অর্পণ করা যায়।[] এই মহানগর ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেঞ্চ হিসেবে বসতে পারেন, যেখানে একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট একত্রে বিচার কার্য পরিচালনা করতে পারেন। বেঞ্চের কার্যক্রমের জন্য প্রধান মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ম প্রণয়ন করেন।[] মহানগর ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে প্রযোজ্য হয়, এবং তারা তাদের বিচারিক দায়িত্ব মহানগর এলাকার মধ্যেই পালন করেন। প্রধান মহানগর ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা এবং দায়িত্ব স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় এবং তার সাধারণ এখতিয়ার অধীনস্থ অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেটদের উপর প্রয়োগ করা হয়।[]

জাস্টিস অব দ্য পিস মূলত স্থানীয় পর্যায়ে আইন প্রয়োগ ও শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য নিয়োগ করা হয়।[] বাংলাদেশ সরকার সরকারি গেজেটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যক্তিদের জাস্টিস অব দ্য পিস হিসেবে নিয়োগ দেয়। এই পদে নিয়োগকৃত ব্যক্তিদের জন্য শর্ত হলো তারা অবশ্যই বাংলাদেশে বসবাসকারী হতে হবে এবং কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া যাবে না। বাংলাদেশে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং মহানগর ম্যাজিস্ট্রেটরাও তাদের নিজ নিজ এখতিয়ারে জাস্টিস অব দ্য পিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।[]

তৃতীয় অধ্যায়: বিচারকদের বিচারিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব

বাংলাদেশে শাস্তির বিধান এবং আদালত কর্তৃক শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা বিভিন্ন ধরণের আদালতের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। শাস্তির এই ক্ষমতা বিচারকের শ্রেণি অনুযায়ী বিভিন্ন হতে পারে।[]

উচ্চ আদালত (হাইকোর্ট ডিভিশন) আইনের দ্বারা নির্ধারিত যেকোনো শাস্তি দিতে পারে, যার মধ্যে মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও অন্তর্ভুক্ত। তবে, সেশন আদালতের বিচারক মৃত্যুদণ্ড দিলে তা উচ্চ আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর হতে পারে।[]

সেশন আদালতের বিচারক ও অতিরিক্ত সেশন বিচারক যেকোনো শাস্তি দিতে পারেন, তবে যুগ্ম সেশন বিচারক সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সাজা দিতে পারেন। তারা মৃত্যুদণ্ড বা ১০ বছরের বেশি শাস্তি দিতে পারেন না।[] মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট সর্বাধিক ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দিতে পারেন। এছাড়া, তারা সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা জরিমানা আরোপ করতে পারেন। দ্বিতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট সর্বাধিক ৩ বছর পর্যন্ত সাজা ও ৫,০০০ টাকা জরিমানা দিতে পারেন। তৃতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট সর্বাধিক ২ বছরের কারাদণ্ড এবং ২,০০০ টাকা জরিমানা আরোপ করতে পারেন।[] এছাড়া, কিছু বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটরা ৭ বছরের বেশি সাজা দিতে পারেন, তবে তারা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারেন না।[] এ ধরনের শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা বিভিন্ন আইন অনুযায়ী বিচারক এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে থাকে।[]

তৃতীয় ভাগ: সাধারণ বিধান

চতুর্থ অধ্যায়: বিভিন্ন ধরনের মামলার বিচারিক এখতিয়ার

এই অধ্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ এবং যেসব ব্যক্তি গ্রেফতার করছেন তাদের জন্য জনগণের সহায়তা এবং তথ্য প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।[] জনগণের জন্য নির্দেশনা হলো:

  1. যখন কোনো ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ কর্মকর্তা তাকে সহায়তা চাইবেন, জনগণকে অবশ্যই গ্রেফতারের জন্য বা গ্রেফতার প্রতিরোধে সাহায্য করতে হবে।[]
  2. জনগণকে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ প্রতিরোধ করতে এবং যেকোনো সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি ঠেকাতে সহায়তা করতে হবে।[]
  3. পুলিশ সদস্য ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাদের জন্যও জনগণ সহায়তা করতে পারে।[]

পঞ্চম অধ্যায়: আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ার সময়সীমা এবং আদালতের বিচারিক ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশের ফৌজদারী কার্যবিধির এই অধ্যায়ে গ্রেফতার, পালিয়ে যাওয়া এবং পুনরায় গ্রেফতারের বিভিন্ন বিধান রয়েছে। এখানে গ্রেফতার কীভাবে করা হবে, কিভাবে একটি ব্যক্তি পালিয়ে গেলে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হবে, এবং গ্রেফতারের সময় ব্যক্তির কী কী অধিকার রয়েছে তা বর্ণিত হয়েছে।[]

ধারা ৪৬ অনুসারে, পুলিশ বা কোনো গ্রেফতারকারী ব্যক্তির শরীরের সঙ্গে শারীরিক স্পর্শ করা বা সীমাবদ্ধ করতে হবে যদি না ব্যক্তি নিজে থেকে আত্মসমর্পণ করেন। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করেন, তবে পুলিশ তাকে ধরতে প্রয়োজনীয় শক্তি ব্যবহার করতে পারে, তবে মৃত্যুদণ্ডের অপরাধ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে মৃত্যুর কারণ করা যাবে না।[] ধারা ৪৭ এবং ৪৮ অনুযায়ী, গ্রেফতারকারী যদি সন্দেহ করে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি একটি স্থানে লুকিয়ে আছে, তবে পুলিশ সেই স্থানে প্রবেশের অনুমতি চাইতে পারে এবং প্রয়োজনে দরজা বা জানালা ভাঙতে পারে, তবে যদি সেই স্থানে একজন নারী থাকেন, যিনি জনসমক্ষে আসেন না, তাকে আগে সরে যাওয়ার জন্য সুযোগ দিতে হবে।[] ধারা ৫০ অনুযায়ী, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে শুধুমাত্র পালানোর চেষ্টা প্রতিরোধ করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হবে।[] এছাড়াও, ধারা ৫৪ অনুযায়ী, পুলিশ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারে, যদি তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধে জড়িত।[] এই অধ্যায়ের অন্যান্য ধারাগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির তল্লাশি, নারীদের তল্লাশির জন্য নারী পুলিশের প্রয়োজনীয়তা, এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির ন্যায্য অধিকার।[]

ষষ্ঠ অধ্যায়: গ্রেফতার এবং পুনরায় গ্রেফতার

গ্রেফতার এবং পুনরায় গ্রেফতার নিয়ে ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে বিচারিক প্রক্রিয়ায় উপস্থিত হওয়ার জন্য ব্যক্তিকে বাধ্য করার বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।[] প্রথমত, সমন জারি করা হয়, যেখানে আদালত কাগজপত্রে ব্যক্তির উপস্থিতির নির্দেশনা প্রদান করে। এই সমনগুলি সাধারণত পুলিশ বা সরকারি কর্মচারী দ্বারা পরিবেশন করা হয়। সমনগুলি যথাসময়ে প্রাপকের হাতে পৌঁছানো এবং তার স্বাক্ষর নিয়ে তা সম্পন্ন করা হয়। যদি সমন গ্রহণকারী ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া না যায়, তবে তার পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সদস্যের হাতে এটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এভাবেও সমন কার্যকর না হলে, বাড়ির দৃশ্যমান স্থানে এটি স্থাপন করা হয়। এছাড়াও, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা প্রক্রিয়া রয়েছে যা তাদের দপ্তরে প্রেরণ করা হয়।[] সমন প্রক্রিয়া কাজ না করলে, আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারে, যা সাধারণত পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা না মানলে, ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশনা জারি করা হতে পারে।[]

সপ্তম অধ্যায়: নথিপত্র এবং অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি উৎপাদনে বাধ্য করার প্রক্রিয়া এবং ভুলভাবে সীমাবদ্ধ ব্যক্তিদের আবিষ্কারের জন্য

এই অধ্যায়টির মূল বিষয়বস্তু হলো নথি ও অন্যান্য চলমান সম্পত্তি সংগ্রহ এবং অন্যায়ভাবে আটক ব্যক্তিদের সন্ধান করতে যে প্রক্রিয়াগুলো ব্যবহার করা হয় তা ব্যাখ্যা করা। এই অধ্যায়টি মূলত বিভিন্ন প্রকারের সমন, অনুসন্ধান পরোয়ানা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।[] প্রথম অংশে, আদালত বা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় নথি বা বস্তু সংগ্রহের জন্য সমন বা লিখিত নির্দেশ পাঠানোর ক্ষমতা রাখে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংকের নথি জব্দ করতে হলে উচ্চ আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন।[] দ্বিতীয় অংশে অনুসন্ধান পরোয়ানা কীভাবে জারি করা যায় তা উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত যদি মনে করে যে সংশ্লিষ্ট বস্তুটি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় হাজির করবে না, তাহলে সাধারণ অনুসন্ধান বা পরিদর্শনের জন্য অনুসন্ধান পরোয়ানা জারি করা যেতে পারে। এটি বাড়ি বা স্থাপনা তল্লাশির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।[]তৃতীয় অংশে, অবৈধভাবে আটক ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান পরোয়ানা জারি করার বিধান রয়েছে। বিচারক যদি সন্দেহ করেন যে কেউ অন্যায়ভাবে আটক আছে, তিনি অনুসন্ধান পরোয়ানা জারি করতে পারেন।[] চতুর্থ অংশে, অনুসন্ধান কীভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয়েছে। তল্লাশি করার সময়, প্রত্যক্ষদর্শীদের উপস্থিতিতে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে এবং তল্লাশির সময় পাওয়া জিনিসপত্রের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।

চতুর্থ ভাগ: অপরাধ দমন

অষ্টম অধ্যায়: শান্তি বজায় রাখা এবং ভালো আচরণের জন্য নিরাপত্তা

এই অধ্যায় এর অধীনে "শান্তি বজায় রাখা এবং ভালো আচরণের জন্য নিরাপত্তা" বিষয়টি বাংলাদেশ দণ্ডবিধির আইনগত কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে শান্তি বজায় রাখা এবং অপরাধ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্থা গৃহীত হয়।[]

প্রথমত, আদালত কোনো ব্যক্তিকে অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করার পর তাকে জামিনের মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখতে নির্দেশ দিতে পারে। আদালত যদি মনে করে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি ভবিষ্যতে জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে পারে, তখন আদালত সেই ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শান্তি বজায় রাখার অঙ্গীকার করতে বাধ্য করতে পারে।[] অন্যদিকে, আদালত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়ার পর যদি মনে করে যে সেই ব্যক্তি জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে পারে, তাহলে তাকে জামিনের শর্তে ভালো আচরণের অঙ্গীকার করতে বলা হয়। এক্ষেত্রে, আদালত সেই ব্যক্তির আচরণের উপরে নজরদারি রাখার জন্য শর্ত আরোপ করতে পারে।[] এই অধ্যায়ে এমন ব্যক্তিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যারা সন্দেহজনকভাবে তাদের কার্যকলাপ লুকানোর চেষ্টা করছে বা তাদের জীবিকা স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে, আদালত তাদেরকেও ভালো আচরণ নিশ্চিত করতে জামিন প্রদান করতে বলতে পারে।[] তাছাড়া, যারা চিরাচরিত অপরাধী, যেমন ডাকাত, চোর, অথবা যারা চুরি করা সম্পদ লুকিয়ে রাখে, তাদের ক্ষেত্রেও জামিনের শর্ত আরোপ করা যেতে পারে।[] যদি কোনো ব্যক্তিকে জামিনের শর্তে কারাগারে পাঠানো হয় এবং সে সেই শর্ত মানতে ব্যর্থ হয়, আদালত সেই ব্যক্তিকে কারাগারে পুনরায় পাঠানোর নির্দেশ দিতে পারে। তবে, সংশ্লিষ্ট আদালত সেই ব্যক্তির জামিনের শর্ত শিথিল করার ক্ষমতাও রাখে।[] এই অধ্যায়ের মাধ্যমে, আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অপরাধ প্রতিরোধ করা, যেখানে আদালত ও ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন।[]

নবম অধ্যায়: বেআইনি সমাবেশ

বাংলাদেশের দণ্ডবিধির আওতায় অবৈধ সমাবেশ বা পাঁচজনের বেশি লোকের সমাবেশ যদি জনশৃঙ্খলা ব্যাহত করার সম্ভাবনা তৈরি করে, তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসার সেই সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করার আদেশ দিতে পারেন।[] আদেশ অমান্য করলে, বলপ্রয়োগ করে সমাবেশ ভেঙে দেওয়া যায় এবং প্রয়োজনে তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। যদি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা সম্ভব না হয় এবং জননিরাপত্তার জন্য এটি বিপজ্জনক হয়, তখন সামরিক বাহিনীর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সামরিক কর্মকর্তারা প্রয়োজনে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করেও সমাবেশ ভাঙতে পারেন, তবে যতটা সম্ভব কম ক্ষতি করে তা করতে হবে।[] যদি কোনো সামরিক কর্মকর্তা বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার সময় প্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ করেন, এবং তা জননিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে করা হয়, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, যতক্ষণ না তা সরকারের অনুমোদিত হয়।[]

দশম অধ্যায়: জন উপদ্রপ

বাংলাদেশের দণ্ডবিধির আওতায় জনদুর্ভোগের বিষয়ে একটি কার্যকর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।[] যদি কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসার একটি প্রতিবেদন বা তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হন যে জনসাধারণের জন্য অবৈধ বাধা বা বিরক্তি ঘটছে, তখন তিনি একটি শর্তসাপেক্ষ আদেশ জারি করতে পারেন, যেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।[] যদি সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আদেশ মানতে অস্বীকার করে, তখন ম্যাজিস্ট্রেট সেই আদেশকে স্থায়ী করে দিতে পারেন। এছাড়া, জরুরি পরিস্থিতিতে জনস্বার্থে তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় যাতে জনস্বাস্থ্য বা জননিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আদেশ অমান্য করলে, আইন অনুসারে শাস্তি পেতে হবে এবং আদেশ কার্যকর করার জন্য সরকারের সহায়তা নিতে পারেন ম্যাজিস্ট্রেট।[]

একাদশ অধ্যায়: অস্থায়ী আদেশসমূহ জরুরি ক্ষেত্রে উতপাত বা আশঙ্কাজনক বিপদের জন্য

যখন কোনও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোনও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মনে হয় যে অবিলম্বে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন এবং দ্রুত সমাধান দরকার, তখন তিনি লিখিত আদেশ দ্বারা কোনও ব্যক্তিকে কোনও নির্দিষ্ট কাজ থেকে বিরত থাকতে বা কোনও সম্পত্তি সম্পর্কে কিছু করার নির্দেশ দিতে পারেন।[] এই আদেশ দেওয়ার মাধ্যমে আইনানুগভাবে নিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে বাধা, অসুবিধা বা ক্ষতি থেকে রক্ষা করা হয় এবং জনস্বাস্থ্য বা নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি রোধ করা হয়।[] আদেশটি জরুরি অবস্থায় একপক্ষীয়ভাবে জারি করা যায় এবং দুই মাসের বেশি বলবৎ থাকে না, তবে সরকার প্রয়োজনে সময় বাড়াতে পারে।[]

দ্বাদশ অধ্যায়: অস্থাবর সম্পত্তি বিরোধ সংক্রান্ত

অস্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, ম্যাজিস্ট্রেট সেকশন ১৪৫ ও ১৪৬ এর আওতায় কার্যপ্রণালী গ্রহণ করেন।[] এ ধরনের বিরোধ জমি, জলাশয়, সীমানা বা জমির কোনো সম্পদ নিয়ে হতে পারে। ম্যাজিস্ট্রেট প্রাথমিকভাবে বিরোধের বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করেন এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে দেখেন যে, কার কাছে সম্পত্তির প্রকৃত দখল রয়েছে। যদি কোনো পক্ষ গত দুই মাসে বলপূর্বক দখলচ্যুত হয়, তবে সেই পক্ষকে দখল পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে।[] সেকশন ১৪৫ অনুসারে, প্রমাণের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট নির্ধারণ করেন কোন পক্ষ দখলে ছিল। প্রমাণ সাপেক্ষে তিনি যে পক্ষকে দখলে রাখার নির্দেশ দেন, তাকে বৈধভাবে উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত সেই পক্ষের দখল বজায় রাখার নির্দেশ দেন এবং অন্য পক্ষকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন।[] যদি ম্যাজিস্ট্রেট কোনো পক্ষকেই প্রকৃত দখলে থাকার প্রমাণ না পান, তবে সেকশন ১৪৬ অনুসারে, সম্পত্তি সংযুক্ত করেন এবং আদালত নির্ধারণ না করা পর্যন্ত তা দখল থাকবে। সংযুক্ত সম্পত্তির তদারকির জন্য রিসিভার নিয়োগ করা হতে পারে, যদি আদালতের নির্দেশ না থাকে।[] এছাড়াও, সেকশন ১৪৭ অনুসারে, যদি কোনো ব্যবহারিক অধিকার নিয়ে বিরোধ হয়, যেমন জমি বা পানির কোনো নির্দিষ্ট অধিকার, তখনও একই প্রক্রিয়ায় বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট প্রমাণের ভিত্তিতে অধিকার স্বীকার করলে, তিনি অধিকার চর্চায় কোনো বাধা না দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।[]

ত্রয়োদশ অধ্যায়: পুলিশের প্রতিরোধ্মূলক ব্যবস্থ্যা

পুলিশের মূল দায়িত্ব হল অপরাধ প্রতিরোধ করা।[] সেকশন ১৪৯ অনুসারে, পুলিশ যেকোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ প্রতিরোধের জন্য বাধা দিতে পারে এবং সাধ্যমতো তা প্রতিরোধ করবে।[] সেকশন ১৫০ অনুসারে, যদি পুলিশ অপরাধের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে পারে, তবে তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাতে হবে।[] অপরাধ প্রতিরোধের জন্য সেকশন ১৫১ অনুসারে, পুলিশ অপরাধের পরিকল্পনাকারীকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে।[] সেকশন ১৫২ অনুসারে, পুলিশ নিজের কর্তৃত্বে কোনো পাবলিক সম্পত্তির ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে।[] এছাড়া, ওজন ও পরিমাপ যন্ত্রের সঠিকতা পরীক্ষা করে তা জব্দ করার ক্ষমতা রাখে (সেকশন ১৫৩)।[]

পঞ্চম ভাগ: পুলিশকে তথ্য এবং তদন্ত করার ক্ষমতা

চতুর্দশ অধ্যায়

পুলিশের দায়িত্ব অপরাধ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন কোনো পুলিশ কর্মকর্তা জানতে পারেন যে, কোনো অপরাধ সংঘটিত হতে চলেছে, তখন তিনি তা প্রতিরোধের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।[] যদি পুলিশ কোনো ব্যক্তির অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানেন, তাহলে তিনি সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন, এমনকি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াই।[] অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশ অপরাধের তথ্য সংগ্রহ করে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে এবং সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।[] তদন্ত চলাকালে প্রাপ্ত তথ্যগুলি লিপিবদ্ধ করা হয় এবং সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রেরণ করা হয়।[] তদন্তের সময় পুলিশ অপরাধের স্থান বা প্রাসঙ্গিক প্রমাণ অনুসন্ধান করতে পারে।[] যদি কোনো সরকারি বা বেসরকারি স্থানে প্রমাণ থাকার সন্দেহ থাকে, পুলিশ সেই স্থানে তল্লাশি পরিচালনা করতে পারে। প্রমাণ সংগ্রহের পর, তা কোর্টে পেশ করা হয়।[] একটি অপরাধের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সম্পূর্ণ হলে পুলিশ একটি রিপোর্ট তৈরি করে যা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রেরণ করা হয়। এই রিপোর্টে অপরাধী, সাক্ষী, প্রমাণ ও ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট সেই অনুযায়ী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন।[] এছাড়া, পুলিশ অফিসাররা যদি দেখতে পান যে কোনো ব্যক্তি নিজেই অপরাধ করতে চলেছে, তবে তিনি পুলিশি হেফাজতে সেই ব্যক্তিকে আটক করতে পারেন, যাতে অপরাধটি ঘটতে না পারে।[]

ষষ্ঠ ভাগ: পুলিশকে তথ্য এবং তদন্ত করার ক্ষমতা

পঞ্চদশ অধ্যায়: তদন্ত এবং বিচারের ক্ষেত্রে ফৌজদারি আদালতের এখতিয়ারের

অপরাধমূলক মামলার তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ায় আদালতের কার্যধারা বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে, নির্ভর করে অপরাধের ধরন এবং ঘটনা কোথায় ঘটেছে তার উপর। সাধারণত, যেখানে অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে, সেই এলাকার আদালতেই তদন্ত ও বিচার হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে, সরকার একাধিক আদালতের অধীনে থাকা মামলাগুলো অন্য এলাকায় স্থানান্তর করতে পারে। যদি অপরাধটি বিভিন্ন জায়গায় ঘটে বা এর পরিণতি বিভিন্ন স্থানে ঘটে, তাহলে সংশ্লিষ্ট এলাকার যে কোনো আদালতে মামলাটি তদন্ত এবং বিচার করা যায়।[] যদি অপরাধ কোনও চলমান কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, যেমন একাধিক অঞ্চলে ঘটছে, তাহলে সংশ্লিষ্ট এলাকার যেকোনো আদালতে সেটি বিচারযোগ্য। অপরাধটি যদি ভ্রমণ বা যাত্রাপথে সংঘটিত হয়, সেই ক্ষেত্রেও যাত্রাপথের মধ্যবর্তী যেকোনো আদালতে সেটি তদন্ত এবং বিচার করা যেতে পারে। যখন দুটি বা তার বেশি আদালত সংবদ্ধ থাকে, তখন উচ্চ আদালত নির্ধারণ করবে কোন আদালতে মামলাটি বিচার হবে।[]

ষোড়শ অধ্যায়: ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ

অধ্যায় XVI, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করে।[] যখন কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধের বিচার করতে যান, তাকে অভিযোগকারী এবং উপস্থিত সাক্ষীদের শপথ নিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। যদি অভিযোগ লিখিত হয়, তবে পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না এবং তা আদালতে স্থানান্তর করা যায়।[] কিছু ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট প্রাথমিকভাবে প্রমাণ যাচাই করতে পারেন এবং প্রয়োজন মনে করলে আসামির উপস্থিতি ছাড়াই তদন্ত পরিচালনা করতে পারেন।[] প্রমাণের অভাবে অভিযোগ বাতিলও করতে পারেন, তবে তাকে সেই সিদ্ধান্তের কারণ সংক্ষেপে উল্লেখ করতে হয়।[]

সপ্তদশ অধ্যায়: ম্যাজিস্ট্রেটদের সামনে কার্যপ্রণালী আরম্ভ

এই অধ্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়।[] এখানে মূলত কীভাবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে, কীভাবে সমন বা ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হবে, এবং কোন পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত উপস্থিতি বাদ দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে উপস্থিত হওয়া যাবে, তা বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন অভিযোগ যথেষ্ট ভিত্তিসম্পন্ন, তবে তিনি অভিযুক্তের জন্য সমন জারি করবেন। কিছু ক্ষেত্রে ওয়ারেন্টও ইস্যু করা হতে পারে। এছাড়া অভিযোগকারী এবং প্রসিকিউশন সাক্ষীদের তালিকা জমা দেওয়ার বিষয়টিও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।[]

যদি পুলিশ কোনও অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে, ম্যাজিস্ট্রেট তখন সেই তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করতে পারেন।[] অভিযোগের উপর ভিত্তি করে যদি নতুন মামলা দায়ের করা হয়, তবে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগের মামলা ও পুলিশের রিপোর্ট একত্রে বিচার করতে পারেন।[]

অষ্টাদশ অধ্যায়: দায়রা আদালত বা উচ্চ আদালত বিভাগ দ্বারা বিচারযোগ্য মামলার তদন্ত (বিলুপ্ত)

উনবিংশ অধ্যায়: চার্জ গঠন

অধ্যায় XIX এর মূল বিষয় হচ্ছে চার্জের ফর্ম এবং কাঠামো কীভাবে নির্ধারিত হবে তা নির্দিষ্ট করা। একটি চার্জের মধ্যে অপরাধের বিবরণ, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এবং সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা উল্লেখ থাকা আবশ্যক। যদি আইন কোনো অপরাধকে নির্দিষ্ট নাম দিয়ে থাকে, তাহলে সেই নামেই চার্জটি উল্লেখ করা যাবে।[] তবে, যদি অপরাধের কোনো নির্দিষ্ট নাম না থাকে, তাহলে অপরাধের সংজ্ঞার গুরুত্বপূর্ণ অংশ উল্লেখ করতে হবে, যাতে অভিযুক্ত ব্যক্তি জানেন যে তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি অভিযুক্তের আইনগত অধিকার রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।[]

চার্জটি ইংরেজি বা আদালতের নির্দিষ্ট ভাষায় লেখা যেতে পারে। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি পূর্বে কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে থাকে এবং সেই অপরাধের জন্য বর্তমান অপরাধের শাস্তি বাড়তে পারে, তাহলে পূর্বের সেই দণ্ডের তথ্য চার্জে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তবে যদি সেই তথ্য প্রথমে উল্লেখ করা না হয়, আদালত রায় ঘোষণার আগে যে কোনো সময় তা যুক্ত করতে পারে।[] চার্জের মধ্যে অপরাধ সংঘটনের সময়, স্থান এবং যার বিরুদ্ধে বা যে বিষয় নিয়ে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত। এটি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সঠিকভাবে জানাতে সাহায্য করে যে কোন ঘটনার জন্য তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে যেমন বিশ্বাসভঙ্গ বা অর্থ আত্মসাতের মতো, নির্দিষ্ট সময় বা তারিখ উল্লেখ না করলেও চলবে, তবে মোট সময় এবং অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে।[] যদি অপরাধের বিবরণে চার্জের মধ্যে অপরাধের ধরণ বোঝা না যায়, তবে চার্জে সেই অপরাধটি কিভাবে সংঘটিত হয়েছে তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে, অপরাধের পদ্ধতি উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই, যেমন হত্যা বা চুরির ক্ষেত্রে, কিন্তু প্রতারণার ক্ষেত্রে অপরাধের পদ্ধতি স্পষ্ট করা আবশ্যক।[] আদালত রায় ঘোষণার আগে চার্জ পরিবর্তন বা যুক্ত করার ক্ষমতা রাখে। তবে, যদি সেই পরিবর্তন অভিযুক্ত বা অভিযোজনের জন্য কোনো সমস্যা না তৈরি করে, বিচার অব্যাহত থাকতে পারে। যদি পরিবর্তন অভিযুক্তের প্রতিরক্ষার ক্ষতি করে বা বিভ্রান্তির কারণ হয়, তাহলে আদালত নতুন বিচার বা কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দিতে পারে। [] যদি চার্জের কোনো ভুল অভিযুক্তকে বিভ্রান্ত করে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় তা প্রভাব ফেলে, তবে নতুন বিচার করার সুযোগ আছে।[]

বিংশ অধ্যায়: ম্যাজিস্ট্রেটদের দ্বারা মামলার বিচার

ম্যাজিস্ট্রেটদের দ্বারা মামলার বিচার সংক্রান্ত অধ্যায়ে বিচার প্রক্রিয়ার নিয়মাবলী নির্ধারণ করা হয়েছে। অভিযুক্ত যখন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থিত হয়, তখন বিচারক মামলার রেকর্ড এবং উপস্থাপিত নথিপত্র বিবেচনা করেন।[] যদি বিচারক মনে করেন যে অভিযোগ ভিত্তিহীন, তবে অভিযুক্তকে মুক্তি দিতে পারেন এবং সেই সিদ্ধান্তের কারণ রেকর্ড করেন।[]

অন্যদিকে, যদি বিচারক মনে করেন যে অপরাধের প্রমাণ রয়েছে, তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করেন এবং অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসা করা হয় সে অপরাধ স্বীকার করে কিনা। যদি অভিযুক্ত অপরাধ স্বীকার করে, তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয় এবং যথেষ্ট কারণ না থাকলে, বিচারক তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেন। তবে যদি অভিযুক্ত অপরাধ স্বীকার না করে, তাহলে বিচারক অভিযোগকারী বা প্রসিকিউশন এবং প্রতিরক্ষার সাক্ষ্য শোনেন এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেন।[] বিচার শেষে, যদি প্রমাণ অভিযুক্তকে নির্দোষ প্রমাণ করে, তাহলে বিচারক তাকে খালাস দেন। অন্যথায়, অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করলে আইন অনুসারে শাস্তি প্রদান করা হয়।[] যদি অভিযোগকারী অনুপস্থিত থাকেন এবং শুনানি তারিখে উপস্থিত না হন, ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তকে খালাস দিতে পারেন, তবে কিছু ক্ষেত্রে শুনানির তারিখ পরিবর্তন করা যেতে পারে। অভিযোগকারী যদি মামলা প্রত্যাহারের জন্য যথাযথ কারণ দেখান, বিচারক তা মঞ্জুর করতে পারেন এবং অভিযুক্তকে খালাস দেন।[] ম্যাজিস্ট্রেট মামলার যেকোনো পর্যায়ে, বিশেষ কারণ দেখিয়ে, বিচার বন্ধ করতে পারেন এবং অভিযুক্তকে মুক্তি দিতে পারেন, যদি কোনো অভিযোগকারী না থাকে।[] যদি ম্যাজিস্ট্রেট মনে করেন যে অভিযোগ মিথ্যা বা হয়রানিমূলক ছিল, তবে তিনি অভিযোগকারীকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দিতে পারেন।[]

একবিংশ অধ্যায়: ম্যাজিস্ট্রেটদের দ্বারা ওয়ারেন্ট-মামলার বিচার (বিলুপ্ত)

দ্বাবিংশ অধ্যায়: সংক্ষেপ বিচার সংক্রান্ত

সংক্ষেপ বিচার (Summary Trials) সংক্রান্ত বিধানে উল্লেখিত হয়েছে যে নির্দিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা ম্যাজিস্ট্রেট বেঞ্চ নির্দিষ্ট কিছু অপরাধ সংক্ষেপে বিচার করতে পারবেন।[] এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে এমন অপরাধ যা মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড দ্বারা শাস্তিযোগ্য নয়, যেমন ওজন ও পরিমাপ সম্পর্কিত অপরাধ, হালকা ধরনের আঘাত, নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে চুরি, অসৎভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ করা, চুরি করা সম্পত্তি গ্রহণ করা বা গোপন করা, ইত্যাদি। এ ছাড়াও, কোনো নির্বাচনে ঘুষ বা প্রতারণা, ফৌজদারি অনুপ্রবেশ, হুমকি দেওয়া, এবং অন্যায় উদ্দেশ্যে অপমান করার অপরাধও সংক্ষেপে বিচারযোগ্য।[] ম্যাজিস্ট্রেটরা এ ধরনের অপরাধের জন্য অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন না করেও সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়ায় বিচার করতে পারেন, তবে এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বাধিক দুই বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি দিতে পারবেন। যখন কোনো মামলা আপিলযোগ্য নয়, তখন ম্যাজিস্ট্রেট বা বেঞ্চ নির্দিষ্ট কিছু তথ্য যেমন অপরাধ সংঘটনের তারিখ, অভিযুক্তের নাম ও ঠিকানা, এবং অপরাধের প্রমাণসমূহ সংক্ষেপে রেকর্ড করেন। আপিলযোগ্য মামলাগুলির ক্ষেত্রে অবশ্যই সাক্ষ্যপ্রমাণের সারাংশ এবং রায় লিখতে হবে।[] এই বিধানের অধীনে বিচার কার্য পরিচালিত হলে আদালত মামলার রেকর্ড ইংরেজি বা আদালতের ভাষায় রচনা করবে। সরকার কোনো ম্যাজিস্ট্রেট বেঞ্চকে একজন কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে এসব রেকর্ড ও রায় প্রস্তুত করার ক্ষমতা দিতে পারে।[]

ত্রয়োবিংশ অধ্যায়: সেশন আদালতে বিচার সংক্রান্ত

সেশন কোর্টে মামলার বিচার সংক্রান্ত বিধানে বিভিন্ন ধাপ বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমেই, সেশন কোর্টে হওয়া প্রত্যেক বিচার পাবলিক প্রসিকিউটরের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।[] যখন অভিযুক্ত আদালতে উপস্থিত হয় বা আনা হয়, প্রসিকিউটর মামলাটি খোলার সময় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বর্ণনা করেন এবং কীভাবে প্রমাণের মাধ্যমে অভিযুক্তকে দোষী প্রমাণ করবেন, তা উপস্থাপন করেন।[] যদি আদালত মনে করে যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলার রেকর্ড এবং উপস্থাপিত নথিপত্রের ভিত্তিতে কোনো যথাযথ ভিত্তি নেই, তাহলে অভিযুক্তকে খালাস দেওয়া হবে এবং সেই সিদ্ধান্তের কারণ রেকর্ড করা হবে। কিন্তু যদি আদালত মনে করে যে অভিযুক্ত অপরাধ করেছেন, তবে তার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ গঠন করা হবে এবং অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসা করা হবে তিনি দোষ স্বীকার করেন কিনা।[] যদি অভিযুক্ত দোষ স্বীকার করেন, আদালত তা রেকর্ড করবেন এবং প্রয়োজন মনে করলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেন। যদি অভিযুক্ত দোষ স্বীকার না করেন, আদালত সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করবেন এবং প্রসিকিউশনের অনুরোধে সাক্ষী বা নথি হাজির করার জন্য নির্দেশনা জারি করতে পারেন।[] যে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে, আদালত প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রমাণ গ্রহণ করবেন এবং সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করবেন। আদালত তার বিবেচনায় সাক্ষীর জেরা বিলম্বিত করতে বা পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিতে পারেন।[] যদি প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত মনে করেন যে অভিযুক্ত অপরাধ করেননি, তাহলে অভিযুক্তকে খালাস দেওয়া হবে। কিন্তু অভিযুক্ত যদি খালাস না পান, তাহলে তাকে তার প্রতিরক্ষা উপস্থাপন করতে বলা হবে এবং তিনি যদি কোনো লিখিত বিবৃতি দেন, তা রেকর্ডের সাথে সংযুক্ত করা হবে। অভিযুক্ত যদি কোনো সাক্ষী হাজির করার জন্য আবেদন করেন, আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করবেন, যদি তা হয়রানির উদ্দেশ্যে না হয়ে থাকে।[] সব সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে, প্রসিকিউটর তার মামলা সংক্ষেপে উপস্থাপন করবেন এবং অভিযুক্ত বা তার আইনজীবী প্রতিউত্তর দেবেন।[] আদালত প্রমাণ ও আইনি যুক্তি শোনার পর রায় প্রদান করবেন।[]

চতুর্বিংশ অধ্যায়: অনুসন্ধান এবং বিচারের জন্য সাধারণ বিধান

এই বিধানগুলো মূলত বিচার প্রক্রিয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে, বিশেষত যেসব ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে ক্ষমা প্রস্তাব দেওয়া হয় বা তার অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালিত হয়।[]

অপরাধে জড়িত ব্যক্তির ক্ষমা প্রস্তাব: কিছু গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে, যেমন যেখানে শাস্তির মেয়াদ দশ বছর বা তার বেশি হতে পারে, আদালত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রস্তাব দিতে পারে। তবে এই ক্ষমা প্রস্তাব তখনই কার্যকর হবে যখন অভিযুক্ত তার জ্ঞানের সব কিছু আদালতে সঠিকভাবে প্রকাশ করে এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িত অন্যদের সম্পর্কে সত্য জানায়। এর উদ্দেশ্য হলো অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরা নিজেদের রক্ষা করতে আদালতে সঠিক তথ্য প্রদান করে যাতে অপরাধের সঠিক বিচার করা যায়। আদালত এই ধরনের ক্ষমা প্রস্তাব দেওয়ার কারণ রেকর্ড করে এবং অভিযুক্তকে সেই রেকর্ডের একটি অনুলিপি দিতে পারে।[]

ক্ষমা প্রাপ্ত ব্যক্তির বিচার: যদি ক্ষমা প্রাপ্ত ব্যক্তি শর্তাবলী মেনে চলে না, যেমন মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে বা অপরাধ লুকায়, তাহলে তাকে পুনরায় বিচার করা হতে পারে। এই বিচারে অভিযুক্ত তার পক্ষ থেকে দাবি করতে পারবে যে তিনি ক্ষমার শর্তাবলী মেনে চলেছেন, এবং এটি প্রমাণের দায়িত্ব প্রসিকিউশনের উপর থাকবে। যদি অভিযুক্ত মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে, তবে তার বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়ের করা যাবে এবং সেক্ষেত্রে আদালত সেই তথ্যের ভিত্তিতে তার বিচার করবে।[]

পলাতক অবস্থায় বিচার: যদি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতের নির্দেশে আত্মসমর্পণ না করে এবং তার গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে, আদালত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাকে আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ না করলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার করা হবে। এটি বিশেষত এমন ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য যারা পলাতক বা আদালতে হাজির হতে ইচ্ছুক নয়। পলাতক অবস্থায় বিচার করার ক্ষেত্রে আদালত অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতে মামলার শুনানি সম্পন্ন করতে পারে।[]

সময়সীমার মধ্যে বিচার শেষ করা: মামলাটি কোন আদালতে যাচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে বিচার প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে মামলাগুলো ১৮০ দিনের মধ্যে এবং সেশন আদালতের অধীনে মামলাগুলো ৩৬০ দিনের মধ্যে শেষ করার নিয়ম রয়েছে। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন একজন অভিযুক্ত একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হলে, মামলার বিচার পরপর চলতে পারে। যদি আদালত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করতে না পারে, তাহলে অভিযুক্তকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হতে পারে, যদি না আদালত বিশেষ কারণে অন্য কিছু নির্দেশ দেয়।[]

অভিযুক্তের পক্ষে সুরক্ষা ও সাক্ষ্যদান: অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার রয়েছে নিজেকে আইনজীবীর মাধ্যমে সুরক্ষা দেওয়ার। এছাড়াও, অভিযুক্ত ব্যক্তি চাইলে সাক্ষী হিসেবে নিজের পক্ষ থেকে সঠিক প্রমাণ দিতে পারেন। তবে, আদালত বা অন্য কোনো পক্ষ এ বিষয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করতে পারবে না যে অভিযুক্ত সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হয়নি।[]

অন্যান্য সাধারণ নীতিমালা: আদালত অভিযুক্তকে মামলার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দেবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অভিযুক্তের সাথে আলোচনা করবে যাতে তিনি মামলার বিষয়ে বুঝতে পারেন। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি মামলার কার্যক্রম বুঝতে না পারে, আদালত তার বিশেষ পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেবে।[] এছাড়া, কোনো সাক্ষী উপস্থিত না হলে বা অন্য কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে আদালত মামলার শুনানি স্থগিত করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে বিচারককে লিখিতভাবে কারণ উল্লেখ করতে হবে এবং শুনানির তারিখ পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে।[]

অপরাধের সমঝোতা: কিছু নির্দিষ্ট অপরাধে, যেগুলো পেনাল কোডের অধীনে আসে, সেসব ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অভিযুক্তের সাথে আদালতের অনুমতি নিয়ে সমঝোতা করতে পারে। এর ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খালাস দেওয়া হবে। তবে, আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো সমঝোতা বৈধ হবে না।[] কিছু অপরাধে যদি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক বা মানসিকভাবে অসুস্থ হন, তার পক্ষ থেকে আদালতের অনুমতিতে অন্য কেউ সমঝোতার অনুমতি নিতে পারে।এই বিধানগুলো বিচারিক প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তের অধিকার, বিচার প্রক্রিয়ার দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা এবং মামলার সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলি প্রদান করে।[]

পঞ্চবিংশ অধ্যায়: জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিচারে সাক্ষ্য গ্রহণ এবং রেকর্ড করার পদ্ধতি

তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ এবং তা লিপিবদ্ধ করার বিভিন্ন নিয়ম এই অধ্যায়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানত অভিযুক্তের উপস্থিতিতে বা তার আইনজীবীর উপস্থিতিতে সমস্ত সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়, যদি তার ব্যক্তিগত উপস্থিতি মাফ করা হয়।

সাক্ষ্যগ্রহণের নিয়ম: ম্যাজিস্ট্রেট বা সেশন জজের সামনে সাক্ষীদের সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করার সময় তা একটি ধারাবাহিক বর্ণনা আকারে লিপিবদ্ধ করা হবে।[] সাধারণত প্রশ্ন-উত্তর আকারে সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করা হবে না, তবে কোনো বিশেষ প্রশ্ন এবং তার উত্তর ম্যাজিস্ট্রেট বা জজের বিবেচনায় আলাদা করে লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে। সেশন কোর্টে এবং ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য আদালতের ভাষায় বা অভিযুক্তের জন্য বোধ্য ভাষায় লিখতে হবে। যদি সাক্ষ্য ইংরেজিতে প্রদান করা হয় এবং অভিযুক্ত ইংরেজি বুঝতে না পারেন, তবে তা আদালতের ভাষায় অনুবাদ করে লিপিবদ্ধ করতে হবে।[]

সাক্ষ্যের রেকর্ড লিপিবদ্ধকরণ: প্রত্যেক সাক্ষী যে সাক্ষ্য প্রদান করেন, তা ম্যাজিস্ট্রেট বা সেশন জজ তার নিজের হাতে লিখে স্বাক্ষর করবেন। যদি ম্যাজিস্ট্রেট বা জজ কোনো কারণে নিজের হাতে লিখতে না পারেন, তবে তার নির্দেশনায় তা খোলা আদালতে লিখে নেওয়া হবে এবং তিনি তাতে স্বাক্ষর করবেন।[]

অভিযুক্তের কাছে সাক্ষ্য পাঠ করে শোনানো: সাক্ষ্য গ্রহণের পর তা অভিযুক্ত বা তার আইনজীবীর উপস্থিতিতে পড়ে শোনানো হবে এবং যদি কোনো পরিবর্তন বা সংশোধন প্রয়োজন হয়, তাহলে তা করা হবে। যদি সাক্ষী মনে করেন যে কোনো অংশ ভুল লিপিবদ্ধ হয়েছে, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বা জজ সেই আপত্তি নোট করবেন এবং সেই সঙ্গে তার মন্তব্য যোগ করবেন।[]

ভাষা এবং অনুবাদ: যদি সাক্ষ্য এমন ভাষায় লিপিবদ্ধ হয় যা সাক্ষী বা অভিযুক্ত বুঝতে পারেন না, তাহলে তা তাদের বোধ্য ভাষায় অনুবাদ করে শোনানো হবে। অভিযুক্ত বা তার আইনজীবীর বুঝতে না পারার ক্ষেত্রে আদালত সেই ভাষায় অনুবাদ করে তা বুঝিয়ে দেবে।[]

অভিযুক্তের পরীক্ষা ও বিবৃতি লিপিবদ্ধকরণ: যখন অভিযুক্তকে ম্যাজিস্ট্রেট বা সেশন জজের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তার সমস্ত প্রশ্ন ও উত্তর সম্পূর্ণ আকারে রেকর্ড করা হবে। সেই রেকর্ড অভিযুক্তকে পড়ে শোনানো হবে এবং যদি তিনি ভাষাটি না বোঝেন, তাহলে তা তার বোধ্য ভাষায় অনুবাদ করে শোনানো হবে। অভিযুক্ত তার উত্তরে কোনো কিছু সংযোজন বা সংশোধন করতে চাইলে তা করতে পারবেন এবং রেকর্ডে তার স্বাক্ষর থাকবে।[]

সাক্ষ্যের ধরন এবং মনোভাবের নোট: ম্যাজিস্ট্রেট বা জজ সাক্ষীদের মনোভাব বা আচরণ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় মন্তব্যও রেকর্ড করতে পারেন, যেমন তারা সাক্ষ্য প্রদান করার সময় কীভাবে আচরণ করেছেন, যা মামলার জন্য প্রাসঙ্গিক হতে পারে।[]

ষট্‌বিংশ অধ্যায়: রায় সংক্রান্ত

বিচার সংক্রান্ত এই বিধানে রায় ঘোষণার পদ্ধতি এবং সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারি আদালতে বিচার শেষে রায় সাধারণত উন্মুক্ত আদালতে ঘোষণা করা হয়।[] রায়টি বিচার শেষে সঙ্গে সঙ্গেই বা পরে নির্ধারিত একটি তারিখে ঘোষণা করা হতে পারে, যা অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার আইনজীবীকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার আইনজীবী যদি অনুরোধ করেন, তাহলে বিচারক পুরো রায়টি পাঠ করে শোনাবেন।[]

যখন রায় ঘোষণা করা হবে, তখন অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি হাজতে থাকে, তাকে আদালতে আনা হবে।[] আর যদি সে জামিনে থাকে বা খালাস পায়, তবে তার ব্যক্তিগত উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়; তার আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারেন।[] কোনো পক্ষ বা তাদের আইনজীবী অনুপস্থিত থাকলেও রায় অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে না, অর্থাৎ রায় বৈধ থাকবে।[] রায় সাধারণত আদালতের নির্ধারিত ভাষায় বা ইংরেজিতে লেখা হবে এবং এতে মামলার মূল প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তরসহ সিদ্ধান্তের কারণগুলো উল্লেখ থাকবে। রায় ঘোষণার সময় বিচারক তা প্রকাশ্যে তার নিজের হাতে স্বাক্ষর করবেন।[]

রায়ে অভিযুক্তের অপরাধের প্রমাণ এবং প্রযোজ্য আইন অনুযায়ী শাস্তি নির্ধারণ করা হবে। পেনাল কোডের আওতায় কোনো অপরাধ যদি দুটি ধারার মধ্যে পড়ে এবং আদালত অনিশ্চিত থাকে, তাহলে বিকল্পভাবে রায় দেওয়া হবে। যদি রায়ে অভিযুক্ত খালাস পান, তাহলে রায়ে তাকে মুক্তির নির্দেশ থাকবে। অন্যদিকে, মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে নির্দেশ দেওয়া হবে যে অভিযুক্তকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।[] রায় ঘোষণার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি অনুরোধ করলে, তাকে রায়ের একটি কপি বা তার নিজের ভাষায় অনুবাদিত কপি সরবরাহ করা হবে। এটি বিনামূল্যে প্রদান করা হবে যদি না মামলাটি বিশেষ কোনো ধারার আওতায় পড়ে।[] মৃত্যুদণ্ডের রায় হলে, সেশন জজ অভিযুক্তকে জানাবেন যে আপিল করতে হলে তার কতদিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। যদি রায়ের মূল ভাষা আদালতের ভাষা থেকে ভিন্ন হয়, তাহলে অভিযুক্তের অনুরোধে সেই রায়ের একটি অনুবাদ আদালতের রেকর্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।[] সেশন কোর্ট যখন কোনো রায় দেয়, তখন সেই রায় ও শাস্তির একটি কপি সংশ্লিষ্ট জেলার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হবে, যেখানে বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সব প্রক্রিয়াই নিশ্চিত করে যে বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও অভিযুক্তের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।[]

সপ্তবিংশ: দণ্ডের অনুমোদনের জন্য দাখিল সংক্রান্ত

দণ্ডের অনুমোদনের জন্য দাখিল সংক্রান্ত অধ্যায়ে মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন এবং উচ্চ আদালতে দাখিলের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।[] যখন সেশন আদালত কোনো ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, সেই রায় উচ্চ আদালতে, অর্থাৎ হাইকোর্ট বিভাগে, দাখিল করতে হয়। হাইকোর্টের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না।[] উচ্চ আদালতে দাখিল করার পর যদি আদালত মনে করে যে মামলার উপর আরও তদন্ত করা প্রয়োজন বা কোনো বিশেষ বিষয়ে অতিরিক্ত প্রমাণ গ্রহণ করা দরকার, তখন আদালত নিজেই সেই তদন্ত করতে পারে অথবা সেশন আদালতকে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে, অভিযুক্ত ব্যক্তির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়, যদি উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়। তদন্ত এবং প্রমাণ সংগ্রহের ফলাফল সেশন আদালত থেকে হাইকোর্ট বিভাগে পাঠানো হবে।[]

মামলা দাখিলের পর, উচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় নিশ্চিত করতে পারে, বা আইনের অধীনে অন্য কোনো শাস্তি প্রদান করতে পারে।[] যদি আদালত মনে করে যে অভিযুক্তের দোষী সাব্যস্তের রায় বাতিল করা উচিত, তাহলে তারা নতুন রায় দিতে পারে বা মামলাটি নতুনভাবে বিচার করার নির্দেশ দিতে পারে। এছাড়া, উচ্চ আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খালাসও দিতে পারে। তবে রায় নিশ্চিত করার আগে, অভিযুক্তের আপিল করার জন্য নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত অথবা আপিল চলমান থাকলে রায় প্রদান করা যাবে না।[] যদি উচ্চ আদালতে দুই বা ততোধিক বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ থাকে, মৃত্যুদণ্ডের রায় বা অন্য কোনো শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য কমপক্ষে দুই বিচারকের স্বাক্ষর প্রয়োজন। যদি বিচারকদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়, তখন তৃতীয় বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে।[] মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য সেশন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে দাখিল করা মামলার ক্ষেত্রে, উচ্চ আদালত রায় নিশ্চিত করার পর তা দ্রুত সেশন আদালতে পাঠাবে।[]

অষ্টাবিংশ: দণ্ড কার্যকর

দণ্ড কার্যকর শিরোনামে যে বিধানগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, তা মূলত ফৌজদারি আদালতের নির্দেশ অনুসারে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন দণ্ড কার্যকর করার নিয়মাবলি নিয়ে আলোচনা করে।[] প্রথমত, যখন সেশন আদালত মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে, তখন সেই রায় হাইকোর্ট বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হয়। অনুমোদন পেলে সেশন আদালত হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারে।[] তবে যদি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মহিলা গর্ভবতী হন, তাহলে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করা হবে এবং প্রয়োজনে শাস্তি পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হতে পারে।[] যখন অভিযুক্তকে কারাদণ্ড বা যাতনা দণ্ড প্রদান করা হয়, তখন আদালত সংশ্লিষ্ট জেলখানায় দণ্ড কার্যকর করার জন্য একটি ওয়ারেন্ট পাঠায়। এই ওয়ারেন্টটি সেই কারাগারের প্রধান কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে জারি করা হয় এবং জেলখানার জেলারের কাছে তা জমা দিতে হয়।[] দণ্ড হিসেবে যদি জরিমানা আরোপ করা হয়, তবে আদালত অভিযুক্তের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জরিমানা আদায়ের জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে পারে। তবে, যদি অভিযুক্ত জরিমানার জন্য কারাদণ্ড ভোগ করে থাকে, তাহলে জরিমানা আদায়ের জন্য নতুন করে ওয়ারেন্ট জারি করা যাবে না, যদি না আদালত বিশেষ কারণে প্রয়োজন মনে করে।[]

অভিযুক্তকে ফাইন বা কারাদণ্ডের পরিবর্তে দণ্ডিত করা হলে, আদালত তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জরিমানা প্রদানের নির্দেশ দিতে পারে এবং জরিমানা প্রদান না হলে কারাদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে, আদালত অভিযুক্তকে তার জামিনের শর্তে মুক্তি দিতে পারে, যা নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির হয়ে জরিমানা প্রদানের জন্য হবে।[] এছাড়াও, যখন অভিযুক্তকে চাবুক মারার দণ্ড দেওয়া হয়,[] তখন আদালতের আদেশ অনুসারে এটি নির্ধারিত স্থানে এবং সময়ে কার্যকর করা হবে। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি চাবুকের পাশাপাশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়, তবে চাবুক মারার দণ্ড দণ্ডাদেশ প্রদানের ১৫ দিন পরে কার্যকর করা হবে বা আপিল দাখিলের পরই এটি কার্যকর হবে।[] দণ্ড কার্যকর করার সময় চিকিৎসা কর্মকর্তার উপস্থিতি প্রয়োজন হয়, এবং যদি অভিযুক্ত অসুস্থ থাকে বা চিকিৎসা কর্মকর্তার মতে চাবুক মারার উপযুক্ত না হয়, তাহলে শাস্তি স্থগিত থাকবে।[] যখন কম বয়সী (শিশু) অভিযুক্তকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তখন আদালত তাদের সংশোধনাগারে পাঠাতে পারে, যেখানে তাদের সঠিক শৃঙ্খলা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দণ্ড কার্যকর হওয়ার পর, দণ্ড কার্যকরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদালতকে একটি রিপোর্ট প্রদান করে যাতে উল্লেখ থাকবে, কীভাবে এবং কখন দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।[]

ঊনত্রিংশ অধ্যায়: দণ্ডের স্থগিতাদেশ, মওকুফ ও পরিবর্তন সম্পর্কে

দণ্ডের স্থগিতাদেশ, মওকুফ এবং পরিবর্তন সংক্রান্ত অধ্যায়ে দণ্ডিত ব্যক্তির শাস্তির মেয়াদ কমানো, স্থগিত রাখা বা পরিবর্তনের বিধান উল্লেখ করা হয়েছে।[] এটি মূলত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ডের উপর প্রশাসনিক এবং বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের নিয়মাবলি নির্দেশ করে।[]

দণ্ডের স্থগিতাদেশ বলতে বোঝায় যে, কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দণ্ড কার্যকর করা বন্ধ রাখা হবে।[] এটি সাধারণত কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে বা আপিল চলাকালে প্রয়োগ করা হতে পারে।[] উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি দণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং তার পক্ষে আপিল করা হয়, তখন আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ড স্থগিত রাখা হতে পারে।[] মওকুফের ক্ষেত্রে, দণ্ডের কিছু অংশ বা পুরো দণ্ড বাতিল করা হয়। এটি সাধারণত রাষ্ট্রপতির ক্ষমা বা দয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে করা হয়। কোনো ব্যক্তির আচরণ বা বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শাস্তি মওকুফ করা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যক্তির শারীরিক অসুস্থতা বা দীর্ঘ কারাভোগের পরে তার দণ্ড মওকুফ হতে পারে।[] দণ্ডের পরিবর্তন বলতে বোঝায়, যে দণ্ড দেওয়া হয়েছে তা অন্য কোনো লঘু শাস্তিতে রূপান্তর করা। উদাহরণস্বরূপ, মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে, যদি আদালত বা রাষ্ট্রপতি মনে করেন যে অভিযুক্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ শাস্তি প্রাপ্য নয়।[] এই অধ্যায়ে বলা হয়েছে, আদালত বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি এবং শর্ত বিবেচনা করে দণ্ডের স্থগিতাদেশ, মওকুফ বা পরিবর্তন করতে পারেন। তবে, এ ধরনের পদক্ষেপ সাধারণত রাষ্ট্রপতির বা উচ্চতর আদালতের ক্ষমতায় অন্তর্ভুক্ত। দণ্ডের মওকুফ বা পরিবর্তন তখনই কার্যকর হবে যখন তা যথাযথভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং শর্ত মেনে সম্পন্ন করা হয়।[]

ত্রিংশ অধ্যায়: পূর্ববর্তী খালাস বা দোষী সাব্যস্ত হওয়া সংক্রান্ত

পূর্ববর্তী খালাস বা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয় অধ্যায়ে মূলত বলা হয়েছে, একটি অপরাধের জন্য কেউ একবার খালাস পেলে বা দোষী সাব্যস্ত হলে, তাকে পুনরায় একই অপরাধের জন্য আবার বিচার করা যাবে না।[] যদি কোনো ব্যক্তি একটি অপরাধের জন্য আদালতে বিচার হয় এবং সেই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বা খালাস পায়, তাহলে সেই ব্যক্তি আবার একই অপরাধের জন্য পুনরায় বিচারযোগ্য হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সেই দোষী সাব্যস্ত বা খালাসের রায় কার্যকর থাকে। একই ঘটনার ভিত্তিতে, ভিন্ন কোনো অভিযোগের জন্যও তাকে আবার বিচার করা যাবে না, যদি না অভিযোগ ধারা ২৩৬ বা ২৩৭ অনুযায়ী অন্যভাবে করা যায়।[] তবে, যদি প্রথম বিচারকালে ব্যক্তিকে একটি আলাদা অপরাধের জন্য পৃথক অভিযোগে বিচার করা যেত, তাহলে তাকে পরবর্তীতে সেই ভিন্ন অপরাধের জন্য বিচার করা যেতে পারে।[] উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যাকে একটি বিশেষ ঘটনা থেকে উদ্ভূত একটি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, কিন্তু সেই ঘটনার পর যদি নতুন কোনো পরিণতি ঘটে যা প্রথম বিচারের সময় আদালতের জানা ছিল না, তাহলে সেই নতুন পরিণতির জন্য তাকে আবার বিচার করা যেতে পারে।[]

কোনো ব্যক্তি একটি অপরাধের জন্য বিচারকালে যেসব কাজ করেছে তা যদি আরেকটি ভিন্ন অপরাধ গঠন করে, তবে তাকে পরবর্তীতে সেই অপরাধের জন্য বিচার করা যেতে পারে, যদি প্রথম আদালত সেই অপরাধের বিচার করার ক্ষমতাসম্পন্ন না হয়।[] এই বিধানগুলোতে উল্লেখ করা আছে, একটি অভিযোগ খারিজ করা, ধারা ২৪৯ অনুসারে কার্যক্রম বন্ধ করা, বা অভিযুক্তের মুক্তি পাওয়া খালাস হিসেবে বিবেচিত হবে না।[]

সপ্তম ভাগ: আপীল, রেফারেন্স এবং রিভিশন

এই ভাগের এর মূল বিষয়বস্তু হলো ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় আপিল, রেফারেন্স এবং পুনর্বিবেচনার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান। এই অংশে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে কীভাবে অপরাধী, অভিযোগকারী বা সরকার কোনও অপরাধ সংক্রান্ত রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে এবং কোন ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ নেই।

একত্রিংশ অধ্যায়: আপীল

আপিল সম্পর্কে এই অধ্যায়ের মূল বিষয়বস্তু হলো ফৌজদারি আদালতের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ ও নিয়মাবলী। কোন ফৌজদারি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না যদি না আইন দ্বারা সেই অনুমতি দেওয়া হয়।[] তবে, যদি কোনও আদালত সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায় বা কারো বিরুদ্ধে শান্তি বজায় রাখতে নিরাপত্তা দেওয়ার আদেশ দেয়, সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যেতে পারে।[] দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের দ্বারা প্রদত্ত রায়ের ক্ষেত্রে আপিল করা যেতে পারে প্রধান বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে, এবং প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ের ক্ষেত্রে আপিল করা যাবে সেশন জজের কাছে।[] সেশন কোর্ট বা অতিরিক্ত সেশন জজের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল উচ্চ আদালতে করা যেতে পারে। যদি কোনও অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষ স্বীকার করেন, তবে সাধারণত সেই দোষ স্বীকারের ভিত্তিতে দেওয়া শাস্তির বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ থাকে না।[] যদি কোনও ক্ষুদ্র অপরাধে দণ্ড দেওয়া হয়, যেমন এক মাসের কারাদণ্ড বা পঞ্চাশ টাকার জরিমানা, তাহলে সেই ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ সীমিত। আবার, যদি একাধিক ব্যক্তি একসাথে দণ্ডিত হন, তবে তারা আপিলের অধিকার পায়।[] উচ্চ আদালতে দণ্ড কম বা বেড়েছে বলে আপিল করা যেতে পারে এবং আদালত দণ্ড সংশোধনের সুযোগও রাখতে পারে।[] আপিল পদ্ধতিতে যদি অপরাধী কারাগারে থাকে, তবে সে তার আপিলের আবেদন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে জমা দিতে পারে। আদালত আপিলের আবেদন খারিজ করার পূর্বে আবেদনকারীকে শুনানির সুযোগ দেয় এবং প্রয়োজনীয় হলে আপিল গ্রহণ করে।

দ্বাত্রিংশ অধ্যায়: রেফারেন্স ও রিভিশন

এই অধ্যায়ে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিম্ন আদালতের রায় বা আদেশের যথার্থতা, বৈধতা, এবং নিয়মিততা পর্যালোচনা করার জন্য উচ্চ আদালতে রেফারেন্স বা সংশোধনের প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে।[] উচ্চ আদালত বা সেশন জজ যে কোনো নিম্ন আদালতের রেকর্ড পর্যালোচনা করতে পারে এবং সেই আদালতের আদেশ বা রায়ের সঠিকতা, আইনগত বৈধতা বা নিয়ম মেনে চলছে কিনা তা যাচাই করতে পারে। তারা যদি মনে করে যে কোনও রায় বা আদেশ ভুল, বেআইনি বা অনিয়মিত হয়েছে, তারা সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।[] উচ্চ আদালত তার ক্ষমতা অনুযায়ী দণ্ড বাড়াতে পারে, তবে অভিযুক্তকে নিজেকে রক্ষা করার সুযোগ না দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।[] যদি দুই বিচারকের মধ্যে মতপার্থক্য হয়, তাহলে তৃতীয় একজন বিচারক বিষয়টি শুনবেন এবং তার মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে।[] এই অধ্যায়ের অধীনে, কোনও পক্ষের আপিল করার অধিকার না থাকলেও আদালত তার রিভিশন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে এবং শুনানির প্রয়োজন হলে শুনানির জন্য সেই পক্ষকে ডেকে পাঠাতে পারে।[]

ত্রয়োত্রিংশ অধ্যায়: আপীল ও রেফারেন্স নিষ্পত্তি

আপিল এবং সংশোধনের নিষ্পত্তির সময়সীমার বিষয়ে এই অধ্যায়ে নির্ধারিত নিয়মাবলী দেওয়া হয়েছে। আপিলকারী আদালত আপিল গ্রহণের পর তা শুনানির জন্য নির্ধারিত দিনে, সাধারণত ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে।[] এই সময়কাল শুরু হয় যখন প্রতিপক্ষের ওপর নোটিশ কার্যকর হয়। সংশোধন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট আদালতকে সংশোধন বিষয়ক মামলাটি ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা শুরু হয় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর ওপর নোটিশ প্রদান করার পর থেকে।[] এই সময়সীমা নির্ধারণে শুধুমাত্র কার্যকর দিনগুলো বিবেচিত হবে, অর্থাৎ ছুটির দিনগুলো এই হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না।[]

অষ্টম ভাগ: বিশেষ কার্যধারা

এই অংশটি মানসিকভাবে অসুস্থ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিতকারী অপরাধগুলির ক্ষেত্রে আইনগত প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। এতে মানসিক মূল্যায়ন, আটক বা জামিনে মুক্তির প্রক্রিয়া এবং আদালতের অবমাননা, অন্যায়ভাবে আটক এবং বন্দিদের মুক্তির জন্য হেবিয়াস কর্পাস আবেদনগুলি নিয়ে আদালতের ক্ষমতা উল্লেখ করা হয়েছে।

ত্রয়োত্রিংশ অধ্যায়: বিলুপ্ত

চতুর্ত্রিংশ অধ্যায়: উন্মাদ

যখন কোনো বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেট মনে করেন যে কোনো অভিযুক্ত মানসিক ভারসাম্যহীন এবং নিজের পক্ষে সঠিকভাবে প্রতিরক্ষা করতে অক্ষম, তখন তিনি অভিযুক্তের মানসিক অবস্থার তদন্ত করেন।[] এ জন্য অভিযুক্তকে জেলার সিভিল সার্জন বা সরকারের নির্দেশিত অন্য কোনো মেডিক্যাল অফিসার দ্বারা পরীক্ষা করতে হবে। যদি মেডিক্যাল পরীক্ষার পর ম্যাজিস্ট্রেট মনে করেন যে অভিযুক্ত মানসিক ভারসাম্যহীন, তবে তিনি তার বিচারের প্রক্রিয়া স্থগিত করবেন। তবে যদি অভিযুক্ত নিরাপত্তার জন্য হুমকি না হয়, তাহলে সঠিক জামানতের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।[] অভিযুক্তকে সুরক্ষিত হেফাজতে রাখার আদেশও দেওয়া যেতে পারে। অভিযুক্তের মানসিক সুস্থতার প্রমাণ পাওয়া গেলে পুনরায় বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।[]

পঞ্চত্রিংশ অধ্যায়: ন্যায়বিচার ব্যবস্থার প্রশাসনে প্রভাবিত কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে কার্যক্রম

ন্যায়বিচার ব্যবস্থার সুষ্ঠু কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটানো বা আদালতের সম্মানহানি করার মতো অপরাধের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে। যদি আদালত মনে করে যে কোনো অপরাধ হয়েছে, যা আদালতের কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত, তবে আদালত সেই অপরাধের তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে।[] আদালত প্রাথমিক তদন্তের মাধ্যমে যদি অপরাধের প্রমাণ পায়, তবে আদালত লিখিত অভিযোগ দায়ের করে অভিযুক্তকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠায়। এছাড়া, যদি অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিনের প্রয়োজন হয়, তবে আদালত সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।[] কিছু ক্ষেত্রে, যেমন আদালতের সম্মুখে অসম্মানজনক আচরণ বা আদালতের ডাকে সাড়া না দেওয়ার মতো অপরাধ ঘটলে, আদালত নিজেই তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে।[] এই ধরনের অপরাধের জন্য আদালত জরিমানা অথবা সংক্ষিপ্ত কারাদণ্ড দিতে পারে। তবে, যদি অপরাধটি গুরুতর হয় এবং আদালত মনে করে যে জরিমানা যথেষ্ট নয়, তবে মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হতে পারে।[]

ষট্‌ত্রিংশ অধ্যায়: স্ত্রী ও সন্তানের ভরণ-পোষণের বিধান (বিলুপ্ত)

সপ্তত্রিংশ অধ্যায়: হেবিয়াস কর্পাস প্রকৃতির নির্দেশাবলী

উচ্চ আদালত বিভাগ যেকোনো সময় নির্দেশ দিতে পারে যে অধিক্ষেত্রের মধ্যে আটক ব্যক্তিকে আদালতে আনা হবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, অথবা অবৈধ বা অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হবে।[] কোনো বন্দিকে আদালতে সাক্ষী হিসেবে বা তদন্তের জন্য আনা, সামরিক আদালত বা কমিশনারদের সামনে হাজির করা, কিংবা বিচার কার্যক্রমের জন্য এক হেফাজত থেকে অন্য হেফাজতে স্থানান্তরিত করারও নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে।[] সুপ্রিম কোর্ট সময়ে সময়ে এই ধরনের মামলার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম তৈরি করতে পারে। প্রতিরোধমূলক আটকাদেশে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য নয়।[]

নবম ভাগ: পরিপূরক বিধান

এই অংশে ফৌজদারি কার্যবিধির বিভিন্ন বিধান সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে পাবলিক প্রসিকিউটরের নিয়োগ এবং কার্যক্রম, জামিনের শর্তাবলী, সাক্ষীর পরীক্ষা সম্পর্কে নির্দেশনা, প্রমাণ সংগ্রহের বিশেষ নিয়মাবলী, জামিনের বিধান, সম্পত্তির নিষ্পত্তি, ফৌজদারি মামলার স্থানান্তর, অনিয়মিত কার্যক্রমের প্রভাব, এবং অন্যান্য বিভিন্ন আইনি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই বিধানগুলো বিভিন্ন ধরণের মামলার প্রক্রিয়া ও বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম ও নির্দেশনা প্রদান করে।

অষ্টাত্রিংশ অধ্যায়: পাবলিক প্রসিকিউটর

এই অধ্যায়ে পাবলিক প্রসিকিউটরের নিয়োগ এবং তাদের কার্যক্রম কেমন হবে, জামিনের শর্তাবলী ও কীভাবে এবং কোন ক্ষেত্রে জামিন নেওয়া যাবে, সেই সংক্রান্ত নিয়মাবলী। এছাড়া, সাক্ষীর পরীক্ষা সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে যেখানে সাক্ষীর অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে কমিশন ইস্যু করার প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হয়েছে।[] এরপর বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহের বিশেষ নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যেমন মেডিকেল সাক্ষী এবং রাসায়নিক পরীক্ষকের প্রতিবেদন। জামিনের বিধান সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে জামিনের পরিবর্তে আমানত, জামিনদারের মৃত্যু বা দেউলিয়া হলে কী প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে, তা বর্ণনা করা হয়েছে।[] সম্পত্তির নিষ্পত্তি সংক্রান্ত বিধানগুলোর মধ্যে মামলার সময় সম্পত্তির হেফাজত ও পরে তা নিষ্পত্তির নিয়মাবলী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফৌজদারি মামলার স্থানান্তর সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে আদালত কিভাবে মামলা স্থানান্তর করতে পারে বা আপিলেট বিভাগের ক্ষমতা বর্ণনা করা হয়েছে।[] অনিয়মিত কার্যক্রমের প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে মামলা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন অনিয়মের কারণে কোনো প্রভাব পড়লে, সেটি কিভাবে সমাধান করা যায়, তা বর্ণিত হয়েছে। সবশেষে, বিভিন্ন ধরনের অন্যান্য আইনি বিধান উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন হলফনামা প্রদান, সাক্ষীকে সমন দেওয়া, এবং নির্দিষ্ট ফি প্রদানের নিয়মাবলী।[] এসব বিধানগুলো আদালতের কার্যক্রম এবং বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন ধাপ ও প্রক্রিয়াকে আরও সুশৃঙ্খল ও কার্যকর করতে সাহায্য করে।[]

ঊনচত্বারিংশ অধ্যায়: জামিন

এই অধ্যায়ে জামিন সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারা বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি জামিন অযোগ্য অপরাধের সাথে জড়িত না হয় এবং তাকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে পুলিশ বা আদালতের কাছে তার জামিনের প্রস্তাব করলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হবে। তবে আদালত বা পুলিশ যদি মনে করে যে জামিন ছাড়াও কোনো শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব, তাহলে তাকে জামিন ছাড়াই একটি বন্ডের শর্তে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে।[] জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, যদি মনে হয় অভিযুক্ত ব্যক্তি এমন কোনো অপরাধ করেছে যা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয়, তাহলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যাবে না। তবে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশু, নারী, অসুস্থ বা দুর্বল ব্যক্তিদের আদালত জামিনে মুক্তি দিতে পারে।[] তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়ে যদি মনে হয় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণের যথেষ্ট কারণ নেই, তবে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, বিচার শেষে রায় ঘোষণার আগে যদি আদালত মনে করে অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী নয়, তবে তাকে বন্ডের শর্তে মুক্তি দেওয়া হবে। উচ্চ আদালত বা সেশন কোর্ট কোনো ব্যক্তিকে জামিনে মুক্ত করার পর পুনরায় গ্রেপ্তার করার আদেশ দিতে পারে এবং তাকে আবার হেফাজতে নেওয়া যেতে পারে।[] জামিনের জন্য নির্ধারিত বন্ডের পরিমাণ মামলা পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এবং তা অত্যধিক হওয়া উচিত নয়। উচ্চ আদালত বা সেশন কোর্ট চাইলে পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্ধারিত জামিনের পরিমাণ কমাতে বা জামিনে মুক্তির নির্দেশ দিতে পারে।[] জামিনে মুক্তির আগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বন্ড করতে হবে, যা পুলিশ অফিসার বা আদালত নির্ধারণ করবে। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পায়, তবে তার বন্ডে উল্লেখিত সময় ও স্থানে উপস্থিত থাকতে হবে এবং আদালতের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। বন্ড করার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি মুক্তি পাবেন এবং যদি তিনি জেলে থাকেন, তাহলে আদালত তার মুক্তির নির্দেশ দেবেন এবং ওই নির্দেশ পাওয়ার পর জেল কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তি দেবে।[] যদি ভুলবশত বা প্রতারণার কারণে পর্যাপ্ত জামিনদার গৃহীত না হয় বা পরবর্তীতে তা অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ে, তাহলে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারে এবং তাকে আদালতে হাজির করে নতুন জামিনদার খুঁজে দিতে আদেশ দিতে পারে। নতুন জামিনদার না পাওয়া গেলে তাকে জেলে পাঠানো হবে।[] জামিনদারদের যদি কোনো কারণে বন্ড থেকে মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে তারা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে পারেন। আবেদন করলে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তার সামনে হাজির করার নির্দেশ দেবেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির হাজিরা দিলে বন্ড বাতিল করবেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি নতুন জামিনদার খুঁজে না পেলে তাকে পুনরায় হেফাজতে নেওয়া হবে।[]

চত্বারিংশ অধ্যায়: সাক্ষী জেরা সংক্রান্ত

এই অংশে সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণের জন্য কমিশন ইস্যু করার বিভিন্ন নিয়মাবলী সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। যখন কোনো তদন্ত, বিচার বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় সাক্ষীর উপস্থিতি প্রয়োজন হয়, কিন্তু সাক্ষীকে উপস্থিত করতে দেরি, ব্যয় বা অসুবিধা হয়, তখন সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত সাক্ষীর উপস্থিতি বাতিল করে তার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য কমিশন ইস্যু করতে পারেন। এই কমিশন সাক্ষীর এলাকার অধিক্ষেত্রের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়।[] যদি সাক্ষী বাংলাদেশের বাইরে কোনো কমনওয়েলথ দেশে বা বার্মায় থাকে এবং সেখানে কমিশনের জন্য পারস্পরিক ব্যবস্থা থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশীয় আদালত বা বিচারকের কাছে কমিশন ইস্যু করা যাবে।[] সাক্ষী পরীক্ষার ক্ষেত্রে পক্ষগুলো তাদের জিজ্ঞাসাবাদ লিখিত আকারে জমা দিতে পারে, যা সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা কর্মকর্তা গ্রহণ করবেন এবং সাক্ষীকে এই প্রশ্নের ওপর পরীক্ষা করবেন। এ ক্ষেত্রে পক্ষগুলো তাদের আইনজীবী বা ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষীকে জেরা করতে পারে।[] কমিশন ইস্যুর পর তা সঠিকভাবে সম্পাদিত হলে, এটি মূল আদালতে ফেরত পাঠানো হবে এবং সাক্ষীর জবানবন্দি মামলার নথিপত্রের অংশ হিসাবে সংরক্ষিত থাকবে। এই জবানবন্দি পরবর্তী পর্যায়ে অন্যান্য আদালতে প্রমাণ হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে।[]

একচত্বারিংশ অধ্যায়: সাক্ষ্যের বিশেষ নিয়ম

এই অধ্যায়ে বিশেষ প্রমাণ সম্পর্কিত নিয়মাবলী সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রমাণ আদালতে কিভাবে গ্রহণ করা হবে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[] মেডিকেল সাক্ষীর ক্ষেত্রে, যদি সিভিল সার্জন বা অন্য কোনো চিকিৎসক সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হতে না পারেন, তবে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নেওয়া বা কমিশনের মাধ্যমে নেওয়া তার জবানবন্দি আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।[] আদালত চাইলে এই চিকিৎসককে জবানবন্দির বিষয়বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।[] ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে, যদি প্রতিবেদন প্রদানকারী চিকিৎসক মারা যান বা সাক্ষ্য দিতে সক্ষম না হন, তাহলে সেই প্রতিবেদনও প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এ ধরনের পরিস্থিতিতে, যেখানে সাক্ষীর উপস্থিতি সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে প্রতিবেদনের গুরুত্ব অপরিহার্য।[] সরকারের রাসায়নিক পরীক্ষক, আঙুলের ছাপ বিশেষজ্ঞ, আগ্নেয়াস্ত্র বিশেষজ্ঞের প্রতিবেদন, যা কোনো নির্ধারিত বিষয়ের ওপর প্রস্তুত করা হয়েছে, তাও সাক্ষী হিসেবে তাদের উপস্থিতি ছাড়াই আদালতে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এই ধরনের প্রতিবেদনগুলি বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রমাণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।[] ফর্মাল প্রমাণ, যেমন আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র, এফিডেভিট আকারে গ্রহণ করা যেতে পারে এবং আদালত চাইলে এই ধরনের প্রমাণ প্রদানকারীকে ডেকে তাকে জেরা করতে পারে। এতে উভয় পক্ষকেই প্রমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ দেয়।[]পূর্ববর্তী দণ্ড বা অব্যাহতির প্রমাণও আদালতে গুরুত্বপূর্ণ। আদালত বা কারাগারের নথি থেকে প্রাপ্ত প্রত্যয়িত অনুলিপি বা কারাগারের কর্মকর্তার সনদপত্রের মাধ্যমে এটি প্রমাণ করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় প্রমাণিত হওয়ার জন্যও প্রমাণ থাকতে হবে।[] যদি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক থাকে এবং তাকে গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে আদালত তার অনুপস্থিতিতে সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করতে পারে। এই জবানবন্দি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যদি সাক্ষী মারা যান বা সাক্ষ্য দিতে অক্ষম হন। এমনকি অপরাধী অজানা হলেও, যদি কোনো গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে, তাহলে উচ্চ আদালত নির্দেশ দিতে পারে যে, প্রথম শ্রেণীর কোনো ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত পরিচালনা করবেন এবং সেই সাক্ষীদের জবানবন্দি পরবর্তী পর্যায়ে অপরাধ প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা যাবে।[]

দ্বিচত্বারিংশ অধ্যায়: বন্ড সংক্রান্ত বিধান

এই অধ্যায়ে জামিন ও বন্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি যখন আদালত বা কোনো কর্মকর্তার মাধ্যমে বন্ড সম্পাদন করতে হবে, তখন তিনি জামিনদারসহ বা জামিনদার ছাড়া বন্ড জমা দিতে পারেন। তবে ভালো আচরণের বন্ডের ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য নয়। বন্ড জমা দেওয়ার পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা সরকারি প্রমিসরি নোট জমা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।[] যখন কোনো বন্ড বাতিল হয়, তখন আদালত বন্ড বাতিল হওয়ার কারণ রেকর্ড করবে এবং বন্ডের শর্ত ভঙ্গকারীর কাছ থেকে জরিমানা দাবি করতে পারে। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি জরিমানা প্রদান না করেন, তবে আদালত তার চলাচলযোগ্য সম্পত্তি জব্দ করে বিক্রি করার জন্য পরোয়ানা জারি করতে পারে। যদি জরিমানা এইভাবে আদায় করা না যায়, তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য দেওয়ানী কারাগারে আটক করা হতে পারে।[] আদালত চাইলে জরিমানা আংশিক ক্ষমা করতে পারে। যদি বন্ডের জামিনদার মারা যায়, তাহলে তার সম্পত্তি বন্ডের দায় থেকে মুক্ত থাকবে। যদি বন্ডদাতা কোনো অপরাধে দণ্ডিত হয় যা তার বন্ডের শর্ত ভঙ্গ করে, তাহলে আদালত বন্ড বাতিল করে তার জামিনদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে এবং আদালত এই শর্ত ভঙ্গকে প্রমাণিত বলে ধরে নেবে যদি না এর বিপরীতে কিছু প্রমাণ করা হয়।[] যদি কোনো জামিনদার দেউলিয়া হয়ে যান বা মারা যান, বা কোনো বন্ড বাতিল হয়, তাহলে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নতুন জামিনদার প্রদানের আদেশ দিতে পারে। যদি নতুন জামিনদার না পাওয়া যায়, তাহলে আদালত পূর্বের আদেশের মতো ব্যবস্থা নিতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তিকে বন্ডে সই করতে হয় এবং সেই ব্যক্তি নাবালক হয়, তাহলে আদালত শুধুমাত্র জামিনদারের বন্ড গ্রহণ করতে পারে।[] বন্ড সংক্রান্ত আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সেশন জজ বা মহানগর সেশন জজের কাছে আপিল করা যেতে পারে। কোনো আপিল না হলে, নির্দিষ্ট বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেট সেই আদেশ পর্যালোচনা করতে পারেন। উচ্চ আদালত বা সেশন কোর্ট কোনো ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দিষ্ট বন্ডের অর্থ আদায়ের নির্দেশ দিতে পারে।[]

ত্রয়শ্চত্বারিংশ অধ্যায়: সমপত্তি নিষ্পত্তি সংক্রান্ত

এই অধ্যায়ে সম্পত্তির নিষ্পত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। যখন কোনো অপরাধের সাথে সম্পর্কিত কোনো সম্পত্তি আদালতে পেশ করা হয়, তখন বিচারক মামলার সমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত সেই সম্পত্তির যথাযথ হেফাজতের আদেশ দিতে পারেন। যদি সম্পত্তিটি দ্রুত নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে, তাহলে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য রেকর্ড করার পর আদালত তা বিক্রি করার বা অন্যভাবে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিতে পারে।[] যদি কোনো অপরাধ সংক্রান্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়, তাহলে আদালত সেই সম্পত্তির ধ্বংস, বাজেয়াপ্ত বা প্রকৃত দাবিদারের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিতে পারে। যদি আদালত নিজে এই আদেশ কার্যকর করতে না পারে, তবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তা কার্যকর করার নির্দেশ দিতে পারে। যদি কোনো আপিল করা হয়, তাহলে আপিল নিষ্পত্তির আগে আদেশ কার্যকর করা হবে না।[] কোনো ব্যক্তি অপরাধমূলক কাজের সাথে যুক্ত কোনো চোরাই সম্পত্তি কিনে থাকলে এবং পরে প্রমাণিত হয় যে সে এটি জেনে বা না জেনে কিনেছে, তখন আদালত সেই ব্যক্তির জমা রাখা অর্থ থেকে ক্রয়মূল্যের একটি অংশ ফেরত দেওয়ার আদেশ দিতে পারে। এই আদেশ তখন কার্যকর হবে যখন প্রকৃত মালিককে সেই চোরাই সম্পত্তি ফেরত দেওয়া হয়।[] আদালতের অধস্তন কোনো আদালতের আদেশ স্থগিত রাখতে বা পরিবর্তন করতে আপিলকারী আদালত ক্ষমতাপ্রাপ্ত। আদালত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত কোনো জিনিস ধ্বংসের আদেশ দিতে পারে, যেমন অশ্লীল বা ক্ষতিকারক বস্তু, খাদ্য, পানীয়, ওষুধ বা অন্য কোনো পণ্য।[] যদি কোনো ব্যক্তিকে অপরাধমূলক শক্তি বা ভয় প্রদর্শনের মাধ্যমে অস্থাবর সম্পত্তি থেকে বিতাড়িত করা হয়, তাহলে আদালত সেই ব্যক্তিকে তার সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দিতে পারে। এই আদেশ কোনো সিভিল মামলার অধিকার বা স্বার্থে ক্ষতি করবে না।[] পুলিশ কোনো সম্পত্তি জব্দ করলে তা ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে হবে, এবং ম্যাজিস্ট্রেট সেই সম্পত্তির যথাযথ হেফাজত, হস্তান্তর, বা মালিক নির্ধারণ না হলে তা সংরক্ষণের আদেশ দেবেন। যদি সম্পত্তির মালিক অজানা থাকে, তবে ম্যাজিস্ট্রেট ঘোষণা জারি করে দাবিদারকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি জানানোর নির্দেশ দেবেন।[] যদি ছয় মাসের মধ্যে কোনো দাবিদার পাওয়া না যায় এবং যার কাছ থেকে সম্পত্তি উদ্ধার হয়েছে সে প্রমাণ করতে না পারে যে সম্পত্তিটি বৈধভাবে অর্জিত হয়েছে, তাহলে সম্পত্তিটি সরকারের অধীনে থাকবে এবং তা বিক্রি করা হবে। যদি সম্পত্তির মালিক অজানা থাকে এবং সেটি দ্রুত নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট সেটি বিক্রি করার নির্দেশ দিতে পারেন।[]

চতুঃচত্বারিংশ অধ্যায়: ফৌজদারি মামলার স্থানান্তর

আপিল বিভাগ নির্দিষ্ট কোনো মামলা বা আপিল হাইকোর্টের এক স্থায়ী বেঞ্চ থেকে অন্য স্থায়ী বেঞ্চে স্থানান্তর করতে পারে।[] এছাড়া, এক অঞ্চলের অধীনস্থ ক্রিমিনাল কোর্ট থেকে অন্য অঞ্চলের সমমান বা উচ্চতর আদালতে স্থানান্তর করতে পারে, যদি এটি ন্যায়বিচারের প্রয়োজনে বা পক্ষ ও সাক্ষীদের সাধারণ সুবিধার্থে উপযোগী বলে মনে হয়। এই স্থানান্তরের মাধ্যমে মামলার সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হয়।[] হাইকোর্ট বিভাগ বিভিন্ন কারণে তার অধীনস্থ আদালতের কোনো মামলার তদন্ত বা বিচার স্থগিত করে নিজেই তা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেমন, নিরপেক্ষ বিচার সম্ভব নয় মনে হলে, কোনো বিশেষ আইনি জটিলতা দেখা দিলে, কিংবা বিচার প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু সম্পন্নের জন্য প্রয়োজন হলে।[] আদালত নিজের উদ্যোগে, নিম্ন আদালতের রিপোর্টে, বা পক্ষের আবেদনে এই পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে একই সেশন ডিভিশনের কোর্টগুলোর মধ্যে স্থানান্তরের জন্য সেশন জজের কাছে আবেদন করতে হয় এবং সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে তারপর হাইকোর্টে আবেদন করা যায়।[] সেশন জজ তার অধীনস্থ সহকারী সেশন জজ বা অতিরিক্ত সেশন জজের নিকট থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নিজে বিচার করতে পারেন বা অন্য কোর্টে পাঠাতে পারেন।[] একইভাবে, মেট্রোপলিটন বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটও তাদের অধীনস্থ ম্যাজিস্ট্রেটের থেকে মামলা প্রত্যাহার করতে পারেন এবং নিজে তদন্ত বা বিচার করতে পারেন বা অন্য কোনো ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠাতে পারেন।[]

পঞ্চচত্বারিংশ অধ্যায়: অনিয়মিত কার্যক্রম

এই অধ্যায়ে অনিয়মিত বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।[] কিছু অনিয়ম বা ভুল কার্যক্রমের কারণে বিচার প্রক্রিয়া বাতিল হবে না, যদি সেই কার্যক্রম ন্যায়সঙ্গতভাবে এবং সৎ বিশ্বাসে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেট যিনি আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ক্ষমতা রাখেন না, কোনো তল্লাশি পরোয়ানা জারি করেন বা অপরাধের তদন্তের নির্দেশ দেন, তবে এই প্রক্রিয়া বাতিল করা হবে না শুধুমাত্র এই কারণে যে তিনি সেই ক্ষমতা না রেখেও তা করেছেন।[] অন্যদিকে, কিছু বিশেষ অনিয়ম এমন রয়েছে যেগুলো বিচার প্রক্রিয়াকে বাতিল করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেট, যিনি আইন অনুযায়ী এই ক্ষমতা রাখেন না, সম্পত্তি জব্দ এবং বিক্রির আদেশ দেন, শান্তি রক্ষার জন্য জামিন দাবি করেন, বা কোনো অপরাধীর বিরুদ্ধে শুনানি করেন, তাহলে এই প্রক্রিয়া বাতিল বলে গণ্য হবে।[]

যদি কোনো মামলা ভুল স্থানে পরিচালিত হয়, তাহলে শুধুমাত্র এই কারণে বিচার, শাস্তি বা আদেশ বাতিল করা যাবে না, যতক্ষণ না এটি ন্যায়বিচারের ব্যর্থতা ঘটায়। অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তি গ্রহণের সময় কোনো নিয়ম না মানলে এবং সেটি যদি বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত না করে, তাহলে সেটি আদালতে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।[] কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ তৈরি না করলে এবং তা বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো ন্যায়বিচারের ব্যর্থতা ঘটায় না, তবে এটি শাস্তি বা আদেশ বাতিলের কারণ হবে না। আদালত যদি মনে করে যে অভিযোগ তৈরি না করার ফলে ন্যায়বিচারের ব্যর্থতা ঘটেছে, তাহলে পুনরায় অভিযোগ তৈরি করে বিচার প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার আদেশ দেওয়া হবে।[] বিচার চলাকালীন কোনো অনিয়ম বা ভুল থাকলেও, তা বিচার, শাস্তি বা আদেশ পরিবর্তন বা বাতিলের কারণ হবে না, যদি না তা ন্যায়বিচারের ব্যর্থতা ঘটায়।[]

ষট্‌চত্বারিংশ অধ্যায়: বিবিধ

এই অংশে উপরের অংশে বিভিন্ন বিচার সংক্রান্ত বিধান বর্ণনা করা হয়েছে যা আদালতে প্রয়োগ হয়।[] কোনো হলফনামা উচ্চ আদালত বা তার কোনো কর্মকর্তার সামনে উপস্থাপন করতে হলে এটি সেই আদালতের সম্মুখে, রাজ্যের ক্লার্ক, বা অন্য কোনো নিযুক্ত কর্মকর্তার সামনে শপথ নিয়ে প্রদান করা যেতে পারে। কোনো সরকারি কর্মকর্তার আচরণ প্রমাণ করার জন্য আবেদনকারী প্রমাণ হিসাবে হলফনামা দিতে পারেন, তবে এটি শুধুমাত্র তার নিজের জানা তথ্য এবং যেসব তথ্য তিনি সত্য মনে করেন সেগুলোর ভিত্তিতে তৈরি হতে হবে।[]

যদি কোনো বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেট মনে করেন যে অপরাধ সংঘটিত স্থানে সরাসরি পরিদর্শন প্রয়োজন, তাহলে তিনি পক্ষগুলোকে জানিয়ে সেই স্থান পরিদর্শন করতে পারেন এবং সেই পরিদর্শনের উপর একটি স্মারকলিপি তৈরি করবেন, যা মামলার নথিতে অন্তর্ভুক্ত হবে।[] আদালত যেকোনো সময়ে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য কাউকে তলব করতে পারে, বা পূর্বে সাক্ষ্য দেওয়া ব্যক্তিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে যদি তার সাক্ষ্য মামলার সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য প্রয়োজনীয় মনে হয়।[] কোনো তদন্ত বা বিচার চলাকালীন অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতির কারণে বিচার চলতে থাকলে, আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনজীবীর প্রতিনিধিত্বে বিচার চালিয়ে যেতে পারে, তবে কোনো অবস্থায় আদালত মনে করলে ব্যক্তিগত উপস্থিতির প্রয়োজন হতে পারে।[] কোনো অপরাধীকে কারাগারে রাখার নির্দেশ হলে, সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেই ব্যক্তি কোথায় আটক থাকবে। সিভিল কারাগারে বন্দী কোনো ব্যক্তিকে ফৌজদারি কারাগারে স্থানান্তর করা হলে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে আবার সিভিল কারাগারে ফেরত পাঠানো হবে যদি অন্য কোনো আইন প্রযোজ্য না থাকে।[] যখন কোনো সাক্ষীর ভাষান্তরের প্রয়োজন হয়, তখন অনুবাদক সত্য ও সঠিকভাবে তা অনুবাদ করতে বাধ্য থাকবেন।[] এছাড়া, আদালত কোনো অভিযোগকারীর বা সাক্ষীর সঙ্গত খরচ সরকার কর্তৃক পরিশোধের নির্দেশ দিতে পারে।[]

সংযুক্তি

তথ্যসূত্র

  1. ফৌজদারি কার্যবিধি, https://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%AB%E0%A7%8C%E0%A6%9C%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF_%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A7%E0%A6%BF
  2. The Code of Criminal Procedure, 1898 ( ACT NO. V OF 1898 ) - CRPC, http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-75.html
  3. ড় ঢ় য় কক কখ কগ কঘ কঙ কচ কছ কজ কঝ কঞ কট কঠ কড কঢ কণ কত কথ কদ কধ কন কপ কফ কব কভ কম কয কর কল কশ কষ কস কহ কড় কঢ় কয় কৎ খক খখ খগ খঘ খঙ খচ খছ খজ খঝ খঞ খট খঠ খড খঢ খণ খত খথ খদ খধ খন খপ খফ খব খভ খম খয খর খল খশ খষ খস খহ খড় খঢ় খয় খৎ গক গখ গগ গঘ গঙ গচ গছ গজ গঝ গঞ গট গঠ গড গঢ গণ গত গথ গদ গধ গন গপ গফ গব গভ গম গয গর গল গশ গষ গস গহ গড় গঢ় গয় গৎ ঘক ঘখ ঘগ ঘঘ ঘঙ ঘচ ঘছ ঘজ ঘঝ ঘঞ ঘট ঘঠ ঘড ঘঢ ঘণ ঘত ঘথ ঘদ ঘধ ঘন ঘপ ঘফ ঘব ঘভ ঘম ঘয ঘর ঘল ঘশ ঘষ ঘস ঘহ ঘড় ঘঢ় ঘয় ঘৎ ঙক ঙখ ঙগ ঙঘ ঙঙ ঙচ ঙছ ঙজ ঙঝ ঙঞ ঙট ঙঠ ঙড ঙঢ ঙণ ঙত ঙথ ঙদ ঙধ ঙন ঙপ ঙফ ঙব ঙভ ঙম ঙয ঙর ঙল ঙশ ঙষ ঙস ঙহ ঙড় ঙঢ় ঙয় ঙৎ চক চখ চগ চঘ চঙ চচ চছ চজ চঝ চঞ চট চঠ চড চঢ চণ চত চথ চদ চধ চন চপ চফ চব চভ চম চয চর চল চশ চষ চস চহ চড় চঢ় চয় CRPC (1898). উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "FOOTNOTECRPC1898" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে

Read other articles:

МальруаMalroy   Країна  Франція Регіон Гранд-Ест  Департамент Мозель  Округ Мец Кантон Віжі Код INSEE 57438 Поштові індекси 57640 Координати 49°10′37″ пн. ш. 6°12′47″ сх. д.H G O Висота 160 - 205 м.н.р.м. Площа 3,54 км² Населення 350 (01-2020[1]) Густота 108,47 ос./км² Розміщення Вла...

 

У Вікіпедії є статті про інші географічні об’єкти з назвою Плантерсвілл. Місто Плантерсвіллангл. Plantersville Координати 34°12′42″ пн. ш. 88°39′48″ зх. д. / 34.21170000002777556° пн. ш. 88.66360000002778463° зх. д. / 34.21170000002777556; -88.66360000002778463Координати: 34°12′42″ пн. ш...

 

ボリス・ベッカー Boris Becker 2019年のベッカー基本情報フルネーム Boris Franz Becker国籍 ドイツ出身地 西ドイツ・ライメン生年月日 (1967-11-22) 1967年11月22日(56歳)身長 190cm体重 85kg利き手 右バックハンド 片手打ち殿堂入り 2003年ツアー経歴デビュー年 1984年引退年 1999年ツアー通算 64勝シングルス 49勝ダブルス 15勝生涯通算成績 967勝350敗シングルス 713勝214敗ダブルス 254勝136敗

Railway station in Ōta, Gunma Prefecture, Japan This article needs additional citations for verification. Please help improve this article by adding citations to reliable sources. Unsourced material may be challenged and removed.Find sources: Sammaibashi Station – news · newspapers · books · scholar · JSTOR (May 2015) (Learn how and when to remove this template message) Sammaibashi Station三枚橋駅Sammaibashi Station in June 2012General information...

 

United States Marine Corps general (1869–1952 Dion WilliamsBrigadier General Dion WilliamsNickname(s)Father of Marine amphibious reconnaissance[1]Born(1869-12-18)December 18, 1869Williamsburg, Ohio, U.S.DiedDecember 11, 1952(1952-12-11) (aged 82)National Naval Medical Center, Bethesda, Maryland, U.S.BuriedArlington National CemeteryAllegiance United StatesService/branch United States Marine CorpsYears of service1893–1934Rank Brigadier GeneralCommands held10th M...

 

Mafia: The City of Lost Heaven Розробник Illusion SoftworksВидавець Gathering of DevelopersДистриб'ютор Take-Two Interactive, Good Old Games, Humble Store[d][1], Steam і Discord StoredЖанр(и) Шутер від першої особи, автосимуляторПлатформа Microsoft Windows, PlayStation 2, XboxЛіцензія пропрієтарна ліцензія[d]Дата випуску 29 серпня 2002Р...

American missionary Catherine Van Rensselaer Bonney (December 23, 1817 – June 29, 1891) was a pioneering American missionary who established a boarding school in Macao that supported young, impoverished girls, despite the opposition she faced from her larger missionary organization. Following her husband's death, she traveled to Peking under the Woman's Union Missionary Society and founded a second school; this trip marked the first time that women were sent to the mission field alone. She ...

 

Third king of Joseon (r. 1400–1418) Not to be confused with Taejo of Joseon. Taejong of Joseon朝鮮太宗조선 태종Statues at the tomb of King TaejongGrand King Emeritus of JoseonTenure12 September 1421 – 10 May 1422PredecessorTaejoSuccessorSejoKing Emeritus of JoseonTenure10 August 1418 – 12 September 1422PredecessorJeongjongSuccessorDanjongKing of JoseonReign13 November 1400 – 10 August 1418EnthronementSuchang Palace, GaegyeongPredecessorJeongjongSuccessorSejongCrown Prince of J...

 

قرية لج المكرمي  - قرية -  تقسيم إداري البلد  اليمن المحافظة محافظة حجة المديرية مديرية أفلح اليمن العزلة عزلة بني يوس السكان التعداد السكاني 2004 السكان 48   • الذكور 24   • الإناث 24   • عدد الأسر 4   • عدد المساكن 4 معلومات أخرى التوقيت توقيت اليمن (+3 غريني...

U.S. House district for Texas TX-12 redirects here. The term may also refer to Texas State Highway 12. Not to be confused with Texas's 12th House of Representatives district. Texas's 12th congressional districtTexas's 12th congressional district since January 3, 2023Representative  Kay GrangerR–Fort WorthDistribution86.54% urban[1]13.46% ruralPopulation (2022)803,772[2]Median householdincome$78,999[2]Ethnicity78.22% White23.68% Hispanic9% other8.72% Black3.32% A...

 

Gladiator, un vehículo terrestre no tripulado táctico. Un vehículo terrestre no tripulado o UGV (por el inglés unmanned ground vehicle) es un vehículo no tripulado que opera estando en contacto con el suelo. Los UGV se pueden utilizar en muchas aplicaciones en las que puede resultar inconveniente, peligroso o imposible tener un operador humano presente. Generalmente, el vehículo tendrá un conjunto de sensores para percibir su entorno y tomará decisiones sobre su comportamiento de form...

 

American anthology media franchise For other uses, see Purge (disambiguation). The PurgeCreated byJames DeMonacoOriginal workThe Purge (2013)OwnerUniversal PicturesYears2013–presentFilms and televisionFilm(s)The Purge (2013)The Purge: Anarchy (2014)The Purge: Election Year (2016)The First Purge (2018)The Forever Purge (2021)Television seriesThe Purge (2018–2019) The Purge is an American anthology media franchise centered on a series of dystopian action horror films distributed by Universa...

  لمعانٍ أخرى، طالع الشبيه (توضيح). الشبيه إعلان الفيلم على قناة دوزيم تاريخ الصدور 2019 مدة العرض 84 دقيقة البلد  المغرب اللغة الأصلية لهجة مغربية الطاقم المخرج عبد الرحيم مجد البطولة رشيد الوالي، هشام الوالي، أمين بنجلون، مجيدة بنكيران، فاطمة وشاي تعديل مصدري - تعديل...

 

World Wrestling Federation pay-per-view event Survivor SeriesPromotional poster featuring the original advertised main event of The Ultimate Warrior and Randy Savage vs. Ric Flair and Razor Ramon.PromotionWorld Wrestling FederationDateNovember 25, 1992CityRichfield Township, OhioVenueRichfield ColiseumAttendance18,000[1]Pay-per-view chronology ← PreviousSummerSlam Next →Royal Rumble Survivor Series chronology ← Previous1991 Next →1993 The 1992 Survivor Seri...

 

Pancerniki typu New Mexico USS New Mexico Kraj budowy  Stany Zjednoczone Użytkownicy  US Navy Stocznia Brooklyn Navy YardNewport News ShipbuildingNew York Shipbuilding Corporation Wejście do służby 1918 Zbudowane okręty 3 Dane taktyczno-techniczne Wyporność USS New Mexico: standardowa: 32 000 t Długość 190 m Szerokość 30 m Zanurzenie 9 m Napęd turboelektryczny: 27 500 KM (New Mexico)turbiny parowe: 32 000 KM Mississippi i Idaho4 śruby Prędkość 21 węzłów Załoga 1...

For the 2010 film, see Manasara (film). Some town plans recommended in the 700 CE Manasara Sanskrit text on Hindu architecture[1][2][3] The Mānasāra, also known as Manasa or Manasara Shilpa Shastra, is an ancient Sanskrit treatise on Indian architecture and design.[4] Organized into 70 adhyayas (chapters) and 10,000 shlokas (verses),[5] it is one of many Hindu texts on Shilpa Shastra – science of arts and crafts – that once existed in 1st-millenni...

 

2010 single by Toby KeithTrailerhoodSingle by Toby Keithfrom the album Bullets in the Gun ReleasedJune 28, 2010Recorded2009GenreCountryLength2:54LabelShow Dog-UniversalSongwriter(s)Toby KeithProducer(s)Toby KeithToby Keith singles chronology Every Dog Has Its Day (2010) Trailerhood (2010) Bullets in the Gun (2009) Trailerhood is a song written and recorded by American country music artist Toby Keith. It was released in June 2010 as the first single from his 2010 album Bullets in the Gun. The ...

 

2021 U.S. Supreme Court case 2021 United States Supreme Court caseNiz-Chavez v. GarlandSupreme Court of the United StatesArgued November 9, 2020Decided April 29, 2021Full case nameAgusto Niz-Chavez, Petitioner v. Merrick B. Garland, Attorney GeneralDocket no.19-863Citations593 U.S. ___ (more)141 S. Ct. 1474209 L. Ed. 2d 433Case historyPrior Niz-Chavez v. Barr, 789 F. App'x 523 (6th Cir. 2019) Cert. granted, Niz-Chavez v. Barr, 141 S. Ct. 84 (2020) HoldingA notice to appear sufficient to trigg...

Presidenza James Buchanan Stato Stati Uniti Capo del governoJames Buchanan(Partito Democratico) Giuramento4 marzo 1857 Governo successivo4 marzo 1861 Presidenza Pierce Presidenza Lincoln La presidenza di James Buchanan ebbe inizio il 4 marzo 1857 con l'insediamento e si concluse il 4 marzo 1861. Buchanan, esponente di rilievo del Partito Democratico per la Pennsylvania, divenne il 15º presidente degli Stati Uniti d'America battendo l'ex presidente Millard Fillmore dei Know Nothing e Joh...

 

2008 single by WeezerDreamin'Single by Weezerfrom the album Weezer (The Red Album) ReleasedMay 27, 2008 (iTunes)Recorded2008GenreAlternative rockLength5:12LabelGeffenSongwriter(s)Rivers CuomoProducer(s)Rick RubinWeezer singles chronology The Greatest Man That Ever Lived (Variations on a Shaker Hymn) (2008) Dreamin' (2008) (If You're Wondering If I Want You To) I Want You To (2009) Dreamin' was the fourth single (released as an iTunes single) from American alternative rock band Weezer's sixth ...

 

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!