পলোন্নারুয়া (সিংহলি: පොළොන්නරුව, Poḷonnaruwa বা Puḷattipura, তামিল: பொலன்னறுவை, Polaṉṉaṟuvai বা Puḷatti nakaram) শ্রীলঙ্কার উত্তর কেন্দ্রীয় প্রদেশের পলোন্নারুয়া জেলার প্রধান শহর। কাদুরুয়েলা এলাকা হল পলোন্নারুয়ার নতুন শহর এবং পলোন্নারুয়ার অন্য অংশ পলোন্নারুয়া রাজ্যের রাজকীয় প্রাচীন শহর হিসেবে রয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় প্রাচীনতম রাজ্য পলোন্নারুয়াকে প্রথম রাজধানী ঘোষণা করেছিলেন রাজা বিজায়াবাহু আই, যিনি ১০৭০ সালে চোল আগ্রাসকদের পরাজিত করেছিলেন এবং স্থানীয় নেতা হিসেবে দেশকে একত্র করেছিলেন।পলোন্নারুয়ার প্রাচীন শহর একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করা হয়েছে।[১] বর্তমানে রাষ্ট্রপতি মৈত্রীপাল সিরিসেনার অধীনে "পলোন্নারুয়া জাগরণ" নামে পরিচিত একটি প্রধান উন্নয়ন প্রকল্পে নতুন পলোন্নারুয়ার উন্নয়ন কাজ চলছে। এই প্রকল্পে পলোন্নারুয়ার সড়ক, বিদ্যুৎ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশসহ সকল সেক্টরের উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সকল সেক্টরের উন্নয়নে হবে।[২]
ইতিহাস
চোলারা রাজধানী পলোন্নারুয়ায় স্থানান্তরিত করেছিল, কারণ তারা দেখেছিল যে এটি শ্রীলঙ্কার সেরা উর্বর জমি (নিগরিল ভ্যালানডু (অসম্ভব উর্বর জমি) নামে পরিচিত ছিল এবং এর নাম ছিল পলোন্নারুয়া-জাননাথা মঙ্গলম। মহাভেলী নদী এর মধ্য দিয়ে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। বিজায়াবাহু আইয়ের বিজয়, "পলোন্নারুয়ার হিরো" প্রকৃতপক্ষে পারকরামবাহু আই নামক ঐতিহাসিক বইয়ে স্থান পেয়েছেI এটি তাঁর রাজত্ব ছিল যা পলোন্নারুয়ার স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত। রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্য ও কৃষির প্রবৃদ্ধি ঘটে, রাজা বৃষ্টির পানি অপব্যয়ের ব্যাপারে কঠোর ছিলেন এবং সবটুকুই ভূমির উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হতো। একারণে, অনুরাধপুরা যুগের তুলনায় অনেক উন্নত সেচ ব্যবস্থা পারকরামবাহুর রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিল - যা বর্তমানকালেও দেশের পূর্বদিকে শুষ্ক মৌসুমে ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করে। এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিল পারক্রম সমুদ্র। পলোন্নারুয়া রাজত্ব রাজা পারকরামবাহুর রাজত্বের সময় সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল।
তার প্রত্যক্ষ উত্তরাধিকারী, নিসানকামাল্লা ১ বাদে পলোন্নারুয়ার অন্যান্য সমস্ত রাজারা সামান্য দুর্বলচিত্ত ছিল এবং তাদের শুধুমাত্র নিজস্ব আদালতের মধ্যে লড়াই করার প্রবণতা ছিল। তারা আরও শক্তিশালী দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যের সাথে ঘনিষ্ঠ বিবাহগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করে যতক্ষণ না তা স্থানীয় রাজকীয় বংশধরদের ছাপিয়ে যায়। এর ফলে ১২১৪ খ্রিস্টাব্দে আরাকাক্রভরতি রাজবংশের রাজা কালিঙ্গা মাঘ আক্রমণ করেছিলেন, যিনি জাফনা রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (১২১৫-১৬২৪ সিই)।
বর্তমানকালীন
আজ পলোন্নারুয়া শহরের প্রাচীন শহরটি দেশের সেরা পরিকল্পিত প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ শহরগুলোর মধ্যে একটি, যা রাজ্যের প্রথম শাসকদের শৃঙ্খলা ও মহিমা প্রমাণ করে। পলোন্নারুয়ার প্রাচীন শহর ইউনেস্কো দ্বারা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা লাভ করেছে।
প্রাচীন শহরটির কাছাকাছি একটি ছোট শহর রয়েছে যেখানে কয়েকটি হোটেল (বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য), কিছু আধুনিক দোকান এবং বিভিন্ন দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের সুবিধা রয়েছে। শহরের প্রধান সড়ক থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে "নতুন শহর" নামে একটি নতুন নির্মিত এলাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে। জেলার বৃহত্তম স্কুল, পলোন্নারুয়া রয়েল সেন্ট্রাল কলেজ নতুন শহরে অবস্থিত।
পলোন্নারুয়ার উত্তর কেন্দ্রীয় প্রদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, কিন্তু এটি দেশের সবচেয়ে পরিষ্কার এবং সুন্দর শহরগুলোর মধ্যে একটি। সবুজ পরিবেশ, আশ্চর্যজনক প্রাচীন নির্মাণ, পরাক্রমা সমুদ্রা (১২০০ সালে নির্মিত একটি বিশাল হ্রদ) এবং আকর্ষণীয় পর্যটক হোটেল ও অতিথিসেবাপরায়ণ মানুষ পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
পর্যটকদের জন্য আরেকটি আকর্ষণ টোক ম্যাকাকে বানর। বানরগুলো শহরের ধ্বংসাবশেষে অনেক আগে থেকে মানুসের সাথে বসবাস করে আসছে এবং মানুষের ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও বসবাস করছে।
Balasooriya, Jayasinghe (2004). The Glory of Ancient Polonnaruva. Polonnaruva: Sooriya Printers. আইএসবিএন৯৫৫-৮১৫৮-০১-১ (Archeological ruins)
'The Satmahal Prasada: A Historic link between Lan Na and Sri Lanka', in: Forbes, Andrew, and Henley, David, Ancient Chiang Mai Volume 1. Chiang Mai: Cognoscenti Books, 2012.
বহিঃসংযোগ
উইকিমিডিয়া কমন্সে পলোন্নারুয়া সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।
উইকিভ্রমণে পলোন্নারুয়া সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে।